Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সমুদ্র যাত্রা || Bani Basu » Page 8

সমুদ্র যাত্রা || Bani Basu

বাড়িটা তিন রাস্তার মোড়ে অর্থাৎ কোণে। দুটো রাস্তা থেকে সোজা আমাদের কোনাচে বাইরের ঘরের অন্দর দেখা যায়। একজন বৃদ্ধ, সাদা ফতুয়া, সাদা লুঙ্গি পরে বসে রয়েছেন। বহুদূর পারাপার পার হয়ে একটা মহাজাগতিক ছবি এসে পৌঁছচ্ছে আমার কাছে অনেক আলোকবর্ষ পরে। কিন্তু ফুরিয়ে যাওয়া, লয় পেয়ে যাওয়া ছবি নয়। এ ছবি স্থির হয়ে আছে অনেক দূরে। বার বার কাছে পৌঁছচ্ছি আবার হারিয়ে ফেলছি। দাদু কি আমার জন্যে অপেক্ষা করছেন? সোজা গিয়ে ঘরে উঠি।

—দাদু!

দাদু আমার দিকে তাকান। দৃষ্টিতে কোনও উৎসাহ নেই। আমি ব্যাগটা রেখে মুখোমুখি চেয়ারে বসি।

—সমু!

—বলো। তোমার কী হয়েছে?

—কী হয়েছে সেটাই বুঝতে পারছি না।

—শরীর খারাপ?

—না।

—মন? দাদু, দাদার জন্যে মন খারাপ?

—না। কোনও রকম মন খারাপ নেই; সেটাই অদ্ভুত। … আমার বিরাশি কমপ্লিট হয়ে গেল সমু। যে রকম জোরের সঙ্গে সবকিছু মুঠোয় করে রেখেছিলুম, সেই … মুঠোটা আলগা হয়ে যাচ্ছে। তুমি দিল্লি থেকে যে খবর এনেছ, যা-ই এনে থাকো, আমায় না বললেও চলে। কিছু এসে যাবে না।

কী গভীর অভিমান থেকে দাদু কথাগুলো বলছেন অনুভব করি। প্রসঙ্গ ঘোরাই।

—বেশ ভাল লাগলো ওঁদের। ওই অরোরাদের … যাঁদের মেয়ের কথা দাদা তোমাদের আগেই জানিয়েছে। ওঁরা তোমাকে চিঠি লিখবেন। রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ করতে চায় দাদা, ওখানেই।

দাদু কেন জিজ্ঞেস করলেন না। আমার মনে হল এখানে বিয়ে হওয়ার মূল অসুবিধেটা ওঁকে জানিয়ে দেওয়া ভাল।

—আসলে দাদু, মেয়েটি ডিভোর্সি। ওঁরা চান না এ নিয়ে কোনও কথা উঠুক।—ঘটা পটা আনুষ্ঠানিক বিয়ে ইত্যাদি ওঁরা কিছুই তাই চান না।

—বেশ।

মা এসে ঢুকলেন — ও তুমি এসে গেছ? কী হল?

আমি শুধু কথাগুলো আবার বলি।

কিছুক্ষণ পরে মা বললেন— আজকে একটা প্রচণ্ড চ্যাঁচামেচি হবে বাবা।

—হোক। কিছুতে কিছু এসে যাবে না। সমু একটা কাজ করবে?

—বলো!

—আমাকে দুটো জিনিস খাওয়াবে?

অবাক হয়ে বললুম— কী?

—ফুচকা আর আইসক্রিম। দিদিভাই খুব ফুচকা খায়, কী এমন জিনিস, একটু চেখে দেখব। আর আইসক্রিম। বহুদিন বহু অভ্যাসে সংযত খাওয়া-দাওয়া করেছি। হঠাৎ হঠাৎ আইসক্রিমের গন্ধ পাই। ওইখানটা একটু বাকি আছে।

শেষ কথাটার মানে বুঝলুম না। মা খুব চিন্তিত চোখে চাইলেন, একবার আমার দিকে, একবার দাদুর দিকে।

মায়ের দিকে চাইলেন দাদু। —আমার ইচ্ছে হয়েছে বললুম। তোমাদের ইচ্ছে না হয়— দিয়ো না।

যখন আনলুম আইসক্রিম দু-তিন চামচ খেয়ে বললেন কোনও বিশেষ স্বাদ তো টের পাচ্ছি না। সমু, আমাদের অল্প বয়সে আইসক্রিমের খুব ভাল স্বাদ-গন্ধ ছিল। ম্যাগনোলিয়া, ম্যাগনোলিয়া বোধহয়। তা ছাড়া মালাই-বরফের খুব চল ছিল। সিদ্ধি দেওয়া, হালকা সবুজ, বুঝলে? কে জানে তারই গন্ধ পেলুম কি না। তফাত করতে পারছি না।

ফুচকা খেয়েও দাদু কিছু তফাত করতে পারলেন না। বললেন— তোমার খই দুধের সঙ্গে এই দিদিভাইয়ের ফুচকার কিছু তফাত বুঝছি না। আমাদের যৌবন বয়সে, বুঝলে সমু, হাতে ছোট বালতির উনুন ঝুলিয়ে পকৌড়িঅলা যেত, আর তোমার বাবাদের সময়ে পাওয়া যেত লড়াইয়ের চপ। সেসব খেলে দিদিভাই আর এসব আনতাবড়ি জিনিস খেতে চাইত না।

দাদু নীচের ঘরে একলা থাকেন। পাশের ঘরে দুই দিদা। আমি মাকে বলি ক্যাম্পখাটটা আমি দাদুর ঘরে পেতে নিচ্ছি। আজ এখানেই শোব।

গভীর রাতে দাদু বললেন— সমু ঘুমোলে?

—না দাদু।

—তোমায় কটা কথা বলি।

—বলো।

—যতদূর মনে পড়ছে বলি। আমি খুব সম্ভব খুব স্ট্রাগল্‌ করে আমার জায়গায় পৌঁছেছিলুম। আমার দাদারা হঠাৎ পরপর মারা গেলেন। তোমার জ্যাঠা খুব বড় স্কলার ছিলেন। উনি কাউকে ভালবেসেছিলেন, মেয়েটি ওঁকে ঠকায়, সেই থেকে মাথার গোলমাল হতে হতে একেবারে উন্মাদ। কিন্তু এখন উনি একরকম ভাল হয়ে গেছেন। ভায়োলেন্স আর নেই। খুব নিরীহ। ওঁকে আমাদের নিয়ে আসাই উচিত। তোমার কাকা এখন কানাডায়, তার দ্বিতীয় স্ত্রী মারা গেছেন। একটি ছেলেও। অন্যটি দিদিভাইয়ের থেকে বছর চারের ছোট। তাকে নিয়ে তোমার কাকা খুব মুশকিলে পড়েছে। এখন চাইছে দিদিভাই ওখানে গিয়ে থাক। আমার মনে হয় ও মরিয়া হয়ে দিদিভাইকেও এরপর লিখবে। তোমাকে খুব সম্ভব একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। দিদিভাই এখনও এত বড় হয়নি যে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে। তুমি ওকে সঠিক পরামর্শ দিয়ো। একটা ইমোশন্যাল আপহিভ্যাল হবে। আমার বয়সে পৌঁছলে বুঝবে তার কোনও সত্যি মূল্য নেই। তোমরা, আমার দুই ছেলে, বউমা, দুই নাতি, কাউকে ভালবাসনি। বড্ড আলগা। তোমার দাদা ভালবাসবার লোক খুঁজে পেয়েছে বলে আমি নিশ্চিন্ত। বড় ছেলেটি ভালবেসে কষ্ট পেল, আর বাকি সবাই না ভালবেসে। ফিনকিই একমাত্র আশা তোমাদের।

দাদু চুপ করে গেলেন।

পরদিন হস্টেলে চলে গেলুম। আমার ফাইন্যাল সেমিস্টারের পরীক্ষার দিনে রাত এগারোটা নাগাদ ফোন এল দাদু চলে গেছেন। খুব ভোরে, নিঃশব্দে, আমার পরীক্ষা ছিল বলে আমাকে খবর দেওয়া হয়নি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress