রামায়ণ : সুন্দরাকাণ্ড – সুরসা সাপিনী কর্ত্তৃক হনুমানের পথরুদ্ধ করণ
এইমত মারুতির বিক্রম দেকিয়া।
সুরসাকে সুর সব কহেন ডাকিয়া।।
নাগমাতা তুমি ধর শক্তি বিলক্ষণ।
কর মো সবার এই সন্দেহ ভঞ্জন।।
যাইছেন এই বায়ু তনয় লঙ্কাতে।
রামচন্দ্র-প্রেয়সীর ত্তত্ত্ব সে জানিতে।।
তুমিহ তাহাতে করি বিঘ্ন আচরণ।
জানহ ইহার বল বুঝিবা কেমন।।
পারিবে নারিবে কিম্বা এই কপিরাজ।
সেথা হতে ফিরিবারে সাধি এই কাজ।।
ইহাই জানিতে হবে ঘোর কলেবর।
যাহ তুমি ক্ষণেক মারুতি বরাবর।।
এত শুনি সর্পমাতা সুরসা সাপিনী।
প্রস্থান করিলা হয়ে রাক্ষসী-রূপিণী।।
মারুতির অগ্রে ভীম মূরতি হইয়া।
কহিছেন নাগমাতা কপট করিয়া।।
ওরে কপি যাও তুমি আর কোন্ স্থানে।
প্রবেশ করহ আসি আমার বয়ানে।।
হইয়াছি অতিশয় ক্ষুধাতে পীড়িত।
এ সময়ে তোরে পেয়ে বড় হল প্রীত।।
বুঝিলাম কৃপা করি যত দেবগণ।
করি দিল মোর আগে তোরে আনয়ন।।
অতএব বিলম্ব না কর একক্ষণ।
শীঘ্র আসি কর মোর মুখে প্রবেশন।।
এত শুনি বায়ু-পুত্র যুড়ি কর দ্বয়।
কহিছেন তাঁর প্রতি করিয়া বিনয়।।
দশরথ-পুত্র রাম দণ্ডক কাননে।
আসি বাস করেছিলা পিতার বচনে।।
বিনাদোষে হরি আনিয়াছে তাঁর নারী।
দশানন এই লঙ্কাপুর-অধিকারী।।
যাইতেছি আমি তাঁর তত্ত্ব জানিবারে।
তাহে বিঘ্ন নাহি কর কোনই প্রকারে।।
সেই রামচন্দ্র হন সকলের হিত।
তাঁহার অহিত করা তব অনুচিত।।
যদি বল অবশ্যই খাইবে আমারে।
তবে যোগ্য হয় কিছু গৌণ করিবারে।।
সীতা দেখি বার্ত্তা দিয়া শ্রীরঘুনন্দনে।
আসি প্রবেশিব আমি তোমার বদনে।।
কিছু নাহি কর তুমি ইহাতে সংশয়।
কহিতেছি আমি সত্য করিয়া নিশ্চয়।।
সুরসা কহেন তাহা আমি নাহি মানি।
মোর আগে আসি ফিরে নাহি যায় প্রাণী।।
সুরসার বাণী শুনি সমীর-নন্দন।
কোপ করি কহিছেন কঠোর বচন।।
কোন্ মুখে দুষ্টা মোরে করিবি ভক্ষণ।
প্রকাশ করিল নিজ মুখের আকার।।
তা দেখি মারুতি ত্রিশ যোজন হইল।
চল্লিশ যোজন মুখ সুরসা করিলা।।
পঞ্চাশ যোজন হৈল পবন-সন্তান।
করিলা সুরসা ষষ্টি যোজন ব্যাদান।।
সপ্ততি যোজন হৈল পরে হনুমান।
সেই মুখ কৈল আশী যোজন প্রমাণ।।
হনুমান হৈল তবে নবতি যোজন।
সুরসা করিল শত যোজন আনন।।
তাহা দেখি হনুমান চিন্তিল আশয়।
একি এত সামান্য রাক্ষসী নাহি হয়।।
এত ভাবি ক্ষণকাল মানস-মাঝারে।
জানিলেন মারুতি সুরসা বলি তারে।।
তবে নিজে হয়ে শত-যোজন প্রমাণ।
তাঁর মুখমধ্যে প্রবেশিলা হনুমান।।
প্রবেশিবা মাত্র সে সুরসা ঠাকুরাণী।
ওষ্ঠ চাপি মুদ্রিত করিলা মুখখানি।।
তাহা দেখি হয়ে বীর অঙ্গুষ্ঠ প্রমাণ।
কর্ণরন্ধ্র দিয়া কৈলা বাহিরে প্রয়াণ।।
বলিছেন কপিবর জানিনু তোমায়।
নাগমাতা প্রণতি করি গো তব পায়।।
তব বাক্যে প্রবেশিনু তোমার বদন।
অনুমতি দেও এবে করি গো গমন।।
তবে সে সুরসা ধরি আপন মূরতি।
কহিবারে আরম্ভিলা বায়ু-পুত্র প্রতি।।
সুখে যাহ হনুমান পরম কুশলী।
করুন তোমার শুভ অমর-মণ্ডলী।।
তব বীর্য্য পরাক্রম বুদ্ধি জানিবারে।
পাঠাইয়া ছিলা সব অমরে আমারে।।
তাহা জানিলাম এবে করহ গমন।
রাম সীতা উভয়েতে করাও মিলন।।
এত কহি নাগমাতা গেল নিজস্থান।
পুনঃ পূর্ব্বরূপ হয়ে যায় হনুমান।।