Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » স্বপ্নের ফেরীওয়ালা || Roma Gupta

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা || Roma Gupta

ছোটো বড় গল্প লুকানো শহর , ঝকঝকে রাস্তা, মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং, ঝা চকচক শপিং মল আর ঘিঞ্জি ফুটপাত। অদূরে গড়ের মাঠ। অভিজাতদের নিঃশ্বাসের ব্যায়ামটা এখানে নিয়মমত চলে। ফুটপাতবাসী স্বপ্না প্রতিদিন ভোরে আসে গড়ের মাঠের পাশে। ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করে। ঝা-চকচকে শহরের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক। মনটা উদাসী হয়।
ভাবে কত পয়সা এদের! স্বাধীনভাবে কত কিছু করতে পারে।

তার মনে কল্পলোকের চাবিকাঠিতে লুকিয়ে রাখা আছে রূপকথার কত স্বপ্ন, ইচ্ছে, আশা। মনে মনে কত স্বপ্নই ফেরি করে বেড়ায় সে।

বিশুদ্ধ বাতাস নিয়ে বাবুরা ফিরে যাওয়ার সময় কেউ কেউ ফুল, মালা কিনে নিয়ে যায়। বিক্রি শেষে ফুটপাতে যত ছেঁড়া কাগজ কুড়িয়ে নেয় স্বপ্না ব্যাগে। কী চায় স্বপ্না! কেন রাস্তার কাগজ কুড়ায়?

উষায় অর্ক উদিত হয় ক্রমে। মিঠে রোদ পিঠে মেখে শালিকের দল শূন্য মাঠে খুঁটে খায় খাদ্য। স্বপ্নার স্বপ্নালু চোখ তাকিয়ে থাকে দূর নীলিমায়। অজান্তেই মন তার খুঁজে বেড়ায় কত কি?
বক্ষ পিঞ্জরে কত স্বপ্ন আশা চুপকথা হয়ে থাকে।

নিঃস্বহায় নগরীর প্রাচীরের গা ঘেষে প্রাতঃ ভ্রমণকারী প্রতিমাদেবীর নজরে পড়ে বিষয়টা। অবাক হয়ে ভাবে, ফুল বিক্রির পর মেয়েটা কাগজ কুড়িয়ে ব্যাগে ভরে কেন?

কয়েকদিন লক্ষ্য করার পর একদিন কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, তোর নাম কি রে? পড়াশোনা করিস?

আমার নাম স্বপ্না। না লেখাপড়া শেখা হয়নি। পাঁচ কেলাস পড়েছি। অনেক কিছু বলতে লাগলো। বললো. ভালোই ছিলাম।
তারপর বাবার অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হলো। ভাড়াবাড়িতে থাকতাম? তাই,ভাড়া অনেক বাকি হলে মা কষ্ট করে মিটিয়ে দেয়। এরপর বাড়ি ছেড়ে এখন আমরা ব্রীজের নিচে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছি। আর পড়াশোনা করা হয়নি।

মা কয়েক বাড়ি কাজ করতো। এখন খুব অসুস্থ, পেটে ব্যাথায় কষ্ট পায়। কাজে যেতে পারেনা।
তাই আমি ফুল বিক্রি করি।

প্রতিমাদেবী বলেন, ওতে তোদের সংসার চলে? ঠিকমত আহার জোটে?
স্বপ্না, আমাদের মা বেটির চলে যায়।
প্রতিমাদেবী বলেন, তোকে যে দেখি প্রতিদিন বিক্রি শেষে কাগজ কুড়িয়ে ব্যাগে নিস! কী করিস ওসব কাগজ।
স্বপ্না হেসে বলে, পড়ি গো! নাহলে ভুলে যাবো যে পড়া।

প্রতিমাদেবীর করুণা হয়। মনে ভাবে গরিবের মেয়ের পড়াশোনা শেখার কত ইচ্ছে অথচ অর্থের অভাবে বিকাশে বাধা।
বললেন, আমার বাড়ি কাজ করবি? আমি তোকে পড়াশোনা শেখাবো।

প্রতিমাদেবী বিয়ে করেননি। মা-বাবা গত হওয়ার পর তিনি একাই থাকেন।
একসময় স্কুলের হেডমিস্ট্রেস ছিলেন।

স্বপ্না উত্তর দেয়, মাকে জিজ্ঞাসা করবো।
প্রতিমাদেবী বলেন, আমার বাড়ির গ্যারেজ ঘরটা ফাঁকা আছে, সেখানে নাহয় থাকবি মা’কে নিয়ে।

সেই থেকে স্বপ্নার ভালো পরিবেশে থেকে পড়াশোনা শেখা।
তার মেধা ও আনুগত্যের জন্য প্রতিমাদেবী নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেন।

একসময় স্বপ্না পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হয়। আইন পাশ করে এবং আদালতে প্র্যেকটিস করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে স্বাধীনতার স্বাদ পায়।

তার দুই মা। অতি যত্নে তাঁদের সেবা করে স্বপ্না নিজের হাতে।
বিয়ে তারও হয়নি।
তবে অভাবের গন্ডি থেকে বেরিয়ে তার শিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছেপূরণ এবং ছোটোবেলায় উঁচু উঁচু মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং দেখে বড় হওয়ার রূপকথার ভাবনা সত্যি হয়।তার স্বপ্নপূরণ হয়।

এখন তার স্বাধীন চাকরি,
ইচ্ছামত ইচ্ছাপূরণের ক্ষমতা।
স্বাধীনতার আস্বাদ আস্বাদনে সে পরিতৃপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress