দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
নগেন্দ্রনাথ অতিশয় আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া বলিলেন, “কিরকম?”
কোচম্যান বলিল, “তিনি—সে লোকটা আমায় এসে বললে একজন বদমাইস্ আমার পেছন নিয়েছে; তোকে এই দুটো টাকা দিচ্ছি, তুই খালি গাড়ীখানা হাঁকিয়ে একদিকে চলে যা—তারপর এখানে ফিরে আসিস্, আমার এখানে একটু কাজ আছে,—তুই ফিরে এলে আমি তোর গাড়ীতে বাড়ি যাব। আরও একটা টাকা তুই পাবি। তখন সে আমার গাড়ীর এক দরজা দিয়ে উঠে আর এক দরজা দিয়ে নেমে নীচে অন্ধকারে লুকিয়েছিল।”
নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “তবে সে এখনই আসবে। আমি এইখানেই তাহার অপেক্ষায় থাকিব।”
“অনেক রাত্রি হয়েছে, আমি আর থাকছি না,” বলিয়া সেই কোচম্যান সবেগে ঘোড়াকে চাবুক মারিয়া সবেগে গাড়ী ছুটাইয়া দৃষ্টির বহির্ভূত হইয়া গেল।
তখন নগেন্দ্রনাথ নিজের গাড়ীর কোচম্যানের দিকে ফিরিয়া বলিলেন, “তুই তবে এখানে থাক।” সে উত্তর করিল, “হুজুর হুকুম করিলে থাকতে হবে।”
নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “এইখানে আর একখানা গাড়ী ছিল না?”
সে বলিল, “হাঁ হুজুর। সে বোধহয়, ভাড়া পেয়ে চলে গেছে।”
“সেই লোক গাড়ীর জন্য আবার এখানে আসবে বলেছে—দেখা যাক্ আসে কি না।”
“হুজুর বলেন ত আমি হুজুরের সঙ্গে লন্ঠন ধরে যেতে পারি—গলির ভিতরে তার খোঁজ নিলে হতে পারে।”
নগেন্দ্রনাথ তাহার পরামর্শ মন্দ বলিয়া বিবেচনা করিলেন না। কোচম্যান বলিল, “হুজুর যখন আছেন, তখন গাড়ী কেউ ধরবে না।”
এই বলিয়া সে গাড়ী হইতে একটা লন্ঠন খুলিয়া লইয়া নগেন্দ্ৰনাথের সঙ্গে চলিল। কোচম্যান লন্ঠন ধরিয়া অগ্রে অগ্রে চলিল। তাহার পশ্চাতে নগেন্দ্রনাথ চলিলেন।
রাণীর গলি এত সঙ্কীর্ণ যে, দুই ব্যক্তি পাশাপাশি যাইতে পারে না। তাহাতে ঘোর অন্ধকার, ইহার ভিতর একটীও সরকারী আলো নাই। এটী সাধারণ পথ নহে, গলির ভিতরকার মুখ বন্ধ।
সহসা ‘এটা কি’ বলিয়া কোচম্যান পড়িয়া গেল। নগেন্দ্রনাথ তাড়াতাড়ি তাহার লন্ঠনটা লইয়া দেখিলেন সেখানে এক ব্যক্তি পড়িয়া রহিয়াছে। কোচম্যানও সত্বর উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, “এ কে—মাতাল নিশ্চয়।” কিন্তু তখনই লাফাইয়া কয়েকপদ হটিয়া আসিয়া বলিল, “খুন!”
বিস্মিত ও স্তম্ভিত হৃদয়ে নগেন্দ্রনাথ দেখিলেন, তিনি যে ব্যক্তির সন্ধান করিতেছিলেন, সম্মুখে তাহারই রক্তাক্ত মৃতদেহ। কে তাহার বুকে ছোরা মারিয়াছে।