হঠাৎ দেখা রেল গাড়ির কামরায়
প্রতিদিনের গন্তব্য আমার ব্যারাকপুর থেকে শান্তিপুর —–হাতব্যাগে স্কুলের মেয়েদের খাতা—-দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেন ধরি।
ঘরের ও বাইরের কাজ একার হাতে সামলাতে হয়—বর তো অফিস ট্যুরে থাকে বেশি।
শান্তিপুর লোকাল প্রতিদিন ধরি আমি যে স্কুলের দিদিমনি।
জীবন ক্রমশ সামনের দিকে ছুটে
চলেছে—বিয়ের পর সংসার সামলানো—
তারপর ছেলে মানুষ করা—স্কুলের চাকরি।
সব নিয়ে চলছে আমার জীবন—অতীত জীবন সব ব্যাঙ্কের লকারে জমা—ছেলে ছোট ছিল যখন গল্প বলতে হতো—–তাও তখন গল্প বলার ছলে অতীত জীবন একটু নাড়াচাড়া পড়ত।
স্কুল ও বাড়ি করতে গিয়ে সময় পাওয়া ঐ রাতটুকু—-সকাল থেকে আবার জীবন রথ চলতে শুরু করে।
অফিস টাইমে ট্রেনে একটু জায়গা পাওয়া মানে হাতে স্বর্গ পাওয়া।
ট্রেনে উঠে জিজ্ঞেস করি কে কোথায় নামবেন?
তাহলে বসতে পারব।
এক মহিলা বললেন নৈহাটি নামব।
বসবার কথা কেউ বলেছেন?
ঘাড় নাড়ায় মহিলা।
আমি বলি আমি বসব ঐ সিটে।
জীর্ন শাড়ি পরিহিতা এক মহিলা বলল বস আমার সীটে।
আমার ইগোতে লাগে, বলে কিনা তুই!!!
আমি মেজাজ নিয়ে বলি ধন্যবাদ।
আমি নৈহাটিতে জায়গা পেয়েছি।
মহিলা বলে–ব্যারাকপুর থেকে নৈহাটি আধ ঘন্টা সময়।
আমি বললাম—আরে লাগবে না বললাম তো,বেশ কড়া করেই বলি।
“এই সোমা বস এখানে ।
“চিনতে পারলি না”!!
তাকিয়ে বলি আমি,
“রুপা কোথায় চলে গেছিলি”?
আমি তুই আর রোহিত কত আড্ডা—-
রোহিতকে বিয়ে করে বেশ তো হাওয়া হয়ে গেলি—-আমার ইগো সব ট্রেনের জানালা দিয়ে বেড়িয়ে গেছে—-বারো বছর বয়সের মেয়ের মতো কলকল করে কথা
বলছিলাম—-কথার কোনো দাড়ি,কমা,ফুল স্টপ ছিল না——অনর্গল কলকল করে কথা উভয়েই বলছিলাম—–আর না পাওয়া অনেক অতীতের পৃষ্ঠা—– ক্রমাগত কলেজ জীবনে নিয়ে যাচ্ছিল।
তখন তো রুপা বন্ধুত্বের বিশ্বাস ভেঙেছিল যেন “নীড় ভাঙা ঝড় “হয়ে আমার ভালোবাসার নীড় ভেঙে অন্তর্ধান হয়েছিল।
বাদাম বিক্রেতার কর্কশ চিৎকারে আমি সম্বিত ফিরে পাই।
তারপর রুপার কপাল শূন্য দেখে বলি—
“একি রুপা তোর কপালে সিঁদুর কোথায়”?
হ্যাঁ রে সোমা “রোহিত যে সোমাকে ভালোবাসত”।
রুপা যে —- টাকার বিনিময়ে তোর প্রেমিক রোহিতকে কেনে-।-
থাক পুরানো কথা — আমি এখন সুগৃহিনীএক সন্তানের মা।ছেলে বি-টেক করে বাইরে চাকরি করে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি-আমি ,তুই আর রোহিত কত ভালো বন্ধু ছিলাম।
রুপা বলে—রোহিত তো আমার বাবার টাকায় বিদেশ গিয়ে ফেরে নি।
আজ আমি এক বৃদ্ধাশ্রমে কাজ করি।
সোমা তুই বেঁচে গেছিস—আমি গবেট—ভালোবাসার নেশায় বিয়ে করেছিলাম।
রুপা বলে সে বন্ধুত্বের নামে কলঙ্ক। সত্যি রুপা আমার বিশ্বাস ভেঙেছিল,ভগবানের কি লীলা ওর বিশ্বাস রোহিত ভেঙে তছনছ করে কোটিপতির কন্যাকে নিঃশ্বেস করেছে।আমি মনের অজান্তেই বলি নীড় ভাঙা ঝড়।
সুন্দরী বন্ধুর চেহারাটা ঠিক ঝড়ো কাকের মতো লাগছে।
রুপা বলে—এই নে সোমা আমার ফোন নম্বর— তোর শান্তিপুর এসে গেছে রে।
তাই কি তাড়াতাড়ি আজ পৌঁছে গেলাম।অন্যদিন এই দীর্ঘ পথ যেন কাটে না।
রুপা চলল কৃষ্ণনগর,
“এই সোমা একশোটা টাকা দিবি,চটিটা ছিঁড়ে গেছে রে”।
পাঁচশ দিয়ে বললাম মজবুত দেখে
কিনিস।।যেন ঠকিস না।
“অশ্রুসজল নেত্রে প্ল্যাটফর্মে নেমে টা টা করলাম”।ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে যত বেড়িয়ে যাচ্ছিল,বুকের মধ্যে হু হু করছিল।
যা !!!
ফোন নম্বরের কাগজটা উড়ে গিয়ে রেল লাইনে পড়ে গেল।কে আর বিপদ মাথায় নিয়ে কাগজের টুকরোটা কুড়িয়ে দেবে।শত শত পাথরকুচিতে ফোন নম্বরের কাগজ চাপা পড়ে গেল।