সুখ পাখি
অফিস থেকে বাড়িতে এসে দেখি শ্বশুরমশায় এসেছেন।
মেয়ে গতকাল রাতে ফোন করে বলে বাপি তোমাদের অমতে বিয়ে করে টের পাচ্ছি। অট্টালিকায় থাকতাম …হাতের কাছে চাকর থাকত… এখন নিজের বিছানাটাও নিজেকে করতে হয়। মোটা চালের ভাত,জলখাবারে রুটি।তারপর সবাই বলে একটা বাচ্চা নিতে।ইস ম্যাগো …হিসি..পটি সব পরিষ্কার করতে হবে।ও বাপি তুমি এসে নিয়ে যাও।।
বাবা জামাইকে বলে.. আমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি।তুমি ঘরজামাই থাকতে পারো।
শুনুন..আমি বেশ ভালো চাকরি করি.. স্টেট ব্যাঙ্কে অ্যাসিস্টান্ট ম্যানেজার পদে আছি…আমরা ভালো খাবার খাই।আমি চলে গেলে আমার মাকে কে দেখবেন?
মৌ সব জানে আমার বাবা নিরুদ্দেশ হবার পর মা কিভাবে মানুষ করেছেন।
মৌকে জিজ্ঞেস করি …তোমরা চলে যাচ্ছ?আপনি কেমন বাবা!!মেয়ের সংসার ভেঙে দিচ্ছেন??
আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া নেই।বাবার মত মেয়েও আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
আমার মনে হলো মৌ আমায় ছেড়ে চিরদিনের জন্য যাচ্ছে। আমি বোধহয় আর কখনও দেখতে পাবো না।ছুটে গিয়ে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করছিল।
আমার ঘোর কাটে মায়ের ডাকে।” কিরে এমন করে বসে আছিস ? “
মা মৌকে খুব ভালোবাসি।ও চলে গেল মা।
মা ছেলের সুখের কথা ভেবে.বলেন…..একা ঠিক থাকতে পারব!তুই বৌমার কাছে চলে যা বাবা ।
মা আমার মাথার চুলে আলতো করে হাত বুলাতে থাকেন। মায়ের ছোঁয়ায় অমিতের ভিতরে জমে থাকা কান্না ঠুকরে বেড়িয়ে আসে। মা আর কোন কথা বলে না।নীরবতায় কেটে যায় সময়!
মা বলেন .. বৌমা আর তুই সুখে থাক এটাই চাই।
তবে বয়সের অভিজ্ঞতায় বলি …
“ভালোবাসা আর সম্পর্ক এক নয়”। ভালোবাসায় কোন শর্ত লাগেনা ।
দুপক্ষের কিছু চাহিদা থাকে, পরস্পরের কিছু দায়িত্ব,কর্তব্য ,ভালোবাসা থাকে।সব মিললেই তবে কিন্তু সম্পর্ক টিকে থাকে।
মনে পরে আমার চাতক পাখির মত মৌদের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতাম দূর থেকে এক নজর দেখার আশায়।
কখনো মৌকে পাবো এমন আশা মনের মাঝে ছিলনা।
একদিন কলেজে মারাত্মক ঘটনা।আমি হিরোর মতো ওকে গুন্ডাদের হাত থেকে সসম্মানে উদ্ধার করি।এরপর কলেজ পাশ. ব্যাঙ্কে চাকরি।দুজনের প্রতি আকর্ষণ..ভালোবাসা..বিবাহ।তারপর ওদের বাড়ির অমতেই বিয়ে হয় কারণ আমি পিতৃহারা মধ্যবৃত্ত পরিবারের ছেলে.. মৌ ধনীর দুলালী।
বিয়ের পর মা মৌকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মৌ আবার বাপের বাড়ির পরিবারের সংস্পর্শে এসে বিগড়ে যেতে থাকে।আমিও বুঝতে পারছিলাম মৌ ঠিক চলে যাবে।
ভেবেছিলাম বাচ্চা হলে ঠিক হয়ে যাবে।
তাই সন্তান নেওয়া নিয়ে আমাদের মনোমালিন্য চলছিল।এনিয়ে ঝামেলা করে আজ পাকাপাকি ভাবেও বাপের বাড়ি চলে গেল।এরপর মৌকে কোনদিন ফোন করলে ফোন ধরত না।
মৌয়ের এমন আঘাতে আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি।একটু একটু করে দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
তারপর আমাদের ডিভোর্স হয়।
আমিও নিজেকে সামলে নিয়ে মায়ের দেখা সম্বন্ধ মুনিয়ার সাথে সংসার শুরু করি ।
মুনিয়ার সাথে নতুন করে জীবনটা বুঝতে শিখলাম।জীবনে সুখ ভেবে যার পিছনে ছুটে বেড়াই সুখ তাতে থাকে না।ভালোই কাটছে মুনিয়া আর আমার জীবন।কন্যা শ্রীমনি জন্মায়। আমাদের একমাত্র মেয়ে শ্রীমনিকে নিয়ে খুশিতে ছিলাম।
মেঘে মেঘে কেটে গেছে বাইশ বছর।মুনিয়া ও উড়ে গেছে তিনদিনের জ্বরে। কেমনকরে সময়ের কাটা পেড়িয়ে যায়।
একদিন বিমানবন্দরে মেয়েকে আনতে গেছি…হঠাৎ মনে হল কেউ নাম ধরে ডাকছে! পরিচিত কণ্ঠ… ঘুরে তাকিয়ে দেখি মৌ!
বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলি তোমার সাথে এজীবনে দেখা হবে ভাবিনি!
কত সুখ-দুঃখের স্মৃতি দুজনের আলোচনা হয়।
আমি বলি মেয়ে ব্যাঙ্গালোর থেকে আসছে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ হলো।।
তোমার মেয়ে এত বড় হয়ে গেছে অমিত!
মৌ! তোমার ছেলে মেয়ে?
মুখ কালো করে বলে ।
নেই। আমার কোন সন্তান হয়নি!সন্তান নিবো না বলে তোমায় ছেড়েছিলাম। তাই যখন চাইলাম সন্তান …হলনা!
দ্বিতীয়বর ও সন্তানের জন্য আমাকে ডিভোর্স দিল।
শ্রীমনির প্লেন এসে গেছে,ও কাছে এল।মৌ আমার মেয়ের দিকে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।’
ওনি কে বাবা? ‘
উনি মৌ আন্টি।
শ্রীমনি বলে তোমার কথা অনেক শুনেছি। আমারতো মা নেই..তোমাকে মামনি বলেই ডাকব। ইচ্ছে হলেই আমাদের বাড়ি চলে এসো।
মৌ মনে মনে ভাবে ঠিক আছে চলে যাব …আমিও তো বড্ড একা।