Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হরপ্পার শিলালিপি || Sujan Dasgupta » Page 3

হরপ্পার শিলালিপি || Sujan Dasgupta

পোকোনো ঘন্টা দুয়েকের পথ। পথে তিন জায়গায় টোল দিতে হয়। আগে টোল দিতে গাড়ির লম্বা লাইন হতো। আজকাল নিউ ইয়র্ক অঞ্চলে যারা থাকে তাদের প্রায় সবার গাড়িতেই E-ZPass রেডিও ট্রান্সমিটার থাকে। টোল বুথের E-ZPass লেন দিয়ে যাবার সময়ে বুথের কম্পিউটার রেডিও থেকে গাড়ির মালিকের অ্যাকাউন্ট নম্বর বেতারেই জেনে যায় আর সঙ্গে সঙ্গেই মালিকের E-ZPass অ্যাকাউন্ট থেকে টোলটা নিয়ে নেয়। খুবই চমৎকার ব্যবস্থা, গাড়ি থামিয়ে পয়সা বার করার কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু আজকে কম্পিউটার সিস্টেম বিগড়ে বসে আছে, তাই সবাইকে টোল বুথে থামতে হচ্ছে। দু’ঘন্টার বদলে আড়াই ঘন্টা লেগে গেল।

ভেবেছিলাম স্টুয়ার্ট সাহেব কোনো কেস নিয়ে আলোচনা করতে এসেছেন। ও হরি, এসেছেন ওখানকার পুলিশ চিফ বিল ক্রসের সঙ্গে জমি কেনা নিয়ে আলোচনা করতে! বিল ক্রস ফ্লরিডাতে একটা নতুন রিয়েল এস্টেট ডেভালপমেন্টের খবর পেয়েছেন, খুব সস্তায় সেখানে প্লট আর বাড়ি বিক্রি করা হচ্ছে। জায়গাটা এখনও বিশেষ ডেভালপড নয়। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই ওখানে একটা গল্ফ কোর্স হচ্ছে –রাস্তাঘাট বাড়িঘর শপিং মল-এ ভরে উঠবে। তখন জমি বাড়ি দুটোর দামই আকাশ ছোঁয়া হবে। বিল ক্রস সেখানে একটা বাড়ি কিনছেন আর বন্ধুবান্ধবদের উদ্বুদ্ধ করছেন সেখানে কিছু কিনতে। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকে জায়গাটার ম্যাপ, বাড়িগুলোর ছবি, ভবিষ্যতে জায়গাটা কী দাঁড়াবে আর্টিস্টের আঁকা ছবিতে দেখালেন। আমাদেরও বললেন, “কিনে ফেলুন, এর থেকে ভালো ইনভেস্টমেন্ট আর কোথাও পাবেন না।”

বাড়ি কেনার টাকা বা সাহস কোনোটাই আমার নেই। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট মনে হল ইন্টারেস্টেড, কিছু কাগজপত্র বিল ক্রসের কাছ থেকে নিলেন। এই ফাঁকে একেনবাবু বিল ক্রসকে জিজ্ঞেস করলেন উনি রবার্ট উডকে চেনেন কিনা। পোকোনো খুবই ছোটো শহর, বড়োসড়ো গ্রামই বলা চলে, এখানকার বাসিন্দাদের অনেককেই হয়তো পুলিশ চিফ চেনেন। বিল ক্রস একেনবাবুর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন, “আপনি এঁকে চেনেন?”

“না স্যার, তবে শুনেছি উনি হরপ্পার একজন অথরিটি।”

“তা হতে পারেন, কিন্তু হি ইজ ডেড।”

“ডেড!”

“হ্যাঁ, সাত দিন আগে একটা খাদের মধ্যে ওঁর ডেডবডিটা দেখতে পেয়ে একজন খবর দেয়, সেই নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে।”

“মাই গড!” আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।

“কেসটা ইন্টারেস্টিং,” বলে বিল ক্রস যা বললেন তার মর্মার্থ হল :

রবার্ট উড বছর পাঁচেক আগে পোকোনোতে একটা বিশাল বাড়ি তৈরি করেন। ফ্যান্সি গাড়িও ছিল কয়েকটা। বহু বছর রবার্ট উড অকৃতদার ছিলেন। নিজে খুব খরচে ছিলেন না, আর বেশ কিছু সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। সুতরাং টাকাপয়সা ওঁর ভালোই ছিল। রিটায়ার করার মুখে ভদ্রলোক হঠাৎ নিজের এক ছাত্রীকে বিয়ে করে বসেন। ছাত্রী ক্লারার বয়স বছর পঁয়ত্রিশ, খুবই সুন্দরী। এর আগেও বোধ হয় বার দুই বিয়ে হয়েছিল। নানা ঘাটের জল খেয়ে আবার কলেজে এসে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রফেসর উডের ক্লাসে পড়তে এসে দেখতে না দেখতে প্রফেসরের প্রেমে পড়ে যান। পড়াশুনা খতম, অল্পদিনের মধ্যে ওঁদের বিয়েও হয়ে যায়। রিটায়ার করার পর রাবার্ট উড স্ত্রীকে নিয়ে পোকোনোতেই থাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীদের কাছে ওঁরা ছিলেন অত্ কাপল। একজন ভিভেশাস, হইচই করে পার্টি করতে ভালোবাসেন, আরেকজন সময় কাটান বই পত্তরে মুখে গুঁজে আর পুরোনো পাথর ঘেঁটে। তবে প্রফেসর আধখ্যাপা লোক হলেও স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসতেন। ওঁদের ঐ বাড়ি আর ফ্যান্সি গাড়িগুলো তার প্রমাণ। পোকোনোতে আসার এক বছর বাদে প্রফেসর রিসার্চের কাজে কিছুদিনের জন্য বাইরে ছিলেন, ফিরে এসেই ওঁরা আলাদা হন। প্রতিবেশীদের ধারণা এর মধ্যে মহিলা নিশ্চয় আর কারোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এগুলো নিতান্তই সন্দেহ। ডিভোর্স হয়েছিল মিউঁচুয়াল কনসেন্টে। সেটলমেন্টে প্রফেসর যা দেবার তার থেকে অনেক বেশিই ক্লারাকে দেন। বাড়িটা আর গাড়িগুলো ক্লারা পান। সেই সঙ্গে ভালো একটা মাসোহারাও। দু একজন শুনেছি ওঁকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন এতটা না দিতে। কিন্তু উনি কারোর কথা শোনেননি। কিছু বলতে গেলে চটে যেতেন। ফলে কেউই ওঁদের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাত না। ডিভোর্সের পর পরই ক্লারা বাড়ি বিক্রি করে চলে যান। প্রফেসর উড ওঁদের পুরোনো বাড়ির খুব কাছেই একটা ছোট্ট টু-বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন। এমনিতেই প্রফেসর মিশুকে ছিলেন না, কিন্তু ডিভোর্সের পর প্রায় কারোর সঙ্গেই কথা বলতেন না। প্রথম দিকে ওঁর পুরোনো অধ্যাপক বন্ধুরা মাঝেমধ্যে আড্ডা দিতে বা কাজের সূত্রে আসতেন। পরে তাঁদের আসাও খুব কমে যায়। আত্মীয়স্বজন ওঁর ছিল না। তবে ক্লারা ছাড়াছাড়ি হলেও মাঝেমাঝে ওঁকে দেখতে আসতেন। ইতিমধ্যে ক্লারা একবার বিয়েও করেছিলেন কিংবা কারোর সঙ্গে থাকতেন। সেই সম্পর্কটাও টেকেনি। প্রতিবেশীদের ধারণা হয়েছিল ক্লারা হয়তো আবার প্রফেসরের কাছে ফিরে আসতে চান। মাস তিন চার আগে ক্লারা একবার আসেন। তখন ওঁদের দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়, বাইরে থেকেও ওঁদের চেঁচামেচি অনেকের কানে আসে। তারপর থেকে ক্লারা আসেননি। প্রফেসর উড যেন আরও ডিপ্রেসড হয়ে যান। বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় কাটাতেন। বিকেলে ওঁর বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা উঁচু টিলার উপরে যে বেঞ্চিগুলো আছে তার একটাতে বসে থাকতেন। জায়গাটা নির্জন, চোখের একটু আড়ালে। হয়তো সেইজন্যেই সেখানে যেতেন, যাতে কেউ এসে বিরক্ত না করে। ডিপ্রেসড মানুষদের এইসব আচরণ কিছু অস্বাভাবিক নয়। তবে ওঁর আচরণে একটা ব্যাপার রহস্যময়। দৈনন্দিন খরচের জন্য একশো দুশো ডলার তোলা ছাড়াও চার পাঁচ মাস অন্তর অন্তর উনি একটা মোটা অঙ্কের টাকা, প্রায় হাজার দশ-পনেরো ব্যাঙ্ক থেকে তুলতেন। কী করতেন সেই টাকা নিয়ে সেটা পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। আর এটা ইদানীং কালের ব্যাপারও নয়, গত প্রায় চার বছর ধরে এটা করে যাচ্ছিলেন। শুধু মাস চারেক হল এই টাকা তোলা বন্ধ ছিল। সাধারণভাবে এটা আত্মহত্যা বলেই ধরা হতো, কিন্তু এই টাকা-রহস্যের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কেসটা ক্লোজ করা যাচ্ছে না।

“উডের এক্স-ওয়াইফের সঙ্গে কি তোমার কথা হয়েছে?” ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বিল ক্রসকে জিজ্ঞেস করলেন।

“হয়েছে, কিন্তু ফোনে। ক্লারা মাস তিনেক ধরে ক্যালিফোর্নিয়াতে একটা ডে-কেয়ার সেন্টারে কাজ করছেন। গত তিনমাস রবার্ট উডের সঙ্গে ওঁর কোনো যোগাযোগই নেই। তিনমাস আগে ওঁদের ঝগড়া নিয়ে প্রশ্ন করাতে উনি বললেন, ওটা ওঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। রবার্ট ফোন করে ক্ষমাও চেয়েছে তার জন্যে। যখন জানতে চাইলাম, শেষবার ওঁদের কবে কথা হয়েছে? উত্তরে বললেন, আর কথা হয়নি। রবার্ট বলেছিল ফোনে আর ওকে ধরা যাবে না, লাইনটা ডিসকানেক্ট করা হচ্ছে।

আমি যখন জানলাম যে রবার্ট উড মারা গেছেন, মনে হল শুনে খুবই আপসেট। একটু সামলে নিয়ে বললেন, সবে চাকরিতে ঢুকেছেন, এক্ষুণি ওঁর পক্ষে আসা সম্ভব নয়, তবে ফিউনারেল এক্সপেন্স-এর জন্য যা লাগবে উনি তা পাঠিয়ে দেবেন।”

কথাগুলো বলে বিল ক্রস একেনবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “সরি, আপনার কথার প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলে ফেললাম।… আপনি রবার্ট উড ‘ইউরোপা’ না কীসের অথরিটি বলছিলেন?”

“ইউরোপা নয় স্যার, হরপ্পা।”

“সেটা কি?”

“ওটা ইন্ডিয়ার একটা পুরোনো সিভিলাইজেশন।”

বিল ক্রস চোখটা একটু কুঁচকে বললেন, “ইণ্ডিয়ার না পাকিস্তানের?”

আমি মনে মনে ভাবছি কী ভাবে এর উত্তর বিল ক্রসের মাথায় ঢোকানো যাবে। কিন্তু প্রয়োজন নেই বুঝলাম। প্রশ্নটা করার জন্য করা। উত্তরটা ওঁর জানা। বললেন, “এইসব ব্যাপারেই উনি পাকিস্তান গর্ভর্নমেন্টের কনসাল্টেন্ট বা কিছু ছিলেন। মাঝে মাঝে পাকিস্তান থেকে ওঁর সঙ্গে দেখা করতে লোকে আসত। যেদিন উনি মারা যান, সেদিনও এসেছিল একজন, প্রতিবেশীর কাছে ওঁর খোঁজ করছিল।”

“ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার।”

“ইন্টারেস্টিং কিনা জানি না, কিন্তু এটা একটা হেডেক। গত দু’বছরে তিনটে ডেথ কেস আমরা ক্লোজ করতে পারিনি, তার মধ্যে দুটো ডেফিনিটলি হোমিসাইড। এটা নিয়ে হবে চারটে আনরিসলভড কেস।”

ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বললেন, “বিল, তুমি একেনকে কাজে লাগাও। হেডেক কমানোর এমন চমৎকার ওষুধ কোথাও পাবে না। কি বলো একেন?”

“কী যে বলেন স্যার। ওঁর অফিসে কি আর ডিটেকটিভের অভাব!”

“অভাব না থাকুক, আপনি একটু সাহায্য করলে তো সুবিধাই হয়। স্টুয়ার্ট তো আপনার প্রশংসায় সবসময়ে পঞ্চমুখ।”

“উনি স্যার, আমাকে একটু বেশি স্নেহ করেন।”

“যোগ্য লোককেই নিশ্চয় করেন, “ বিল ক্রস বললেন।

“তোমার কোনো আপত্তি আছে নাকি প্রফেসরের অ্যাপার্টমেন্ট আর যেখানে ওঁর ডেডবডি পাওয়া গেছে –সে জায়গাটা দেখাতে?” ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বিল ক্রসকে জিজ্ঞেস করলেন।

“সে কি কথা, আপত্তির কী আছে?” বলে বিল ক্রস আমাদের নিয়ে বেরোলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *