Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – অষ্টম পর্ব

সকালে দরজার কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম ভাঙ্গে অন্যন্যার তিয়াসা তখনও ঘুমিয়ে আছে। অন্যন্যা ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে ঘড়িতে তখন আটটা বাজে। ও তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দেখে মা চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়ানো। ইসস্ মা তুমি এই ভাবে চা নিয়ে দাঁড়ানো? এসে তো আমাকে আগে ডাকতে পারতে। রিনা দেবী হেঁসে বলেন: কেনো রে আমি কি এই ভাবে চা আনিনি কখনো? না, মা তা নয়, আমি সে কথা বলতে চাইনি। এরপর রিনা দেবী দেখলো তিয়াসা তখন ও ঘুমিয়ে আছে। বিরক্ত হয়ে বললো এই মেয়ের শুধু ঘুম এতো কথা হয়ে গেলো তাতেও তাঁর মোটে ঘুম ভাঙছে না। আহা্ মা, ছাড়ো না ঘুমোচ্ছে একটু ঘুমোতে দাও ওকে ও ঠিক উঠে যাবে সময় মতো। তিয়াসা ওমনি চোখ খুলে বললো: এই বাড়িতে দিদিয়া ছাড়া আমাকে কেউ বুঝতেই পারে না সারাক্ষণ শুধু বকাবকি। অন্যন্যা এইবার বোনের কান ধরে বলে ওওও তাহলে এই ব্যাপার ঘুম নয় ঘুমের ভান করা হচ্ছিল এতক্ষণ? ওহ্, মা আমি অলরেডি লেট আমি গেলাম ফ্রেশ হতে এরপর অফিসে ঢুকলে কাজটা আজকেই যাবে। অন্যন্যা চলে গেলো বাথরুমে। রিনা দেবী ছোটো মেয়েকে বললেন এই দিদি স্নানে গেছে আমি গেলাম রান্না ঘরে আর যেনো আমাকে ডাকতে আসতে না হয়। খাবার টেবিলে সবাইকে যেনো দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তৈরী হয়ে অন্যন্যা খেতে চলে আসে তিয়াসা ও মার ভয় ফ্রেশ হয়ে টেবিলে চলে আসে সময় মতো।

বিকাশ বাবু অন্যন্যাকে বলে এ কিরে মা তুই তো কিছুই খেলি না উঠে যাচ্ছিস যে? না না, বাবা আমি যা খাবার খেয়ে নিয়েছি এরপর আর খেতে গেলে দেরী হয়ে যাবে অফিসে গিয়ে ক্ষিদে পেলে আমি ক্যান্টিন থেকে ঠিক কিছু কিনে খেয়ে নেবো এখন আমি আসি। রিনা দেবী বলেন কাল থেকে আমি টিফিন রেডি করে রাখবো ক্যান্টিনের ওই বাসি খাবার রোজ রোজ খেতে হবে না। কেনো মা সবাই তো খাচ্ছে কোনো সমস্যা হবে না। রিনা দেবী গম্ভীর হয়ে বললো আমি বললাম তো আমি করে দেবো। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি দিয়ো করে। এখন আমি আসি দেরী হয়ে যাচ্ছে। বিকাশ বাবু বলেন: সাবধানে যাস মা চিন্তায় থাকবো। অন্যন্যা হেঁসে বলে চিন্তা করো না বাবা। মা আমি পৌঁছেই জানিয়ে দেবো তোমারা চিন্তা করো না আমি এলাম।

অফিসে পৌঁছেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় অন্যন্যা। তারপর সারাদিন আজকে অনেক কাজের চাপ থাকায় লাঞ্চে আর বাড়িতে ফোন করা হয় ওর। ঠিক তিনটে নাগাদ রিনা দেবী ফোন করে জানতে চায় অন্যন্যার খাওয়া হয়েছে কিনা? কাজের চাপে ফোনটা ও ধরতে পারেনি অন্যন্যা। তখন প্রায় পাঁচটা হবে অন্যন্যা খেয়াল করে মা তাকে ফোন করেছিলো ফোনে না পেয়ে হয়তো খুব দুশ্চিন্তা করছে। মনে মনে ভাবে মাথাটা ও খুব ধরেছে ক্যান্টিন গিয়ে এক কাপ কফি আর একটু স্নাক্স নিয়ে নিশ্চিতে মার সাথে কথা বলে নেবে। এই ভেবে সে পা বাড়ায় ক্যান্টিনের দিকে। ক্যান্টিনে গিয়ে বসে মাকে ফোন করতে যাবে এমন সময় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসায় ফোনটা রিসিভ করে অন্যন্যা বেশ কয়েকবার হ্যালো বলার পর একটা অচেনা কণ্ঠ ভেসে আসে কাজটা তুমি ভালো করোনি এই কেসটা যদি কোর্ট পর্যন্ত যায় তাহলে তোমার ভালো হবে না। কথাগুলো শোনার পর কিছু বলতে যাবে ফোনটা হুট করে কেটে যায়। এক নিমেষে যেনো একটা ঝড় বয়ে গেলো অন্যন্যার উপর দিয়ে। কিছু বুঝতে পারছে না ও, ওর এখন কি করা উচিৎ? হটাৎ তৃণার কথা মাথায় আসে অন্যন্যার ফোন করে ও তৃণাকে কিন্তু ফোনটা বেজে যায় অন্যন্যা চিন্তা করে তৃণা ও এই সময়ে অফিসে আছে হয়তো কোনো কাজে ব্যাস্ত তাই ফোনটা ধরতে পারেনি । ওকে এখন আর ফোন করা হয়তো ঠিক হবে না কিন্তু অন্যন্যা ভিতর ভিতর খুব অস্থির হয়ে ওঠে কি করবে এখন ও কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছিল না। এমন সময় ক্যান্টিন এর বয় এসে বললো দিদি তোমার কফি আর স্নাকস। তারপর চলে যেতে গিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো দেখে অন্যন্যা ওকে জিজ্ঞাসা করলো কিছু বলবে? সে উত্তর দিলো: না না দিদি তেমন কিছু না তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে খুব অস্থির লাগছে তোমাকে একটু আগেও তো এমন লাগছিল না তাই আর কি? অন্যন্যা একটু মুচকি হেঁসে উত্তর দেয় ও না তেমন কিছু না ঠিক আছে তুমি যাও। অন্যমনস্ক হয়ে কফিতে চুমুক দিতেই ফোনটা আবার বেজে উঠলো, ফোন বেজে ওঠায় অন্যন্যা খুব ভয় পেয়ে যায় তারপর খেয়াল করে ফোনটা বাড়ি থেকে এসেছে। নিজেকে একটু ধাতস্থ করে নিয়ে ফোন ধরে অন্যন্যা। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে মার গলা পায়: কিরে তুই কি বলতো লাঞ্চ টাইমে ফোন করবি বললি তারপর কোনো খোঁজ নেই তোর? আচ্ছা কোনো জ্ঞান নেই তোর চিন্তায় থাকি জানিস না একবার জানানোর দরকার মনে করলি না কিছু খেয়েছিস কিনা ফোন করলাম তাও ধরলি না বাড়ির লোকগুলোর ও যে চিন্তা হতে পারে সেটা মনে হয় না তোর? এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে রিনা দেবী। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না আসায় চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করে কিরে অনু আছিস তুই শুনতে পারছিস আমার কথা? অন্যন্যা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে উত্তর দেবার চেষ্টা করে তুমি তো বলেই যাচ্ছো মা আমাকে কি তুমি সুযোগ দিচ্ছো কিছু বলার? আজকে কাজের খুব চাপ ছিল মা আমি একদম সময় পাইনি। ক্যান্টিন এসে তোমাকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু বলেই থেমে যায় অন্যন্যা। ওপাশ থেকে রিনা দেবী জানতে চায় কিন্তু কি? করতে যাচ্ছিলি তো করলি না কেনো? চুপ করে থাকে অন্যন্যা চিন্তা করে ফোনের কথাটা এখন মাকে বললেই মা আরও অস্থির আর চিন্তিত হয়ে পড়বে ওকে হয়তো আর অফিসেই আসতে দেবে না, তাই কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে না মা আসলে মাথাটা এতো ধরেছে যে ভাবলাম কফি টা খেতে খেতে তোমার সাথে কথা বলবো এখন একটু চুপ করে বসি তাই আর কি। আমার ভুল হয়ে গেছে ফোনটা আমার আগেই করা উচিত ছিল। রিনা দেবী বলেন দুপুরে নিশ্চিত কিছু খাওয়া হয়নি আচ্ছা এটাকে কি কাজ বলে যেটা সারাদিন না খেয়ে করতে হয়? রিনা দেবী বলতেই থাকে। অন্যন্যা শেষে রিনা দেবীকে থামানোর জন্য বলে আচ্ছা আচ্ছা মা তুমি এমন কেনো করছো আমি আর কি সেই ছোটো আছি ক্ষিদে পেলে তো খাবোই। এই তো খাবার নিয়েই তো বসে আছি খাচ্ছি তো এতো চিন্তা করো না। এমন সময় নিকিতা এসে অন্যন্যাকে বলে ” আরে তুই এখানে বস অনেকক্ষণ ধরে তোকে খুঁজছেন” যা তাড়াতাড়ি না হলে এবার পাগলই হয়ে যাবে”। অন্যন্যা ওর মাকে বলে আচ্ছা মা আমি ফোন রাখছি বস ডাকছে। রিনা দেবী বলে যেই ডাকুক আগে খাবারটা শেষ করবি তারপর যাবি। মাকে চুপ করাতে অন্যন্যা বলে আচ্ছা তাই হবে তুমি ফোনটা রাখলে আমি খেয়েনি। মেয়ের কথা শুনে রিনা দেবী বলে হ্যাঁ আমি রাখছি কিন্তু না খেয়ে কোথাও যাবি না। ওকে মা বাই বলে ফোনটা কেটে দেয় অন্যন্যা। তারপর তাড়াতাড়ি উঠে যায় টেবিল থেকে খাবারটা ওর আর খাওয়া হয় না।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *