Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হোরিখেলা || Horikhela by Rabindranath Tagore

হোরিখেলা || Horikhela by Rabindranath Tagore

রাজস্থান

পত্র দিল পাঠান কেসর খাঁ ‘ রে
কেতুন হতে ভূনাগ রাজার রানী —
‘ লড়াই করি আশ মিটেছে মিঞা ?
বসন্ত যায় চোখের উপর দিয়া ,
এসো তোমার পাঠান সৈন্য নিয়া —
হোরি খেলব আমরা রাজপুতানী ।’
যুদ্ধে হারি কোটা শহর ছাড়ি
কেতুন হতে পত্র দিল রানী ।

পত্র পড়ি কেসর উঠে হাসি ,
মনের সুখে গোঁফে দিল চাড়া ।
রঙিন দেখে পাগড়ি পরে মাথে ,
সুর্মা আঁকি দিল আঁখির পাতে ,
গন্ধভরা রুমাল নিল হাতে —
সহস্রবার দাড়ি দিল ঝাড়া ।
পাঠান সাথে হোরি খেলবে রানী ,
কেসর হাসি গোঁফে দিল চাড়া ।

ফাগুন মাসে দখিন হতে হাওয়া
বকুলবনে মাতাল হয়ে এল ।
বোল ধরেছে আমের বনে বনে ,
ভ্রমরগুলো কে কার কথা শোনে ,
গুন্‌গুনিয়ে আপন – মনে – মনে
ঘুরেঘুরে বেড়ায় এলোমেলো ।
কেতুন পুরে দলে দলে আজি
পাঠান – সেনা হোরি খেলতে এল ।

কেতুনপুরে রাজার উপবনে
তখন সবে ঝিকিমিকিবেলা ।
পাঠানেরা দাঁড়ায় বনে আসি ,
মুলতানেতে তান ধরেছে বাঁশি —
এল তখন একশো রানীর দাসী
রাজপুতানী করতে হোরিখেলা ।
রবি তখন রক্তরাগে রাঙা ,
সবে তখন ঝিকিমিকি বেলা ।

পায়ে পায়ে ঘাগরা উঠে দুলে ,
ওড়না ওড়ে দক্ষিনে বাতাসে ।
ডাহিন হাতে বহে ফাগের থারি ,
নীবিবন্ধে ঝুলিছে পিচকারি ,
বামহস্তে গুলাব – ভরা ঝারি —
সারি সারি রাজপুতানী আসে ।
পায়ে পায়ে ঘাগরা উঠে দুলে ,
ওড়না ওড়ে দক্ষিনে বাতাসে ।

আঁখির ঠারে চতুর হাসি হেসে
কেসর তবে কহে কাছে আসি ,
‘ বেঁচে এলেম অনেক যুদ্ধ করি ,
আজকে বুঝি জানে – প্রাণে মরি ! ‘
শুনে রানীর শতেক সহচরী
হঠাৎ সবে উঠল অট্টহাসি ।
রাঙা পাগড়ি হেলিয়ে কেসর খাঁ
রঙ্গভরে সেলাম করে আসি ।

শুরু হল হোরির মাতামাতি ,
উড়তেছে ফাগ রাঙা সন্ধ্যাকাশে ।
নব বরন ধরল বকুল ফুলে ,
রক্তরেণু ঝরল তরুমূলে —
ভয়ে পাখি কূজন গেল ভুলে
রাজপুতানীর উচ্চ উপহাসে ।
কোথা হতে রাঙা কুজ্ঝটিকা
লাগল যেন রাঙা সন্ধ্যাকাশে ।

চোখে কেন লাগছে নাকো নেশা
মনে মনে ভাবছে কেসর খাঁ ।
বক্ষ কেন উঠছে নাকো দুলি ,
নারীর পায়ে বাঁকা নূপুরগুলি
কেমন যেন বলছে বেসুর বুলি ,
তেমন ক ‘ রে কাঁকন বাজছে না !
চোখে কেন লাগছে নাকো নেশা
মনে মনে ভাগছে কেসর খাঁ ।

পাঠান কহে , ‘ রাজপুতানীর দেহে
কোথাও কিছু নাই কি কোমলতা !
বাহুযুগল নয় মৃণালের মতো ,
কণ্ঠস্বরে বজ্র লজ্জাহত —
বড়ো কঠিন শুষ্ক স্বাধীন যত
মঞ্জরীহীন মরুভূমির লতা ।’
পাঠান ভাবে দেহে কিম্বা মনে
রাজপুতানীর নাইকো কোমলতা ।

তান ধরিয়া ইমন – ভূপালীতে
বাঁশি বেজে উঠল দ্রুত তালে ।
কুণ্ডলেতে দোলে মুক্তামালা ,
কঠিন হাতে মোটা সোনার বালা ,
দাসীর হাতে দিয়ে ফাগের থালা
রানী বনে এলেন হেনকালে ।
তান ধরিয়া ইমন – ভূপালীতে
বাঁশি তখন বাজছে দ্রুত তালে ।

কেসর কহে , ‘ তোমারি পথ চেয়ে
দুটি চক্ষু করেছি প্রায় কানা ! ‘
রানী কহে , ‘ আমারো সেই দশা ।’
একশো সখী হাসিয়া বিবশা —
পাঠান – পতির ললাটে সহসা
মারেন রানী কাঁসার থালাখানা ।
রক্তধারা গড়িয়ে পড়ে বেগে
পাঠান – পতির চক্ষু হল কানা ।

বিনা মেঘে বজ্ররবের মতো
উঠল বেজে কাড়া – নাকাড়া ।
জ্যোৎস্নাকাশে চমকে ওঠে শশী ,
ঝন্‌ঝনিয়ে ঝিকিয়ে ওঠে অসি ,
সানাই তখন দ্বারের কাছে বসি
গভীর সুরে ধরল কানাড়া ।
কুঞ্জবনের তরু – তলে – তলে
উঠল বেজে কাড়া – নাকাড়া ।

বাতাস বেয়ে ওড়না গেল উড়ে ,
পড়ল খসে ঘাগরা ছিল যত ।
মন্ত্রে যেন কোথা হতে কে রে
বাহির হল নারী – সজ্জা ছেড়ে ,
এক শত বীর ঘিরল পাঠানেরে
পুষ্প হতে একশো সাপের মতো ।
স্বপ্নসম ওড়না গেল উড়ে ,
পড়ল খসে ঘাগরা ছিল যত ।

যে পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল
সে পথ দিয়ে ফিরল নাকো তারা ।
ফাগুন – রাতে কুঞ্জবিতানে
মত্ত কোকিল বিরাম না জানে ,
কেতুনপুরে বকুল – বাগানে
কেসর খাঁয়ের খেলা হল সারা ।
যে পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল
সে পথ দিয়ে ফিরল নাকো তারা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress