সমকামি – পঞ্চদশ পর্ব
পরের দিন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে অন্যন্যা দেখে কৃষ্ণেন্দু তাকে গুড মর্নিং উইশ করে ম্যাসেজ করছে। অন্যন্যা ও রিপ্লাই করে। তারপর আর তার ফোন দেখার সময় হয়নি। তাড়াতাড়ি করে তৈরী হয়ে সে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অন্যন্যার বেরোনোর সময় বিকাশ বাবু জানতে চায়: হ্যাঁ রে মা উকিল বাবু কোনো ফোন করেছিলেন? কিছু আর জানতে পারলি? তোর মাকে ও তো এবার জানাতে হবে। কি ভাবে নেবে কি রিয়েক্ট করবে কিছুই তো বুঝতে পারছি না। অন্যন্যা বাবাকে বলে আমি সব বুঝতে পারছি বাবা সবে তিন চার দিন হলো আর একটা দুটো দিন যাক আমি ফোন করবো আর কৃষ্ণেন্দু আছেন অসুবিধা হবে না আশা করছি। আমি তাহলে আসি নাহলে এবার দেরী হয়ে যাবে বাবা। হ্যাঁ, মা আয় তুই আয় সাবধানে যাস আর পৌঁছে একটু জানিয়ে দিস তোর মা বড্ড দুশ্চিন্তা করে। বেরিয়ে পড়ে অন্যন্যা। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো অন্যন্যা প্রায় পনেরো মিনিট হবে বাস আসতে আজকে বেশ লেট হচ্ছে অন্যন্যা ভাবছে কোনো ক্যাব বুক করে নেবে কিনা? এর মধ্যে ওর ফোনটা বেজে ওঠে ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে দেখে কৃষ্ণেন্দু ফোন করেছে। অন্যন্যা ফোনটা রিসিভ করে বলে: হ্যালো, অন্যন্যা বলছি। ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় কৃষ্ণেন্দু উত্তর দেয় হ্যাঁ সেটা আমি জানি। আপনি কোথায়? অন্যন্যা আপনি কি ঘড়িটা দেখেছেন it’s already 10:20। অফিসটা আপনার টাইমে না অন্যন্যা আপনাকে অফিসের সময় মতো চলতে হবে আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন সেটা। অন্যন্যা কি বলবে বুঝতে পারে না। মনে মনে খুব লজ্জা পায়। ভাবতে থাকে সকাল বেলায় ও যে মানুষটা আমাকে গুড মর্নিং উইশ করলো সে যখন এই ভাবে কথা বললো তখন ভুলটা ওর। আর তাছাড়া ওর আজ অনেক লেট। একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল ওর কাছে সেই নিয়েই হয়তো বিরক্ত হয়ে গেছে। ও আর বাসের জন্য অপেক্ষা না করে একটা ক্যাব বুক করে নিল যাতে তাড়াতাড়ি অফিস পৌঁছতে পারে।
অফিসে পৌঁছেই অন্যন্যা নিজের টেবিলে এসে বসতেই পিয়ন এসে খবর দিল কৃষ্ণেন্দু স্যার বলেছেন আপনি অফিসে এলেই আগে ওনার সাথে দেখা করতে। অন্যন্যা মাথায় নাড়িয়ে বলে: তুমি স্যার কে গিয়ে বল আমি এখুনি আসছি। অন্যন্যা একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কৃষ্ণেন্দুর কেবিনে গেলো। ” আসবো স্যার”।
হ্যাঁ, আসুন। অন্যন্যা দেখলো রজত সেন অফিসের সিইও উনি কৃষ্ণেন্দুর ঘরেই বসে আছেন এবং দুজনে কিছু একটা ব্যাপারে খুব সিরিয়াসলি আলোচনা করছেন। অন্যন্যা রুমে ঢুকতেই রজত বাবু কৃষ্ণেন্দুর দিকে তাঁকালেন। কৃষ্ণেন্দু বলল: অন্যন্যা আপনাকে যে ফাইলটা কালকে আমি দিয়েছিলাম সেটা রেডী তো? ওটা কিন্তু আমার এখনই লাগবে। আপনার কাজটা কমপ্লিট তো? অন্যন্যা একটু আমতা আমতা করে উত্তর দেয় না মানে আমি এক ঘণ্টার মধ্যে রেডী করে দিচ্ছি স্যার। কৃষ্ণেন্দু রেগে উত্তর দেয়: এখন প্রায় এগারোটা বাজতে যায় আপনি এখনো কাল থেকে কাজটা কমপ্লিট করতেই পারেননি? আপনি কি করে এতো ইরেস্পন্সবল হতে পারলেন? আমি বার বার আপনাকে বলেছিলাম কাজটা ইম্পর্ট্যান্ট আপনি কি কথার মানেটাই বুঝতে পারেননি? অন্যন্যা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রজত বাবু চেঁচিয়ে বলে প্লীজ আপনি কোনো অজুহাত দেবেন না। এখানে কাজ করতে হলে সিরিয়াসলি করতে হবে না হলে আপনি আজকেই রিজাইন দিয়ে দিন। কাজটা আমার উইথিন ওয়ান আওয়ারের মধ্যেই চাই। নাহলে আজকে আপনার জবটা নিয়ে সমস্যা হবে আমি আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি। কৃষ্ণেন্দু বুঝতে পারে অন্যন্যা যতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে রজত বাবু ততক্ষন ওকে নানান কথায় আটকে রেখে কাজের দেরী করবে যাতে অন্যন্যা কাজটা সময় মতো দিতে না পারে। তাই ও অন্যন্যাকে বলে: এখানে হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে কাজটা শেষ করুন যান প্লীজ। অন্যন্যা আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।
রুদ্ধশ্বাসে কাজটা নির্ভুল ভাবে শেষ করার চেষ্টা করতে থাকে অন্যন্যা। এই সময় একটা হোয়াটসঅ্যাপে আসে ওর মোবাইলে। তাতে লেখা আছে ” সরি অন্যন্যা আমার কিছু করার ছিল না আশা করি বুঝতে পারবে। মিস্টার সেন আজকে কিছু একটা চিন্তা করেই এসেছিলেন। আমি জানি না সেটা কি”? তুমি প্লীজ কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করো। আর প্লীজ রাগ করো না। অন্যন্যা কোনো রিপ্লাই করে না কৃষ্ণেন্দুর কথায়। ঠিক এক ঘণ্টা পরে পিয়ন আবার এসে অন্যন্যাকে বলে : ম্যাডাম আপনাকে সেন স্যার ডাকছেন। অন্যন্যা কোনো উত্তর দেয় না। শুধু মাথা নাড়ায়। কিছুক্ষণ বাদে অন্যন্যা কাজটা কমপ্লিট করে ফাইল হাতে সেন স্যারের ঘরে যায়। দরজা নক করে জানতে চায়: ” ভিতরে আসব স্যার”? সেন বাবু না তাঁকিয়েই উত্তর দেয়: ফাইলটা কি এনেছেন? যদি না এনে থাকেন তাহলে রিজাইন লেটারটা সাথে করে নিয়ে একবারে আসুন। অন্যন্যা দরজার সামনে থেকেই উত্তর দেয় স্যার আপাততো সেটার দরকার পড়বে না আমার কাজটা কমপ্লিট হয়ে গেছে আমি সেটাই দিতে এসেছি। এবার মাথা তুলে অন্যন্যার দিকে তাঁকায় আর বলেন : আসুন ভিতরে আসুন। অন্যন্যা ভিতরে গেলে বলেন বসুন আপনি। তারপরেই ফোন করেন কৃষ্ণেন্দুকে। কৃষ্ণেন্দু আপনি একবার আমার কেবিনে আসুন। কৃষ্ণেন্দু রজত সেনের কেবিনে গেলে সেন বাবু বলেন: বসুন কৃষ্ণেন্দু। অন্যন্যা আপনি ফাইলটা কৃষ্ণেন্দুর হাতে দিন। অন্যন্যা কোনো কথা বলে ফাইলটা কৃষ্ণেন্দুর হাতে দেয়। এবার সেন বাবু বলেন: কৃষ্ণেন্দু আপনি ফাইলটা ভালো করে এখানে বসে দেখুন আর আমাকে বলুন কোনো ভুল আছে কিনা? কৃষ্ণেন্দু ভালো করে ফাইলটা দেখে নিয়ে বলেন: না কোনো ভুল নেই পারফেক্ট আছে আপনি চাইলেও একবার দেখে নিতে পারেন। চশমার ফাঁক থেকে অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে বলেন: হুমম, দিন একবার দেখেনি কারণ ওনাকে ও বুঝতে হবে যে কাজ নিয়ে কোনো হেলাফেলা করা যাবে না এখানে অন্তত আমি থাকতে তো নাই। দেখি দিন একবার দেখেই নি আমি। ফাইলটা কৃষ্ণেন্দুর হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে উল্টে পাল্টে ভালো করে দেখে নিয়ে বলেন : নাহ্ একদম পারফেক্ট আছে আপাতত। আর হ্যাঁ অন্যন্যা আমি আরো একটা কাজ দেবো আর কাজটা কমপ্লিট করে তবেই আপনি আজকে অফিস থেকে বেরোবেন। আমি অফিসে ঢুকে কালকে ফাইলটা আমার টেবিলে দেখতে চাই। আমি বোঝাতে পারলাম অন্যন্যা? অন্যন্যা উত্তর দেয়: হ্যাঁ, স্যার একদম বোঝাতে পেরেছেন। সেন সাহেব অন্যন্যার হাতে ফাইলটা দিয়ে বলেন : আপনি আসুন। কাল সময় মতো কাজটা দিয়ে দেবেন। অন্যন্যা মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। যাবার আগে কৃষ্ণেন্দুর দিকে তাঁকায় একবার অন্যন্যা।
অন্যন্যা নিজের টেবিলে এসে ধপাস করে বসে পড়ে চেয়ারে। মাথাটা ভীষণ ধরে যায় ওর। এক কাপ কফি না খেলে কোনো কাজ করতে পারবে না বলে মনে হয় ওর। ক্যান্টিনে ফোন করে এক কাপ কফি চেয়ে পাঠায়। কফি খেতে খেতে অন্যন্যা মন দেয় ফাইলে। তারপর কাজে কাজে কখন যে লাঞ্চ টাইম এসে যায় অন্যন্যা সেটা খেয়াল ও করেনি। এদিকে কৃষ্ণেন্দু একটার পর একটা হোয়াটসঅ্যাপ করে ও রিপ্লাই না পেয়ে বুঝতে পারে অন্যন্যা নিজের কাজে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে আছে। মনে মনে খারাপ লাগতে থাকে কৃষ্ণেন্দুর ওর সামনে আজকে অন্যন্যাকে এতো কিছু বললো সেন সাহেব কিন্তু ও কিছুই করতে পারলো না। হয়তো অন্যন্যা ও ওকে ভুল ভাবলো। লাঞ্চ টাইমে ও অন্যন্যা আজ আর ক্যান্টিনে যায়নি নিজের টেবিলে বসেই তাড়াতাড়ি করে লাঞ্চ করে নিয়েছে। ও চাইছে যাতে পুরো কাজটা আজকেই শেষ করে যেতে পারে নাহলে সেন সাহেব কালকে আবার কোনো ঝামেলা করতে পারে। অন্যন্যা নিজের মনে কাজ করে যাচ্ছে কোনো দিকে তার খেয়াল নেই। পিয়ন পিয়ালির পাশে এক কাপ কফি রেখে বললো : দিদি কফিটা খেয়ে নিন। কাজ করতে এনার্জি পাবেন, এসে থেকে এক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যন্যা ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে বললো thank you রাম দা সত্যি মনে হচ্ছিল এক কাপ কফি হলে খুব ভালো হয়। রাম দা এই অফিসের অনেক পুরনো কর্মচারী সবাই ওনাকে সন্মান করে মানুষ টা ও খুব ভালো কম বেশী সবার খেয়াল রাখে নিজের মতোন করে। রাম দা একটা হাঁসি দিয়ে বললো আমি জানি দিদি তাই জন্যই তো দিয়ে গেলাম এবার আপনি কাজ করুন আমি যাই।
এই পুরো ঘটনাটা দূর থেকে খেয়াল করছিল পিয়ালি। রাম দা ওখান থেকে চলে যেতেই পিয়ালি অন্যন্যার ডেস্কের কাছে আসে। ” কিরে অন্যন্যা আজ এসে থেকে শুধু কাজ করে যাচ্ছিস করো সাথে কথা নেই। কৃষ্ণেন্দু স্যারের কেবিনে ও আজ গেলি না একবার ও লাঞ্চে ক্যান্টিনে এলি না? আচ্ছা শুনলাম নাকি তোকে সেন সাহেব হেভি ঝেরেছে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ নিয়ে। এটা কি সত্যি? কি হয়েছিল রে”? অন্যন্যা বিরক্ত হয়ে পিয়ালির দিকে তাঁকায় আর বলে: ” তোর কোনো কমন সেন্স নেই তুই যখন দেখছিস আমি একটা কাজ করছি এসে এতো কথা কেনো বলছিস? তুই ঠিক কোনটা জানতে চাইছিস মানে জানলে তোর ভালো লাগবে? সেন সাহেব আমাকে কি নিয়ে ঝাড়লেন? আমি কৃষ্ণেন্দু স্যার এর কেবিনে কেনো যায়নি। নাকি আমি লাঞ্চে কেনো ক্যান্টিনে গেলাম না আসলে তুই জানতে কি চাস? আগে সেটা ঠিক করে আয় আমি ততক্ষনে কাজটা কমপ্লিট করেনি। পিয়ালি মেজাজ দেখিয়ে বলে ওঠে অন্যের রাগ আমাকে দেখিয়ে কি হবে? কেনো তোর কৃষ্ণেন্দু স্যার ও তোকে বাঁচাতে পারলো না? অন্যন্যা এবার একটু চেঁচিয়ে উত্তর দিলো পিয়ালি প্লিজ তুই যা এখন আমাকে কাজটা শেষ করতে দে। আমি কিছু বললে সেটা তোর শুনতে ভালো লাগবে না। আর আমার বলতে ও ভালো লাগবে না। পিয়ালি মুখ বেঁকিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। অফিসে কম বেশি সবাই জানে যে সেন সাহেবের সাথে পিয়ালির একটা সম্পর্ক আছে যদিও সেন সাহেব বিবাহিত এবং এক সন্তানের বাবা কিন্তু সব জেনেও পিয়ালি ওনার সাথে একটা শয্যা সম্পর্ক তৈরী করে রেখেছে যাতে অফিসে ওর কোনো অসুবিধা না হয়।
রাত তখন প্রায় আটটা পিয়ালি তখন ও কাজ করে যাচ্ছে ওর কাজটা শেষ হতে এখনো প্রায় এক ঘণ্টা মতো লাগবে। অফিস ও তখন প্রায় ফাঁকা একে একে সবাই চলে গেছে। অন্যন্যা, রাম দা, কৃষ্ণেন্দু এরকম দু একজন ছাড়া অফিসে প্রায় ফাঁকা। এদিকে অফিসে দুএকজন লোক তখন ও থাকায় কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার কাছে যেতে পারছে না আর কোনো ম্যাসেজের রিপ্লাই ও করছে না অন্যন্যা। অগত্যা কৃষ্ণেন্দু নিজের কেবিনে বসেই অপেক্ষা করতে থাকে অন্যন্যার। রাম দাকে বলে রাখে অন্যন্যা অফিস থেকে বেরোচ্ছে দেখলে যেনো তাকে জানায়। কাজ শেষ হতে হতে অন্যন্যার প্রায় রাত নটা বেজে গেলো। অন্যন্যা যখন অফিস থেকে বেরোচ্ছে তখন প্রায় সোয়া নটা বাজে। রাম দা কৃষ্ণেন্দুকে খবর দিল অন্যন্যা অফিস থেকে বেরোচ্ছে। কৃষ্ণেন্দু ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। কিন্তু অন্যন্যাকে দেখতে পায় না। তাড়াতাড়ি বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখে অন্যন্যা বাসের জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে। গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বলে উঠে এসো অন্যন্যা। অন্যন্যা গম্ভীর হয়ে উত্তর দেয়: আমি চলে যেতে পারবো রোজ রোজ এটার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি না থাকলে ও বাড়ি তো আমাকে ফিরতেই হতো। আমি সেই ভাবেই ফিরে যাবো। আপনি চলে যান। কৃষ্ণেন্দু এবার ধমক দিয়ে বলে: যা বলছি তাই শোনো বৃষ্টি আসছে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবে বাসের জন্য? শোনো বেশী কথা না বলে উঠে এসো। আমি জানি তোমার রাগ হয়েছে আমার উপর কিন্তু আমাকে ও তো বলতে দাও কিছু আগে থেকে আমাকে দোষী ভেবে নিলে কি করে হবে? উঠে এসো বলছি। অন্যন্যা আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।