Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey » Page 8

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

ললিতাপ্রসাদ বসিলেন, এই সময় সেই প্রকোষ্ঠে একটি যুবক প্রবিষ্ট হইলেন, তাঁহাকে দেখিতে বেশ বলিষ্ঠ ও সুপুরুষ, মুখ দেখিয়া বুদ্ধিমান বলিয়াও বোধ হয়। যুবক অক্ষয়কুমার ও নগেন্দ্রনাথের দিকে চাহিয়া কৌতূহলাক্রান্ত দৃষ্টিতে ললিতাপ্রসাদের দিকে চাহিলেন।

অক্ষয়কুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনার নাম কি উমিচাঁদ?”

“হাঁ, আপনারা কি চান?”

“আপনি হুজুরীমলবাবুর কারপরদার?”

“হাঁ।”

“শুনিয়াছেন কি? আপনার মনিব কাল রাত্রে খুন হইয়াছেন?”

উমিচাঁদ অতিশয় আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “খুন হইয়াছেন—সে কি?—তিনি কাল রাত্রে যে আগ্রায় গিয়াছেন।”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “না, আগ্রায় যান নাই। তিনি খুন হইয়াছেন।”

“খুন হইয়াছেন!” এই বলিয়া উমিচাঁদ দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া ব্যাকুলভাবে কাঁদিতে লাগিলেন। অক্ষয়কুমার সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাহার আপাদমস্তক বিশেষরূপে লক্ষ্য করিয়া দেখিতেছিলেন। নগেন্দ্ৰনাথ এই লোকটির ভাবভঙ্গিতে তাহাকে সন্দেহ করিবেন কি না, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না।

কিয়ৎক্ষণ পরে অক্ষয়কুমার আসন ত্যাগ করিয়া উঠিয়া বলিলেন, “উমিচাঁদবাবু, কাঁদিয়া কোন ফল নাই। যদি আপনার মনিবকে যে খুন করিয়াছে ধরিতে চাহেন, তবে হুজুরীমল সাহেব সম্বন্ধে যাহা কিছু জানেন সকলই আমাদিগকে বলুন।”

উমিচাঁদ চক্ষু মুছিতে মুছিতে মুখ তুলিল। অক্ষয়কুমার জিজ্ঞাসিলেন, “হুজুরীমলবাবুর পরিবারে কে কে আছেন?”

উমিচাঁদ বলিল, “তাঁহার স্ত্রী, তাঁহার স্ত্রীর ভগিনীর এক মেয়ে। ভগিনীর মেয়ে এখানে আসিবার সময় তাঁহার সঙ্গে আর একটি স্ত্রীলোককে লইয়া আসিয়াছিলেন।”

“তিনি কে? বয়স কত?”

“তাঁর মা বাপ কেহ নাই। ছেলেবেলায় বাবুর স্ত্রীর ভগিনী ইঁহাকে মানুষ করেন। বয়স সতের বৎসর হইবে।”

“বাবুর বাড়ীতে বেশী যাওয়া আসা কে কে করেন তাহাই বলুন।”

“বেশীর মধ্যে দুইজন যান। একজন কেবল মাসখানেক পঞ্জাব থেকে কলিকাতায় আসিয়াছেন।”

“তাঁর নাম কি?”

“গুরুগোবিন্দ সিং।”

“আর একজন কে?”

“তাঁর নাম যমুনাদাস।”

“তাঁরা দুইজনে কি করেন?”

“শুনিয়াছি, গুরুগোবিন্দ সিংহের পঞ্জাবে ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। যমুনাদাসবাবুর কোথায় একটা দোকান আছে।“

এতক্ষণ নগেন্দ্রনাথ নীরবে বসিয়াছিলেন। এখন বলিলেন, “আমি একটা কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারি?”

উভয়েই তাঁহার দিকে চাহিলেন, অক্ষয়কুমার বলিলেন, “নিশ্চয় কি জিজ্ঞাসা করিবেন, করুন।”

নগেন্দ্রনাথ উমিচাঁদের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “প্রেমের কিছু গোলযোগ ইহার ভিতর আছে কি?”

উমিচাঁদ তাঁহার দিকে বিস্ফারিতনয়নে চাহিয়া বলিল, “আপনি কি বলিতেছেন, বুঝিতে পারিতেছি না।”

অক্ষয়কুমার বলিলেন, “আমি বুঝাইয়া দিতেছি। দেখিতেছি, হুজুরীমলবাবুর বাড়ীতে দুটি সুন্দরী যুবতী স্ত্রীলোক অবিবাহিত রহিয়াছেন। আবার দেখিতেছি, দুইজন যুবক হুজুরীমলবাবুর বাড়ীতে যাতায়াত করেন, তাহাই আমার বন্ধু জিজ্ঞাসা করিতেছেন, বলি ইঁহাদের মধ্যে কোন ভালবাসার গোলযোগ নাই ত?”

উমিচাঁদ বলিল, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে যমুনার সঙ্গে বোধহয় গুরুগোবিন্দ সিংহের বিবাহের সম্ভাবনা আছে। সম্ভবতঃ তিনি এই জন্যই কলিকাতায় আসিয়াছেন।”

অক্ষয়কুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “যমুনা কোনটি?”

“যমুনা বাবু সাহেবের শালীঝি?”

“হুজুরীমলবাবুর কোন শত্রু ছিল, এমন মনে হয়?”

“না তিনি এত ভাল লোক ছিলেন, তাঁহার এত দান ধ্যান ছিল যে, এ সংসারে কেহ তাঁহার শত্রু থাকিতে পারে এরূপ বোধ হয় না।”

“হুজুরীমলবাবুর স্ত্রীর চরিত্র কেমন?”

উমিচাঁদ ক্রুদ্ধভাবে অক্ষয়কুমারের দিকে চাহিল। বলিল, “তাঁহার মত ধার্ম্মিকা স্ত্রীলোক দেখি না।”

“হুজুরীমল সপরিবারে এখন চন্দননগরে আছেন কেন?”

“এখানে রোগ শোক বড় বেশী বলিয়া।”

“এখানে তাঁহার বাড়ীতে কে আছেন?”

“এখানে তাঁহার একজন চাকর আছেন।”

“তিনি খুন হইয়াছেন, তবে, তাঁহার খোঁজ করেননি কেন?”

“বাড়ীর লোক জানেন, তিনি আগ্রায় গিয়াছেন।”

“তিনি প্রত্যহই চন্দননগরে ফিরিয়া যাইতেন?”

“না, কোনদিন কাজ মিটাইতে রাত্রি হইয়া পড়িলে এইখানেই থাকিতেন। সেইজন্য তিনি কোনদিন বাড়ী না ফিরিলেও বাড়ীর লোক চিন্তিত হইত না।”

অক্ষয়কুমার এই ব্যক্তির নিকটে বিশেষ কিছুই জানিতে না পারিয়া মনে মনে বিরক্ত হইয়াছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “হুজুরীমলবাবু কি বেশী টাকা সঙ্গে লইয়া গিয়াছেন?“

উমিচাঁদ বলিল, “না কেবলমাত্র পঞ্চাশ টাকা লইয়া গিয়াছেন। আগ্রায় পৌঁছিলে তাঁহার টাকার ভাবনা কি?”

অক্ষয়কুমার চিন্তিত মনে বলিলেন, “তা ত নিশ্চয়।”

তিনি বিরক্তভাবে ভ্রূকুঞ্চিত করিয়া উঠিলেন। তিনি গমনে উদ্যত হইয়াছিলেন, কিন্তু নগেন্দ্রনাথ তাঁহাকে একটু অপেক্ষা করিতে বলিলেন। অক্ষয়কুমার দাঁড়াইলেন।

তখন নগেন্দ্রনাথ পকেট হইতে সেই শিব ঠাকুরটি বাহির করিয়া উমিচাঁদের সম্মুখে ধরিয়া বলিলেন, “এটা কখনও দেখিয়াছেন?”

উমিচাঁদের ভাবে উভয়েই আশ্চৰ্য্যান্বিত হইলেন। এই শিবলিঙ্গ দেখিবামাত্র উমিচাদের আপাদমস্তক কাঁপিতে লাগিল। কাঁপিতে কাঁপিতে কাঁপিতে সে সংজ্ঞাশূন্যের ন্যায় সেইখানে বসিয়া পড়িল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress