স্মৃতিচারণ
আজ এই শ্রাবণ দিনে মনে পড়ে শুধু মায়ের কথা।
সবাই পঁচিশে বৈশাখ ও বাইশে শ্রাবণ কত রবিঠাকুরের অনুষ্ঠান করত। মা ওই দুটো দিনে ঘর বন্ধ করে অন্ধকার করে রাখত।
কিন্তু সারা বছর মা এরকম আচরণ একদম করত না। শ্রাবণ মাসে মা বেশ উদাস থাকত।মাকে অনেক জিজ্ঞেস করেও উত্তর পাই নি।
জন্ম থেকে বাবাকে দেখি নি। বাবা যখন আকাশের তারা হন মা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
মা শিক্ষিকা ছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের। আমি যখন মাধ্যমিক দিই। আমাদের বাড়িতে এক বুড়ো ও বুড়ি আসেন।কথায় কথায় জানলাম উনি বাবার বাবা ও মা।মা জীবনে প্রথম শ্বশুর- শাশুড়ি পেয়ে বেশ আপ্লুত। কুচবিহার থেকে এসেছেন। মায়ের যত্নে এক সপ্তাহ থেকে যান। তারপর এক দিন আড়াল থেকে শুনি দাদু ও ঠাকুমা বলছেন বৌমা একটি বার চলো কুচবিহারে। আমার ছেলে দোষ করেছিল। তোমাকে জানায় নি সে বিবাহিত ছিল।তবে ওই বিয়েতো অবৈধ ছিল। তোমার বিয়ে আগে হয়েছিল।আমরা জোর করে বিয়ে দিই। তখন এক বার বলে নি মা আমার বিয়ে হয়ে গেছে। ওর চুপ থাকার জন্য সবার জীবন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে।
বৌমা তোমার মেয়ে বলছিল তুমি পঁচিশে বৈশাখ ও বাইশে শ্রাবণে খুব মনমরা অবস্থায় থাকো।
তাহলে কেন থাকো!!! নিশ্চয় আমার ছেলেকে ভালবাসতে খুব। আমরা দেখছি মেয়েটাকে বলেছ ওর জন্মের আগেই বাবা মারা গেছিলো।তাতো সত্যি নয় বৌমা।
পঁচিশে বৈশাখ আমার মাকে বিয়ে করেছিল আর বাইশে শ্রাবণ জানতে পেরেছিল স্বামীর সেদিন দ্বিতীয় বিয়ে হচ্ছে।
তারপর থেকে বাবা ও মায়ের কোন সম্পর্ক নেই।
এবার আড়ালে সব শুনে বাবা দেখার লোভ লাগে।সবার বাবা আছে আমার নেই।তাই মন খারাপ করে থাকতাম।মা ও আমি কুচবিহারে যাই। সেদিন ছিল বিশে শ্রাবণ।গিয়ে শুনি ঠাকুমা দাদুর পছন্দের বৌ বাবাকে ছেড়ে বহুকাল আগে আকাশের তারা হয়ে গেছে। দাদু ও ঠাকুমা বাইশ শ্রাবণ বাবা ও মার বিয়ে দেন। আমি মা ও বাবার বিয়েতে অনেক রবি ঠাকুরের গান শোনাই ।
তারপর বহু বছর ,মাস , দিন অতিবাহিত হয় ।বেশ সুখে দিন কাটাই। মাথার উপর মজবুত ছাদ পাই।
এখন আমিও বিবাহিত । বাবা ও মা বেঁচে নেই।আজ এই শ্রাবণ দিনে যখন ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে রবিঠাকুরের নানান প্রোগ্রাম
করি। তখন বারবার আকাশের দিকে চেয়ে বলি আজ ও সেই ঘনঘটা। একদিকে মায়ের করুণ মুখচ্ছবি অন্যদিকে কবির বিদায় বেলা মনে পড়ে। আমার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে।
“শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে…”
কখনো গুণগুণিয়ে গাই
” তুমি রবে নীরবে…”।