এবারে প্রথম থেকেই নানারকম বাধা
এবারে প্রথম থেকেই নানারকম বাধা পড়তে লাগল। কাকাবাবু কোনও একটা ব্যাপারে মন ঠিক করে ফেললে আর ধৈর্য ধরতে পারেন না।
কলকাতা থেকেই প্লেন ছাড়তে দেরি হল প্রায় দেড়ঘণ্টা। না, একঘণ্টা চল্লিশমিনিট। কাকাবাবু ছটফট করছিলেন। আবার এ-কথাও ভাবছিলেন, মানুষের জীবনে দেড়ঘণ্টা কী এমন সময়, চুপচাপ বসে থাকলেই তো হয়। তবু তিনি ছটফট করছিলেন।
কলকাতা থেকে মুম্বই গিয়ে কাকাবাবুকে আবার বিদেশের প্লেন ধরতে। হবে। মাঝখানে মাত্র তিনঘণ্টার ব্যবধান। তার মধ্যে থেকে একঘণ্টা চল্লিশমিনিট তো খরচ হয়েই গেল। মুম্বইয়ে আবার এক এয়ারপোর্ট থেকে যেতে হবে অন্য এয়ারপোর্টে, সেখানে দেরি হলে বিদেশের প্লেনটা ছেড়ে চলে যাবে।
রাগারাগি করে কোনও লাভ নেই। প্লেনটা কলকাতার আকাশে ওড়ার পর ঘোষণায় বলা হল, দেরির জন্য আমরা দুঃখিত। ব্যস! শুধু দুঃখিত বলেই ওদের দায় সারা হয়ে গেল। এদিকে যে এজন্য কত মানুষের কত ক্ষতি হয়, তার দাম কে দেবে?
কাকাবাবু মনে মনে ঠিক করে রাখলেন, যদি তিনি বিদেশে যাওয়ার প্লেন ধরতে না পারেন, তা হলে এই বিমান কোম্পানির নামে অভিযোগ জানাবেন।
দুপুরবেলা। জানলার বাইরে ঝকঝক করছে রোদ আর নীল আকাশ, একফোঁটাও মেঘ নেই। কাকাবাবু জানলার ধারেই বসা পছন্দ করেন। বই পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে বাইরের দিকে তাকালে অনেকখানি আকাশ দেখা যায়। মনটা ভাল হয়ে যায় তাতে।
কাকাবাবু এবার বিদেশে পড়বার জন্য রাজশেখর বসুর রামায়ণ আর মহাভারত এই বই দুখানা নিয়ে এসেছেন। প্লেনে সবাই ইংরেজি বই পড়ে। রামায়ণ-মহাভারত বারবার পড়তেও খুব ভাল লাগে কাকাবাবুর।
আগেকার দিনে প্লেনে উঠলে যাত্রীদের কতরকম খাতির-যত্ন করা হত। এখন আর সেসব কিছু নেই। অনেক প্লেনে খাবারও দেয় না। কিনে খেতে হয় স্যান্ডুইচ ফ্যান্ডুইচ। কাকাবাবু মন দিয়ে মহাভারত পড়তে লাগলেন,ওসব নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না।
হঠাৎ একসময় প্লেনটা বেশ জোরে দুলে উঠল।
কাকাবাবু বই থেকে চোখ তুলে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, এর মধ্যে আকাশ ভরে গিয়েছে কালো মেঘে। মাঝে মাঝে ঝলসে উঠছে বিদ্যুৎ।
এ দৃশ্যও দেখতে বেশ ভাল লাগে। মাটি থেকে আমরা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই বিদ্যুৎ। এখানে বিদ্যুতের ঝলক একেবারে পাশে পাশে। বজ্রের গর্জন অবশ্য ঠিক শোনা যায় না বিমানের আওয়াজের জন্য।
ক্যাপ্টেনের ঘোষণা শোনা গেল, সবাই সিটবেল্ট বেঁধে নিন, অনুগ্রহ করে যে-যার নিজের জায়গায় বসে পড়ুন।
কাকাবাবুর পাশে বসে আছেন একজন মাঝবয়সি মহিলা আর একটি একুশ-বাইশ বছরের মেয়ে। খুব সম্ভবত মা আর মেয়ে।
ভদ্রমহিলার মুখোনা শুকিয়ে গিয়েছে। মনে হয় ভয় পেয়েছেন। বিমানটা রীতিমতো দুলছে। এক-একবার মনে হচ্ছে যেন নেমে যাচ্ছে অনেক নীচে, ধপাস করে পড়ে যাবে মাটিতে। আবার উঠে যাচ্ছে উপরে।
বোঝাই যাচ্ছে, ভদ্রমহিলার বেশি বিমানে চাপার অভ্যেস নেই কিংবা এরকম আবহাওয়ায় কখনও পড়েননি। পাশের মেয়েটির কিন্তু মুখে ভয়ের চিহ্ন নেই। দুজনে ফিসফিস করে কথা বলছেন।
একবার মহিলাটি কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে চাপা গলায় বললেন, এখন কী হবে?
কাকাবাবু একটু হেসে বললেন, বেশি চিন্তা করবেন না। খুব ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, তাই প্লেনটা এত দুলছে। একটু পরে দেখবেন, প্লেনটা আরও উপরে উঠে যাবে। সেখানে মেঘটেঘ কিছু থাকবে না, সব শান্ত হয়ে যাবে।
মেয়েটি বলল, থার্টি থাউজ্যান্ড ফিটের উপর আর মেঘ থাকে না।
মহিলাটি বললেন, এই আমার মেয়ে, পুনেতে একটা ভাল চাকরি পেয়েছে, সেইজন্য যাচ্ছি। এখন তো মনে হচ্ছে, কলকাতার চাকরিই ভাল ছিল।
কাকাবাবু বললেন, না না, আমাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে যাবে না কেন? আজকাল কত মেয়ে তো বিদেশেও একা একা পড়তে কিংবা কাজ করতে যাচ্ছে। আপনার মেয়ে তো ভয় পায়নি।
ভদ্রমহিলা লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেলেন।
একটু পরেই বিমানটি উপরে উঠে গেলে দুলুনি বন্ধ হয়ে গেল। কাকাবাবু জানলা দিয়ে দেখলেন, এখন বিদ্যুৎ-চমক দেখা যাচ্ছে অনেক নীচে।
আরও কিছুক্ষণ পরে ক্যাপ্টেন আবার ঘোষণা করলেন, আমরা মুম্বইয়ের কাছে এসে পড়েছি। কিন্তু নামার একটু অসুবিধে হচ্ছে, এখানকার আবহাওয়া বেশ খারাপ।
আবার শুরু হল দুলুনি, আবার প্লেনটা উঠে যাচ্ছে উপরে। বোঝাই যাচ্ছে, মুম্বইয়ের আকাশে সেটা ঘুরছে।
কাকাবাবু অস্থির হয়ে উঠলেন। ঝড়-বৃষ্টিতে ভয়ের কিছু নেই, তিনি জানেন। এরকম অভিজ্ঞতা তাঁর আগেও হয়েছে। কিন্তু আবার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। বিদেশের বিমানটা কি আর ধরা যাবে?
তবে, এরকম খারাপ আবহাওয়া থাকলে সেই প্লেনটাও ছাড়তে নিশ্চয়ই দেরি হবে।
কলকাতার আকাশ দেখে বোঝাই যায়নি যে, মুম্বইয়ের আবহাওয়া এত খারাপ হবে! এত বড় দেশে এরকমই হয়। এক জায়গায় যখন বরফ পড়ে, তখন অন্য কোনও জায়গায় গরমে গা জ্বলে যায়।
প্রায় পঞ্চাশ মিনিট প্লেনটা আকাশে চক্কর দেওয়ার পর পাইলট খুব সাহস করে নামিয়ে দিলেন রানওয়েতে। ঝড় একটু কমলেও সমান তোড়ে পড়ছে বৃষ্টি। রানওয়েতে জল জমে গিয়েছে, এর মধ্যে চাকা স্লিপ করে যাওয়ার খুব আশঙ্কা ছিল।
হাতে আর একঘণ্টারও কম সময়, কাকাবাবুকে এক্ষুনি ছুটতে হবে অন্য এয়ারপোর্টে। আগে নিতে হবে তাঁর সুটকেস।
সেখানে এসে কাকাবাবু শুনতে পেলেন ঘোষণা, এক-একটা ফ্লাইট ক্যানসেলড হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি থামার পর রানওয়ে থেকে জল না নেমে গেলে আজ আর কোনও প্লেন উড়বে না।
কাকাবাবু একটু অপেক্ষা করেই শুনলেন, তাঁর বিদেশের ফ্লাইটও ক্যানসেলড হয়ে গিয়েছে। আগামীকাল কখন যাবে, তা জানানো হবে পরে।
কাকাবাবু নিরাশ হয়ে আপনমনেই বললেন, যাঃ!
ফ্লাইট ক্যানসেড হলে কতরকম ঝঞ্ঝাট হয়! বিদেশের এয়ারপোর্টে যারা কাকাবাবুকে নিতে আসবে, তারা ফিরে যাবে। হোটেলে বুক করা আছে, তারাও যদি ক্যানসেল করে দেয়?
কিন্তু প্রকৃতির উপর তো রাগ করা যায় না। এমন ঝড়-বৃষ্টিকে সব প্লেন কোম্পানিই ভয় পায়। বৃষ্টিও থামছেই না।
আজ রাত্তিরে মুম্বইয়ে থেকে যেতে হবে। কোথায় থাকা যায়?
এ শহরে কাকাবাবুদের অনেক চেনা মানুষ আছে। তাদের কারও বাড়িতে থাকতে চাইলে সবাই খুশি হবে। কিন্তু আগে থেকে কিছু বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ এই দুর্যোগের মধ্যে কারও বাড়িতে যাওয়া যায়? প্রথমেই মনে পড়ে মঞ্জু আর অমলের কথা। ওরা অনেকবার নেমন্তন্ন করেছে। কিন্তু ওদের বাড়ি অনেক দূরে। এত বৃষ্টির মধ্যে যাওয়াও তো সম্ভব নয়।
ইচ্ছে করলে এই এয়ারপোর্টেই থেকে যাওয়া যায়। অনেক লোক এর মধ্যেই নানান জায়গায় বসে পড়েছে। কাকাবাবুও এক কোণের দিকে পেয়ে গেলেন একটা চেয়ার। অনেক লোক কথা বলছে একসঙ্গে, বাচ্চারা কাঁদছে। এত ভিড়ের মধ্যে সেই মহিলা আর তাঁর মেয়েকে দেখা গেল না। এর মধ্যে দু-একজনকে বলতে শোনা গেল, সব রেস্টুরেন্টের খাবার ফুরিয়ে গিয়েছে, বাইরেও যাওয়া যাচ্ছে না।
তার মানে, সারারাত এই চেয়ারে বসে কাটিয়ে দিলেও খাবার জুটবে
কিছু। কাকাবাবু মন থেকে এসব চিন্তা মুছে দিয়ে মহাভারত বইখানা খুললেন। পড়তে পড়তে তিনি চলে গেলেন সেই তখনকার আমলে। পাশা খেলায় সর্বস্ব হারিয়ে পাণ্ডবরা বনে বনে ঘুরছে, তিনিও মনে মনে ঘুরতে লাগলেন তাঁদের সঙ্গে। তাঁর আর খিদেটিদের কথা মনেই রইল না।
বৃষ্টি থামল ভোররাত্রে।
কাকাবাবু নিজের সুটকেসটা টানতে টানতে বাইরে বেরিয়ে এসে পেয়ে গেলেন একটা ট্যাক্সি। অনেক রাস্তায় জল জমে আছে, তারই মধ্যে দিয়ে ঘুরে ঘুরে কোনওরকমে পৌঁছে গেলেন অন্য এয়ারপোর্টে। এখানেও একই রকম ভিড়। এত ভোরেও অনেকেই জেগে আছে।
ভিতরে ঢুকে কাকাবাবু খবর নিলেন। তাঁর প্লেন ছাড়বে দুপুর আড়াইটের সময়। আগের দিন অত দুর্যোগের মধ্যে বিদেশের প্লেনটা মুম্বইয়ে নামতেই পারেনি, চলে গিয়েছে করাচিতে।
তার মানে এখনও অনেকটা সময় কাটাতে হবে! এই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছেই কয়েকটা হোটেল আছে। হেঁটেই যাওয়া যায়। কাকাবাবু ঠিক করলেন, কোনও একটা হোটেলেই কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে।
চাকা লাগানো সুটকেসটা টানতে টানতে তিনি হাঁটতে লাগলেন। দুবগলে ক্রাচ থাকলে তার সঙ্গে সুটকেস টানতে বেশ অসুবিধে হয়। সন্তু সঙ্গে থাকলে সে-ই সাহায্য করে। এবার সন্তুকে সঙ্গে আনা হয়নি।
প্রথম হোটেলটায় একটাও ঘর খালি নেই। পাশের হোটেলটাতেও সেই একই অবস্থা। তবে, ঠিক তখনই একজোড়া স্বামী-স্ত্রী নেমে এলেন চেক আউট করার জন্য। কাউন্টারের ক্লার্কটি বলল, স্যার, আপনি যদি আধঘণ্টা অপেক্ষা করেন, তা হলে আপনাকে ওই ঘরটা দিতে পারি। পরিষ্কার করার জন্য একটু সময় লাগবে।
কাকাবাবু তাতেই রাজি হয়ে গেলেন। ঘুমে তার চোখ তুলে আসছে। বসলেন গিয়ে লবিতে।
খানিক পরে পাঁচতলার উপরে ঘরটায় ঢুকে কাকাবাবু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। বিছানায় ধবধবে সাদা চাদর পাতা, সেই বিছানাটা তাকে টানছে।
এখন মোটে পৌনে ছটা বাজে। ঘণ্টা দু-তিন ঘুমিয়ে নেওয়া যেতেই পারে। জুতোটুতো খুলে কাকাবাবু ধপাস করে পড়ে গেলেন বিছানায়।
ঘুম ভাঙল নটার সময়।
মুখটুখ ধোওয়ার পর তিনি ব্রেকফাস্টের অর্ডার দিলেন। কাল দুপুর থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। কাকাবাবু চাইলেন ফুট জুস, দুটো ক্রোয়ার্স, অমলেট আর চা।
দরজার তলা দিয়ে খবরের কাগজ দিয়ে গিয়েছে। খাবার আসবার আগে কাকাবাবু পড়তে লাগলেন কাগজ। কালকের দারুণ ঝড়-বৃষ্টিতে মুম্বই শহরের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে তিনখানা বাড়ি, আর অনেক গাছ, অনেক দোকানের সাইনবোর্ড আর হোর্ডিং লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে, বাজ পড়েছে দুজনের মাথায়। এরই মধ্যে আগুন লেগে গিয়েছিল টিভি স্টেশনে।
কলকাতার কোনও খবরই নেই। তার মানে কলকাতায় কোনও গন্ডগোল হয়নি, ঝড়-বৃষ্টিও হয়নি।
খাবার শেষ করে চায়ে চুমুক দেওয়ার পর কাকাবাবু ফোন করলেন কলকাতায়।
সন্তুই ফোন ধরল।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, কী রে, এখনও বেরোসনি?
সন্তু বলল, এই তো তৈরি হচ্ছি, আর পাঁচমিনিটের মধ্যেই বেরোব। তুমি পৌঁছে গিয়েছ আফ্রিকায়?
কাকাবাবু বললেন, না রে, এখনও মুম্বই শহরই ছেড়ে যেতে পারলাম না।
সন্তু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সে কী, কেন?
কাকাবাবু বললেন, কাল এমন ঝড় বৃষ্টি যে, আমাদের প্লেনটা আর-একটু হলেই ডিগবাজি খেয়ে পড়ে যেত। কলকাতায় কীরকম গরম?
সন্তু বলল, খুব গরম। কাল ছিল থার্টি নাইন ডিগ্রি।
কাকাবাবু বললেন, আর এখানে যখন ভোরবেলা বেরিয়েছি, তখন রীতিমতো শীত শীত করছিল।
সন্তু বলল, কাকাবাবু, আমার পরীক্ষা হয়ে গেলে আমি যাব না? আমি নিজেই চলে যেতে পারব। বাবা টিকিটের দাম দিয়ে দেবেন।
কাকাবাবু বললেন, টিকিটের দাম থাকলেই তো হল না। ভিসা নিতে হবে, ইয়েলো ফিভারের ইঞ্জেকশন, অনেক ঝামেলা। পঁাড়া, আমি তো আগে যাই, তারপর অবস্থা বুঝে যদি দরকার হয়, তোকে জানাব। আর দেরি করিস না, বেরিয়ে পড়।
স্নানটান করে নিয়ে কাকাবাবু আরও কিছুক্ষণ কাগজ পড়লেন, তারপর বেরিয়ে পড়লেন বারোটার আগেই।
এয়ারপোর্টের অবস্থা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বিমান ছাড়ছে একটার পর-একটা। কাকাবাবু নিজের কাউন্টারে গিয়ে মালপত্র জমা দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। এখন শুধু কাঁধে ছোট্ট একটা ব্যাগ।
এবার তিনি ফোন বুথে গিয়ে একটা ফোন করার চেষ্টা করলেন আফ্রিকার নাইরোবি শহরে। কিছুতেই কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে না। বারবার শোনা গেল, লাইন আউট অফ অর্ডার। কাকাবাবু এখনও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। এখন মনে হচ্ছে, একটা ওরকম ফোন থাকলে ভাল হত।
এবারেও কাকাবাবু জানলার ধারে একটা সিট পেয়েছেন। তবে একেবারে পিছনের দিকে। আজ আকাশ পরিষ্কার। এখন আফ্রিকার আকাশে ঝড়-বৃষ্টি হলেই হয়।
কাকাবাবুর মনের মধ্যে শুধু একটা চিন্তা খচখচ করছে। পৌঁছোবার কথা ছিল গতকাল, তা হল না। মি. লোহিয়াকে খবরও দেওয়া গেল না। এয়ারপোর্টে কেউ নিতে আসবে না তাঁকে। আগেরবার অমল আর মঞ্জু খবর পেয়ে চলে এসেছিল, এখন তারা আফ্রিকা থেকে ফিরে এসে মুম্বইয়ে থাকে। সেবার কাকাবাবুর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল হিলটন হোটেলে। এবার মি. লোহিয়া জানিয়েছিলেন যে, তিনি একটা নতুন বাড়ি কিনেছেন, কাকাবাবু সেখানেই থাকতে পারবেন। কাকাবাবু অবশ্য কারও বাড়িতে থাকতে অস্বস্তি বোধ করেন। তিনি চিঠির উত্তরে জানিয়েছিলেন। যে, প্রথমে তিনি কোনও হোটেলেই উঠতে চান, হিলটন হোটেলের নামও জানিয়েছিলেন। সেখানে বুকিং আছে কি না কে জানে?
যাই হোক, দেখা যাক! পৌঁছোবার পর কিছু একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে।
একটু পর একজন লোক টয়লেটের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল, আপনি রাজা রায়চৌধুরী?
কাকাবাবু মাথা নাড়লেন।
এবার লোকটি বাংলায় বলল, আপনাকে তো আমি ফোটোয় দেখেছি। আপনি স্যার কোথায় যাচ্ছেন?
কাকাবাবু বললেন, নাইরোবি।
লোকটি বেশ লম্বা, মাঝারি বয়স, মাথাভরতি কালো চুল আর থুতনিতে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। পুরোদস্তুর সুট-টাই পরা।
সে আবার জিজ্ঞেস করল, নাইরোবিতে আপনি কোনও কাজে যাচ্ছেন, না বেড়াতে?
কাকাবাবু উত্তর দিলেন, বেড়াতে। লোকটি বলল, প্রত্যেকবার তো আপনার সঙ্গে সন্তু নামের ছেলেটি থাকে, এবার সে নেই? একা যাচ্ছেন?
কাকাবাবু বললেন, এবার সন্তু আসতে পারেনি, তার অসুবিধে আছে।
লোকটি বলল, আমার নাম অরুণকান্তি বিশ্বাস। আমি তো নাইরোবিতে থাকি। আপনাকে একদিন আমার বাড়িতে আসতে হবে কিন্তু।
কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন, আপনি নাইরোবিতে কী করেন? লোকটি বলল, আমি চাকরি করি। একটা কাগজ কোম্পানির ম্যানেজার। মাঝে মাঝে ইন্ডিয়া যেতে হয়। এই নিন আমার কার্ড।
কার্ড দিয়ে তিনি টয়লেটে চলে গেলেন।
একটু পরে ফেরার সময় অরুণকান্তি আবার থেমে বললেন, এয়ারপোর্টে আপনাকে কেউ নিতে আসবে? না হলে, আমার জন্য গাড়ি থাকবে, আপনাকে নিয়ে যেতে পারি।
কাকাবাবু বললেন, একজনের আসবার কথা ছিল, কিন্তু কালকের ফ্লাইট মিস করেছি। আপনার সঙ্গে আলাপ হল, ভালই হল।
লোকটি চলে গেল নিজের জায়গায়।
কাকাবাবুর পাশে বসে আছেন দুজন আফ্রিকান। কুড়ি-বাইশ বছর বয়স, দুজনেই সাহেবি পোশাক পরা। এতক্ষণ তারা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলছিল। এবার তাদের একজন কাকাবাবুর দিকে ফিরে বলল, এক্সকিউজ মি, আমি কি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
কাকাবাবু বললেন, অবশ্যই!
লোকটি বলল, আপনারা দুজনে যে ভাষায় কথা বললেন, সেটা কী ভাষা?
কাকাবাবু বললেন, বাংলা। আপনারা এই ভাষার নাম শুনেছেন?
লোকটি মাথা নেড়ে বলল, না, আমরা সোমালিয়ার লোক। সেখানে এ ভাষা শুনিনি।
কাকাবাবু বললেন, বাঙালিরা পৃথিবীর সব দেশেই আছে। সোমালিয়াতেও আছে নিশ্চয়ই। হয়তো তাদের সংখ্যা কম। আপনারা ইন্ডিয়ার কোথায় কোথায় ঘুরেছেন?
সে বলল, আমরা ইন্ডিয়ায় থাকিনি। আমরা দুজনেই ফিলিপিন্সে পড়াশুনো করি। মুম্বইয়ে এসেছি এই ফ্লাইট ধরেই। ইন্ডিয়ার অনেক লোকই কালো লোকদের খুব অপছন্দ করে, তাই না?
কাকাবাবু হেসে বললেন, আমিও তো কালো। সাহেবদের চোখে সব ইন্ডিয়ানই কালো। আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, যাদের গায়ের রং একটু পাতলা, আমরা বলি ফরসা। কিন্তু সেই ফরসা রংও সাহেবদের মতন নয়। যাই হোক, সেই ফরসা আর আমার মতন কালো লোকের তো কোনও তফাত নেই আমাদের দেশে। শুধু বিয়ের সময় কিছু লোক ফরসা মেয়ে খোঁজে।
অন্য ছেলেটি এবার জিজ্ঞেস করল, কেন, বিয়ের সময় ফরসা মেয়ে খোঁজে কেন?
কাকাবাবু বললেন, তারা মনে করে, ফরসা মেয়ে বিয়ে করলে ছেলেমেয়েরাও ফরসা হবে। তা কিন্তু সব সময় হয় না। আমার মা খুব ফরসা ছিলেন, অথচ আমার গায়ের রং আমার বাবার মতন কালো!
ছেলেটি খানিকটা পশ্চিমের সুরে বলল, তা আবার হয় নাকি? ফরসা মেয়ের কালো ছেলে?
কাকাবাবু বললেন, হবে না কেন, অনেক হয়। আর-একটা ব্যাপার, আমাদের দেশে মেয়েদের রং ফরসা হলে তাদের সুন্দরী বলে, কিন্তু ছেলেরা বেশি ফরসা হলে তাদের লোকে খ্যাপায় অনেক সময়। স্কুলে আমাদের সঙ্গে একটি ছেলে পড়ত, সে খুব ফরসা। আমরা তাকে রাঙামুলো, রাঙামুলো বলে খ্যাপাতুম, আর সে খুব রেগে যেত।
ছেলেটি তবু ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের দেশে কিছু লোক কালো, কিছু লোক ফরসা হয় কেন?
কাকাবাবু বললেন, তার কারণ, বহু জাতের মানুষ তো নানা দেশ থেকে এখানে এসে তারপর থেকে গিয়েছে। তারা কেউ ফরসা, কেউ কালো, কেউ বাদামি। সবাই মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। তাই কেউ খুব কালো, কেউ কম কালো, কেউ একটু ফরসা, কেউ বেশি ফরসা, এই সবরকমই আছে। পৃথিবীর আর কোনও দেশে একটা জাতির মধ্যে এতরকম চামড়ার রঙের মানুষ দেখা যায় না। সেই জন্যই তো আমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, হেথায় আর্য, হেথা অনার্য!
তাকে হঠাৎ রূঢ়ভাবে থামিয়ে দিয়ে অন্য ছেলেটি বলল, এনাফ! নাউ স্টপ টকিং। কিপ কোয়ায়েট!
কাকাবাবু বেশ অবাক হলেন। এ কী ব্যাপার! বেশ গল্প করছিল, হঠাৎ অভদ্রের মতন কেউ স্টপ টকিং বলে নাকি? তাও একজন বয়স্ক লোককে? ওরা নিজেরাই তো কথা শুরু করেছিল।
ওরা দুজনেই ঘনঘন ঘড়ি দেখতে লাগল। কাকাবাবু আবার বই পড়ায় মন দিলেন। এখনও অন্তত ঘণ্টাদেড়েক দেরি আছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর একটা ঘোষণা শুরু হল। সেটা একটু শুনেই কাকাবাবু দারুণ চমকে উঠলেন।
ক্যাপটেন বলছেন, আপনারা যে-যার সিটে বসে থাকুন। প্যানিক করবেন না। আমি এই বিমানের গতিপথ বদলাতে বাধ্য হচ্ছি। আমার ঘাড়ের কাছে একজন রিভলভার ধরে আছে। তার নির্দেশ মতন আমি বিমানটিকে নাইরোবির বদলে কাম্পালায় নামাব। এরা বলছে, আপনারা যদি শান্ত হয়ে হয়ে বসে থাকেন, তা হলে কারও কোনও ক্ষতি করা হবে না।
কাকাবাবুর পাশ থেকে ছেলে দুটি তড়াক করে উঠে গিয়ে একটু দূরে দূরে দাঁড়াল। এর মধ্যে তারা মুখে কালো কাপড়ের মুখোশ পরে ফেলেছে। কোমর থেকে বার করল দুটো লাল রঙের দড়ি। সেই দড়ি তারা চাবুকের মতন হাওয়ায় শপাং শপাং শব্দ করতে লাগল।
হাইজ্যাকিং!
কাকাবাবু মনে মনে বললেন, যাঃ! আবার দেরি! আজও বোধহয় নাইরোবি পৌঁছোনো যাবে না।
তার পাশে বসা ছেলে দুটো একবার একটু অভদ্র ব্যবহার করলেও এমনিতে তো নিরীহই মনে হয়েছিল। অন্য কোনও অস্ত্রশস্ত্র নেই, শুধু দু টুকরো দড়ি দিয়ে ভয় দেখাবে? ওই দড়ি দিয়ে মারলে বেশ লাগবে ঠিকই, কিন্তু দু-তিনজন মিলে তো কেড়ে নেওয়াও যায়!
এবার সামনের বাথরুম থেকে আর-একজন কালো মানুষ বেরিয়ে এল, তারও মুখে মুখোশ আর হাতে একটা এ কে ফর্টি সেভেন বন্দুক।
সে সেটা তুলে কর্কশভাবে বলল, কেউ জায়গা ছেড়ে উঠবে না। কেউ একটাও কথা বলবে না।
দু-তিনজন মহিলা ভয়ের শব্দ করে উঠল। কেঁদে উঠল একটা শিশু।
লোকটি ধমক দিয়ে বলল, বাচ্চাটার কান্না বন্ধ করো।
বাচ্চার কান্না কী করে বন্ধ করা যায়? বোধহয় মা তার মুখে হাত চাপা দিলেন। তবু একটু একটু শোনা যেতে লাগল তার কান্না।
কাকাবাবু ভাবলেন, এরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্লেনে উঠল কী করে? আমেরিকায় একসঙ্গে চারটে প্লেন হাইজ্যাকিং হওয়ার পর (যাকে সবাই বলে নাইন/ইলেভেনের ঘটনা) সারা পৃথিবীতেই নিরাপত্তার খুব কড়াকড়ি। সুটকেস, ব্যাগ এক্স-রে হয়, সারাগায়ে হাত বুলিয়ে দেখে। কোনও অস্ত্র লুকিয়ে আনবার তো উপায়ই নেই।
তবু তো একজনের হাতে একটা মারাত্মক অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। আর-একজন পাইলটের ঘাড়ে রিভলবার চেপে ধরে আছে।
এক হতে পারে, এয়ারপোর্টে যেসব কর্মী আগে থেকে বিমানে উঠে সাফটাফ করে, তাদেরই কাউকে টাকা খাইয়েছে। সে গোপনে অস্ত্র নিয়ে কোথাও লুকিয়ে রেখে গিয়েছে। এর ফলে দেশের যে কত ক্ষতি হতে পারে, কত মানুষের প্রাণ যেতে পারে, তা সে ভাবল না? অনেকেই দেশের কথা কিংবা অন্য মানুষের কথা ভাবে না। টাকার লোভে সব কিছু করতে পারে। নিশ্চয়ই বহু টাকা দিয়েছে।
কাকাবাবু ঠিক ভয় পাননি। এর আগে তিনি অনেকবার সাংঘাতিক বিপদে পড়েছেন, তাই ভয়কে জয় করে ফেলেছেন। কিন্তু এর পরে কী হবে, সেই কৌতূহলেই তিনি ছটফট করছেন। এই হাইজ্যাকাররা অল্পবয়সি ছেলে, এরা নিজের জীবনের পরোয়া করে না। এদের দাবি না মিটলে এরা পুরো প্লেনটাই উড়িয়ে দিতে পারে। তাতে আর সবাই মরবে, নিজেরাও মরবে!
কাকাবাবু আপনমনে একবার মাথা নাড়লেন। নাঃ, এতবার এত বিপদ থেকেও তিনি বেঁচে গিয়েছেন। এখন এই আকাশ-দস্যুদের জন্য তাঁকে প্রাণ দিতে হবে? এটা ঠিক যেন বিশ্বাস হয় না।
সবাই চুপচাপ, হঠাৎ একজন বয়স্ক যাত্রী উঠে দাঁড়াল।
সঙ্গে সঙ্গে একজন হাইজ্যাকার ধমক দিয়ে বলল, সিট ডাউন! সিট ডাউন!
লোকটি বলল, আমি একবার টয়লেটে যাব! হাইজ্যাকারটি বলল, না, এখন যাওয়া চলবে না। বোসো! বোসো!
লোকটি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল, আমার খুব বাথরুম পেয়েছে। এক্ষুনি একবার যেতেই হবে!
লোকটির মুখ দেখে অন্য সময় হাসি পেয়ে যেত। কিন্তু এখন লোকটির উপর মায়াই হচ্ছে।
হাইজ্যাকারটি ভেংচি কেটে বলল, খুব বাথরুম পেয়েছে? পাক! এখন কিছুতেই যাওয়া যাবে না।
লোকটি বেপরোয়া হয়ে তবু দু-এক পা এগিয়ে গেল।
হাইজ্যাকারটি এগিয়ে গিয়ে তার চুলের মুঠি ধরে বলল, মরতে চাস? না হলে চুপ করে বোস!
সে হাতের দড়িটি দিয়ে লোকটির পিঠে ভীষণ জোরে একটা চাবুক কষাল।
লোকটি এবার বসে পড়ল নিজের সিটে। নিচু করল মাথাটা। কোনও কোনও বুড়ো মানুষের একটা রোগ থাকে। টয়লেট পেলে বেশিক্ষণ সামলাতে পারে না। ওকে টয়লেটে যেতে দিলে কী এমন ক্ষতি হত?
এখানে প্রতিবাদ করে লাভ নেই। উলটে অপমান সহ্য করতে হবে?
সবাই একেবারে চুপচাপ। শুধু সেই বাচ্চাটার মুখ বন্ধ করে কান্না শোনা যাচ্ছে।
সময় যেন কাটতেই চায় না। প্লেনটা যেন যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।
এর মধ্যে একজন হাইজ্যাকার ফস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলল।
আজকাল সব প্লেনে ধূমপান খুব কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বাথরুমে গিয়ে কেউ সিগারেট ধরালেও ধরা পড়ে যায়। হাইজ্যাকাররা কোনও নিয়মকানুন মানছে না।
কাকাবাবু একবার ভাবলেন, ওকে একবার চেঁচিয়ে বললে কেমন হয় যে, অ্যাই, তুমি প্লেনে সিগারেট খাচ্ছ। তোমার পাঁচশো ডলার ফাইন হবে।
কাকাবাবু অতি কষ্টে নিজেকে সংযত করলেন। এখন রসিকতার সময় নয়, এরা রসিকতা বুঝবেও না। হয়তো দুম করে গুলি চালিয়ে দেবে।
এরকম অবস্থায় বই পড়তেও মন বসে না। কাকাবাবু মনটাকে অন্য দিকে ফেরাবার জন্য মনে মনে কবিতা বলতে চাইলেন। কোন কবিতা? রবীন্দ্রনাথের কবিতা কাকাবাবুর খুবই ভাল লাগে। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সুকুমার রায়ের লেখা।
মানুষের মন অতি বিচিত্র। কখন যে কোনটা মনে পড়ে তার কোনও ঠিকঠিকানা নেই।
কোনও কবিতার বদলে তাঁর মনে পড়ল, সুকুমার রায়েরই লেখা একটা গান। লক্ষ্মণের শক্তিশেল নাটকের। কাকাবাবু নিজে স্কুলে পড়ার সময় এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তাই অনেক গান তাঁর এখনও মনে আছে। একটা গান এইরকম:
অবাক কল্লে রাবণ বুড়ো—
যষ্ঠির বাড়ি সুগ্রীবে মারি
কল্লে যে তার মাথা গুঁড়ো
অবাক কল্লে রাবণ বুড়ো।
(আহা) অতি মহাতেজা সুগ্রীব রাজা
অঙ্গদেরই চাচা খুড়ো,
অবাক কল্লে রাবণ বুড়ো!
মনে মনে এইটুকু গাইতেই কাকাবাবুর হাসি পেয়ে গেল, যষ্ঠি মানে তো লাঠি। রাবণ কি হাতে লাঠি নিয়ে যুদ্ধ করতে এসেছিলেন? রাবণের তো অনেক রকম অস্ত্রশস্ত্র থাকার কথা? ছেলেবেলায় থিয়েটার করার সময় এ কথাটা তো মনে আসেনি!
আর-একটা গান:
শোনরে ওরে হনুমান হওরে ব্যাটা সাবধান
আগে হতে পষ্ট বলে রাখি।
তুই ব্যাটা জানোয়ার নিষ্কর্মার অবতার
কাজে কর্মে দিস বড় ফাঁকি!
কাকাবাবু নিজে জাম্বুবানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। জাম্বুবানের কি কোনও গান ছিল? না বোধহয়! আর-একটা গান ছিল বিভীষণের…। এইসব ভাবতে ভাবতেই কিছুটা সময় কেটে গেল।
এবার ক্যাপ্টেনের ঘোষণা শোনা গেল, সবাই সিটবেল্ট বেঁধে নিন। আমরা কাম্পালা বিমান বন্দরে অবতরণ করছি। কেউ ব্যস্ত হবেন না, আগে থেকে উঠে দাঁড়াবেন না…।