Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হিসেবে ভুল ছিল (১৯৯৭) || Samaresh Majumdar » Page 6

হিসেবে ভুল ছিল (১৯৯৭) || Samaresh Majumdar

রবিবার সকালে অমল সোম এলেন পুলিশ অফিসারের জিপে চেপে। ডেরেক তাঁকে অভ্যর্থনা জানাল। এই গ্রাম এবং তার মানুষদের দেখে তিনিও বেশ অবাক! অর্জুনের ঘরে এসে তিনি বললেন, বেশ ভালই তো ছিলে বলে মনে হচ্ছে।

ছিলাম কিনা জানি না। কিন্তু একটা অন্যায় করে ফেলেছি।

কীরকম?।

অর্জুন তখন বিশদ জানাল। পাহাড়ে আগুন, স্টেগোসর, কপ্টার ভাঙা, আগুন লাগা এবং সেই পাঁচজনের মৃতদেহ পাহাড়ে পড়ে থাকা, সব। অর্জুন বলল, আমার উচিত ছিল থানায় জানানো। কিন্তু খবরটা গ্রামের বাইরে গেলে আজ যাদের আসার কথা তারা আসবে না, এই ভয়ে জানাইনি।

এখান থেকে কত দূরে?

বেশি সময় লাগবে না।

অমল সোম পুলিশ অফিসারকে ডেকে বুঝিয়ে বললেন। অফিসার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন সেপাইকে পাঠিয়ে দিলেন স্পটে। চার্লস ওদের পথ দেখাল।

শিশুরহস্য শোনার পর অমল সোম বললেন, ডেরেকের কাকার হত্যাকারী কে?

ওই বিদেশিদের কেউ হবে।

হতে পারে, নাও হতে পারে। ওই ভদ্রলোক ছবি তুলতেন। সেই ছবিতে নিজেকে দেখতে চায় না এমন লোক বিদেশিরা হবে কেন? তারা তো তোয়াক্কাই করবে না। যে করবে সে এখানকার লোক।অমল সোম বললেন, ডেরেক, তুমি রটিয়ে দাও, যেসব ছবি তুমি আমার কাছে নিয়ে গিয়েছিলে তা আমি সঙ্গে এনেছি।

ডেরেক মাথা নেড়ে চলে গেল।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, তা হলে চার্লসকে সন্দেহ করতে হয়।

কেউ সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকী ডেরেকও। এই ব্রিফকেসটা তোমার টেবিলে রাখো। দাঁড়াও, অ্যালার্মটা সেট করে দিই। অমল সোম ব্রিফকেসের বোতাম টিপে অর্জুনকে দিলেন। সেটা টেবিলে রেখে দিল অর্জুন।

বেলা বারোটায় দুজন লোক এবং দোভাষী গ্রামে এল।

মিস্টার জোন্স তাদের নিয়ে এলেন ভিলেজ সেন্টারের সামনে। জনতা ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল চারপাশে। অর্জুন এবং অমল সোম পুলিশ অফিসারকে নিয়ে ভিড়ের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

দোভাষী বিনীত গলায় বলল, আপনাদের বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত। আপনারা আমাদের প্রস্তাব কি বিবেচনা করেছেন?

মিস্টার জোন্স বললেন, সেটা সম্ভব নয়।

দোভাষী বলল, আমাদের ধর্মগুরু আপনাদের এখানে যে আছেন সেব্যাপারে আমরা নিঃসন্দেহ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য।

মিস্টার জোন্স বললেন, এখানে কোনও ধর্মগুরু নেই।

ডেরেক বলল, আপনারা যদি শিশুদের দেখে সন্তুষ্ট হতে চান তা হলে তাদের নিয়ে আসছি।

দয়া করে আনুন।

নটি শিশুকে নিয়ে আসা হল। আগন্তুকরা গভীর আগ্রহে তাদের পর্যবেক্ষণ করল। ক্রমশ হতাশা ফুটে উঠল তাদের মুখে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করল তারা। এবার অমল সোম এগিয়ে গেলেন, আপনাদের সমাজে নারীর স্থান কীরকম? তারা কি ধর্মাচরণ করে?

দোভাষী বলল, ধর্মের অনুশাসন তাদের মানতে হয়। কিন্তু তাদের ওপর দায়িত্ব সংসার দেখাশোনা করা। কোনও ধর্মীয় ব্যাখ্যা অথবা ধর্মানুষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব তাদের দেওয়া নিষেধ।

অমল সোম বললেন, তা হলে তো আপনাদের ফিরে যেতে হয়।

দোভাষী বলল, এই নজনই ওই বয়সের শিশু এই গ্রামে আছে? আর কেউ নেই তো! সন্দেহের কারণ, আমাদের গনকাররা ভুল করেন না।

আছে। তারা মেয়ে। দেখবেন?

না। মেয়ে হয়ে আমাদের ধর্মগুরু জন্মাতে পারেন না। তাকে কেউ মেনে নেবে না।

এই সময় চার্লস সেপাইদের নিয়ে ফিরে এল।

পাহাড়ের অনেকটা খুঁজে ওরা কোনও মৃতদেহ পায়নি। এমনকী সেই প্রাণীটির শরীরের কোনও অবশিষ্ট নেই। অবশ্য কপ্টারের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে সেখানে। পাঁচটি মৃতদেহ উধাও হয়ে গিয়েছে।

পুলিশ অফিসার বললেন, বাঁচা গেল!

দোভাষী বলল, আপনারা যাদের মৃতদেহ খুঁজছেন তারা কারা?

অমল সোম বললেন, পাহাড়ে আগুন জ্বালিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল কিছু বিদেশি। তারাই ওখানে এক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।

দুর্ঘটনা ঘটেছিল?

হ্যাঁ। বোধ হয় কপ্টারে আগুন ধরে গিয়েছিল।

আপনার ভুল করছেন। কেউ আপনাদের ভয় দেখাতে চায়নি। পাহাড়ে আগুন জ্বেলে ওরা সম্ভবত কোনও আদিম প্রাণী খুঁজছিল। আমাদের গনৎকাররা তাই বলেছেন। সেই প্রাণীকে ওরা খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু পাঁচজন নয়, ছজনের ওখানে থাকার কথা।

এবার ডেরেক বন্দিকে বের করে নিয়ে এল। সে এখনও পুরো সুস্থ নয়। তাকে দেখে ওরা ছুটে গেল। নিজেদের ভাষায় কথা বলতে লাগল।

দোভাষী বলল, আমরা নিঃসন্দেহ, শিশুটি এখানে আছে।

আছে। অমল নোম বললেন। তাঁর নির্দেশে শিশুকন্যাকে নিয়ে আসা হল। তার ভুরু এবং হাতের রেখা দেখে ওরা দুহাতে চোখ ঢেকে ফেলল। বারংবার মাথা নেড়ে কাঁদতে শুরু করল।

অমল সোম বললেন, এই মেয়েকে কি আপনারা চান?

ওরা মাথা নাড়ল, না।

ওরা ফিরে যাচ্ছিল। কিন্তু অফিসার ওদের আটকালেন, আপনাদের আমার সঙ্গে থানায় যেতে হবে।

দোভাষী জিজ্ঞেস করল, কেন?

অনেক অভিযোগ। ভারত সীমান্তে বেআইনি আকাশযান ব্যবহার করা, বন্যপ্রাণী হত্যা, এদের ভয় দেখানো। ওখানে গিয়ে সেসব শুনবেন। অফিসারের ইঙ্গিতে সেপাইরা ওদের হাতকড়া পরিয়ে দেওয়ামাত্র সেন্টারের ভেতর থেকে অ্যালার্ম বাজার আওয়াজ ভেসে এল।

অর্জুন দৌড়ে ভেতরে যেতেই ওপর থেকে এডকে নেমে আসতে দেখল ভয়ার্ত মুখে। সে চিৎকার করে বলল, মিস্টার এড, আপনি!

এড ধরা পড়ল। চাপের মুখে এড় স্বীকার করল। চার্লসের কথা শুনে তার মনে লোভ জেগেছিল। কিন্তু চার্লসের সঙ্গী হয়ে নয়, আলাদা আগন্তুকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকাটা পেতে চেয়েছিল সে। তার সন্দেহ হয়েছিল পাহাড়ে অগুন জ্বলার সঙ্গে আগন্তুকদের সম্পর্ক আছে। সে সাহস করে ওইরকম আগুন জ্বলার সময় পাহাড়ে গিয়েছিল। আর তখনই বৃদ্ধ ফোটোগ্রাফার ছবি তোলেন। তার ভয় হচ্ছিল তাকে পেলে কথা উঠবে। তাই সে প্রথমবার নেগেটিভ এবং ছবি চুরি করে। কিন্তু তাতে তার ছবি ছিল না। সে দ্বিতীয়বার ভাল করে দেখতে বৃদ্ধের ডার্করুমে ঢুকলে বৃদ্ধ জেগে ওঠেন। সে পালায়। বৃদ্ধ তাকে অনুসরণ করেন। সে আগুনের দিকে এগিয়ে গিয়ে গা-ঢাকা দেয়। তখন বৃদ্ধ পেছন থেকে তার কিছু ছবি তুলেছিলেন। এই কারণেই নিজেকে বাঁচাতে সে সবাই চলে গেলে বৃদ্ধের সঙ্গে দেখা করে এবং তাকে খুন করতে বাধ্য হয়। ফিল্ম নিয়ে সে জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে। আজ যখন শোনে গোয়েন্দার ব্রিফকেসে বৃদ্ধের তোলা ছবি আছে, তখন প্রমাণ লোপ করার জন্য সে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে। অর্জুন এডের জুতো পরীক্ষা করল। জানলার নীচের ছাপের সঙ্গে কোনও পার্থক্য নেই।

আততীয় এবং আগন্তুকদের নিয়ে অফিসার নেমে গেলেন তাঁর গাড়িতে। মিস্টার জোন্স একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলেন অমল সোমের হাতে।

অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার?

সামান্য সম্মানদক্ষিণা।

অমল সোম মাথা নাড়লেন, এটা এখানকার বাচ্চাদের জন্যে খরচ করবেন। এই গ্রামে এসে যে অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে, তার মূল্য টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ডেরেকের গাড়ি করে ওঁরা ফিরছিলেন। হঠাৎ খেয়াল হতে অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, আমার ঘড়িটা কোথায়?

অর্জুন তাড়াতাড়ি পকেট থেকে বের করে দিয়ে বলল, এটা খুব উপকার করেছে।

অমল সোম সেটা দেখতে-দেখতে বললেন, । কভার দেখছি না। সেটা কই?

অর্জুন ঠোঁট কামড়াল,ওটা জঙ্গলে কখন পড়ে গিয়েছে, খুঁজে পাইনি।

এই নিয়ে দুবার হারাল।

তার মানে?

প্রথমবার আমিই হারিয়েছিলাম। কিছুতেই সতর্ক হতে শিখলাম না আমি।

আমিও। অর্জুন নিচু গলায় বলল।

Pages: 1 2 3 4 5 6
Pages ( 6 of 6 ): « পূর্ববর্তী1 ... 45 6

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress