দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
দিনের পর দিন অতিবাহিত হইতে লাগিল। অক্ষয়কুমার খুনের এখনও কোন কিনারা করিতে পারেন নাই। তাঁহার বিশ্বাস, রঙ্গিয়ার কোন ভালবাসার লোক ছিল; সে কোন গতিকে জানিতে পারে যে রঙ্গিয়া রাত্রিতে গোপনে একাকী হুজুরীমলের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইতেছে, তাহাই সে তাহার অনুসরণ করিয়াছিল। সেই রাগে উন্মত্ত হইয়া প্রথমে হুজুরীমলকে খুন করে। তৎপরে সেই রঙ্গিয়ার সঙ্গে আসিয়া গাড়ীতে উঠে। পরে গঙ্গার ধারে আসিয়া তাহাকেও খুন করে। এরূপ খুন প্রায়ই হয়। কিন্তু কে রঙ্গিয়ার ভালবাসার লোক ছিল, তাহা অক্ষয়কুমার এতদিনে কিছুতেই জানিতে পারিলেন না। তাঁহার দৃঢ় বিশ্বাস যে, কেহ নিশ্চয়ই ছিল—কিন্তু কে যে, ইহাই সমস্যা। অনেক অনুসন্ধানেও তিনি ইহা জানিতে পারিলেন না।
তিনি এই খুনের বিষয় লইয়া নিজ গৃহে বসিয়া আন্দোলন করিতেছিলেন। এই খুন লইয়া তাঁহার আহার নিদ্রা গিয়াছে—দিন রাত্রিই তিনি এই বিষয় লইয়া ব্যতিব্যস্ত—নাস্তানাবুদ।
অদ্যও এ বিষয়ে কি করিবেন না করিবেন, মনে মনে ভাবিতেছিলেন, এই সময়ে সেখানে অত্যন্ত ব্যস্তভাবে নগেন্দ্রনাথ উপস্থিত হইলেন। তিনি গৃহে প্রবিষ্ট হইয়াই বলিলেন, “যে কাজের ভার দিয়াছিলেন, তাহা সম্পন্ন করিয়াছি।”
অক্ষয়কুমার তাঁহার ভাব দেখিয়া বলিলেন, “ব্যাপার কি?”
নগেন্দ্ৰনাথ ব্যগ্র হইয়া বলিলেন, “নোট যেখানে ভাঙাইয়াছে, তাহা সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছি।” অক্ষয়কুমার শুনিয়া সন্তুষ্ট হইলেন। বলিলেন, “খুনের আগেই লোকটা নোট ভাঙাইয়াছিল; কাজেই গুরুগোবিন্দ সিংহের নোটের নম্বর চারিদিকে দেওয়ায় নোট ধরা পড়ে নাই। আমি জানি, কেন আগে ভাঙাইয়াছিল।”
নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “কেন? আপনি কি মনে করিতেছেন?”
“নোট চুরি প্রকাশ হইবার অনেক আগে না ভাঙাইলে, এত বড় নম্বরী নোট পরে ভাঙাইবার আর উপায় ছিল না।”
“কে ভাঙাইয়াছে আপনি অনুমান করিতেছেন?”
“এ মনে করা কি কঠিন কাজ।”
কে আপনি মনে করেন?”
“কেন হুজুরীমল।”
“তা নয়।”
“তবে কে?”
“ললিতাপ্রসাদ!”
“ললিতাপ্রসাদ,” এই বলিয়া অক্ষয়কুমার সবেগে লাফাইয়া দাঁড়াইয়া উঠিলেন। বলিলেন, “ইহা আমি একবারও মনে করি নাই। ঠিক জানিয়াছেন?”