আমার আমি
একদিন হারিয়ে যাব ভেবে ভরদুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথ চলতে শুরু করেছিলাম,পথ চলতে চলতে মনের মাঝে কতরকম কথারা ঘুরে বেড়াতে লাগল। এভাবে চলছি চলছি আর চলছি, হঠাৎ মাঝপথে এক অশিতিপর বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তিনি তার হাতের লাঠি টা রাস্তায় ঠেকিয়ে তার ক্লান্ত চোখদুটো দিয়ে আমাকে এক দৃষ্টিতে
দেখতে লাগলেন। আমি কিছুক্ষণ চুপটি করে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,’আমাকে কিছু বলবেন?’
তিনি আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে একই ভাবে অনিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে ই রইলেন। আমি ভাবলাম হয়তো উনি আমার কথা শুনতে পাননি,তাই আরো একটু এগিয়ে গিয়ে বেশ জোরে যাতে তিনি শুনতে পান এমনভাবে আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি একটু চমকে উঠে মুহূর্তে চোখ দুটো নীচে নামিয়ে আমার কথা উপেক্ষা করে
আমাকে পাশ কাটিয়ে ধীরে ধীরে আবার হাঁটতেহাঁটতে সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার পথ চলতে লাগলাম ওনার উল্টোদিকে।আবার বিরামহীন ভাবে হেঁটে চলেছি কিছু ক্ষণ পরে দেখছি আবার সেই বৃদ্ধা আমার সামনে এসে হাজির। আমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমি স্পষ্ট দেখলাম বৃদ্ধা আমার পাশ দিয়ে সামনের দিকে চলে গেলেন তবে তিনি এতটা সময় পরে কি করে ঠিক আগের বারের মতো একই পথ ধরে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন! অসম্ভব! আমি কি এতটাই ভুল দেখলাম? নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে চশমাটা খুলে চশমার কাঁচ ভালো করে রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে তাকালাম। না স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বৃদ্ধা আমার সামনে লাঠিটা রাস্তায় ঠেকিয়ে কপালটা কুঁচকে অবিকল আগের ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে আছেন। এবার আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। আমি বৃদ্ধার শীর্ণ হাতখানা ধরে বললাম,’শুনছেন, শুনছেন আপনি কে, কেন এভাবে আমাকে ধাঁধাঁয় ফেলছেন?’—এক মুহুর্তে বৃদ্ধার দন্তহীন মুখখানি প্রশান্ত হাসিতে ভরে উঠলো। আর ঠিক সেই সময় আমি সামনের আয়নাতে নিজেকে দেখতে পেলাম। এতো আমারই প্রতিচ্ছবি! সহসা সম্বিৎ ফিরে পেলাম, এতোক্ষণ আমি দিবাস্বপ্ন দেখছিলাম। স্নান সেরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আজ আমার একি ভ্রম হলো? আমি তো ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখিনি, তবে এই অবাস্তব কাহিনী কি করে সৃষ্টি হলো আমার অবচেতন মনের গহীনে! আমার আমি কে কি এভাবেই পথে পথে খুঁজে বেড়াচ্ছি নিজের অজান্তে! জানি না এই আশ্চর্য এক অবসেশনের অর্থ কি? এভাবেই বুঝি মানুষ তার নিজের মনের মধ্যে নিজেকে খুঁজে খুঁজে বেড়ায়!