Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সুস্থ জীবন || Samarpita Raha

সুস্থ জীবন || Samarpita Raha

দশ বছরের মেয়ে লালী।
সবাই বলে এই বয়সে একটু বেশী পাকা।
লালী পাকা পরিপূর্ণ হয়েছে পরিস্থিতির চাপে।
আচ্ছা কেন তোমরা লালীকে পাকা বলছ?তোমাদের সন্তানরা এখনো কোলে থাকে এই বয়সে!!!
লালী চাই না কোলে থাকতে!!
মা ,বাবার হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে??
লালী তো তোমাদের ননদের মেয়ে —দুই মামার একমাত্র ভাগনি—-ওর কপাল খারাপ তাই অন‍্য বাচ্চাদের মতো ওর শৈশব নয়।
তোমরা মামী হয়ে মেয়েদের শেখাও লালীর সাথে মিশবি না। ও বেশী পাকা।
ও কি পাকা পাকা কথা বলে??
না বয়স অনুপাতে বেশী পরিপক্ব।
নাকি ওর বাবা নেই বলে অবহেলা করো।এতদিন ওর মা তো বাপেরবাড়ির সাহায্য নেয় নি।বেশ তো মা বেটিতে চলছিল জীবন।ভগবান সেই সুখ ও লালীর কপালে দিল না।মামাবাড়িতে মামীদের গুতো খেতে হচ্ছে।হ‍্যাঁ সেই কবিতাটা লালীর জন্য লেখা।
তাই তাই তাই মামাবাড়ি যাই
মামাবাড়ি ভারী মজা
কিলচড় নাই।
মামী এলো ঠাঙা নিয়ে
গোয়ালে পালাই।

হঠাৎ দিদা —-মামীদের চোখে আঙুল দিয়ে বলে দেখো বৌমা — আজ লালীর জন্য আমার মেয়ে কথা বলছে।

লালী বয়স এখনবছর তেরো হবে।
ওর জন্মের পর বাবা কি সেটা জানে না!!!
মা একাই চাকরি করে মেয়েকে বড় করছিল।অফিস যাবার পর পাশের বাড়ির জেঠিমার কাছে রেখে যেতো।এর জন্য তিনহাজার টাকা জেঠিমাকে জোর করে দিত স্বর্ণালি।
সোমালি বা লালীকে অফিস থেকে ফিরে নিয়ে আসত।
স্বর্ণালি লালীকে কত বকত?
খুব শাসনে রাখত?
সবচেয়ে বড় কথা লালীকে লালীর মা সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি শুধু জল খাওয়াতো।তারপর বিছানায় টয়লেট করে ফেলত।এর জন্য কম বকা খায় নি লালী।
ও কি করবে,সারাদিনের জল খেয়েছে কিনা তাই সন্ধ্যে থেকে জলের দায়িত্ব মায়ের।

লালী মায়ের বকাবকি,পরীক্ষার ফল খারাপ হলে কি যে মার খেয়েছে।এখন লালী নবম শ্রেণির ছাত্রী।অষ্টম শ্রেণীর ফাইনাল সবে শেষ হয়েছে তখন লালীর মায়ের গাড়িতে গাড়িতে সংঘর্ষে গাড়ি থেকে ছিটকে পাথরে মাথা লেগে ব্রেণ আঘাতপ্রাপ্ত হয়।তারপর মামার বাড়ি আসে লালীরা।

লালী মায়ের সেবা ও করে আবার পরীক্ষায় প্রথম ও হয়।মামাদের ছেলে মেয়েরা ভালো ফল ও করে না।মায়েদের কোনো সাহায্য করে না।শুধু টি ভি ,কার্টুন,ভিডিও গেম খেলে।

এখন লালী স্কুল থেকে আসার পর মাকে এত জল খাওয়ায়।মা ও বিছানা ভেজায়।দিদা বলে তুই জল কম খাওয়াতে পারিস।এত বকাবকি করিস মা কে ,মামীরা ভালো চোখে দেখে না।লালী বলে দিদা মার ভালোর জন্য জল খাওয়ায়,কিডনিটা ঠিক থাকবে।লালীকে লালীর মা যেমন বকাবকি করে খাওয়াতো,তেমনি লালীও মা হয়েছে ।
শুধু ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করলে হবে দিদুন,তোমার মেয়েকে সাড়িয়ে না তূললে আমার তো কেউ নেই দিদা।দিদা ও নাতনি গলা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে ।ওদের মনে ঘন শ্রাবণ ধারা।দুজনে কেঁদে হালকা হয়ে একে অপ‍রের চোখ মোছায়।

লালী একটা অন‍্যায় মামীরা ধরে ফেলেছে।লালী জীবন বিজ্ঞান দিদির কাছে পড়তে যায় না।ঐ সময় তাহলে লালী কি করে?লালীকে দাদুর মার,মামাদের মার সহ‍্য করতে হয়।কত কথা মামীরা বলে ।বাবা নেই মা অসুস্থ এই বয়স থেকে নষ্টামী।এই মেয়ের সংস্পর্শে আসলে আমাদের ছেলে মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে।

লালীর অন‍্যায় —লালী বস্তিতে গিয়ে —তিনটি বাচ্চা পড়ায়—ঐ টাকায় আর জীবন বিজ্ঞান দিদির টাকা দিয়ে—- মাকে হাগিস কিনে দেয়।
দাদু তো এক প‍্যাকেট কিনে দেয়।

মার খেতে খেতে লালী বলে ঐ টাকা আর ঐ সময়ে কি করে।এই সময় স্বর্ণালি ঘর থেকে বেড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে।সামনে গাড়ি ব্রেক কষে।গাড়ির আলোতে স্বর্ণালি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।

ভদ্রলোক স্বর্ণালিকে নিয়ে বাড়ি দিয়ে আসে।স্বর্নালি সব পুরানো কথা মনে পড়ে যায়।
ভদ্রলোককে তো সবাই চেনে।একমাত্র লালী ছাড়া।
ভদ্রলোক লালীর বাবা ,লালীর জন্মের পর উনি গবেষণার কাজে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিল।তারপর কোনো যোগাযোগ রাখেন নি।গবেষণা শেষ করে তিনি দেশে এসেছেন বৌয়ের জন্য।লালী আজ খুব খুশি সুস্থ মা ও বাবা পেয়ে।সবার মনে ঘন শ্রাবণ ধারা সমস্ত দুঃখ ধূয়ে দিয়ে যায়।দাদু ও দিদুন মেয়ের কাছে চলে আসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress