ক্ষমতামাতাল জঙ্গি হে প্রভুরা ভেবেছ তোমরা,
তোমাদের হোমরা চোমরা
সভাসদ, চাটুকার সবাই অক্ষত থেকে যাবে চিরদিন?
মৃত এক গাধার চোয়ালে, মনে নেই ফিলিস্তিন,
দিয়েছি গুঁড়িয়ে কত বর্বরের খুলি? কত শক্তি
সঞ্চিত আমার দুটি বাহুতে, সেও তো আছে জানা। রক্তারক্তি
যতই কর-না আজ, ত্রাসের বিস্তার
করুক যতই পাত্রমিত্র তোমাদের, শেষে পাবে না নিস্তার।
আমাকে করেছ বন্দি, নিয়েছ উপড়ে চক্ষুদ্বয়।
এখন তো মেঘের অঢেল স্বাস্থ্য, রাঙা সূর্যোদয়
শিশুর অস্থির হামাগুড়ি, রক্তোৎপল যৌবন নারীর আর
হাওয়ার স্পন্দিত ফুল পারি না দেখতে। বার বার
কী বিশাল দৃষ্টিহীনতায় দৃষ্টি খুঁজে মরি। সকাল সন্ধ্যার
ভেদ লুপ্ত; মসীলিপ্ত ভূগর্ভস্থ কারাকক্ষে চকিতে মন্দার
জেগে উঠলেও অলৌকিক শোভা তার থেকে যাবে নিস্তরঙ্গ
অন্তরালে। এমনকি ইঁদুরও বান্ধব অন্তরঙ্গ
সাম্প্রতিক, এমন নিঃসঙ্গ আমি। নিজ দোষে আজ
চক্ষুহীন, হৃতশক্তি, দুঃস্বপ্নপীড়িত। এখন আমার কাজ
ঘানি ঠেলা, শুধু ভার বওয়া শৃঙ্খলের। পদে পদে
কেবলি হোঁচট খাই দিনরাত্রি, তোমরা অটল মসনদে।
শক্র-পরিবৃত হয়ে আছি; তোমাদের চাটুকার
উচ্ছিষ্ট-কুড়ানো সব আপনি-মোড়ল, দুস্থ ভাঁড়
সর্বদাই উপহাস করছে আমাকে। দেশবাসী
আমাকে বাসে তো ভালো আজো-যাদের অশেষ দুঃখে কাঁদি হাসি
আনন্দে। পিছনে ফেলে এসেছি কত যে রাঙা সুখের কোরক,
যেমন বালক তার মিষ্টান্নের সুদৃশ্য মোড়ক।
আমাকে করেছ অন্ধ, যেন আর নানান দুষ্কৃতি
তোমাদের কিছুতেই না পড়ে আমার চোখে। স্মৃতি
তাও কি পারবে মুছে দিতে? যা দেখেছি এতদিন-
পাইকারি হত্যা দিগ্বিদিক রমণীদলন আর ক্ষান্তিহীন
রক্তাক্ত দস্যুতা তোমাদের, বিধ্বস্ত শহর, অগণিত
দগ্ধ গ্রাম, অসহায় মানুষ, তাড়িত, ক্লান্ত, ভীত
-এই কি যথেষ্ট নয়? পারবে কি এসব ভীষণ
দৃশ্যাবলি আমূল উপড়ে নিতে আমার দু-চোখের মতন?
দৃষ্টি নেই, কিন্তু আজো রক্তের সুতীব্র ঘ্রাণ পাই,
কানে আসে আর্তনাদ ঘন ঘন যতই সাফাই
তোমরা গাও না কেন, সবকিছু বুঝি ঠিকই। ভেবেছো এখন
দারুণ অক্ষম আমি, উদ্যানের ঘাসের মতন
বিষম কদম-ছাঁটা চুল। হীনবল, শৃঙ্খলিত
আমি, তাই সর্বক্ষণ করছ দলিত।
আমার দুরন্ত কেশরাজি পুনরায় যাবে বেড়ে,
ঘাড়ের প্রান্তর বেয়ে নামবে দুর্দমনীয়, তেড়ে-
আসা নেকড়ের মতো। তখন সুরম্য প্রাসাদের সব স্তম্ভ
ফেলব উপড়ে, দেখো, কদলী বৃক্ষের অনুরূপ। দম্ভ
চুর্ণ হবে তোমাদের,সুনিশ্চিত করব লোপাট
সৈন্য আর দাস-দাসী অধ্যুষিত এই রাজ্যপাট।