স্বপ্ন ভঙ্গ – 1
বাড়িতে আজ খুব ধূমধাম চারিদিকে একটা সাজোসাজো ব্যাপার বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। শিক্ষিতা বুদ্ধিমতি মেয়েকে নিয়ে রমা দেবী আর বিকাশ বাবুর অহংকারের শেষ ছিল না। পাত্র ও বেশ জোগাড় করেছেন বিকাশ বাবু। পেশায় ডাক্তার,উচ্চবিত্ত পরিবার। পিয়ালিকে ওরা একটা বিয়ে বাড়িতে প্রথম দেখেছিল তারপরেই ওরা বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। প্রচুর টাকা পয়সা খরচা করে বিকাশ বাবু মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়ে ও হয়ে যায় বেশ নির্বিঘ্নে।
পরেরদিন চোখের জলে একমাত্র মেয়েকে বিদায় করে বেশ ভেঙে পড়ে বিকাশ বাবু আর রমা দেবী। আর কিছুদিন মেয়েটা ঘরে থাকলে কি ক্ষতি হতো রমা, ঘরটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল। রমা দেবী বলে ওঠে মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে পরের ঘরে তো একদিন যাবেই,তুমি কষ্ট পেয়ো না, ওরা তেমন মানুষ নন যখন মন খারাপ লাগবে আমরা যাবো ওরাও আসবে। বৌভাতের অনেক কাজ বাকি আমি যাই তোমাকে এক কাপ চা দেবো পাঠিয়ে? চা দেবে? আচ্ছা দাও মাথাটাও বড্ড ধরেছে।
পরেরদিন বিকেলে বৌভাত গিয়ে বাড়ির সকলেই একটু অবাক হয়েছে। একটা খুব সাধারণ বাড়ি সাজসজ্জাহীন একটা খাটের উপর বসে ছিল পিয়ালী। দেখে মনে হচ্ছে বাড়ির কেউ হইতো ওকে কোনো রকমে সাজিয়া বসিয়ে দিয়েছে, কোনো ব্যাপারই তেমন কোনো আড়ম্বর নেই। কনে যাত্রীর মনোভাব বুঝতে পেরে পিয়ালির শাশুড়ি মা বললেন!!! আমাদের উনি আবার বেশি বাড়াবাড়ি কিছুতেই পছন্দ করেন না, আপনাদের কিছু অসুবিধা অবশ্যই বলবেন। বাবুকে পড়াশুনা করাতে ওনার যা খরচা হয়েছে সেটা আর দুই ছেলমেয়ের জন্য হয়নি, এখন এদিক ওদিক বাজে খরচ করলে হবে কেনো? বাবুর প্রাক্টিসের তো আর খুব বেশিদিন হয়নি। আর বড়ো ছেলের বিয়ে দিয়ে ভেবেছিল ঘরের লক্ষ্মী আনছে, তেমন ও তো কিছু বুজলাম না। বলে মুখ বেকালো পিয়ালির শাশুড়ি। সবই কপাল। আপনারা বসুন পরে গিয়ে আবার বলবেন না যেনো ছেলের বাড়িতে সঠিক অ্যাপায়ন হয়নি আপনাদের। বলে উনি চলে গেলেন।
উনি কথা গুলো বলে চলে যাবার পর বিকাশ বাবুর বোন বললো এ তুমি পিয়ালীর কেমন বিয়ে দিলে দাদা? তোমার মনে হয় আমাদের অমন শান্ত মেয়ে এখানে ভালো থাকবে? বনেদি পরিবারের এই ছিরি? বৌদি আজ এলে কি দেখে যেত একবার বুঝতে পারছ? থাম নীরু কেউ শুনে নিলে মুস্কিল হবে। জামাই আমাদের আজকালকার দিনের ছেলে তার মানসিকতা নিশ্চই এমন হবে না। মেয়ে আমাদের ঠিক সব গুছিয়ে নেবে।
এরমধ্যে সৌরভ এসে বললো চলুন আপনারা খেতে বসবেন।খাবার জায়গায় বাবা অপেক্ষা করছেন।
——- আরে জামাই বাবু এতো কিসের তাড়া খাবার? আগে তোমার আর দিদির সাথে কিছু ছবি তো তুলি। ডাকো না তোমাদের ফটোগ্রাফারকে।
না মানে ফটোগ্রাফার তো নেই।
— ফটোগ্রাফার নেই?
না মানে ছিল, সকালে কিছু ছবিটবি তুলে সে চলে গেছে। আপনারা চলুন।
সেতো যাবই বাবা কিন্তু মেয়েটার সাথে তো ভালো করে কথাই হলো না ওর সাথে একটু দেখা করি কথা বলি তারপর তো নিশ্চয়ই খাবো।
_ হ্যাঁ চলুন পিয়ালী ও খাবার জাগাতেই আছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে তো তাই। সবে তো ১০ টা বাজে সৌরভ অতিথিরা তো এখনও তেমন কেউ আসেনি। না না সবাই এসে গেছে এখন ঘরের লোকের খাওয়া হয়ে গেলেই সব হোয়ে যাবে। বিকাশ বাবু বোন বললেন আচ্ছা তুমি যাও আসছি আমরা। সৌরভ চলে গেলে নীরু দেবী বললেন দাদা এদের কারোরই রকমসকম আমার ভালো ঠেকছে না। তুমি এ কেমন জাগায় মেয়ের বিয়ে দিলে? রাত ১০ টার মধ্যে বিয়ে বাড়ির সব পাট চুকে গেলো? পাড়ার কোনো লোকজনকে ও তেমন দেখা যাচ্ছে না। মেয়ে টা আমাদের ভালো থাকবে তো? আমার খুব ভয় লাগছে। —– বিকাশ বাবু নিরুত্তর কি বলবেন কিছু বুঝতে পারছেন না। শেষমেষ তাড়া করতে গিয়ে কি সত্যি ভুল করলাম? আরো ও একটু ভালো করে খোঁজ খবর নেওয়ার দরকার ছিল। মেয়েটার সাথেও ভালো করে কথা বলতে দিচ্ছে না কেমন যেনো একটা পাহাড়া দিয়ে রেখেছে সবাই মিলে। ——দাদা ও দাদা কি এতো ভাবছো? চলো এখন আর এত ভেবে কি হবে? কারো সাথে একটা পরামর্শ ও করলে না, নিজে নিজে সব ঠিক করে নিলে। জানি না মায়েটার কপালে কি আছে? আর ওর ওই পিসতোত না মাসতুতো বোনটা সেতো যেনো সৌরভের পিছনই ছাড়ছে না, দেখলে মনে হচ্ছে যেনো প্রেমিক প্রেমিকা। এর মধ্যে সৌরভ এসে বললো কই চলুন আপনাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে যে। বাবা দেরী করা একদম পছন্দ করেন না। হ্যাঁ , চল বলে এগিয়ে গেল বিকাশ বাবু। পিয়ালীর শশুরবাড়ির লোকেরা যেনো একটু দূরে দূরে রাখতে চাইছে পিয়ালীকে, যেনো কিছু একটা গোপন করতে চাইছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে বিকাশ বাবু কিন্তু কি লুকোতে চাইছে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যাই হোক ফেরার সময় বিকাশ বাবু সৌরভের হাত দুটো ধরে বলে এলো, আমার এই একটিই মেয়ে বড়ো আদরে যত্নে বড়ো করেছি ওকে, ওকে কোনো কষ্ট পেতে দিও না, কোনো ভুল ত্রুটি হলে একটু শিখিয়ে পড়িয়ে নিও, সংসারের কোনো কাজই সে কখনো করেনি ওর মা করতে দেয় নি। ওর একটু খেয়াল রেখো বাবা। —— আপনি ওতো চিন্তা করবেন না মা আছে বাড়ির সবাই আছে ওর কোনো অসুবিধা হবে না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। —- দাদা ওদের কাল যাবার কথাটা একবার বলো বৌদি বার বার করে বলে দিলো কাজের কথাটাই তো ভুলে যাচ্ছ। বলে উঠলেন নীরু দেবী। ঠিক মনে করিয়েছিস নীরু। তোর বৌদি খুব রেগে যেত। শোনো সৌরভ কাল কিন্তু তোমাদের সকাল সকাল ও বাড়ি যেতে হবে অনেক নিয়ম আচার আছে সেগুলো সব করতে হবে। আসলে কাল আমার সকাল বেলা হাসপাতাল যাবার আছে একটা অপারেশন আছে!!!!! পিয়ালী চলে যাবে। আপনারা মাকে একবার বলে যান, এগুলো মাই বলতে পারবে। ___ এতক্ষন সব চুপ করে শুনছিলেন নীরু দেবী এবার বলে উঠলেন তোমার মাকে আমরা অবশ্যই বলবো তুমি পিয়ালীর স্বামী তোমাকে ও বলাটা দরকার!!! আর তুমি যাবে না শুধু পিয়ালী যাবে সেটা কি করে সম্ভব? বিয়েটা তো তোমাদের দুজনেরই হয়েছে, তাই নিয়ম যা আছে তোমাদের দুজনকেই মানতে হবে। দাদা চলো সৌরভের মা কে বলে এবার আমরা রওনা হই।
হঠাৎ করে ধূমকেতুর মতো উরে এসে সীমা (সৌরভের বোন) বলল দাদাভাই কি করে যাবে? আপনাদের তো ও বললো যে ওর কালকে একটা অপারেশন আছে।
— নীরু দেবী একটু বিরক্ত হয়েই জানতে চাইলো, একে তো ঠিক চিনলাম না সৌরভ, ও কে? তাহলে তুমি যে তাহলে বললে তোমার মা কে বলতে হবে? এখন তো দেখছি উল্টো টা।
—- পরিস্থিতি সামাল দিতে পিয়ালীর শশুর কোথা থেকে যেনো ছুটে এলো। আহ্ কি হচ্ছে টা কি? বড়দের কথাই কথা না বললেই কি নয়? যাও গিয়ে পিসিমনিকে ডেকে দাও, কি হলো? যাও।— আপনারা কিছু মনে করবেন না বাচ্চা মেয়ে কি বলতে কি বলে ফেলেছে, সৌরভ এর খুব নেওয়াটা মেয়েটা। ওই তো ওর মা এসে গেছে।
বিকাশ বাবু বললেন কাল সকালে মেয়ে জামাই কে নিতে লোক আসবে গাড়ি নিয়ে ওরা যেনো তৈরী থাকে, দেরী না করে অনেক নিওম টিয়ম কি কি আছে পিউর মা বলছিল।
—— আজকাল আবার এত কিছু কেউ মানে নাকি? যা ব্যাস্ত সবাই, বলেই বিষ্ণু বাবুর( সৌরভের বাবা) দিকে তাকালেন, কিছু যেনো একটা ইসারা করলেন দুজন দুজনের দিকে। তারপর বললেন সে অসুবিধা নেই চলে যাবে ওরা সময় মতো।
—— নিশ্চিন্ত হলাম, তাহলে এবার আমরা আসি। নীরু চল একবার পিউর সাথে দেখা করেনি, নাহলে খুব রাগ হবে মেয়েটা কষ্ট পাবে।
আরে দাঁড়ান দাঁড়ান কোথায় যাচ্ছেন? পিয়ালী তো চলে গেছে ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাত তো কম হয়নি, বাড়ির বউ বলে কথা এতো রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে কি করে থাকবে? মেয়ে তো কাল সকালেই যাচ্ছে প্রাণ ভরে কথা বলে নেবেন, সব জেনে নেবেন, শশুরবাড়ির কে কেমন?
ছি ছি বেয়ান এ আপনি কি বলছেন? আমি তো এমনিই।।।
না না ও আমি কিছু মনে করিনি। আপনারা সাবধানে যাবেন। আসুন তাহলে।