Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হরতাল || Shamsur Rahman

হরতাল || Shamsur Rahman

(শহীদ কাদরীকে)

প্রতিটি দরজা কাউন্টার কনুইবিহীন আজ। পা মাড়ানো,
লাইনে দাঁড়ানো নেই, ঠেলাঠেলিহীন;
মদ্রার রুপালি পরী নয় নৃত্যপরা শিকের আড়ালে
অথবা নোটের তাড়া গাংচিলের চাঞ্চল্যে অধীর
ছোঁয় না দেরাজ। পথঘাটে
তাল তাল মাংসের উষ্ণতা
সমাধিস্থ কর্পূরের বেবাক।
মায়ের স্তনের নিচে ঘুমন্ত শিশুর মতো এ শহর অথবা রঁদার
ভাবুকের মতো;
দশটি বাঙ্ময় পঙ্‌ক্তি রচনার পর একাদশ পঙ্‌ক্তি নির্মাণের আগে
কবির মানসে জমে যে-স্তব্ধতা, অন্ধ, ক্রুদ্ধ ক্ষিপ্র
থাবা থেকে গা বাঁচিয়ে বুকে
আয়াতের নক্ষত্র জ্বালিয়ে
পাথরে কণ্টকাবৃত পথ বেয়ে ঊর্ণাজাল-ছাওয়া
লুকানো গুহার দিকে যাত্রাকালে মোহাম্মদ যে-স্তব্ধতা আস্তিনের ভাঁজে
একদা নিয়েছিলেন ভরে
সে স্তব্ধতা বুঝি
নেমেছে এখানে।

রাজপথ নিদাঘের বেশ্যালয়, স্তব্ধতা সঙ্গিন হয়ে বুকে
গেঁথে যায়; একটি কি দুটি
লোক ইতস্তত
প্রফুল্ল বাতাসে ওড়া কাগজের মতো ভাসমান।

সবখানে গ্যাসোলিন পাইপ বিশুষ্ক, মানে ভীষণ অলস,
হঠাৎ চমক লাগে মধ্যপথে নিজেরই নিঃশ্বাস শুনে আর
কোথাও অদূরে
ফুল পাপড়ি মেলে পরিস্ফুট শব্দ শুনি;
এঞ্জিনের গহন আড়াল থেকে বহুদিন পর
বহুদিন পর
অজস্র পাখির ডাক ছাড়া পেল যেন।
সুকণ্ঠ নিবিড় পাখি আজও
এ শহরে আছে কখনো জানিনি আগে।
ট্যুরিস্ট দু’চোখ
বেড়ায় সবুজে
সমাহিত মাঠে
ছেলেদের ছায়ারা খেলছে এক গভীর ছায়ায়।
কলকারখানায়
তেজী ঘোড়াগুলো
পাথুরে ভীষণ;
ন্যাশনাল ব্যাংকের জানালা থেকে সরু
পাইপের মতো গলা বাড়িয়ে সারস এ স্তব্ধতাকে খায়।

শহর ঢাকার পথ ফাঁকা পেয়ে কত কী-যে বানালাম হেঁটে যেতে-যেতে
বানালাম ইচ্ছেমতো আঙুলের ডগায় হঠাৎ
একটি সোনালি মাছ উঠল লাফিয়ে,
বড় হতে হতে
গেল উড়ে দূরে
কোমল উদ্যানে
ভিন্ন অবয়ব
খুঁজে নিতে অজস্র ফুলের বুদোয়ারে।

হেঁটে যেতে যেতে
বিজ্ঞাপন এই সাইনবোর্ডগুলো মুছে ফেলে
সেখানে আমার প্রিয় কবিতাবলির
উজ্জ্বল লাইন বসালাম;
প্রতিটি পথের মোড়ে পিকাসো মাতিস আর ক্যান্ডিনিস্কি দিলাম ঝুলিয়ে।
চৌরাস্তার চওড়া কপাল,
এভেন্যুর গলি, ঘোলাটে গলির কটি,
হরবোলা বাজারের গলা
পাষাণপরীর রাজকন্যাটির মতো
নিরুপম সৌন্দর্যে নিথর।

স্তূপীকৃত জঞ্জালে নিষ্ক্রিয় রোদ বিড়ালছানা মৃদু
থাবা দিয়ে কাড়ে
রোদের আদর।
জীবিকা বেবাক ভুলে কাঁচা প্রহরেই
ঘুমায় গাছতলায়, ঠেলাগাড়ির ছায়ায় কিংবা
উদাস আড়তে,
ট্রলির ওপরে
নিস্তরঙ্গ বাসের গহ্বরে,
নৈঃশব্দের মসৃণ জাজিমে।
বস্তুত এখন
কেমন সবুজ হয়ে ডুবে আছে ক্রিয়াপদগুলি
গভীর জলের নিচে কাছিমের মতো শৈবালের সাজঘরে।

চকিতে বদলে গেছে আজ,
আপাদমস্তক
ভীষণ বদলে গেছে শহর আমার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *