Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আমার অভিযোগের তর্জনী || Shamsur Rahman

আমার অভিযোগের তর্জনী || Shamsur Rahman

আমার অভিযোগের তর্জনী এখন তোমার দিকেই
উদ্যত। নিঃসঙ্গতা
জ্বলজ্বলে মণিহারের বদলে লোহার শেকল হয়ে উঠলেই
উত্তুঙ্গ চূড়া ছেড়ে নিচে
নেমে আসতে হবে, এ-কথা
কে বলেছিল তোমাকে? কেন তুমি
প্রাচীন ইরানি চিত্রকরের
ছবির মতো পাখার বৈভব আর চঞ্চুর কিরীচে
স্বপ্নের সওগাত গেঁথে এই নচ্ছার মৃত্যুমাখা
ভাগাড়ে নেমে এসেছিলে?

তোমার পাখায় ছিল নীলমণির মতো আকাশের
নিঃসীম উল্লাস, চারণ কবির
মেঠো গাথার মতো বন্দনা-মুখর সহজ সৌন্দর্য,
আর সুকণ্ঠ মুয়াজ্জিনের আজানের মতো অনাবিল আহ্বান।
তোমার চোখে আশ্রয় পেয়েছিল
সেই বিল্পবীর অন্বেষা, যে তার চিরকালীন ঘর ছেড়ে
ঘুরে বেড়ায় পথে পথে ভ্রষ্ট পথিকদের
অভীষ্ট উদ্যানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

তোমার এই নিরুপম ঐশ্বর্য ভীষণ বেমানান
এখানে, এখন এ-কথা
তোমার বুঝতে বাকি নেই নিশ্চয়। মড়াখেকেদের ভিড়ে
কী গান গাইবে তুমি? ইতিমধ্যেই কি আবর্জনায়
রুদ্ধ হয়ে আসেনি তোমার কণ্ঠনালি?
তোমার হৃৎপিণ্ড কি বেরিয়ে আসতে চাইছে না
এক দুঃসহ চাপে,
যার উৎস দুর্বিনীতের আস্ফালন, নির্বোধের ক্রোধ?
ইচ্ছে হলেই এখন তুমি তোমার চিত্রিত পাখা মেলে
ফিরে যেতে পারবে না দূরের আকাশে,
যেখানে তুমি সাঁতার কাটতে পারো স্বচ্ছন্দে নানা রঙের
মেঘের রেণু ওড়াতে ওড়াতে।

যেখানে পবিত্রতার মতো শূন্যতা ছড়িয়ে আছে
তবকে তবকে। বস্তুত এই মুহূর্তে তোমার
পাখা দুটোকে ছন্দিল করে তোলার
কোন উপায় নেই। কেননা তোমার পদদ্বয়
আর পাখা শোচনীয়ভাবে আটকে গিয়েছে
রাশি রাশি তারের মতো নাড়িভুঁড়িতে।
আস্তে আস্তে চতুর্দিকে থেকে এগিয়ে আসছে
শেয়াল কুকুরে পাল,
আর তোমার বুকের ভেতর ছড়িয়ে পড়ছে অন্ধকার,
যেমন কোন শহরে চড়াও হয় দখলদার সেনাবাহিনী।
এক্ষুণি ওরা ঘিরে ধরবে তোমাকে। এই আগ্রাসী
ব্যূহ ভেদ করবার সাধ্য তোমার নেই।
তোমার একদিকে মাথা-ডোবানো গলিজ জঞ্জাল,
অন্যদিকে ক্ষমাহীন শক্রতা। বলো, হে স্বপ্নলালিত সৌন্দর্য
কোথায় পালাবে তুমি? কোথায়
তোমার পরিত্রাণ?

আমি দেখতে পাচ্ছি
ডানদিকে শোকের মতো ছড়ানো
তোমার ছেঁড়া-খোঁড়া যাবতীয় পালক, বাঁয়ে
গড়াগড়ি যাচ্ছে তোমার মুন্ড আর তখনও-স্পন্দিত
হৃৎপিণ্ড বিদ্ধ শেয়ালের দাঁতে আর
নিষ্পত্র গাছে বসে হাসছে কতিপয় শকুন।
শ্মশানের ঠা ঠা রৌদ্রের মতো সেই অট্রহাসি
ব্যাপ্ত হলো দিগন্ত থেকে দিগন্তে
এবং আমার অভিযোগের তর্জনী এখন তোমার
ধ্বংসাবশেষের দিকে উদ্যত। কে তোমাকে
উদার আকাশের মেঘমালার সঙ্গ ছেড়ে,
পর্বতচূড়ার সখ্য ছেড়ে
এই ভাগাড়ে নেমে আসতে বলেছিল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *