সমকামি – চতুর্থ পর্ব
এরপর অন্যন্যা সেখান থেকে বেরিয়ে এলো। ওকে এতো জিনিষ নিয়ে ঢুকতে দেখে বাড়ির সবাই খুব অবাক হয়ে যায়। মা, বাবা, বোন সবাই প্রশ্ন করে এতো জিনিষ নিয়ে এতো সকাল সকাল কি হয়েছে? অন্যন্যা সবাইকে বলে চলে যখন এসেছি তখন কারণ তো সবাইকে বলতেই হবে কিন্তু তার আগে তাকে ঘরে তো ঢোকার সময় দিক। এর মধ্যেই অন্যন্যার বান্ধবী তৃণা এসে ও গেছে। অন্যন্যার বাবা সব জিনিষ নিজের হাতে নিয়ে বলে: চল মা ঘরে চল ঘরে বসেই সব কথা হবে তৃণা তুমিও এসো। স্ত্রীকে বলে তুমি একটু সবার জন্য চা নিয়ে এসো আমার খুব চিন্তা হচ্ছে আগে জানি কি এমন হলো যে আমাদের মেয়েকে দুমাসের মধ্যে সব ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হলো? মা তুই চল ঘরে।
সবাই ঘরে গেলো অন্যন্যার মা তিয়াসাকে বললো তুই চা টা নিয়ে আয় এখন সব না জানা পর্যন্ত আমি পারবো না কিছু করতে। তিয়াসা মাকে বললো তোমরা যাও আমি আনছি। তিয়াসা রান্না ঘরে গেলো আর সবাই ঘরে গেলো অন্যন্যার সাথে। ঘরে ঢুকে দেখলো অন্যন্যা ধপাস করে খাটে বসে পড়লো। তৃণা, কেউ কিছু প্রশ্ন করার আগেই বললো: কাকু কাকিমা অন্যন্যা নয় ও কেনো চলে এসেছে কি কারণ কি হয়েছে সবটাই আমি তোমাদের বলবো কারণ সবটা আমার জানা। অন্যন্যা আমাকে সব বলেছিল প্রথম থেকেই আর আমি ওকে বলেছিলাম সবকিছু নিজে আগে ভালো করে জেনে নিয়ে তারপর তোমাদের জানতে না হলে তোমরা অযথা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যাবে তাই। তার আগে আমি তোমাদের কিছু প্রশ্ন করবো প্লিজ তোমার কিছু মনে করো না কারণ আমি জানি তোমরা অন্যন্যাকে খুব ভালোবাসো আর যে কোনো পরিস্থিতে ওর পাশে থাকবে। আচ্ছা তোমাদের অয়নের ব্যাবহার কখনো অদ্ভুত লাগেনি? প্রথম থেকে সবকিছুতে একটা গা ছাড়া ভাব তারপর বিয়ের পর অন্যন্যা একা এলো অয়ন এলো তো নাই একটা ফোন ও অয়ন অন্যন্যাকে করেনি, নিজের বিবাহিত নতুন বউ কোনো ছেলে কি এতটা ও উদাসীন হতে পারে যদি তার অন্য কোন গল্প না থাকে? অন্যন্যার বাবা কিছু একটা বলতে যাবে তৃণা তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলে : হ্যাঁ কাকু তোমাদের জামাইয়ের অন্য সম্পর্ক আছে তাই শুধু মাত্র বাড়ির লোকের কথা রাখতে আর বাইরের লোকের মুখ বন্ধ করতে ও অন্যন্যাকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিয়েটা করে। অন্যন্যার মা বিড়বিড় করে বলে ওঠে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক? তাহলে আমার মেয়েটাকে কেনো বিয়ে করে ওর জীবনটা নষ্ট করে দিলো? তৃণা উত্তর দেয় না কাকিমা অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক হলে হয়তো অন্যন্যা একবার অন্তত চেষ্টা করতো বা আমিও ওকে বলতাম একটু অপেক্ষা করতে এতো তাড়াতাড়ি কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে। অন্যন্যার বাবা হলে ওঠে মেয়ের সাথে সম্পর্ক না মানে? এদিকে আবার বলছো অন্য সম্পর্ক আছে আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না তুমি প্লিজ একটু খুলে বলবে? আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। কাকু এটা তোমাদের আসলে বোঝার কথা ও না তাই তোমরা বুঝতে ও পারছো না। আসলে কি ভাবে যে বলবো তোমাদের নিজে ও বুঝতে পারছি না। কিছুক্ষন চুপ করে যায় তৃণা। তারপর আস্তে করে বলে কাকু কাকিমা অয়ন আসলে সমকামি ও একজন পুরুষে আসক্ত এবং ওরা একে অপরকে ভালোবাসে বাকিটা তোমারা আশা করি বুঝতে পারছো। অন্যন্যার অয়নের ব্যাবহার খুব অদ্ভুত লাগে বিয়ের প্রথম রাত থেকেই সেটা কিছু ঘটনার কারণে বাড়তে থাকায় ও আমাকে জানায় সবটা তারপর আমিই ওকে কিছু বুদ্ধি দি আর তাতেই এই ঘটনা সামনে আসে।
অন্যন্যার বাবা, মা প্রায় একসাথে বলে ওঠে ছেলে? একটা ছেলের একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক? এটা কি করে সম্ভব? কোথাও কিছু ভুল হচ্ছে নাতো? এমন তো হতেই পারে ওরা খুব ভালো বন্ধু, অন্যন্যা ভুল ভাবছে। আর তাছাড়া কে সেই ছেলে? তৃণা বলে ছেলেটা অন্য কেউ না ওর ছোটবেলার বন্ধু নিখিলেশ বিয়েতে তোমরা ওকে দেখে থাকবে হয়তো। সেই মুহুর্তে হাতে চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢোকে অন্যন্যার ছোটো বোন তিয়াসা হাতের ট্রেটা ঘরের একটা টেবিলের উপর রেখে বলে ওঠে হ্যাঁ আমার মনে আছে আর জিজু তো যেনো ওকে ছাড়তেই চায় না সারাক্ষণ দুজন একসাথে যেনো সবার থেকে একটু দূরত্বে ওরা ভালো থাকে। বিকাশ বাবু ( অন্যন্যার বাবা) একটু বিরক্তির সুরে বলে আহ্, তিয়াস যাও নিজের ঘরে যাও বড়দের কথার মধ্যে কথা বলো না। নিজের পড়ায় মন দাও। তিয়াসা মুখ ছোটো করে বলে, বারে আমি কি এমন বললাম? শুধু তো বললাম যে আমি চিনি!!! তোমাদের সব কথা তো আমি শুনিনি। বিকাশ বাবু আবার বললেন: আমি তোমাকে বলছি তুমি নিজের ঘরে যাও, দরকার পড়লে তোমায় আমরাই ডাকবো এখন কথা না বাড়িয়ে যাও। তিয়াসা বাবার মুখের উপর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে যায় সেই ঘর থেকে। অন্যন্যার বাবা বলে ওঠে হ্যাঁ আমরা সকলেই ছেলেটিকে দেখেছি আর বুঝতে ও পেরেছি যে ওরা খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু কিন্তু তার মানে কি এটা যে ওরা একে অপরের সাথে অন্য রকম কোনো সম্পর্কে লিপ্ত? এরপর অন্যন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলে: তুই কেনো চুপ করে আছিস? তোর মুখ থেকে সবকিছু শোনা সব থেকে বেশি দরকার। যেটা তুই বা তোরা ভাবছিস সেটা তো ঠিক নাও হতে পারে। এত বড় একটা সিদ্ধান্তে আসার আগে তো সবার সাথে কথা বলা দরকার নাকি? না, না কোথাও একটা ভুল হচ্ছে তোদের।
—- এতক্ষণের মৌনতা ভেঙ্গে অন্যন্যা বলে: না, কোনো ভুল হয়নি বাবা। তার যথেষ্ট প্রমাণ ও আছে আমার কাছে। আমি সবকিছু না বুঝে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি বাবা। বিকাশ বাবু উদ্বিগ্ন ভাবে জানতে চায় দেখি, দেখি কি প্রমাণ আছে তোর কাছে? সবটা তো আমাদের ও জানা দরকার। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে অন্যন্যা। তৃণার দিকে তাকায়। তৃণা কি উত্তর দেবে বুঝতে না পেরে মাথা নীচু করে বলে: কাকু ছবিগুলো আপনাকে দেখানোর মতো হলে আপনাকে আগেই দেখানো যেতো কিন্তু। অন্যন্যার মা এবার বিকাশ বাবুর দিকে তাঁকিয়ে বলেন: ওরা কি বলছে এসব, কি এমন ছবি যা আমাদের দেখানো যায় না? আমি কিছু ভাবতে পারছি না। ভালো করে মাস দুই ও হয়নি এরমধ্যে মেয়ে চলে এসেছে প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন সবাই কি বলবে? কার কার মুখ বন্ধ করবো আমরা? ঘরে আরো একটা সমত্ত মেয়ে এরপর তো ওর বিয়ে নিয়ে ও সমস্যা তৈরী হবে। তৃণা আর অন্যন্যা এবার ভীষণ অবাক হয়ে গেলো মা বাবা দুজনার কথায় !!!!!!!!! অন্যন্যা এরপর মাকে প্রশ্ন করলো, আচ্ছা মা তোমার কাছে কোনটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট বলতো? পাড়া প্রতিবশী আত্মীয় স্বজন নাকি আমি? রিনা দেবী ( অন্যন্যার মা) এবার একটু ঝাজালো গলায় বলে উঠলো: আমাদের সমাজে থাকা লোকজন নিয়েই চলতে হবে এটাই নিয়ম এটাই হয়ে এসেছে তাছাড়া তুমি হঠাৎ করে একটা ভুল সিদ্ধান্ত নেবে, বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা নয়।
অন্যন্যা এবার অবাক হয়ে বলে: হঠাৎ, কোনটা হঠাৎ? আর তোমাদের তো বললাম যে আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে তোমরা কি আমাকে বিশ্বাসই করছো না? তৃণার দিকে তাঁকায় অন্যন্যা। তৃণা চোখের ইসারায় অন্যন্যাকে বাইরে আসতে বলে অন্যন্যা বাইরে গেলে তৃণা ওকে বলে: তুই কাকিমাকে ডেকে ছবিগুলো দেখা। অন্যন্যা আঁতকে ওঠে: তুই কি পাগল হয়ে গেছিস তৃণা? এই নোংরা বিচ্ছিরি ছবিগুলো মাকে কি করে ? আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। তৃণা উত্তরে বলে: তুই কি বুঝতে পারছিস না যে তোর ঘরের লোক অয়নকে না তোকে ভুল ভাবছে? শোন আমরা মানতে না চাইলেও সো কল্ড সমাজের এটাই চিত্র যেখানে মেয়ের বাবা মা ও নিজের মেয়েকেই আগে কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়।তুই কাকিমাকে ডাক আচ্ছা দাঁড়া আমি ডাকছি আর আমিই দেখাবো সব। তুই টেনশন নিস না। তাছাড়া এরপর ডিভোর্স নিতে গেলে এই ছবি তোকে ও দেখাতেই হবে, না হলে তুই সত্যি প্রমাণ করবি কি ভাবে?