Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

হত্যা রহস্য || Panchkari Dey

প্রথম খণ্ড
“I’ll example you with this very:

The sun sa thief, and with his great attraction Robs the vast sea : the moon’s and arrant thief, And her pale fire she snatches from the sun; The sea sa thief, whose liquid surge resolves The moon into salt tears: the earth’s sa thief, That feeds and breeds by a composture stolen From general excrement: each thing sa thief: The laws, your curb and whip, in their rough power Have uncheck’d theft. Love not yourselves : away; Rob one another, There’s more gold: cut throats : All that you meet are thieves:

Dodd’s Beauties of Shakspere.

প্রথম পরিচ্ছেদ – হত্যা—রহস্যপূর্ণ
নগেন্দ্রনাথবাবু নবীন গ্রন্থকার। অল্পদিনের মধ্যে সাহিত্য-ক্ষেত্রে তাঁহার বেশ নাম হইয়াছে—একজন ক্ষমতাশালী ঔপন্যাসিক বলিয়া পাঠকবর্গের নিকটে এক্ষণে তাঁহার প্রতিপত্তি খুব বেশী।

উপন্যাস সাধারণতঃ দুই প্রকার,—Romantic বা অলৌকিক ও Realistic বা প্রাকৃতিক। প্রথমোক্ত উপন্যাসে অনৈসর্গিক ও অতিরঞ্জিত ঘটনাবলীর সমাবেশ করিতে হয়; এবং শেষোক্ত উপন্যাসে যাহা স্বাভাবিক, যাহা সম্ভবপর ও বাস্তব কেবল এইরূপ ঘটনাবলীই লিপিবদ্ধ হইয়া থাকে। আমাদের নগেন্দ্রনাথবাবু শোষোক্ত উপন্যাসের বড় পক্ষপাতী; এবং কল্পনার সাহায্য গ্রহণে একান্ত নারাজ।

তিনি নিজের উপন্যাসের ঘটনাবলীকে স্বাভাবিকতার গণ্ডীর মধ্যে এরূপভাবে আবদ্ধ করিয়া রাখেন যে, সমালোচকের সুতীক্ষ্ণ বিষদন্ত এখানে বিদ্ধ হইবার কোন সুযোগ থাকে না। কল্পনার সাহায্য ব্যতিরেকে স্বাভাবিকতার স্বচ্ছ দর্পণে পাপ ও পুণ্যের নিখুঁত দৃশ্য প্রতিফলিত করাই উচ্চশ্রেণীর ঔপন্যাসিকের কার্য্য, ইহাই শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথবাবুর ধারণা; সেজন্য তিনি প্রাকৃত ঘটনা ও বিবিধ মনুষ্য-চরিত্র দেখিবার জন্য সর্ব্বদা ব্যগ্র।

প্রত্যহ অতি প্রত্যূষে উঠিয়া তিনি লিখিতে আরম্ভ করেন—প্রায় বেলা এগারোটা পর্যন্ত। তাহার পর মধ্যাহ্নে বিশ্রামকালে পুস্তক সংবাদপত্রাদি পাঠ করেন। অপরাহুটা বন্ধুদিগের সহিত : হাস্য- কৌতুকে কাটিয়া যায়। রাত্রিতে বেড়াইতে বাহির হন। রাত্রি বারটা পর্য্যন্ত তাঁহার লৌকিক উপন্যাসের উপাদান সংগ্রহ করিবার জন্য তিনি একাকী নগর-সমুদ্রের মধ্যে ঘুরিয়া বেড়ান। রাত্রিকালে যাহা সংগৃহীত হয়, তাহা অধিকাংশই চিত্তোত্তেজক। ঘটনা-বিন্যাস একাধারে বাস্তব ও চিত্তোত্তেজক হওয়ায় তাঁহার উপন্যাস অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী হইয়া উঠে। আজ তিনি এই উদ্দেশ্যে নৈশভ্রমণে বহির্গত হইয়াছেন।

প্রায় রাত্রি বারটার সময়ে তিনি কলিকাতার বড়বাজারের মধ্যস্থ বাঁশতলা গলির ভিতর দিয়া যাইতেছিলেন। এবং আশে পাশের দোকানদার ও পথিকগণকে বিশেষরূপে পর্যবেক্ষণ করিতেছিলেন।

তখন প্রায় সমস্ত দোকানই বন্ধ হইয়াছে। যে দুই-চারিখানি খোলা ছিল, তাহাও দোকানদারগণ বন্ধ করিতেছিল। পথেও লোক-চলাচল কম হইয়া আসিয়াছিল।

এই সময়ে নগেন্দ্রনাথের দৃষ্টি এক ব্যক্তির উপরে পড়িল। সেই ব্যক্তির বেশভূষায় একটু বিশেষত্ব ছিল বলিয়াই নগেন্দ্রনাথের দৃষ্টি তাহার উপর আকৃষ্ট হইল।

লোকটির বেশ সাধারণ দ্বারবানের ন্যায়। মাথায় একটা বড় পাগড়ি, গায়ে একটা আংরেখা। মুখে খুব বড় ঝাঁকড়া দাড়ি। দাড়িটা ভালো করিয়া দেখিলে পরচুলা বলিয়া বোধ হয়।

লোকটির বয়সও অনেক, ষাট বৎসরের কম নহে। তাহার ভূষা বা আকৃতি যেরূপই হউক, তাহার চলন দেখিলে তাহাকে দ্বারবান বলিয়া বোধ হয় না এবং লোকটি যেরূপভাবে চারিদিকে দৃষ্টি সঞ্চালন করিতেছিল, তাহাতে সহজেই বুঝিতে পারা যায়, যেন শহর তাহার সম্পূর্ণ অপরিচিত। নগেন্দ্রনাথ বুঝিলেন, লোকটা যেন কি অনুসন্ধান করিতেছে।

সে লোকটা একবার কিছুদূর চলিয়া গেল, আবার ফিরিয়া আসিল। একবার যেন নগেন্দ্রনাথকে কি জিজ্ঞাসা করিতে উদ্যত হইল, পরে আবার কি ভাবিয়া তাঁহাকে অতিক্রম করিয়া চলিয়া গেল। লোকটার ভাব দেখিয়া নগেন্দ্রনাথের কেমন সন্দেহ হইল। তিনি সেইখানে দাঁড়াইলেন। ফিরিয়া দেখিলেন, লোকটি হন্ হন্ করিয়া দ্রুতপদে অনেক দূর চলিয়া গেল; আবার কি মনে করিয়া ফিরিয়া ধীরে ধীরে তাঁহার দিকে আসিতে লাগিল।

নগেন্দ্রনাথ তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন, এবার লোকটি ফিরিয়া আসিয়া নগেন্দ্রনাথের নিকটস্থ হইয়া দাঁড়াইল। তৎপরে ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, “রাণীর গলি কোথায় আপনি জানেন কি?”

নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “বলিয়া দিলে তুমি কি চিনিয়া যাইতে পারিবে, বোধ হয় না। আমি সেইদিকে যাইতেছি, আমার সঙ্গে আসিলে আমি তোমায় দেখাইয়া দিতে পারি।”

সে ব্যক্তি অতি মৃদু স্বরে বলিল, “আপনাকে ভদ্রলোক দেখিতেছি।”

নগেন্দ্রনাথ হাসিয়া বলিলেন, “আপনার কথায় আপনাকেও তাহাই বোধ হয়।”

সে ব্যক্তি ব্যগ্রভাবে বলিল, “না—না—আমি আপনার সঙ্গে যাইতেছি—চলুন।”

নগেন্দ্রনাথ স্বভাবতই অধিক কথা কহিতে ভালবাসিতেন না। বিশেষতঃ একজন অপরিচিত লোককে বিনা কারণে কোন কথা জিজ্ঞাসা করা কর্ত্তব্য নহে ভাবিয়া তিনি নীরবে চলিলেন। তবে তিনি ইহা বুঝিলেন যে, লোকটি তাঁহাকে বিশ্বাস করে নাই; সে একটু দূরে থাকিয়া তাঁহার অনুসরণ করিতেছে। আরও দেখিলেন, সে তাহার বুকের পকেটটা হাত দিয়া চাপিয়া রহিয়াছে। দেখিয়া নগেন্দ্রনাথ মনে করিলেন, লোকটার পকেটে অনেক টাকার নোট অথবা বিশেষ মূল্যবান্ কোন কাগজপত্র আছে।

তিনি তাহার ভাব ভঙ্গিতে বেশ বুঝিয়া ছিলেন যে, লোকটা দ্বরওয়ান নহে কোন হিন্দুস্থানী ভদ্রলোক, এত রাত্রে এই স্থানে নিশ্চয়ই কোন কারণে ছদ্মবেশে আসিয়াছে। নিশ্চয়ই কোন মলব আছে।

রাণীর গলি যে ভদ্রলোকের পল্লী নহে নগেন্দ্রনাথ তাহা জানিতেন। কলিকাতার কোন স্থানই তাঁহার অবিদিত ছিল না। তিনি মনে মনে স্থির করিলেন “ইহার উপর একটু দৃষ্টি রাখিতে হইবে।” উভয়ে নীরবে চলিলেন, রাণীর গলির মোড়ে আসিয়া নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “এই রাণীর গলি।”

কিন্তু সেই লোকটি কোন কথা না কহিয়া বা গলির ভিতরে না গিয়া দ্রুতপদে অগ্রসর হইল। নগেন্দ্রনাথ একটু বিস্মিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি গলির ভিতরে যাইবেন না?”

“না, আমার কাজ হয়েছে,” বলিয়া লোকটি অগ্রসর হইল।

একটু দূরে থাকিয়া নগেন্দ্রনাথ তাহার অনুসরণ করিলেন। তাঁহার সন্দেহ এক্ষণে বদ্ধমূল হইল; এবং তাঁহার কৌতূহল চরম সীমায় উঠিল। এই লোকটা কি করে, কোথায় যায়,—তাহা দেখিবার জন্য নগেন্দ্রনাথ বড় ব্যগ্র হইলেন।

সে ব্যক্তি ক্রমে দরমাহাটায় আসিল। সেখানে মোড়ের নিকটে তিনখানা ভাড়াটিয়া গাড়ী দাঁড়াইয়াছিল। নগেন্দ্রনাথ দূর হইতে দেখিলেন, লোকটি একখানা গাড়ীর নিকটে গিয়া দাঁড়াইল। কোম্যানের সহিত কি কথা কহিল, তৎপরে তাহার হাতে কি দিল। কোচম্যান কোবাক্স হইতে নামিয়া ঘোড়ার লাগাম লাগাইতে লাগিল। ইতিমধ্যে সেই লোকটি গাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করিল।

ক্ষণপরে কোচম্যান নিজের কাজ সারিয়া গাড়ীতে উঠিয়া ঘোড়ার পিঠে চাবুক লাগাইল। গাড়ী ছুটিল। তখন ছুটিয়া গিয়া নগেন্দ্রনাথ আর একখানা গাড়ীতে উঠিয়া বসিলেন। কোচম্যানকে বলিলেন, “আগের গাড়ীর পিছনে চল্‌–খুব বখশিস্ পাইবি, যেন নজরের বাহিরে না যায়।”

কোচম্যান বিরক্তভাবে বলিল, “ওসব বুঝি না—ভাড়া আগে।”

নগেন্দ্রনাথ গম্ভীরভাবে বলিলেন, “পুলিসের কাজ—শীঘ্র চল্–বখশিস্ পাইবি।”

পুলিসের নাম শুনিয়া কোচম্যান দ্বিরুক্তি না করিয়া দ্রুতবেগে গাড়ী ছুটাইল। সম্মুখস্থ গাড়ী কিছুতেই নজরের বাহিরে যাইতে দিবেন না ভাবিয়া নগেন্দ্রনাথ গাড়ীর ভিতর হইতে এক-একবার মুখ বাহির করিয়া দেখিতে লাগিলেন।

এই লোকটা কেনই বা রাণীর গলির কথা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া সেই গলিতে না গিয়া গাড়ীতে উঠিল, তিনি তাহার কোনই কারণ স্থির করিতে পারিলেন না। সহসা তাঁহার মনে হইল, “এই লোকটা আমাকে সন্দেহ করিয়াছে, পাছে আমি উহার অনুসরণ করি, এই ভয়ে এ আমার নজর ছাড়া হইবার জন্য গাড়ীতে উঠিয়াছে; নিশ্চয় আবার গাড়ী রাণীর গলির সম্মুখে আসিবে। সে নিশ্চয়ই ভাবিয়াছে যে, আমি এরূপভাবে তাহার অনুসরণ করিব না।”

তিনি দেখিলেন, সেই গাড়ী ক্রমে জোড়াবাগানে আসিয়া পড়িল, ক্রমে বিডন ষ্ট্রীটে—তৎপরে বাঁশতলার গলিতে আসিল। অবশেষে আসিয়া দরমাহাটা ষ্ট্রীটের যেখান হইতে গিয়াছিল, ঠিক সেইখানে আসিয়া দাঁড়াইল।

নগেন্দ্রনাথের গাড়ীও আসিয়া দাঁড়াইল, কোচম্যান নামিয়া আসিয়া বলিল “যেখান থেকে গিয়াছিলাম, সেইখানেই এলাম, আগের সে গাড়ীখানাও এসে দাঁড়িয়েছে।”

নগেন্দ্রনাথ আশ্চৰ্য্যান্বিত হইয়া লাফাইয়া গাড়ী হইতে নামিলেন, সত্বর সেই অগ্রবর্ত্তী গাড়ীর নিকট গিয়া তাহার ভিতর দেখিলেন। তাহার কোচম্যান বলিয়া উঠিল, “কি দেখছ, মশাই?”

নগেন্দ্রনাথ ব্যগ্রভাবে বলিয়া উঠিলেন, “যে লোকটা তোমার গাড়ীতে উঠিয়াছিল, সে কোথায় গেল?”

কোচম্যান বিরক্তভাবে বলিল, “তোমার এত খোঁজে দরকার কি?”

নগেন্দ্রনাথের কোচম্যান বলিল, “ওরে কার সঙ্গে তুই অমন করে কথা কচ্ছিস? পুলিসের লোক!”

পুলিসের লোক শুনিয়া সে ভীত হইয়া বলিল, “আমি আপনাকে—আপনাকে—চিতে পারিনি।” নগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “আচ্ছা পরে চিনতে পারিবি—এখন বল দেখি, তোর গাড়ী পথে কোনখানেও থামে নাই, তবে সে লোক কোথায় গেল?”

সে বলিল, “সে লোক—হুজুর—সে লোক একেবারেই গাড়ীতে উঠে নাই”।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49
Pages ( 1 of 49 ): 1 23 ... 49পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress