Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – শেষ পর্ব (Somokami)

দেখতে দেখতে আটটা বছর পাড় হয়ে গেছে। অন্যন্যা এখন এক সন্তানের মা। কৃষ্ণেন্দু মেয়ের নাম রেখেছে তিতলি। একদম প্রজাপতির মতোই চঞ্চল মিষ্টি একটা মেয়ে। তিয়াসা পড়াশুনা কমপ্লিট করে স্বামীর সাথে ব্যাঙ্গালোরে সেটেল। ওরা দুজনেই অবশ্য এক কোম্পানিতে চাকরি করছে। অন্যন্যা মেয়ে হওয়ার পর চাকরিটা নিজেই ছেড়ে দেয়। এখন শুধু মন দিয়ে সংসার করছে ও। কৃষ্ণেন্দু মেয়ে বউয়ের বাইরে কিছুই বোঝে না। আজও অন্যন্যা ওর কাছে সেই প্রথম দিনের মতোই। তৃণা ও বিয়ে করেছে ওর একটা ছেলে। বর একটা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার। তৃণা এখনও জব করে। ওর শশুরবাড়ি একান্নবর্তী পরিবার তাই ছেলেকে নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। বিকাশ বাবু আর রিনা দেবী খুব সুখী আজ। বিশেষ করে বড় জামাইকে নিয়ে তাদের খুব অহংকার। তিয়াসা এখন বাচ্চা চাইছে না। ওরা এখন নিজেদের ক্যারিয়ার তৈরী করবে বিদেশে সেটেল করার প্ল্যান ওদের। বিকাশ বাবু রিনা দেবী মাঝে মাঝে চলে যায় বেশকিছু দিনের জন্য ছোটো মেয়ের কাছে। বছরে দুবার ওরা সবাই বিকাশ বাবুর বাড়িতে এক সাথে হয়। এক জামাই ষষ্ঠী আর দুই পূজোর সময়। নাতনি তিতলি বিকাশ বাবুর প্রাণ। রিনা দেবী অবশ্য অন্যন্যাকে মাঝে মাঝে বলে আর একটা বাচ্চা হলে মন্দ কি? অন্যন্যা এড়িয়ে যায়। সেদিন এমনি কৃষ্ণেন্দু মেয়ে আর বউকে নিয়ে ওদের সাথে দেখা করতে যায়। তারপর বিকাশ বাবু আর রিনা দেবীর অনুরোধে রাতে থেকে যায় সেখানে। খেতে বসে রিনা দেবী হটাৎ বলে: তোমাদের আজকালের ছেলে মেয়েদের সত্যি বুঝি না। একটা বাচ্চার বেশি কিছুতেই নেবে না। অনুকে কতদিন বলেছি এড়িয়ে যায়। আর একজন তো বাচ্চার নাম শুনলে ফোন রেখে দিচ্ছে। তোমাকে ও বলি বাবা তুমি তো একটু অনুকে বোঝাতে পারো। কৃষ্ণেন্দু চুপ করে থাকে। রাতে তিতলি বায়না ধরে সে দাদার সাথেই শোবে। অন্যন্যা বার বার বোঝানো সত্যে ও সে নিজের জায়গায় অনড়। শেষে কৃষ্ণেন্দু বলে: আচ্ছা একটা দিন তো ছেড়ে দাও। রাতে ঠিক উঠে তোমার কাছেই চলে আসবে। অন্যন্যা আর কথা বাড়ায় না। মার হাতে হাতে সব কাজ সেরে অন্যন্যা ঘরে গেলে দেখে কৃষ্ণেন্দু একটা সিগারেট নিয়ে জানলার কাছে দাঁড়ানো। অন্যন্যা গিয়ে প্রশ্ন করে কি হলো জানলার কাছে দাঁড়ানো যে? এই তুমি আবার এই সিগারেট ধরিয়েছো? ফেলো ফেলো বলছি এই বলে এক টানে ওটা ফেলে দেয়। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে এনে বলে: ঝা ফেলে দিলে? এই মাত্র ধরালাম। অন্যন্যা বলে: বেশ করছি। কৃষ্ণেন্দু কিছু না বলে অন্যন্যাকে চুমু দিতে থাকে। অন্যন্যা ছিটকে সরে গিয়ে বলে: মাথাটা একদম গেছে নাকি? দরজা খোলা আর তুমি। উফফ তোমাকে নিয়ে না সত্যি পারা যাচ্ছে না। তুমি কি এটা ছাড়া কিছু বোঝো না? কৃষ্ণেন্দু গাল ফুলিয়ে বলে: আজকাল শুধু বকাবকি করো। এতো পুরানো হয়ে গেছি আমি? ঠিক আছে যাবো না আর কাছে। কৃষ্ণেন্দু খাটে গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। অন্যন্যা দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে কৃষ্ণেন্দুর পাশে গিয়ে শোয়। তারপর বলতে থাকে খুব রাগ হয়েছে একজনের কিন্তু আমার দিকে কি একবার ও তাকাবে না? কৃষ্ণেন্দু ওপাশ ফিরেই উত্তর দেয়: না, তাকাবে না। ঘুমিয়ে পড়। আর আমাকে ও ঘুমোতে দাও। অন্যন্যা বুঝতে পারে খুব রাগ হয়েছে কৃষ্ণেন্দুর। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে: স্যার একটা কথা ছিল। কৃষ্ণেন্দু ঘুরে গিয়ে বলে: কি বললে? অন্যন্যা বললো: কি আবার বললাম? স্যার বললাম। তুমি তো আমার তাই ছিলে। আমি কি সেদিন বুঝেছি যেদিন তোমার কাছে প্রথম হেল্প চাইতে গেছিলাম যে এরকম দিন ও আসবে? কৃষ্ণেন্দু তাঁকিয়ে থাকে অন্যন্যার দিকে। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর আরো কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। কৃষ্ণেন্দু বলে: এই অনু কি হয়েছে? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে একটু আদর করবে? এই ভাবেই খুব সুখেই কাটছিল ওদের দিনগুলো।

সেদিন সকালে ওরা এক সাথেই ব্রেকফাস্ট করছিল। কৃষ্ণেন্দুর আজ দুদিনের জন্য বাইরে যাবার কথা। মালতি দি রান্না ঘর থেকে বললো: তোমাকে চিন্তা করতে হবে না বৌদিমনি দরকার হলে আমি রেতে এসে থাকবো। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বললো: এবার এই ভয়টা থেকে বেরিয়ে এসো। আর কোনো ভয় নেই। আমাদের কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। দুটো দিনের ব্যাপার সোনা। হঠাৎ ডোর বেলটা বেজে ওঠে। অন্যন্যা উঠতে যাবে এমন সময় মালতি বললো: তুমি বসো আমি দেখছি। দরজা খুলে মালতি বললো: বৌদিমনি কেউ একটা তোমাকে খুঁজতেছে। অন্যন্যা উঠে দরজার সামনে যেতেই চিৎকার করে ওঠে: আপনি, আপনি কেনো এসেছেন এখানে? আপনি কি করে জানলেন আমার বাড়ির ঠিকানা। মা , বাবা আপনি ওখানে? আপনি কি করেছেন ওদের? দরজার ওপারে তখন অয়ন দাঁড়ানো। সাথে নিখিল ও ছিল। অয়নকে আজ আর আগের মতো স্মার্ট হ্যান্ডসাম লাগছে না। রোগা শীর্ণকায় ঝিমিয়ে পড়া চেহারা। অন্যন্যার চিৎকার শুনে ছুটে যায় কৃষ্ণেন্দু। কৃষ্ণেন্দুকে দেখে অয়ন বলে: প্লিজ আপনি ওকে একটু বোঝান। আমি ওর বা আপনাদের কারো কোনো ক্ষতি করতে আসিনি। আর অন্যন্যা আমি তোমার বাড়ি যায়নি সোজা এখানেই এসেছি। অনেক কষ্ট কৃষ্ণেন্দু বাবুর অফিস থেকে ঠিকানাটা জোগাড় করেছি। তুমি প্লিজ আমার কথাটা একটু শোনো। ভয় অন্যন্যা জড়িয়ে ধরে কৃষ্ণেন্দুকে তারপর বলে তুমি প্লিজ ওকে চলে যেতে বোলো। আমি ওর কোনো কথা শুনতে চাই না। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বুকের সাথে জড়িয়ে বলে: এতো ভয় কেনো পাচ্ছো তুমি? আমি তো আছি তোমার সাথে। শুনিই না কি বলতে চাইছে। আপনি ভীতরে আসুন। অন্যন্যা বাঁধা দেয়: না, একদম না ওর যা বলার ও এখানে দাঁড়িয়ে বলে চলে যাক। অয়ন বলে: আচ্ছা বেশ আমি ভীতরে যাবো না। আমি এখান থেকে চিরদিনের মতো চলে যাচ্ছি। কোনোদিন আর দেখা হবে না হয়তো। শুধু তার আগে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমি জানি আমি যা করেছি তার ক্ষমা হয় না তবু ও যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি নিখিলকে সত্যি ভালবাসতাম আমি চাইনি আমার সাথে অন্য কাউকে আর জড়াতে। আমি অনেকবার বুঝিয়েছিলাম বাড়িতে আমার কথা কেউ শোনেনি। শুধু আমি আমার ভালোবাসা হারাতে চাইনি বলে ড্যাডের সব কথা মেনে চলছিলাম কারণ আমি জানতাম আমার বাবা কি কি করতে পারেন। আমার ভয় ছিল আমি নিখিলকে নিয়ে চলে যেতে চাইলে বাবা ওর কোনো ক্ষতি না করে দেয়। আর তাই তোমাকেই রাস্তা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি না। কিন্তু আজকে বুঝতে পারছি অসৎ পথে ভালো কিছুই পাওয়া যায় না। ড্যাড জেলের ওই কষ্ট নিতে পারেনি। তাই দুমাস বাদেই জেলেই সুইসাইড করেছিল। খবরটা পেয়ে মা নিজেকে সামলাতে পারেনি মার স্ট্রোক হয়। নাম করা ডক্টর চৌধুরীর ওয়াইফ একটা সরকারি হসপিটালে একপ্রকার বিনা ট্রিটমেন্টে মারা যায়। কোনো রিলেটিভস এগিয়ে আসেনি। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো একবার যাবে মার কাছে। মা পরিবারের কথা চিন্তা করে তোমাকে ছাড়তে চায়নি ঠিকই কিন্তু মা কোনোদিন তোমার কোনো ক্ষতি চায়নি। কিন্তু তুমিও এলে না। অন্যন্যা তবে আজ আমি কোনো অভিযোগ করতে আসিনি। আমি তোমার কাছে শেষবারের মতো দেখা করে ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমি আমার ভালোবাসাকে পেতে যে ভুল রাস্তা অবলম্বন করেছিলাম এটা তারই শাস্তি পেয়েছি।

হটাৎ পিছন থেকে তিতলি এসে ডাক দেয়: মাম্মাম। অয়ন তিতলিকে দেখে বললো: তোমার মেয়ে? অন্যন্যা: মালতি দি মালতি দি কোথায় তুমি মাম্মাকে নিয়ে যাও একটা বাচ্চাকে সামলে রাখতে পারো না? কি এমন কাজ করো? মালতি তাড়াতাড়ি এসে তিতলিকে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। অয়ন আবার ও অন্যন্যাকে বললো: তুমি ভয় পেয়ো না বিশ্বাস করো আমি এতো কিছু হারিয়েছি যে আমার আর কারো ক্ষতি করার সাহস নেই। আর আমি সেটা করতে ও চাই না। আমি আর নিখিল এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। আর কোনোদিন তোমার সাথে দেখা হবে না তাই শেষবারের মতো দেখা করে ক্ষমা চাইলাম। এবার আমরা আসি। অন্যন্যা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো পাথরের মতো তাঁকিয়ে থাকলো অয়নের চলে যাবার দিকে।

কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার কাঁধে হাত রেখে বলে: চলো অনু ভীতরে চলো। অন্যন্যা কৃষেন্দুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে: ও কেনো আবার ফিরে এলো? আবার কি ঝড় আনতে চাইছে? আমি বিশ্বাস করি না, না কিছুতেই না। কৃষ্ণেন্দু দু হাত দিয়ে অন্যন্যার মুখ ধরে বলে: ও আর আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না অনু। কারণ ও নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে সব করেছে। ও নিজের লোককে হারিয়েছে ও এখন জানে নিজের মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা। আর আমি তো আছি। আমাকে ডিঙ্গিয়ে তোমার কাছে পৌঁছানো যে যাবে না সেইটুকু বিশ্বাস তো করো আমাকে? অন্যন্যা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কৃষ্ণেন্দুকে। ওর বুকে মাথা রেখে বলে: আজ তুমি কোথাও যেও না আমাকে ছেড়ে। তোমাকেই যে আজকে আমার সবথেকে বেশী দরকার।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42
Pages ( 42 of 42 ): « পূর্ববর্তী1 ... 4041 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *