Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

এই যে ঠাকুর সাতশোবার ডায়াল করলুম

এই যে ঠাকুর সাতশোবার ডায়াল করলুম কানেকশন পেলুম না। কেন চিন্তা করছেন? মা ঠাকরুণ ভালোই আছেন। ভালোই থাকবেন। বারোয়ারীবাবুরা আর যাই করুন, যত্নের ত্রুটি করেন না। প্যান্ডেলটি ভালোই বাঁধেন। আজকাল আবার ফ্যান ফিট করেন। খুব বাহারও দেন। কোনওটা দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের মতো। কোনওটা লাট ভবনের মতো। কোনওটা যাদুঘরের মতো। কেন আপনি দুশ্চিন্তা করে মৌতাত নষ্ট করছেন? মা আমাদের ভালোই আছেন।

কেন ফ্যাচর-ফ্যাচর করছ। বাঙালিবাবুদের হাওয়া গায়ে লেগেছে? তেনাদের স্লোগান হয়েছে, আসি যাই মাইনে পাই, কাজের জন্য ওভারটাইম। সাতশোবার করেছ, আরও সাতশোবার করো। মায়ের কি আর যৌবন আছে? বেচারার বয়সও হয়েছে, তার ওপর ভক্তদের টানা হ্যাঁচড়া। যে দেশে গেছে সে দেশের খবর কিছু রাখো? রাস্তায় বড়-বড় গর্ত। ম্যানহোলের মুখ খোলা। রাস্তার দুপাশে ড্রেনের পাঁক তোলা। তার ওপর পৌর ধর্মঘটে টন টন আবর্জনা জমে আছে। তার ওপর শহর পাতালে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সে এক সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। তোমার কোনও ধারণা নেই। ওখানে আমার চ্যালারা লড়ে যেতে পারে। ছিলিমের জোরে আমি পার লাগাতে পারি। আমার বউ কি তা পারবে। বছরের পর বছর এক ঠ্যাঙে দাঁড়াতে-দাঁড়াতে পায়ে ভেরিকোস ভেন হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীকে কি তুমি ট্রাফিক পুলিশ ভেবেছ? যাও আবার ডায়াল করো।

সাতশো কেন, সাত হাজার বার আমি ডায়াল করব। ঠাকুর ওদেশে শুধু গণতন্ত্র নয় সবই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ফোন আছে কিন্তু ঘড়ঘড় নেই।

ডায়াল ওয়ান নাইন নাইন।

প্রভু সে রাস্তাও আমি ধরেছিলুম। কেঁকো করছে। এনগেজড। ওটা এনগেজডই থাকে প্রভু।

তাহলে আমাকেই নামতে হচ্ছে। আমার বাহনটাকে ধরে আনো। ওই যে ছাইগাদায় শিং ঘষছে।

ঠাকুর এই টাইমে ষাঁড় তো শহরে ঢুকতে দেবে না।

কে বলেছে ঢুকতে দেবে না। খোদ অফিস টাইমে, সকাল নটার সময় পাল-পাল মোষ পাশ করছে টালার ব্রিজের ওপর দিয়ে। এই সেদিন আমি দেখে এলুম। আমি ভি আই পি রোড দিয়ে ঢুকব।

ঠাকুর ওটা মন্ত্রীদের রাস্তা। ভি আই পি-দের রাস্তা। ভোলেবাবাকে যেতে দেবে না। ধরে মেরে দেবে। তখন বুঝবেন মজা। এই বুড়ো বয়েসে কচুরি ধোলাই খেলে প্রাণবায়ু খাঁচা ছেড়ে পালাবে। পানা-পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার হবে। বলবে ছত্রিশটা অপরাধের দাগি আসামি। খাতায় নাম ছিল। দলেরই কেউ কুপিয়ে দিয়েছে।

কী বলছিস রে হারামজাদা। আমি ভি আই পি নই?

না প্রভু। আপনার এয়ার কন্ডিশনড গাড়ি নেই। সাইরেন নেই। দল নেই। দলে এম এল এ নেই। আপনি প্রভু মেয়েলি দেবতা। সেকালের মেয়েরা শিব গড়ে জল ঢালত আর মনের মতো বর পেত। একালের মেয়েরা থোড়াই আপনাকে কেয়ার করতে চায়। ফ্রি-মিকসিং-এর যুগ। মোড়ে মোড়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিস। হাত ধরে ঢুকছে। মিস্টার-মিসেস হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। না পোষালে দুজনে দু-রাস্তায় আদালতে গিয়ে ঢুকছে। মিসেস মিস হয়ে মিস্টারের খোঁজে বেরোচ্ছে। জীবন খুব সহজ করে নিয়েছে ঠাকুর। আপনার শোভা এখন ক্যালেন্ডারে। আর গঞ্জিকার আখড়ায়।

বলিস কী?

ঠিকই বলছি প্রভু!

দ্যাখো, দ্যাখো। ঘণ্টা বেজেছে। আপনিই বেজে উঠেছে। এ মনে হয় সেই ফোনটা, যেটার সেদিনে শ্রাদ্ধ হল চেম্বার অফ কমার্সের বাইরে।

হ্যালো! কে, মা বলছেন? আচ্ছা, আচ্ছা। ধরুন বাবা কথা বলবেন। হ্যাঁ বড় উতলা হয়েছেন।

কে পারু? ভালোভাবে পৌঁচ্ছে?

ভালোভাবে মানে? জানো আমার কী হয়েছে? একটা হাত খুলে পড়ে গেছে।

তা যাক গে। তোমার তো দশটা হাত গো। একটা গেলে কী হয়েছে। তুমি তো আর রেজেস্ট্রি অফিসের কেরানি নও যে দশ হাতে ঘুষ নেবে?

তা তো বলবেই।

কী করে ভাঙলে? টেম্পো গর্তে পড়ে গেল। বুঝলে কত্তা নাকটা ভোতা হয়ে গেছে।

সে কী! আহা অমন নাক। ওই জন্যই বলেছিলুম ও দেশের ব্যাপারে নাক গলাতে যেও না। বুড়োর কথা শুনলে না! এখন কী হবে?

একটা পাহাড়ের খাঁজে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। কে একজন বিলিতি আঠার খোঁজে বেরিয়েছে। বলছে, সে-আঠায় কাটা মুণ্ডু জুড়ে যায়। হাত তো সামান্য জিনিস!

আর নাক?

বলছে, ওটা নিয়ে মাথা ঘামাবার কিছু নেই। হাতটা গুণতিতে আসে। দশভুজের এক ভুজ গেলে পাবলিক ধরে ফেলবে। নাকটা মেকআপেই ম্যানেজ হয়ে যাবে। আজকাল নাকি মেকআপের যুগ।

ভুরু আছে না কামিয়ে দিয়েছে?

নেই। প্লাক করে তুলি দিয়ে টেনেছে। ভুরুর বাহার দেখলে এই বয়সেও তুমিও ভড়কে যাবে।

তাই নাকি? সুইট ডারলিং। কী পরিয়েছে?

জিনস আর কুর্তা পরাতে চেয়েছিল। পারেনি। আমার পোজ আর দশটা হাতের জন্য। শেষে স্যাররা রারা রারা রারা পরিয়েছে।

সে আবার কী?

বোম্বেতে খুব চলছে গো।

সে যাই পরাক, তাতে তোমার লজ্জা নিবারণ হয়েছে তো?

মোটামুটি।

উঠেছ কোথায়?

আমাদের পেছনেই মনে হয় ধাপা। খোঁটায় বেঁধে রেখেছে তাই, নইলে সপরিবারে কৈলাসের দিকে দৌড় লাগাতুম। সরস্বতীটা বেঁচেছে। ডাস্ট অ্যালার্জিতে সর্দি হয়েছে। লক্ষ্মী কাল থেকে ফোঁস ফোঁস করছে আর বলছে বোম্বে পালাব।

আরে বাংলার লক্ষ্মী তো বোম্বেতেই পালিয়েছে, আর নতুন করে কী পালাবে?

কীরকম জমেছে?

মোটামুটি। সব কীরকম ভ্যাবলা মেরে গেছে।

চাঁদা নিয়ে লাশটাশ পড়েছে?

এখনও রিপোর্ট পাইনি।

গান চলছে গান?

মিউমিউ করে। লোডশেডিং হচ্ছে খুব।

শোনো গিন্নি একটা কথা বলি, কোনও ব্যাপারে নাক গলিও না। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কারুর কোনও প্রার্থনা থাকলে, তুমি শুনো না। স্রেফ বলে দিও ওটা অসুরের ব্যাপার। আমি ওর মধ্যে নেই বাবা। যাক তুমি তাহলে ভালোই আছ। হা শোনো, বারোয়ারির হিসেবে লেখা থাকে পাঁচ পয়সার সিদ্ধি। আসার সময় পুরিয়াটা নিয়ে এসো। গণশা কী করছে?

আহা, বাছা আমার ঘুমিয়ে পড়েছে গো। নাক ডাকছে।

শোনো দুম করে না জেনে অসুর টসুর মেরে বোসো না। কে কোন দলের জানা না থাকলে ক্ষুর চালিয়ে দেবে।

পাগল হয়েছ কত্তা। আমি কি সেই মেয়ে? এতকাল অসুর মারব-মারব করেছি। সত্যিই কি মেরেছি। অসুর না থাকলে আমার পুজোই তো বন্ধ হয়ে যাবে।

গিন্নি তুমি থানার বড় দারোগা কেন হলে না গো?

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress