Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অন্য মা || Pritha Chatterjee

অন্য মা || Pritha Chatterjee

অন্য মা

ও মা কোথায় তুমি? আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে যে। কোথায় তুমি? তোমাকে বলি আমার বেরোনোর সময় যাবে না কোথাও।

দাঁড়া রে!! এতো তাড়া করলে হয়? বয়েস হচ্ছে তো নাকি?

দাও দেখি পা টা!! আসছি আমি। তুমি সাবধানে অফিস যেও। আমি ফিরেই তোমাকে ফোন করবো। আসছি আমি।

আয় বাবা। সাবধানে যাস।

মা আর ছেলের ছোট্ট সংসার, অনেক কষ্টে গুছিয়ে তুলেছে বিপাশা। সেই কোন ছোট্ট বেলায় মা হারা সুমনকে বুকে তুলে নিয়েছিল সে, নিজের সব ভুলে এতো গুলো বছর শুধু ওকে নিয়েই মেতে আছে সে। ছেলেকে সে আদর করে সানাই ডাকে ছোটবেলায় একবার কাঁদা শুরু করলে সহজে তাকে আর থামানো যেত না।

—— রিয়া বিপাশা আর উজ্জ্বল , গৌতম বাবুর তিনটি ছেলে মেয়ে। গৌতম বাবু মারা যান খুব কম বয়সে, রিয়া বিপাশা সবে কলেজে পাশ দিয়েছে, উজ্জ্বল তখন সবে স্কুল ফাইনাল দিয়েছে। হঠাৎ একদিন গৌতম বাবুর শালা একটা সম্মন্ধ নিয়ে এলো বিপাশার জন্য। মিনু দেবী ( গৌতম বাবুর স্ত্রী) একথা বিপাশাকে জানাতেই সে এক কথায় জানিয়ে দেয় সে আরো পড়াশোনা করবে তাই বিয়ে এখন সে করবে না। এদিকে মিনু দেবীর ভাই তাকে পরামর্শ দেন যে এত ভালো পাত্র হাতছাড়া করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, বিপাশা বিয়ে না করতে চাইলে রিয়ার জন্যই আমরা কথা বলি।

——- পাত্রপক্ষ আসে রিয়াকে বেশ পছন্দও হয় তাদের!!! বিপাশা রিয়ার থেকে বয়সে মোটে বছর খানেক ছোটো, কিন্তু সে রিয়ার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমতী অনেকটা বেশি মানুষকে বুঝতে পারে চিনতে পারে, তার সেই বুদ্ধি টুকু দিয়েই রমেশ আর তার পরিবার কোনোটাই বিপাশার ভালো লাগেনি!!!! বাঁধা দিয়েছিল সে, কিন্তু প্রথম কথা বাড়ির সবার এই সম্পর্কে কোনো অসুবিধা ছিল না রিয়ার ও না। যেখানে রিয়ারই কিছু বলার ছিল না, আপত্তি ছিল না তাই বিপাশার কোনো কথাই আর ধোপে টেকেনি। শুভদিনে চার হাত এক হয়। বিয়ের পর কয়েকটা মাস ঠিকঠাক চললেও তারপর থেকে শুরু হয়ে যায় নানান সমস্যা!!! তার মধ্যে সবথেকে বড়ো সমস্যা ছিল রমেশের সন্ধেহ প্রবণতা। তারপর তো আজ টাকা কাল জিনিষ এসব নিয়ে অত্যাচার আছেই। আজকাল রমেশ প্রায়শই রিয়ার গায়ে হাত তোলে। বাপের বাড়িতে তাকে খুব একটা আসতে দেওয়া হয় না!!!! যদি আসেও রমেশ তাকে সাথে করে নিয়ে আসে আবার নিয়ে চলে যায়। শ্বশুর বাড়ির নানা গঞ্জনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে থাকে রিয়ার জীবন। বিপাশা বহুবার প্রতিবাদ করতে চাইলেও মিনু দেবী তা করতে দেননি মেয়ের সংসার করতে পারবে না তার উপর অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়বে সেই ভয়ে।
**
…… এভাবেই চলতে থাকে রিয়ার শশুরবাড়ির সংসার!! ওরা বিয়ের পর রিয়াকে পড়া বললেও তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসবের মধ্যেই একদিন জানা যায় রিয়া সন্তান সম্ভবা, সবাই খুশি রমেশ ও বেশ খুশি!!! রিয়া ও মনে মনে ভাবে সন্তান এলে তার সব দুঃখের দিন বুঝি শেষ হবে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় ও রমেশের আচরণের কিছুমাত্র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। যাইহোক নির্দিষ্ট দিনে রিয়া জন্ম দেয় এক ফুটফুটে ছেলে সন্তানের। ছেলে হওয়ায় শশুর বাড়ির সবাই খুব খুশি!!! কিন্তু সে সুখ তার বেশি দিনের ছিল না। এরপর রিয়ার কপালে নেমে আসে আরো চরম দুঃখ অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশ তার বাড়তে থাকে। এভাবেই অত্যাচারের মাত্রা একদিন সীমা ছাড়ায়!!! সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না, রমেশ ও একটা কাজে বেরিয়ে যাওয়ায় ঘরে ছেলেকে নিয়ে একাই ছিল রিয়া। মনে মনে ঠিক করে প্রতিদিনের এই যন্ত্রণাময় জীবনের সে আজই অবসান করবে, সেদিন রিয়া নিজের গলায় কাপড় দিয়ে আত্মহত্যা করে। রমেশ বাড়ি ফিরে অনেক ডাকাডাকির পর ও কোনো উত্তর না পেয়ে শেষে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে রিয়া গলায় দড়ি দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।

—— বেশ অনেক টাই রাত মিনু দেবী সেদিন সারাক্ষণ শুধু রিয়ার কথা বলেছে,” আজ প্রায় এক সপ্তাহ হলো রিয়ার কোনো খবর নেই, বাচ্চাটাও কেমন আছে জানা নেই!! হুটহাট ফোন করতে ও ভয় হয় !! আবার মেয়েটার উপর কি অত্যাচার শুরু করে”? সেদিন যদি তোর কথাটা একটু শুনতাম মেয়েটা এতো কষ্ট পেতো না। মা হয়ে একি করলাম আমি? বলেই মিনু দেবী কেঁদে ওঠে। রাত তখন প্রায় ১২ টা হঠাৎই বেজে ওঠে ঘরের ফোনটা!! “ওই বুঝি রিয়ার ফোন” ছুটে গিয়ে ফোনটা ধরেন মিনু দেবী।

—- আজ্ঞে আমি রমেশ বলেছিলাম। ফোনের ওপর থেকে ভেসে আসে রমেশের গলা!! রিয়ার শরীরটা বিশেষ ভালো নেই ওকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে সেটাই জানানোর ছিল। ” হসপিটাল কোন হসপিটাল? কি হয়েছে রিয়ার”? চেঁচিয়ে ওঠেন মিনু দেবী।

—– ফোনের ওপার থেকে রমেশ খুব ঠান্ডা মাথায় বলে: না তেমন কিছু না, শরীরটা একটু খারাপ হওয়াতে ডাক্তার বাবুই বললেন হসপিটালে দিতে তাই নিয়ে এসেছি ভয় পাবার কিছু নেই। কোন হসপিটাল বলেই ফোনটা কেটে দিল রমেশ।

—— ফোনটা পেয়েই মিনু দেবী কেঁদে ওঠে ” সকাল থেকে আজ মনটা কু গাইছে আমাকে এখুনি নিয়ে চল, রমেশের কোনো কথায় আমার বিশ্বাস নেই, আমি ওর একটা কথাও বিশ্বাস করি না”।

——- সেদিন রাতে আর দুই ছেলে মেয়েকে সাথে নিয়ে হসপিটালে ছুটে যান মিনু দেবী। যতক্ষণে হসপিটাল গিয়ে ওরা পৌঁছায় ততক্ষনে ডাক্তার রিয়াকে মৃত বলে জানিয়ে দেয়, এবং যেহেতু এটা সুইসাইড কেস তাই পুলিশে ও খবর করা হয়। মিনু দেবী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছায় তখন রাত প্রায় ১.৩০। রিয়ার ৩বছরের ছোট্ট ছেলেটা রমেশের কোলে কেঁদেই চলেছে কিছুতেই ওকে থামানো যাচ্ছে না। মিনু দেবী ছুটে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো: ” আমার মেয়ে কোথায়”? কি করেছ ওকে তোমরা?

——- আমরা? আমরা আবার কি করবো, আপনার মেয়েই তো একা ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আমাদের সবাইকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেলো!!! ছেলেটার কথা ও একবার মনে হলো না ওর।

—– ”ফাঁসিয়ে দিয়ে গেলো” মানে? কি হয়েছে আমার মেয়ের? তখনই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কম বয়সি পুলিশ অফিসারটি এগিয়ে এসে বলেন: আপনার পরিচয়? কে হন আপনি মৃতার?

মৃতা? কে মৃতা? কে বলেছে আপনাকে রিয়া মৃত? আমাকে যে ফোনে বলা হলো রিয়ার তেমন কিছু হয়নি, সামান্য শরীর খারাপ ডাক্তার বলেছে তাই ওকে ভর্তি করা হয়েছে। আমি রিয়ার মা। মেয়ে হয় আমার। ওর কি হয়েছে অফিসার? ওরা আমার মেয়েটার উপর বিয়ের পর থেকে নানান জিনিষ নিয়ে অত্যাচার করতো ওরাই মেরে ফেলেছে। উজ্জ্বল, বিপাশা এতক্ষন দূরে দাঁড়িয়ে ছিল!!! এবার বিপাশা এগিয়ে এসে বলল অফিসার ” দিদির বডিটা কি একবার দেখা যেতে পারে? বলেই রমেশের দিকে এগিয়ে যায় ছোট্ট সুমনকে রমেশের কোল থেকে নিয়ে নেয় বিপাশা।

——– সব কিছু মিটে গেলে দুই পক্ষেরই ডাক পড়ে থানায় মিনু দেবীর সাথে সেদিন বিপাশা ও যায় সেখানে, নানা কথা বাত্রায় বিপাশা বলে ওঠে আমরা আমাদের সব অভিযোগ তুলে নেবো অফিসার!!! বিপাশার কথা শুনে মিনু দেবী বলে ওঠে এটা তুই কি বলছিস? আমার মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলেছে আর তুই বলছিস অভিযোগ তুলে নেবো? হ্যাঁ অফিসার অভিযোগ তুলে নেবো!! কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে, যদি সেটা এই লোকটা মেনে নেয় অভিযোগ তুলে নেবো। শর্ত কি শর্ত? অফিসার বলে ওঠে।

——– বিপাশা খুব দৃঢ় ভাবে বলে বাচ্চাটাকে দিয়ে দিতে হবে, চিরদিনের জন্য!!! কোর্ট পেপারে লিখে দিতে হবে কোনোদিন বাচ্চার কোনো দাবি করবে না। যদি করে? তুলে নেবো সব অভিযোগ। সেদিন কথা বলে রমেশ সেখান থেকে চলে যায়। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার বিপাশাকে জিজ্ঞাসা করে আপনি বাচ্চার বিনিময় এই লোকটাকে ছেড়ে দিতে চাইছেন কেনো?
বিপাশা উত্তর দেয় ” আমার দিদি নেই এই লোকটা যে শাস্তিই পাক না কেনো? কোনো কিছুর বিনিময় আর পাবো না ওকে বাচ্চাটা বাঁচুক সুস্থ ভাবে”। বুজলাম কিন্তু বাচ্চাটার দায়িত্ব কে নেবে? আমি নেবো জানায় বিপাশা!!! মিনু দেবী জানতে চায়, তুই নিবি? সুমনের দায়িত্ব? কি করে নিবি? এরপর তোর সংসার হলে তখন ওর কি হবে? বিপাশা বলে এখন ওর বাবার শাস্তি হলে ওর কি হবে মা? তুমি চিন্তা করো না দরকার হলে আমার কোনোদিন কোনো সংসার হবে না। সুমন আমার পরিচয় বড়ো হবে! একজনের তো হলো সংসার আমার আর নাই বা হলো। আমি ওকে কোনোদিন জানতে দেবো না মা সত্যিটা কি? এবার থানার অফিসার অবাক হয়ে জানতে চায় তোমার উদ্দেশ্য ভালো কিন্তু তুমি যে এত বড় দায়িত্ব নিতে চাইছো তুমি কি করো? পড়াশুনা করি এরপর কি করবো জানি না কিন্তু কিছু একটা করবো আমার দিদি থাকলে ওর জন্য যা কিছু করতো তার থেকে বেশিই করবো একটা খারাপ লোকের জন্য ও ওর বাচ্চাটার কথা ভাবলো না। মাসি তো মায়েরই মতো তাই সেই দায়িত্ব আমিই নিলাম।
****
——– মা ভাইয়ের আপত্তি সত্ত্বেও বিপাশা নিজের সিদ্বান্তে অনর রইল। কোর্ট পেপারে লিখিত ভাবে সে সুমনের অভিভাবক। রমেশকে সে পরিষ্কার জানিয়ে দিল তাকে যেনো আর কোনোদিন সুমনের চৌহদ্দিতে দেখা না যায়। পড়াশুনা ছেড়ে দিল বিপাশা চেষ্টা চরিত্র করে একটা চাকরিও জুটিয়ে নিল। ছোট্ট সুমন তার অন্য মা আর দিদার দেখভালে আজ অনেকটা বড়ো। সময় পেরিয়া গেছে অনেক গুলো বছর বিপাশা আজও জানতে দায়নি সত্যিটা কি? সুমন কখনো জানতেও চায়নি কে তার বাবা কি তার পরিচয়? সে আর তার মা দিদা এটাই ছিল সুমনের পৃথিবী। কালের নীয়মে উজ্জ্বল ও জীবনে একটা জাগায় গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করে সে বউ নিয়ে আলাদাই থাকে। আর বিপাশার সংসারে বিপাশা তার ছেলে আর তার বুড়ি মা।

——- সেদিন সন্ধ্যায় পরিশ্রান্ত বিপাশা এসে মার জানতে চায় তোমার সব ওষুধ পত্র ঠিকমতো আছে তো? সময় মতো জানিও নানা কাজে থাকি সবসময় সব কিছু মনে থাকে না। ও ভাই ফোন করেছিল তুমি কেমন আছো জানতে? বললো সামনের সপ্তাহে আসবে বউ নিয়ে। কি হলো মা কিছু বলছো না যে? শরীর , ঠিক আছে তো? সুমন ক্লাস টেন সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে উজ্জল টাও নিজের মতো করে সংসার গুছিয়ে নিল, তুই কি পেলি মা? সারাজীবন আমার ভুলের মাসুল গুনে গেলি। পারিস না একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিতে? যেদিন আমি থাকবো না সেদিন কি হবে ভেবে আমি রাতে ঘুমোতে পারি না। ” তুমি আবার শুরু করলে মা? সেদিন আমার ছেলে আছে আর শুধু তোমার ভুল কেনো বলো দোষ তো আমার ও ছিল সেদিন যদি আমি রাজি হয়ে যেতাম বিয়েতে দিদিকে তাহলে এভাবে চলে যেতে হতো না। সুমনকে দেখে মনে হয় না তোমার দিদি তোমার কাছেই আছে? আমি ভালো আছি মা যেটা করেছি নিজের ইচ্ছায় করেছি বার বার সেটাকে তুমি কেনো নিজের ভুলের নাম দাও? আমার ভালো লাগেনা”।

——– মিনু দেবী মারা গেছেন তাও বেশ কিছু বছর। সুমন ডাক্তারি পড়ছে ফাইনাল ইয়ার। ভারী চেহারায় মোটা চশমার ফ্রেমে বিপাশা আজ পাকা গৃহীনি। প্রসব যন্ত্রণা টুকু তাঁকে ভোগ করতে হয়নি একথা সত্যিই কিন্তু বাকি কোনো যন্ত্রণাই তার সেই যন্ত্রণা টুকুর কাছে বুঝি একেবারে ম্লান নয়। সুমন ও মা ছাড়া কিছুই বোঝে না । দিব্যি কাটছিল মা ছেলের সংসার।

——– সেদিন বিপাশার শরীর ঠিক না থাকায় সময়ের কিছু আগেই সে বাড়ি ফিরে এসেছিল। ফিরে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এসে বসে ড্রইংরুমের সোফায়, হটাৎ করে দরজায় বেল বাজাতে সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে !! না, সুমনের ফেরার সময় তো এখনও হয়নি!!! তাহলে এই সময় আবার কে এলো? উঠে গিয়ে দরজা খুলতে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে” একি আপনি”? এখানে কি মনে করে? রমেশ উত্তর দেয় নিজের ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছি। ” ছেলে কার ছেলে”? এখানে আপনার ছেলে বলে কেউ থাকে না। রমেশ বলে ওঠে সেতো কোর্ট পেপারে। আসল সত্যি তাতে পাল্টাবে না বিপাশা। সুমন আমার সন্তান তার এবার জানার সময় এসেছে তার আসল পরিচয়।

——- আমি আপনাকে চলে যেতে বলছি এখান থেকে। ওর উপর আপনার কোনো অধিকার নেই। আপনি আমার দিদির জীবনটা শেষ করে দিয়েছেন আপনাকে আমি আমার ছেলের দিকে হাত বাড়াতে দেবো না। ” কি ছেলে ছেলে করছো ? বিপাশা যেই ছেলে নিয়ে এত মাতামাতি করছো তার শরীরে আমার রক্ত বইছে। আমি যদি তোমার দিদির খুনি হয়ে থাকি তাহলে ও সেই খুনীরই ছেলে। তুমি চাইলেও তা পাল্টাবে না তুমি চিৎকার করে সত্যি বদলাতে পারবে না। এত বছর আমি সরে ছিলাম আর থাকবো না দেখা করবো নিজের ছেলের সাথে সব বলব ওকে কি ভাবে তোমরা ষড়যন্ত্র করে তাকে আমার থেকে সরিয়া রেখেছিলে এতো বছর।

——— ভাগ্যের পরিহাসে কি না জানা নেই কিন্তু সেদিন সুমন ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথাই শুনেছিল। এবার সে ধির পায়ে ঘরের ভিতরে এসে দাঁড়ায়। বিপাশার মুখের দিকে তাকিয়ে সে হাঁসে তারপর রমেশের দিকে তাকিয়ে বলে : ” আমি আপনার সন্তান একথা সত্যি কিন্তু আপনার যে সত্যিটা জানা নেই সেটা হলো আমি আমার দুই মায়েরও সন্তান।কিন্তু আমি তো আপনার পিতৃত্ব স্বীকার করি না। কোনোদিন করিওনি। তাহলে এত বছর বাদে আপনি কিসের দাবিতে এসেছেন এখানে? আপনি চলে যান এখান থেকে!!! আপনি আমার জন্মদাত্রীকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছেন সেদিন আমি অবুঝ ছিলাম ছোটো ছিলাম কিছু জানতে পারিনি বুঝতে পারিনি কিন্তু আজ যদি আপনি আমার আর এক মায়ের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টাও করেন তাহলে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার মায়ের স্বামী। রমেশ বুঝতে পারে তার কোনো সড়যন্ত্রই কোনো কাজে লাগবে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে চলে যায় সেখান থেকে।

——- বিপাশা নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে সুমনের দিকে। সুমন বলে ওঠে মা এখনো তাকিয়ে থাকবে? আমার খুব খিদে পেয়েছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি আমাকে খেতে দাও। পিছন থেকে ডেকে ওঠে বিপাশা সানাই!!!! সুমন মা এর দিকে তাকিয়ে বলে: আমি সব জানি মা দিদামণি আমাকে সেদিনই সব বলেছিল যেদিন স্কুলে আমাকে বন্ধুরা বাবার নাম প্রশ্ন করায় আমি কোনো উত্তর দিতে না পেরে রাগে দুঃখে স্কুল থেকে চলে এসেছিলাম স্কুল না করে তোমাকে প্রশ্ন করবো বলে কে আমার বাবা, কি তার পরিচয়? কেনো এতদিন তার থেকে আমাকে সরিয়ে রাখা হয়েছে”?

——– সেদিন থেকে তোমার প্রতি সন্মান শ্রদ্ধা আমার অনেক গুনে বেড়ে গেছিল মা। আমার এক মা পারেনি,কিন্তু আর এক মা নিজেকেই ভুলে গেছে আমার জন্য আমার গর্ভধারিনীর থেকে ও আমার এই অন্য মাকে নিয়ে আমার অনেক বেশি গর্ব হয়। অহংকার হয় নিজেকে তোমার ছেলে বলে পরিচয় দিতে। তুমিই তো আসল মা। তুমিই তো দৃষ্টান্ত মা যে একটা মেয়ে চাইলেই সব পারে নিজের সব ছাড়তে পারে হাসি মুখে কোনো অভিযোগ না করে। আমি তো এখানেই ধন্য যে আমি তোমার মত মায়ের সন্তান।

——— বিপাশার চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি সে পেরেছে সে বড়ো করতে নয় শুধু সে মানুষ করতে পেরেছে। ” বুঝেছি অনেক হয়েছে এখন যাও ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও এই তো খিদে পেয়েছে বলে খুব বলা হচ্ছিলো।

——– মা একটা কথা বলবো? শুনলে তুমি খুব রাগ করবে কিন্তু তাও বলতে ইচ্ছে করছে। ” কি কথা শুনি!!! সেইদিন স্কুলে না আমাকে ঢুকতে দিচ্ছিল না দিদামনি গিয়ে হেড স্যারের সাথে দেখা করে তারপর আমি স্কুলে ঢুকি”। মা প্লিজ তুমি রাগ করো না। হা হা হা মা ছেলের নির্মল হাসিতে ভরে ওঠে ঘরের অনাচ কানাচ।

যে সংসারে যে সমাজে মেয়েদের কোনো সন্মান থাকে না সমাদর থাকে না সেই সংসার সেই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঈশ্বরের ও অসাধ্য।

*যে নারী সৃষ্টির আদি অন্ত এই সমাজে সে কবে পাবে তার যোগ্য সন্মান*।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress