সমকামি – পঁচিশতম পর্ব
অন্যন্যা বাড়ি যাবার পর বিকাশ বাবু জানতে চান এতক্ষন কোথায় ছিলিস মা? তোর মা খুব রেগে আছে। অন্যন্যা কি বলবে বুঝতে পারছে না। বাবা আসলে তৃণার অনেকগুলো কাজ ছিল ওর এক পিসির শরীর খুব খারাপ কেউ নেই ওনার সেখানেই গেছিলাম। ও তো আমার পাশে সবকিছুতে থাকে বলো? আমি কি করে না করে দিতাম!!! সেটা কি ঠিক হতো তুমি বলো?
বিকাশ বাবু গম্ভীর হয়ে বললো: না তাতো ঠিক হতো না মা। কিন্তু তোমার মাকে সেটা কে বোঝাবে? তিনি তো কিছু বুঝতেই রাজি না। অন্যন্যা মুখ টিপে হেঁসে বলে: একটু চুপচাপ থাকবে তারপর ঠিক হয়ে যাবে বাবা। তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।
তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা রান্না ঘরে গেলো অন্যন্যা রাতে মায়ের পছন্দের সব রান্না করলো। তখন প্রায় রাত নটা বাজে। অন্যন্যার মনে হলো এসে থেকে কৃষ্ণেন্দুর একটা খোঁজ ও নেওয়া হয়নি। খাবার টেবিলে সব খাবার সাজিয়ে ওর ঘরে ঢুকে কৃষ্ণেন্দুকে ফোন করলো। প্রথমবার কৃষ্ণেন্দু ফোন না তুললে ও পরের বার ফোন তুলে রাগের সুরে বলল: কি হলো বার বার ফোন কেনো করছো? ব্যাস কর্তব্য শেষ করে চলে গেছো তারপর থেকে তো খোঁজ নেবার দরকার মনে করোনি। তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা তো হয়ে গেছে আর কি করতে ফোন করছো?
বাব্বা বাচ্চা ছেলেটার দেখছি অনেক রাগ হয়ে গেছে। কিন্তু সেকি জানে আমাকে ঘরে ঢুকে ও কতো কাজ করতে হলো!!! মা অনেক রেগে আছে সেটাও তো ম্যানেজ করতে হচ্ছে। সময় পেয়েই যে আগে তাঁকেই আমি ফোন করলাম। কিছু না জেনেই আমাকে এভাবে দোষ দেয়া কি তাঁর ঠিক হচ্ছে? এখন রাগ না দেখিয়ে সেকি আমাকে বলবে তাঁর শরীর কেমন আছে? কাজের দিদি এসেছে?
কৃষ্ণেন্দু আবার অভিমানের সুরে বললো: জানতে হবে না কেমন আছি। কাজের দিদি এসেছে কিন্তু ওই রান্না আমার আর খেতে ভালো লাগে না। তার থেকে ওই খিচুড়িটা বেশী করে কেনো করলে না। ওটাই খেতাম আমি। অন্যন্যা উত্তর দেয়: আচ্ছা আর রাগ দেখাতে হবে না আমি আবার করে দেবো তাহলে হবে তো? যাও দশটা বাজে খেয়ে নাও। আর বিশ্রাম নাও বুজলে। আমি রাতে টেক্সট করবো। এখন রাখছি। তারপরেই অন্যন্যার মনে হলো যাই এবার মাকে ডাকি আজ আমি গিয়ে না ডাকলে মা কিছুতেই আসবে না খেতে। উফফফ, সবার অভিমান সামলাতে গিয়ে আমি নিজেই হাঁপিয়ে যাচ্ছি একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় অন্যন্যা।
রিনা দেবী তার নিজের ঘরেই শুয়ে ছিলেন। অন্যন্যা গিয়ে ডাক দেয়: মা ও মা। কোনো উত্তর দেয় না রিনা দেবী। অন্যন্যা ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখে রিনা দেবী খাটের উপরে মাথার উপর হাত রেখে শুয়ে আছেন। মা এই অসময়ে শুয়ে আছো যে, শরীর কি খারাপ নাকি তোমার? তারপর কপালে গায়ে হাত দিয়ে দেখে কই নাতো তোমার তো জ্বর নেই। তাহলে এখন শুয়ে আছো কেনো মা? চলো ক্ষিদে পেয়েছে যে!!! খেতে দেবে না। রিনা দেবী অন্যন্যার হাতটা মাথার উপর দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে: নিজেরা বেড়ে আজকে খেয়ে নে। আমার ক্ষিদে নেই আমি কিছু খাবো না। অন্যন্যা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে: এতো রাগ করছো কেনো মা? আমি কি দোষ করলাম বলতো? হ্যাঁ,আমি মানছি একটা রবিবারের দিন আমি ঘরে সময় দিতে পারলাম না কিন্তু এটা তো সব রবিবার হয় না তাই না? আচ্ছা ঠিক আছে অন্যায় হয়ে গেছে আমার তৃনাকে বলা উচিত ছিল আমি আজকে পারবো না। এরপর থেকে বলে দেবো। আর রাগ করো না এবার চলো। রিনা দেবী গম্ভীর হয়ে জানতে চাইলো ওই লোকটা তোকে সকালে কেনো ফোন করেছিলো? অন্যন্যা না বোঝার ভান করে জানতে চায়: কোনটা লোকটা মা? রিনা দেবী উত্তর দেয়: তোর বস? অন্যন্যা একটু মেকি হেঁসে উত্তর দেয়: এখনও সেই নিয়ে পড়ে আছো তুমি? আমি তো তোমাকে বললাম মা ফোন কালকে আমি করেছিলাম উনি ঠিক মতো পৌঁছতে পারলেন কিনা সেটা জানতে!! একজন মানুষ নিজে এতো ঝুঁকি নিয়ে আমাকে পৌঁছে দিয়ে গেলো। আমার একটা খোঁজ নেওয়া কি খুব অন্যন্যায় হয়ে গেছে মা? রাতে উনি ফোনটা ধরতে পারেননি তাই সকালে করেছিলেন। একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে কেনো এরকম করছ মা? রিনা দেবী এবার অন্যন্যার হাত দুটো ধরে বলে: কেনো করছি সেটা যেদিন মা হবি সেদিন বুজবি। এই ডিভোর্সটা হয়ে গেলে আমি তোর আমাদের সমান ঘর দেখে আবার বিয়ে দেবো। আমি চাই না তুই অন্য কারো সাথে জড়িয়ে পর। ওই লোকটাকে আমার ভালো লাগেনি তোর থেকে বয়স অনেকটা বেশী মনে হলো আমার। অন্যন্যা এবার বিরক্তির সুরে বলে: প্লিজ মা তুমি আর আমার বিয়ে নিয়ে এতো মাতামাতি করো না। একটা যন্ত্রণা থেকে আমি এখনও মুক্তি পায়নি আর তুমি আবার শুরু করে দিলে? তুমি পছন্দ করো না মানেই তো লোকটা খারাপ হয়ে যেতে পারে না মা, একটা মানুষকে তার বয়স দিয়ে বিচার করো না এটা অন্যায়। আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে তুমি যদি খাও তাহলে চলো নাহলে আমি ও গিয়ে শুয়ে পড়ি। রিনা দেবী বিছানা ছেড়ে উঠে এসে বলে: চল খেয়ে নিবি।আবার তো কালকে অফিস।
অন্যন্যা খেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে ফোন করে কৃষ্ণেন্দুকে। দু দুবার ফোন করার পর কৃষ্ণেন্দু ফোন তোলে। অন্যন্যা বলে: সত্যি তোমার কোনো আক্কেল নেই ফোনটা আবার কেনো ধরছিলে না। কৃষ্ণেন্দু কাপা কাপা গলায় উত্তর দেয়: রাগ করো না। শরীরটা সকালের মতো খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আবার জ্বর আসছে। উঠে ওষুধটা নেবো সেটা ও পারছি না। অন্যন্যা বলে: প্লিজ একটু কষ্ট করে উঠে ওষুধ টা খেয়ে নাও। আচ্ছা তুমি খাবার খেয়েছো? হ্যালো কৃষ্ণেন্দু শুনতে পারছো? কৃষ্ণেন্দু খুব কষ্ট করে উত্তর দেয়: খেয়েছি কিন্তু মুখে কিছু ভালো লাগছে না। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে: ভালো লাগছে না বললে কি করে হবে? তুমি ওষুধটা খাও। কি যে করি? এতো রাতে তো আমি যেতে পারবো না উফফ কি যে করি আমি। কৃষ্ণেন্দু বলে: তুমি চিন্তা করো না। আমি ওষুধ খেয়ে নিয়ে তোমাকে জানিয়ে দেবো। তুমি রেস্ট নাও। কালকে তো আবার তোমার অফিস।
সারা রাত চিন্তায় ঠিক মতো ঘুম হয়নি অন্যন্যার। মাথাটা ধরে আছে ওর। অফিস যাবে নাকি কৃষ্ণেন্দুর ফ্ল্যাটে চলে যাবে সেটা ও বুঝতে পারছে না ও। নানা কথা ভাবতে ভাবতে অফিসের জন্য তৈরী হয়। কৃষ্ণেন্দুকে ফোন করবে কিনা ভাবছে অন্যন্যা। শরীর ভালো না রাতে ঘুমিয়েছে কিনা? এখন যদি ফোন করে তাহলে ওর ডিস্টার্ব হতে পারে। এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখে ফোনে কৃষ্ণেন্দুর নম্বরটা ভেসে ওঠে। তাড়াতাড়ি করে ফোনটা ধরে অন্যন্যা। হ্যালো কৃষ্ণেন্দু কেমন আছো? শরীর কেমন আছে তোমার? ওপার থেকে কৃষ্ণেন্দু বলে: অন্যন্যা প্লিজ একবার একটু আসতে পারবে? আমি জানি অফিসে তোমার সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আমি খুব অসুস্থ বোধ করছি। কাকে বলবো তাই সব জেনেও তোমাকে বিরক্ত করছি। অন্যন্যা উত্তর দেয়: এই ভাবে বলো না। ঠিক আছে আমি আসছি তেমন হলে ওখান থেকে অফিসে চলে যাবো। তারপর ফোন রেখে ও ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। অফিস বেরোচ্ছে সেই ভাবেই সবাইকে বলে সোজা চলে যায় কৃষ্ণেন্দুর ফ্ল্যাটে। লিফ্টে করে উপরে উঠে দেখে ওর ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলা। ভীতরে যায় অন্যন্যা। অন্যন্যাকে দেখে মালতি প্রশ্ন করে: কে আপনে। সোজা ঘরের ভীতর চলে এলেন যে বড়? অন্যন্যা মালতির দিকে তাঁকিয়ে বললো: তুমি কি মালতি দি? মালতি ঝেঁঝিয়ে উত্তর দেয়: হ্যাঁ, আমিই মালতি আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? অন্যন্যা শান্ত স্বরে বললো: আমি অন্যন্যা আমিই কালকে তোমাকে কল করেছিলাম? মালতি দি কৃষ্ণেন্দু কোথায়? মালতি অবাক হয়ে জানতে চায়: আপনি দাদার কে হন? আগে তো কখনো দেখিনি আপনেকে। অন্যন্যা এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলে: আমি কে কেনো এসেছি সব জানতে পারবে আগে বলো কৃষ্ণেন্দু কোথায়? মালতি এবার একটু থতমত খেয়ে বলে: দাদা তো বাথরুমে। এসে থেকে তো দেখছি বমি করছে আমার তো এখন আসারই কথা না। দাদার শরীর ভালো না দেখে গেছি তাই এসেছি বলেছিল আজ অফিসে যাবে না। অন্যন্যা অপেক্ষা করতে থাকে কৃষ্ণেন্দুর। কিছুক্ষন পর কৃষ্ণেন্দু বেরোলে অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে: একি চেহারা হয়েছে তোমার এক রাতে। তুমি তৈরী হও ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কৃষ্ণেন্দু ক্লান্ত স্বরে বলে: তুমি একটু বসো আমি বলছি এখন ডাক্তার দরকার নেই। অন্যন্যা মেজাজ করে উত্তর দেয়: আমি এখানে এসে বসে থাকলেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে? রোজ রোজ যে আমার এখানে এসে বসে থাকা সম্ভব না সেটা তুমি জানো না? শোনো এসব না করে তাড়াতাড়ি বলো তোমার জামা কাপড় কোথায় থাকে? আমি বের দিচ্ছি তৈরী হয়ে নাও। কৃষ্ণেন্দু ও আর কথা না বাড়িয়ে অন্যন্যার সাথে গিয়ে ওকে দেখিয়ে দিলো। অন্যন্যা মালতিকে ডেকে বললো: মালতি দি তুমি একটু কিছুক্ষন এখানে থাকতে পারবে তো? আমি ওকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েই চলে আসবো। মালতি মাথা নাড়িয়ে বললো: ঠিক আছে বৌদিমনি থুরি থুড়ি দিদিমনি। আসলে সব বাড়িতে তো বৌদি বলি তাই বেরিয়ে গেছে। দোষ নেবেন নে। অন্যন্যা কোনো উত্তর দেয় না। কৃষ্ণেন্দু তৈরী হয়ে বেরোলে অন্যন্যা বলে: তুমি বসো এখানে। আমি ক্যাব বুকিং টা করেনি। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যা বলে: আমি ড্রাইভ করতে পারবো বুক করতে হবে না!!!!! না, এই শরীর নিয়ে এখন ড্রাইভ করতে হবে না তোমাকে উত্তর দেয় অন্যন্যা। তারপর কৃষ্ণেন্দুকে নিয়ে সোজা চলে যায় অন্যন্যাদের হাউস ফিজিশিয়ানের কাছে। ডাক্তার কৃষ্ণেন্দুকে ভালো করে পরীক্ষা করে বলে: পেটে একটা ইনফেকশন আছে বলে আমার মনে হচ্ছে আর তার থেকেই জ্বর আসছে। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি। আর কিছু ব্লাড টেস্ট। ওষুধগুলো আজ থেকেই খাবে আর কালকে খালি পেটে ব্লাড টেস্টটা করে নিতে হবে। আশা করা যায় এতেই কমে যাবে। তবে মিস্টার কৃষ্ণেন্দু আমার মনে হয় আপনি খাওয়া দাওয়া সময় মতো করেন না। আপনার খালি পেটে থাকা চলবে না। আর সময় মতো খেতে হবে। নরমাল ডায়েট করবেন বেশী স্পাইসি খাওয়া যাবে না। !!! ডাক্তার দেখিয়ে ওরা বেরিয়ে যায় সেখান থেকে তারপর সোজা কৃষ্ণেন্দুর ফ্লাটে। ঘরে ঢুকে অন্যন্যা মালতিকে কৃষ্ণেন্দুর খাবার কি ভাবে করবে কি করবে সব ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেয়। তারপর কৃষ্ণেন্দুর কাছে গিয়ে বলে আমি ওষুধ আনতে যাচ্ছি। আমি এলে তুমি স্নানটা সেরে নিও। কৃষ্ণেন্দু মজা করে বলে: কেনো তুমি এসে আমাকে স্নান করিয়ে দেবে নাকি? মালতি কৃষ্ণেন্দুর কথা শুনে ফিক করে হেঁসে দেয়। অন্যন্যা রাগের সুরে : কোথায় কি কথা বলতে হয় সেটা ও জানো না দেখছি। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যা রাগ করেছে ভেবে চুপ করে যায়।
সারাদিন কৃষ্ণেন্দুকে সেবা যত্ন করায় ওকে এখন অনেকটাই ভালো দেখাচ্ছে। কিন্তু এখনও ওকে বেশ কিছুদিন রেস্টে থাকতে হবে। পেটের ইনফেকশনটার জন্যই ওর জ্বর এসেছিলো। অন্যন্যা ব্লাড টেস্টের সব ব্যাবস্থা করে দিলো কাল সকালে ওরা বাড়িতে এসেই ব্লাড নিয়ে যাবে। সারাটা দিন কৃষ্ণেন্দুকে নিয়ে ব্যাস্ততায় কোথা থেকে যে সময়টা কেটে গেছে অন্যন্যা বা কৃষ্ণেন্দু কেউ সেটা টের পায়নি। মালতি দি দুপুরে বাড়ি চলে গেছে। বলে গেছে সন্ধ্যা হলে আবার আসবে। সারা দুপুর অন্যন্যা আর কৃষ্ণেন্দু একাই ছিল ফ্ল্যাটে। কৃষ্ণেন্দু অনেকবার অন্যন্যাকে বলেছিল সে চাইলে খাটে শুয়ে বিশ্রাম নিতে পারে ও সোফায় গিয়ে শুলে ওর অসুবিধা হবে না। অন্যন্যা রাজি হয়নি। ও কৃষ্ণেন্দুকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে দিয়ে বলে শুয়ে ঘুমোতে। সন্ধ্যে তখন প্রায় ছয়টা বাজে কৃষ্ণেন্দুর ঘুম ভাঙ্গলে ও উঠে বসার ঘরে যায় সেখানে ওর চোখে পড়ে অন্যন্যার দিকে সোফায় বসেই অন্যন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে। কৃষ্ণেন্দু কোনো শব্দ না করে অন্যন্যার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। অন্যন্যার ও হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ও দেখে কৃষ্ণেন্দু ওর সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। অন্যন্যা নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে বলে: তুমি, তুমি কখন উঠলে কৃষ্ণেন্দু? আমাকে ডাকলে না কেনো? কৃষ্ণেন্দু হেঁসে উত্তর দিলো: ডাকতে ইচ্ছে করলো না। ডেকে দেবো উঠেই তো বলবে অনেক দেরী হয়ে গেছে এবার আমি বেরোবো। আমি আবার একা হয়ে যাবো। তাই জন্যই তো ডাকিনি। অন্যন্যা উঠে দাঁড়িয়ে বললো: এরকম ছেলে মানুষি করে কেউ? বিকেলে তোমার চা টিফিন দিয়ে আমাকে বাড়ি তো ফিরতে হবে নাকি? কালকে অফিস ও যেতে হবে। তোমার সাথে ফোনে টাচে থাকবো। এখন দেখি সরো চা বসাতে হবে। মালতি দি চলে আসবে। তার আগে আমি চলে যাবো। এমনিতেই কি জানি কি ভাবছে? সকাল বেলা তো বৌদিই ডেকে বসলো। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার মুখের সামনে মুখ এগিয়ে নিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো: কি বলেছে বললে? অন্যন্যা একটু লজ্জা পেয়ে যায় তারপর তড়িঘড়ি বলে!! সরো তো কিছু বলেনি। যেমন মালিক তেমিন তার কাজের লোক। অন্যন্যা রান্না ঘরের দিকে চলে যায় চা বসানোর জন্য। চা বিকেলের জলখাবার করে নিয়ে আসে অন্যন্যা তখন প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে উদ্দেশ্য করে বলে: তুমি নিজের চা জলখাবার শেষ করো আমি এবার আসি। বাকিটা মালতি দিকে বোঝানো আছে ও এসে করে দেবে।
কৃষ্ণেন্দু অসহায়ের মতো অন্যন্যাকে জিজ্ঞাসা করে: তুমি এখুনি চলে যাবে? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর কথার উত্তরে বলে: হ্যাঁ, তা আমাকে বাড়ি যেতে হবে না? শোনো এখন একটু বেটার আছো। কিন্তু তুমি সেরে ওঠোনি এখনও সময় লাগবে দয়া করে ডক্টর যে ভাবে বলেছেন সেই ভাবে একটু প্লিজ চলো। আর ওই ছাইপাশ গুলো গেলা বন্ধ রেখো। আমি এবার বেরোবো। কৃষ্ণেন্দু পিছন থেকে অন্যন্যার হাত টেনে ধরে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসে। তারপর আস্তে করে অন্যন্যাকে প্রশ্ন করে: এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ি করে নেওয়া যায় না? আমি কি এতটাই খারাপ মানুষ? অন্যন্যা আমি তোমাকে আমার সব কথা বলতে চাই নিজের সেই সব কথা যা আমি কোনোদিন কাউকে বলে উঠতে পারিনি। আমি তোমাকে সব বলতে চাই। তুমি শুনবে? !!!!! অন্যন্যা নিজের হাত ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে যায় কৃষ্ণেন্দুর থেকে। তারপর ওকে উদ্দেশ্য করে বলে: তোমার শরীর ঠিক নেই। তুমি আগে সুস্থ হয়ে ওঠো। এখন কোনো স্ট্রেস তোমার না নেওয়াই ভালো। টাইম মতো খাওয়া দাওয়া করবে। আমি যদি পারি আসবো অফিস থেকে চেষ্টা করবো কথা দিতে পারলাম না। কারণ টা তুমি ও জানো। ওদের এই কথোপকথনের মধ্যেই ডোর বেলটা বেজে ওঠে। অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে: ওই হয়তো মালতি দি এসে গেছে। আমি এবার আসি। অন্যন্যা দরজা খুলে দিতেই মালতি ঘরে এসে বললো: আপনি এখনো আছেন দিদিমণি? আমার আসতে একটু দেরী হয়ে গেলো। ওই সেন গিন্নী এতো বজ্জাত না, না মানে এতো পাজি ছাড়তেই আর চায় না, বলে মালতি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে বললো এখন তো আমি একটু ভালো আছি, তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি? অন্যন্যা হেঁসে উত্তর দিল না তার দরকার পড়বে না আমি চলে যেতে পারবো তুমি বিশ্রাম নাও। আমি পৌঁছে জানিয়ে দেবো। সাবধানে থেকো। বেরিয়ে যায় অন্যন্যা।