সমকামি – ঊনত্রিশতম পর্ব
পরের দিন ঠিক সময়ে কৃষ্ণেন্দু চলে আসে অন্যন্যার বাড়ির সামনে। অন্যন্যা ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তারপর অফিসের উদ্দেশে রওনা দেয়। যেতে যেতে কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে সবটা স্বপ্নের মতো লাগছে আমি যেনো এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা এই সবটা সত্যি? অন্যন্যা হুট করে কৃষ্ণেন্দুর হাতে জোড়ে করে একটা চিমটি কাটে। কৃষ্ণেন্দু হুট করে হাতে ওমন চিমটি কাটাতে আহ করে মৃদু শীৎকার করে ওঠে। তারপর অন্যন্যাকে বলে: এটা কি হলো? অন্যন্যা হেঁসে উত্তর দিল কি আবার হবে চিমটি কাটলাম। কৃষ্ণেন্দু বলে হ্যাঁ সেতো আমি দেখলাম যে চিমটি কাটলে কিন্তু কেনো কাটলে? অন্যন্যা দুষ্ট হাঁসি দিয়ে বললো: কেনো আবার দিলাম তোমাকে দেখলাম যে এই সবটা সত্যি কোনোটাই মিথ্যে নয় বা স্বপ্ন ও নয়। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার নাক ধরে টেনে বলে খুব দুষ্টু তুমি। তারপর বাস স্ট্যান্ডের সামনে এসে বললো নাও নেমে যাও এখানে। কৃষ্ণেন্দু অফিসে ঢোকার সময় পিয়ালি বলে: ও স্যার আপনি আজকে এসেছেন? গুড মর্নিং স্যার। কৃষ্ণেন্দু গম্ভীর হয়ে বলে : হুম গুড মর্নিং। অন্যন্যা ও অফিসে ঢুকে নিজের কাজে মন দেয়। অনেকগুলো ফাইল ওর হাতে। আজকে ও ঠিক করে এসেছে কাজগুলো কমপ্লিট করবে বলে। কাজ করতে করতে অন্যন্যা দেখলো ঘড়িতে তখন বারোটা বাজে কৃষ্ণেন্দুর উচিত এখন লাঞ্চ করে নেওয়া আর তার আগে ওর ওষুধ ও আছে। অন্যন্যা টেক্সট করে কিন্তু বেশ কিছুক্ষন বাদে ও কোনো উত্তর না আসায় অন্যন্যা বুঝতে পারে কৃষ্ণেন্দু কাজে ব্যাস্ত। তাই হাতে একটা ফাইল নিয়ে কাজের নাম করে কৃষ্ণেন্দুর কেবিনের দিকে যায়। দরজায় নক করে বলে: মে আই কাম্মিং স্যার? কৃষ্ণেন্দু তাঁকিয়ে দেখে অন্যন্যা দড়জার সামনে দাঁড়ানো। কৃষ্ণেন্দু হেঁসে বলে হ্যাঁ আসুন। অন্যন্যা ভিতরে গেলে কৃষ্ণেন্দু কম্পিউটারের দিকে তাঁকিয়েই বলে: আপনার ফাইলটা রেডী তো? দিন আমাকে। বলে হাত বাড়ায় কৃষ্ণেন্দু। অন্যন্যা আবার কৃষ্ণেন্দুর হাতে একটা চিমটি কাটে। উফফ, এই আবার আমার হাতে চিমটি কেনো কাটলে জিজ্ঞাসা করে কৃষ্ণেন্দু!!! অন্যন্যা গম্ভীর হয়ে বলে কেনো কাটলাম জানো না? কি বলে এসেছিলে অফিসে টাইম মতো সব করবে। করছো? ওষুধটা খেয়েছো যেটা খাবার আগে খেতে হবে? বারোটা বাজে সে খেয়াল আছে? কৃষ্ণেন্দু জিভ কেটে বলে সরি সরি আমি সব করে নিচ্ছি। তুমি কখন খাবে? অন্যন্যা বলে আমি ঠিক খেয়ে নেবো তোমার শরীর ভালো না তুমি খেয়ে নাও। আমি গেলাম। এই পুতুল পিছন থেকে ডাক দেয় কৃষ্ণেন্দু। পুতুল কে আবার পুতুল? মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে অন্যন্যাকে নিজের অনেকটা কাছে টেনে নিয়ে এসে বলে: কেনো তুমি!!! তুমিই তো আমার পুতুল। অন্যন্যা অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে কৃষ্ণেন্দুর চোখের দিকে। কৃষ্ণেন্দু জিজ্ঞাসা করে কি হলো কি দেখছো? অন্যন্যা বলে তোমাকে!!! কৃষ্ণেন্দু বলে ভীষণ আদর করতে ইচ্ছে করছে আমার পুতুলটাকে। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে যায়: তারপর বলে একদম এসব না। এটা অফিস আর তুমি আমার বস আমি তোমার এম্প্লয়ি। কৃষ্ণেন্দু কোমরে হাত দিয়ে বলে: ও তাই বুঝি? তা এম্প্লয়ি বুঝি টাইমে টাইমে এসে বসকে খাবার কথা ওষুধের কথা মনে করিয়ে দেয়? অন্যন্যা ও বলে: বস যদি অবাধ্য হয় তাহলে দেয়। নাও এবার যাও যেটা বললাম সেটা করো। কৃষ্ণেন্দুর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় অন্যন্যা। সারাদিনের অফিসের কাজে সময় যে কখন কেটে যায় টের পাওয়া যায় না। অন্যন্যা অফিস থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়। কিছুক্ষন বাদে কৃষ্ণেন্দু ও আসে। গাড়িতে উঠে বসে অন্যন্যা। কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর অন্যন্যা খেয়াল করে কৃষ্ণেন্দু কেমন একটু চুপচাপ একটু মন মরা হয়ে আছে। অন্যন্যা জিজ্ঞাসা করে: এই তোমার কি হয়েছে!! এরকম চুপচাপ গম্ভীর হয়ে আছো কেনো? কৃষ্ণেন্দু তাও কোনো উত্তর দেয় না । কিছুক্ষন বাদে বলে: পুতুল যাবে সেদিনের সেই ব্রিজের সামনের চায়ের দোকানটাতে? ওখানে গেলে যেনো মনটা ভালো হয়ে যায়। এতো সুন্দর হাওয়া পরিবেশটা বেশ অন্য রকম যাবে? অন্যন্যা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। তারপর দুজনে চলে যায় সেই ব্রিজের সামনের চায়ের দোকানে। চায়ের ভাড় হাতে নিয়ে ব্রিজের ধার ঘেঁষে দাঁড়ায় কৃষ্ণেন্দু। অন্যন্যা ও ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করে: কি হলো? বললে না কি হয়েছে তোমার? সকালে তো ঠিকই ছিলে!!! কৃষ্ণেন্দু অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে: একটা খারাপ খবর আছে!!! অন্যন্যার মুখ শুকিয়ে যায় নিমেষের মধ্যে। শুকনো গলায় জিজ্ঞাসা করে : খাবাপ খবর? কি খাপার খবর? কৃষ্ণেন্দু ধীরে ধীরে বলে: অনু আমাকে এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যেতে হবে অফিসের কাজে। আমি ঠিক করেছি কালকে আমার প্রেস্ক্রিপশন দিয়ে অ্যাপ্লাই করবো অসুস্থ বলে যাতে যেতে না হয়। তবে তাতে যাওয়া কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে কিন্তু যেতে তো আমাকে হবেই একদম আটকানো যাবে না। কৃষ্ণেন্দুর বাইরে যাবার খবরে অন্যন্যার মুখ ছোটো হয়ে যায়। ও ভেবেছিল আজকে কৃষ্ণেন্দু বলবে অয়নের রবিবার বাড়ীতে আসার কথাটা কিন্তু এই খবরে আর বলার ইচ্ছেটাই নষ্ট হয়ে গেলো। কারণ কৃষ্ণেন্দুর শরীর এমনি ভালো না। তারপর বাইরে যাবার খবরে এমনি আপসেট হয়ে আছে তার উপর আবার এই কথা বললে টেনশন করবে সেই ভেবে চুপ করে যায় অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার সামনে এসে বলে: তুমি মন খারাপ করো না আমি দেখছি কিছুদিন যদি পিছিয়ে দেওয়া যায়। চুপ করে থাকে অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু ওর কাঁধের উপর হাত রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। অন্যন্যা ও নিশ্চিন্তে কৃষ্ণেন্দুর ঘাড়ের উপর মাথা রাখে।
অন্যন্যা যখন বাড়িতে পৌঁছায় তখন প্রায় নটা বাজে। ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হতে যায় অন্যন্যা। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে তৃণার দু দুটো মিস কল হয়ে আছে। ঘুরিয়ে ফোন করে অন্যন্যা। তৃণা ফোন তুলে সবসময়ের মতো করেই বলে: বলো ডার্লিং কি করতে পারি তোমার জন্য? অন্যন্যা বলে তোর ফাজলামো করার অভ্যেস আর যাবে না তাই না? তৃণা উল্টে বলে: এই এসব কথা ছাড় আগে কাজের কথা বল তো!!! কি আবার কাজের কথা? জিজ্ঞাসা করে অন্যন্যা। কালকে অফিসের পর গেছিলি কৃষ্ণেন্দুর ফ্ল্যাটে? হুম, উত্তর দেয় অন্যন্যা। তৃণা দ্বিগুণ উৎসাহে বলে: তারপর তারপর বল কি হলো? কথা হলো? কি বললো তোকে? আচ্ছা বাদ দে তুই কি বললি? না না আগে বল কৃষ্ণেন্দু কি বললো? অন্যন্যা গলাটা গম্ভীর করে বললো: তুই কোনটা আগে জানতে চাস সেটা বল!!! আমি কি বললাম, নাকি কৃষ্ণেন্দু আমাকে কি বললো? কোনটা? ধুর বাবা আমি সবটা জানতে জানতে চাই তৃণা উত্তর দেয়। অন্যন্যা এবার বলে তৃণা তুই যা ভাবছিস তাই হলো যেটা তুই বলেছিলি ঠিক সেটাই। আইইই বাস্ এটা তো দারুন খবর। এই চুমুটুমু এই অনু দেখ মিথ্যে কিন্তু বলবি না বলে দিলাম। অন্যন্যা বলে চুমু তো ও দিলো গালে। এমা গালে? ঠোঁটে না নাক সিটকায়ে বললো তৃণা। অন্যন্যা একটু কপট রাগ দেখিয়ে বললো: এই তুই কি রে? ঠোঁটে। একদম যাতা তুই। তৃণা ধমকিয়ে বলে: এই চুপ কর তো। সেই কলেজের সময় থেকে বলে আসছি একটা প্রেম কর একটা প্রেম কর। এই বুড়ো বয়সে এসে প্রেম তাও কিনা আবার গালে চুমু!!! বলদ দুটো। এই তোর ওই বুড়ো আশিকের ফোন নম্বর টা দে আমাকে ট্রিট দিতে বলবো। আচ্ছা না না ছাড়। অফিস থেকে তো এখন একসাথে ফিরছিস সিওর। অন্যন্যা বলে : না, একসাথে যাচ্ছি ও। বললো ও থাকতে বাসে ট্রামে ট্রাভেল করতে হবে না। উফ্ প্রেম জমে ক্ষির একদম তৃণা মজা করে বলে। শোন কালকে আমাকে কথা বলিয়ে দিবি তোরা এখন আর আমাকে ডাকবি না আমি জানি আমাকে জোড় করেই কাবাবমে হাড্ডি হতে হবে। অন্যন্যা তৃনাকে বলে: তুই না সত্যি খুব অসভ্য। এতদিনে এই চিনলি আমাকে? তারপর একটু সিরিয়াস হয়ে বলে: খুব ভয় করছে তৃণা আমার। তৃণা জানতে চায় কিসের ভয়? অন্যন্যা বলে: মানুষটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তৃণা আমার জন্য আবার ও কোনো কষ্ট পাক সেটা আমি সত্যি চাই না। মা অয়নকে নিয়ে যা বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। রবিবার আসবে বলছে। তার উপর আবার ওর মানে কৃষ্ণেন্দুর বাইরে যাবার ও কথা চলছে। চেষ্টা করছে আটকানোর তবে মনে হয় না পারবে বলে। এক সপ্তাহ থাকবে না ও। তৃণা সব শুনে বলে: তুই চিন্তা করিস না। কৃষ্ণেন্দুকে বললি অয়নের আসার কথাটা? অন্যন্যা উত্তর দেয়: আজকে অফিস থেকে বেরিয়ে বলবো ভেবেছিলাম কিন্তু ওর যাওয়ার খবরটা নিয়ে ও এতো আপসেট যে আমি আর এটা বলিনি ওকে। খুব টেনশনে পড়ে যাবে তাই। তৃণা বলে: হুম সেটা ঠিক শরীর ও ভালো নেই। ঠিক আছে ওই গে টাকে আগে আসতে তো দে। আসলেই তো তোকে চলে যেতে হবে না। চিন্তা করিস না যতদিন তোমার কৃষ্ণ বাইরে থাকবে তার রাধাকে দেখে রাখার দায়িত্ব আমার। নো চিন্তা সোনা। অন্যন্যা হাঁসে। অন্যন্যা খেয়াল করলো কৃষ্ণেন্দুর ফোন ওয়েটিং আসছে। ও তৃনাকে বললো: আচ্ছা আমি রাখছি ও ফোন করছে। ও হো ও আচ্ছা আচ্ছা তোমার ওয়ের সাথে তুমি কথা বলে নাও আমি আর আটকে রাখছি না। মজা করে বলে তৃণা।
মাঝের দিনগুলো ভালো মন্দে কেটে যায় অন্যন্যার। রবিবার বিকেলে ঠিক হয় তৃণা কৃষ্ণেন্দু আর অন্যন্যা এক সাথে বেরোবে বাইরে ডিনার করবে। অন্যন্যার মন এখন অনেকটাই ভালো। অয়ন আসার কথাটা প্রায় ভুলেই গেছিলো অন্যন্যা। রবিবার সকাল থেকে ও তোড়জোড় করছে বিকেলে কৃষ্ণেন্দু বাড়ির ওই সামনেটাতেই আসবে তারপর অন্যন্যা কে নিয়ে তৃণার বলে রাখা জায়গায় ওকে নিয়ে সোজা যাবে নিজেদের গন্তব্যস্থলে। সকাল থেকে বেশ ভালো মুডে অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দুর সাথে বেশ কয়েকবার কথা ও হয়েছে ফোনে। হঠাৎ বাড়ির বেল বাজায় অন্যন্যা দরজা খুলতে গেলে রিনা দেবী ওকে বাঁধা দিয়ে বলে: দাঁড়া,আমি যাচ্ছি তোকে যেতে হবে না। রিনা দেবী গিয়ে দরজা খুললে বাইরে অয়ন দাঁড়ানো। মুখটা বেশ থমথমে। রিনা দেবী হাঁসি হাঁসি মুখ করে বললো এসো বাবা ভিতরে এসো। অয়ন রিনা দেবীকে জিজ্ঞাসা করে অন্যন্যা কি আছে ঘরে? রিনা দেবী উত্তর দেয়: হ্যাঁ, আছে তো তুমি এসো না ভীতরে। অয়নকে নিয়ে ভীতরে যায় রিনা দেবী। অন্যন্যা ডাইনিংএ দাঁড়িয়ে ছিল। রিনা দেবী অন্যন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: অন্যন্যা অয়ন এসেছে তোর সাথে কথা বলবে বলে। তোরা যা নিজেদের ঘরে গিয়ে বসে কথা বল। অন্যন্যা সোফার উপর বসে বলে: আমার ঘরে বসে ওনার সাথে বলার মতো কোনো কথা তো আমার নেই। ওনার যা বলতে হয় উনি আমাকে এখানেই বলুক। অয়ন অন্যন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলে: না না তোমাকে কোথা ও যেতে হবে না। আমরা এখানে বসেই কথা বলবো। আমি জানি আমার উপর রাগ হওয়া খুব স্বাভাবিক তোমার। তবে তুমি কেসটা তুলে নাও অন্যন্যা। এতে কারোর ভালো হবে না বিশেষ করে তোমার তো নাই। অন্যন্যা অয়নকে পাল্টা প্রশ্ন করে: ধমকি দিচ্ছেন অয়ন? কিন্তু আপনার ধমকিতে আমি তো ভয় পাচ্ছি না। তাহলে এবার কি হবে? অয়ন শান্ত স্বরে বলে: না না অন্যন্যা সরি আমি আপনাকে কোনো ধমকি দিতে চাইনি। আপনার তাই মনে হলে আমি সত্যি সরি। আমি আসলে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতেই এসেছি। নিখিলেশের সাথে সম্পর্ক থেকে আমি সরে আসবো আমি কথা দিচ্ছি। তুমি ফিরে চলো। অন্যন্যা ভ্রূ কুঁচকে বললো: আপনার সাথে নিখিলেশের সম্পর্ক নিয়ে আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কোনো বিরোধিতা ও নেই। আপনার, আপনার মতো করে কাউকে ভালো লেগেছে লাগতেই পারে এতে তো দোষের কিছু নেই। কিন্তু আপনি তো জানেন আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন আপনি সেই জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারবেন না। কি জানতেন তো? তাহলে শুধু মাত্র মিথ্যে অভিজাত্য দেখাতে গিয়ে আমার লাইফটা নষ্ট কেনো করতে চাইলেন। এই বিয়ে নামে খেলাটার সত্যি কি খুব দরকার ছিল? আমি কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার? আমি সব বুঝতে পারছি আমার ভুল। তুমি ফিরে চলো।
অন্যন্যা দৃঢ় কণ্ঠে জানায় : না, সেটা সম্ভব না। আমি কেস করেছি আপনি বরং কনটেস্টে না মিউচুয়াল ডিভোর্স টা করে নিন। আমি আপনার সাথে সংসার করতে চাই না অয়ন। আপনি আপনাকে ভালোবাসি না কোনোদিন বাসতে পারবো ও না। তাই প্লিজ। অয়ন এবার আরো কঠিন হয়ে বলে: আমাদের পরিবারের একটা সন্মান আছে ডিভোর্স তোমাকে দেওয়া সম্ভব না। তুমি ফিরে চলো। টাকা পয়সা প্রাচুর্য এলাহি লাইফ স্টাইল যা কোনোদিন স্বপ্নে ও ভাবতে পারোনি সব আছে কোনো সমস্যা হবে না। গাড়ি বাড়ি টাকা কিসের অভাব? অন্যন্যা হেঁসে বলে: হ্যাঁ, সব আছে আপনি ঠিকই বলেছেন কিন্তু যেটা নেই সেটা হলো একটা সত্যি কারের মানুষ যাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় বিশ্বাস করা যায়। আপনি যদি মিউচুয়াল ডিভোর্স না দিয়ে চান কেস চলবে। কিন্তু আপনার সাথে ফিরে আমি যাবো না। অয়ন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে: খুব ভুল করছো এর জন্য পস্তাতে হবে বলে দিয়ে গেলাম।
অয়ন বেরিয়ে গেলে রিনা দেবী বলে: তুই সেই ওকে ফিরিয়ে দিলি? ক্ষমা তো চাইলো ও নিজের ভুলের। এরপর যদি ও কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে। তোর একটা বোন আছে এটা তুই ভুলে যাস না। তোর ও ক্ষতি করতে পারে ওদের টাকা আছে ক্ষমতা আছে। অন্যন্যা রিনা দেবীকে পাল্টা প্রশ্ন করে: তার মানে একটা অজানা ভয়ের কারণে আমি আমার সারাটা জীবন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেবো? টাকা আছে তাই আমার সারাটা জীবন আমি নষ্ট করে ফেলবো? ওরা আমাকে নিয়ে গিয়ে আমার কোনো ক্ষতি করবে না তুমি সিওর হয়ে বলতে পারো? আমাকে নিয়ে গিয়ে তো আমার ক্ষতি ওরা করতেই পারে। ওরা নিজেরাই ভয় পেয়েছে আর তাই এখানে ছুটে এসেছে। এমন সম্পর্ক আমি চাই না যার শুরুটাই মিথ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে। আমাকে যদি জোড় করো তাহলে আমি কোনো মেসে চলে যাবো মা। কিন্তু কিছুতেই ওই ছেলেটার সাথে সংসার আমি করবো না।
রিনা দেবী মেয়েকে বলে একটা সম্পর্ক এই ভাবে ভেঙ্গে দিবি? অন্যন্যা মাকে বলে: কোন সম্পর্কের কথা বলছো মা? যে সম্পর্ক কোনোদিন তৈরী হয়নি। ওরা নিজেদের অভিজাত্য রক্ষা করতে এসেছিল। সম্পর্ক রক্ষা করতে নয়। আর তিয়াসা আমার ছোটো বোন মা ওর কোনো ক্ষতি হোক সেটা আমি কোনোদিন চাই না সেটা আমি হতে ও দেবো না। একটু ভরসা রাখো আমার উপর। বিকেলে অন্যন্যাকে তৈরী হয়ে বেরোতে দেখে বিকাশ বাবুই প্রশ্ন করে : কোথাও বেরোছিস মা? অন্যন্যা উত্তর দেয়:হ্যাঁ বাবা, অন্যদিন অফিসের জন্য অনেক কাজ পেন্ডিং পরে থাকে। তাছাড়া আমাকে কিছু একটা ব্যাবস্থা তো করে রাখতে হবে যাতে ওরা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আমি আমার কথা শুধু তো ভাবছি না। আমাকে তোমাদের সবার কথাই ভাবতে হবে। চিন্তা করো না তৃণা থাকবে সাথে। আমি সময় মতো বাড়ি ফিরে আসবো।
অন্যন্যা বেরিয়ে দেখে কৃষ্ণেন্দু গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো। গাড়িতে উঠে বসে অন্যন্যা। বেশ কিছুটা রাস্তা যাবার পর কৃষ্ণেন্দু প্রশ্ন করে: কি হলো আমার পুতুল এতো চুপচাপ কেনো কি হয়েছে? কৃষ্ণেন্দুর দিকে তাঁকিয়ে অন্যন্যা বলে : তোমার বাইরে যাবার কি হলো? কোনো খবর আছে? কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে এই নিয়ে মন খারাপ করে আছো? কি করবো সোনা আমার ও কি ইচ্ছে করছে তোমাকে ছেড়ে যেতে। আমি না থাকলে সেই তোমাকে আবার একা একা যাতায়ত করতে হবে। আমি চেষ্টা করছি সোনা যদি কটাদিন অন্তত পিছিয়ে ও দেওয়া যায়। তারপর ওরা সেইখানে আসে যেখানে তৃণা ওদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। তৃণা গাড়িতে উঠে বসে তারপর বলে: কি রে তোরা দুজনেই এতো চুপচাপ কেনো? কি হয়েছে? ঝগড়া করেছিস? কৃষ্ণেন্দু তৃণার দিকে মাথা ঘুরিয়ে বলে: তোমার বান্ধবী ঝগড়া করতে জানে? উঠে থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। তৃণা অন্যন্যাকে প্রশ্ন করে কি রে অনু কি হয়েছে? তুই এতো চুপচাপ কেনো? ও দাঁড়া দাঁড়া আজ অয়নের আসার কথা ছিল তাই না? এসেছিলো, কি বললো? কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বলে: অয়ন? ও তোমার হাজবেন্ড আজকে এসেছিলো নাকি? কই তুমি আমাকে বললে নাতো কিছু। অন্যন্যা রাগ দেখিয়ে বললো: ও আমার কেউ না। কিসের হাজবেন্ড কার হাজবেন্ড? চোখ ছলছল করে ওঠে অন্যন্যার। কৃষ্ণেন্দু একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে: একি তুমি কাদঁছো? বিশ্বাস করো আমি তোমাকে আঘাত দিতে চাইনি। আচ্ছা সরি প্লিজ অন্যন্যার হাতটা চেপে ধরে কৃষ্ণেন্দু। তৃণা পিছন থেকে বলে ওঠে: আমি কিন্তু কিছু দেখছি না। আপনারা প্রেম করতে পারেন। লজ্জা পায় অন্যন্যা। তারপর কৃষ্ণেন্দু তৃনাকে বলে কোথায় যাবে বলো? আজকে তোমার পছন্দ মতো জায়গায় আমরা ডিনার করবো। তৃণা বলে কিন্তু সেটা তো অনেকটা দূরে রাজারহাট ছাড়িয়ে। কৃষ্ণেন্দু হেঁসে বলে: কোনো ব্যাপার না প্রিয়ে এই অন্যন্যা এটা কিন্তু তোমার বান্ধবীর সাথে একটু মজা করলাম আমার বন্ধু শালি বলে কথা। তুমি কিন্তু কিছু মাইন্ড করো না। তৃণা আমরা ওখানেই খাবো চিন্তা করো না তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেবো কোনো সমস্যা হবে না। তারপর তৃণার পছন্দ করা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ওরা বসলো। অনেক কথার মাঝে কৃষ্ণেন্দু বললো তুমি চিন্তা করো না আমি তো এখন তোমার সাথেই আছি এতো টেনশন কেনো করছো? যেই আসুক তুমি যদি আমার পাশে থাকো আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। কালকে অফিসের পরে আমরা যাবো তোমার মনে আছে সেই কমিশনারকে প্রথম যার সাথে তোমাকে দেখা করিয়েছিলাম। কিছু একটা রাস্তা বেরোবে প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না। ওরা একটা নিজেদের মতো কেবিন বুক করে বসেছিল তিন জনে। খাবার অর্ডার করার পর তৃণা বললো আমি একটু আসছি তোরা কথা বল। তৃণা বেরোনোর পর কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে টেনে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মুখের কাছে মুখ এনে বলে: আমার পাখিটা কি আমাকে একটু ও বিশ্বাস করে যে আমি তার কোনো কষ্ট হতে দেবো না? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর বুকে মুখ লোকায়। তারপর ধীরে ধীরে বলে আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে হবে না। তুমি কাছে না থাকলে আমার খুব ভয় লাগে কিছু ভালো লাগে না। অনেকটা কাছাকাছি ওরা আজ। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার কানে কানে বলে জানো খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে একটু আদর করতে। অন্যন্যার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বলে মনে হচ্ছে হারিয়ে যাই ওই চোখের গভীরে। কৃষ্ণেন্দু নিজের ঠোঁট দুটো অন্যন্যার ঠোটের কাছে নিয়ে আসে। ইসসস্, একদম ভুল সময় এসে গেলাম। এই সরি সরি তোরা করে আদর টাদর করে নিয়ে আমাকে ডাক আমি বাইরে আছি। দুজন দুদিকে ছিটকে যায়। অন্যন্যা বলে এই তুই কোথাও যাবি না চুপচাপ বস এখানে। তৃণা কানে হাত দিয়ে বলে বিশ্বাস কর আপনি বিশ্বাস করুন আমি না সত্যি বুঝতে পারিনি। কৃষ্ণেন্দু মুচকি হেঁসে মাথা নীচু করে। এর মধ্যে ওদের খাবার ও এসে যায়। খাওয়া দাওয়া সেরে ওরা বেরিয়ে পড়ে তৃণাকে ওর বাড়িতে ড্রপ করে তারপর ওরা বেরিয়ে যাবে। বেশ কিছুক্ষনের রাস্তা অতিক্রম করে এসে তৃণা বলে ও কৃষ্ণ বাবু এবার তো আমার বান্ধবীর হাত টা একটু ছাড়ুন। কৃষ্ণেন্দু বলে: উমহু নাতো এই হাত সারা জীবন ধরে রাখবো বলে ধরেছি ছেড়ে দেবো বলে তো না। তৃণা হাঁসে কৃষ্ণেন্দুর কথায়। বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে নামবার সময় তৃণা বলে: যে কাজটা আমার জন্য কমপ্লিট করতে পারেননি এবার ফাঁকা গাড়িতে কমপ্লিট করে ফেলুন। অন্যন্যা তৃনাকে বলে একদম মারবো তোকে অসভ্য মেয়ে পালা তুই। পাখি ওই ব্রিজের কাছে যাবে একটু দাঁড়িয়ে চলে আসবো!!! খুব ভালো লাগে জায়গাটা আমার বিশেষ করে তুমি যখন সাথে থাকো বেশি তো বাজে না নটা সবে। অন্যন্যা ও রাজি হয়ে যায়। ওরা গিয়ে দেখে চায়ের দোকানটা তখনও খোলা দু কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে ওরা গিয়ে ব্রিজের ধার ঘেঁষে দাঁড়ায়। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার অনেকটা কাছ ঘেঁষে এসে দাঁড়ায়। তারপর অন্যন্যার হাত ধরে বলে তৃণা যেটা বলে গেলো সেটা কি আমার করা উচিত? অন্যন্যা হাঁসে। কৃষ্ণেন্দু দু হাতে অন্যন্যার গাল ধরে নিজের ঠোঁট দুটো মিশিয়ে দেয় অন্যন্যার ঠোঁটের সাথে। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অপলক দৃষ্টিতে দুজন দুজনের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। এর মধ্যে সেই বাচ্চা ছেলেটা এসে বলে দিদি তোমাদের চা।