Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

সমকামি – আটত্রিশতম পর্ব

ডক্টর মোহান্তিকে ওরা যখন বের করে নিয়ে যায় তখন রাত একটা বেজে ত্রিরিশ মিনিট। বেড়িয়ে যাওয়ার আগে ডাক্তার মোহান্তি রাজুকে বলে: একবার আমার মেয়েটাকে দেখতে পারি? বিপ্লব পিছন থেকে বলে না পারেন না। যে মেয়েটাকে আটকে রেখেছেন তার জন্য চিন্তায় তার বাড়ির লোকের কি অবস্থা এবার একটু বুঝুন। রাজু নিয়ে চলো এটাকে। গাড়িতে উঠে বিপ্লব ডাক্তারকে একটা পেন দেয়। বিপ্লব বলে এই নিন এই পেনটা ঠিক এই ভাবেই পকেটে লাগিয়ে রাখবেন। ফোন যেনো সুইচ অফ না হয় কখনো। কোথায় কি হচ্ছে ওদের নেক্সট প্ল্যান কি? সব খবর আমাদের চাই ঠিক ঠিক মতো। না হলে কি হতে পারে বুঝিয়ে বলতে হবে না আশা করছি। ডাক্তারকে ওরা ওর বাড়ির একটু দূরে নামিয়ে দিয়ে বলে একটা ক্যামেরা এই পেনটাতে লাগানো আছে একটা এই ফোনে। মাত্র দুটো দিন সময় দিলাম। কথাটা যেনো মাথায় থাকে। নেমে চলে যাওয়ার সময় ডাক্তার একটু থমকে দাঁড়িয়ে বললো: আমি তোমাদের কথা মতো সব করবো। আমার মেয়েটার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। রাজু চোখ রাঙিয়ে বলে: সেটা তোর কাজের উপর ডিপেন্ড করে। এখন যা নিজের কাজটা মন দিয়ে কর। তারপর ওরা গাড়ি নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যায়।

পরেরদিন হসপিটালে গেলে ডক্টর মোহান্তি দেখে ডক্টর চৌধুরী ফিরে এসেছেন। ডক্টর মোহান্তিকে দেখে ডক্টর চৌধুরী বলে ওঠেন: হসপিটালটা কি আপনার বাবার ডক্টর মোহান্তি? যখন ইচ্ছে আসছেন যখন ইচ্ছে যাচ্ছেন নিজেকে কি এখন মালিক বলে মনে হয় আপনার? ডক্টর মোহান্তি একটু আমতা আমতা করে বলে: স্যার আসলে বউয়ের শরীরটা একটু বেশী খারাপ হয়ে যাওয়ায় আর কি? ডক্টর চৌধুরী ধমকে বলেন: চুপ ইডিয়ড ওই আধমরা বউয়ের জন্য কতো চিন্তা সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। কোন মাগির কোলে গিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। যেদিন এখন থেকে লাথি মেরে দূর করে দেবো সেদিন বুঝবেন। ডক্টর মোহান্তি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। আর এই পুরো ঘটনাটা কমিশনার থেকে শুরু রাজু সবাই দেখলো। নিন চলুন এবার ওই মেয়ের ঘরেই আজকে আপনার ডিউটি থাকবে। ওকে আর ঘুমের ইনজেকশন পুষ করলে ওর প্রাণের ভয় আছে। হালকা ডোজের ইনজেকশান দিতে হবে। ও, আমাদের বাইরে চলে যাবার সমস্ত ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। আর মাঝখানে তিনটে দিন। এই তিনটে দিন বাড়িতে কেউ মরে গেলেও যাওয়া যাবে না কথাটা মনে রাখবেন। আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে গেছি। সকালের খাবার মুখে খাবে ডক্টর মোহান্তি কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে ডক্টর চৌধুরী বললো: কি ভাবে খাওয়াবেন সেটা আপনি বুজবেন কিন্তু খাওয়াতে হবে। খুব সাবধান আমরা কিন্তু পুলিশ এর সন্দেহের বাইরে নই শুধু আমার রেপুটেশন আর টাকার জোড়ে কেউ কিছু করতে পারছে না একটা ভুল সব শেষ করে দেবে। আমি রাতে আসবো আবার।

ডক্টর চৌধুরী বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। রাজু সব ঘটনা দেখে বিপ্লবকে জিজ্ঞাসা করে অনুমতি দিলে এই কুত্তার বাচ্চাকে এখনই শেষ করে দেবো। বিপ্লব হাত তুলে বাঁধা দেয়। তারপর রাজুকে উদ্দেশ্য করে বলে: উহু, একটা ভুল সব নষ্ট করে দেবে। কাল সকালে এখান থেকে আমি বেরোব সোজা কলকাতা ঠিক যে ভাবে সবাই সবজি নিয়ে যায় সেই ভাবে। আমার এই নম্বরে আমাকে সবসময় পাওয়া যাবে কিন্তু আমাকে না জানিয়ে কখনো কল করবে না। দরকারে আমি যোগাযোগ করে নেবো। আর হ্যাঁ বাচ্চাটার যেনো কোনো ক্ষতি না হয় রাজু। কারণ ওর ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য না। শুধু কাজটা হাসিল করতে এটা আমাদের করতে হয়েছে কথাটা যেনো মাথায় থাকে। রাগের মাথায় ঝোকের বসে এমন কিছু করে ফেলবে না যেটা আমাদের করার কথা না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন স্যার এই রাজু ওকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করবে।
পরের দিন সকালে বিপ্লব সবজিওয়ালা সেজে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে। রোজ রোজ গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করলে লোকের নজরে পড়তে পারে ব্যাপারটা তাই। কলকাতা পৌঁছে আবার বিপ্লবের জায়গা হলো সেই হসপিটালের সামনে। পাগল সেজে সারাদিন নজরদারি করছে সে। যাতে ডক্টর মোহান্তি ও কোনো এদিক ওদিক করতে না পারে। যদিও ওকে বলা আছে যে ক্যামেরা যদি কখনো অফ দেখায় তাহলে অন্য একটা ভিডিও ওর কাছে চলে যাবে সেটা ওর মেয়ের ভিডিও।

ওদিকে অন্যন্যার মার জ্ঞান ফিরে আসতেই সে অন্যন্যার খোঁজ করে। শারীরিক ভাবে এখন উনি অনেকটাই সুস্থ। ওনার সমস্যা এখন পুরোটাই মানসিক আর সেটাই খুব স্বাভবিক। ডক্টরের কথা মতো ওনাকে এখানে রাখার সেই ভাবে এখন আর কোনো দরকার নেই কিন্তু হ্যাঁ বাড়িতে আগের মতো অনিয়ম হলে আবার একই সমস্যা হতে পারে। ডাক্তারের সামনে বসে তখন কৃষ্ণেন্দু আর অন্যন্যার বাবা কথাগুলো বলছিলো। কৃষ্ণেন্দু ডক্টরকে বলে – আচ্ছা ডক্টর এখান থেকে কোনো ট্রেন্ড নার্স যদি আমরা অ্যপয়েন্ট করতে চাই সেটা কি সম্ভব? ডাক্তার বাবু উত্তর দেয়: হ্যাঁ, কেনো পসিবল নয়? আপনি চাইলেই করতে পারেন। তাতে দেখাশোনা টা ও ভালো হবে। কিন্তু বিকাশ বাবু আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি? বিকাশ বাবু বিনয়ের সাথে উত্তর দেয়: হ্যাঁ, হ্যাঁ ডাক্তার বাবু বলুন না। ডাক্তার বাবু উত্তর দেয়: আপনার মেয়ে অন্যন্যা, ওর কোনো খোঁজ পেলেন? আপনার স্ত্রীর আসল রোগ কিন্তু সেটাই। সেটা আপনি বুঝতে পারছেন তো? বিকাশ বাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়: আমি সব বুঝতে পারছি ডাক্তার বাবু কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয়। ওদের অনেক ক্ষমতা আমি জানি না হয়তো আমি আমার মেয়েটাকে চিরকালের মতো হারিয়ে ফেললাম। যে কটাদিন এখন ওকে বাঁচাতে পারি। সবাই চুপচাপ করো মুখে কোনো কথা নেই। নিরবতা ভেঙ্গে ডাক্তার বাবুই বলে: ঠিক আছে দেখুন কি হয়। আমি কাল সকালেই ওনার ডিসচার্জ করে দেবো। নার্স এর ব্যাবস্থা ও হয়ে যাবে। এর মধ্যে কৃষ্ণেন্দুর ফোনটা বেজে ওঠে। ও দেখে কমিশনার ওকে কল করছে। বাইরে গিয়ে তড়িঘড়ি ফোনটা ধরে কৃষ্ণেন্দু। কমিশনার ওকে বলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যেনো ওর অফিসে এসে দেখা করে। কিন্তু এই কথা যেনো ও কাউকে না জানায়। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাবুকে বলে: কাকু আমার একাট জরুরি অফিসের কাজ এসে গেছে আমি যদি আপনাকে একটা ক্যাব বুক করে দি আপনার কি যেতে কোনো অসুবিধা হবে? আরে না, না কোনো অসুবিধা নেই তুমি যাও তোমার কাজে। আমি ঠিক চলে যাবো। কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাবুকে একটা ক্যাব বুক করে দিয়ে নিজে সোজা চলে যায় কমিশনারের অফিসে। কৃষ্ণেন্দুকে দেখে কমিশনার হাঁসি মুখে বলে: আরে আয় বোস। কৃষ্ণেন্দু প্রশ্ন করে এতো তরিঘড়ি আমাকে ডেকে পাঠালি যে? অনুর কোনো খবর? বস বস। কফি খাবি? কৃষ্ণেন্দু চিন্তিত হয়ে বলে: কি হয়েছে প্লিজ একটু বলবি? অনু ঠিক আছে তো? কমিশনার উঠে দরজাটা ভালো করে বন্ধ করে দিয়ে বলে: শোন অন্যন্যার সব খোঁজ পাওয়া গেছে। আর ওই ডাক্তারের ও সমস্ত কীর্তি ফাঁস হওয়ার ও সময় চলে এসেছে। আর মাত্র তিনটে তিন। কৃষ্ণেন্দু উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞাসা করে কেনো তিনটে দিন কেনো? এখনই নয় কেনো? কমিশনার শান্তভাবে উত্তর দেয়: কারণ তিন দিন বাদে ওরা যখন অন্যন্যাকে হসপিটাল থেকে বের করবে ঠিক তখনই আমরা ওকে অ্যারেস্ট করবো। কৃষ্ণেন্দু প্রশ্ন করে অন্যন্যাকে ওখান থেকে বের করে ওরা কোথায় নিয়ে যাবে? কমিশনার উত্তর দেয়: ওদের প্ল্যান অনুযায়ী ওরা অন্যন্যাকে ট্রিটমেন্ট এর অজুহাতে বিদেশে নিয়ে যাবে কিন্তু কেনো নিয়ে যাবে সেই খবর এখনও আমরা জানতে পারিনি। তবে চিন্তা নেই সব জানতে পারবো। এখন কিন্তু একটা কথা ও এদিক ওদিক করা যাবে না। কারণ কোনো ভাবে যদি ওদের সন্দেহ হয় তাহলে কিন্তু অন্যন্যাকে আমরা প্রাণে বাঁচাতে পারবো না। কারণ ওরা যদি দেখে ওরা এখান থেকে অন্যন্যাকে শিফট করাতে পারবে না তাহলে কিন্তু ওরা ওকে প্রাণে মেরে ফেলবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে অন্যন্যা এখনো ওদের কবলে তাই খুব সাবধান।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress