সমকামি – চতুর্দশ পর্ব
না, না তেমন কিছুই নয়। আসলে বুঝতে পারছি না কথাগুলো বলা ঠিক হবে কিনা?
কি এমন কথা অন্যন্যা যেটা বলতে এতো ভাবতে হচ্ছে? আচ্ছা বেশি দেরী তো হয়নি আমরা কি কোনো ক্যাফেতে বসে কথা বলতে পারি!!! সামনেই আছে আসলে একটু কফি খেতে ইচ্ছে করছে তাই আর কি। আমি পৌঁছে দেবো আপনাকে চিন্তা করবেন না।
অন্যন্যা ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে বলে হ্যাঁ সময় তো আছে যাওয়া যেতেই পারে। তারপর ওরা একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে। এবার বলুন তো অন্যন্যা কি এমন কথা যেটা বলতে তো চাইছেন কিন্তু পারছেন না।
অন্যন্যা একটু চুপ থেকে বলে: অফিসের পরিস্থিতি সবই আপনি জানেন। আপনার সাথে কথা বলা আপনার কেবিনে যাওয়া দুয়েকদিন হয়তো আমাদের একসাথে বেরোতে ও দেখেছে এই সব নিয়ে নানান কথা হচ্ছে অফিসে। আসলে আমার ভয় লাগে আমার জন্য আপনার কোনো বদনাম না হয়। এই বিয়েটা ঘিরে এমনি আমি এখন অফিসের হট টকিজ।
পুরো না জানলে ও কিছুটা আমার কানে এসেছে আসলে আমিও কথাগুলো বলা ঠিক হবে না ভেবেই চুপ ছিলাম। অন্যন্যা আপনাকে কথাগুলো কে বললো? অন্যন্যা উত্তর দিলো: সমীর। ও অফিসের ভিতরে কিছু বলতে চাইলো না তাই ওর সাথেই বেরিয়ে এসেছিলাম ওই বললো। আপনাকে অফিসের সবাই অনেক রেসপেক্ট করে আমার জন্য আপনার সেই জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাক আমি চাই না কৃষ্ণেন্দু।
অন্যন্যা, কি জানতো সরি আমি আর আপনি আজ্ঞে করতে পারছি না আমি তুমিই বলছি!!!!মুচকি হাঁসে অন্যন্যা। হ্যাঁ যা বলছিলাম!! আমাকে কে কতটা সন্মান করে আর কে ভয় পায় সেটা আমি জানি। আর ঠিক আমাকে নয় আমার পোস্টটাকে ভয় পায়। চাকরি চলে যাবার ভয়। জানেন তো অফিসে থাকলে গেলে খোচোর রাখতেই হয় বিশেষ করে আমাদের মত পোস্টে। নাহলে স্টাফ হ্যান্ডেল করা খুব মুশকিল হয়। তাই আমি জানি কমবেশী সবকিছুই। সেই তালিকার বাইরে তুমি চিরকাল ছিলে আর সেই কারণেই তোমাকে আমি সাহায্য করতে গিয়ে একবার ও ভাবিনি। আমি বয়সে তোমার থেকে অনেকটাই বড় জীবন আর পরিস্থিতি তোমার থেকে অনেকটাই বেশী দেখেছি। তুমি চাইলে আমার সাথে কথা কম বলতে পারো অথবা না ও বলতে পারো, আমিও চাই না আমার জন্য তোমার কোনো বদনাম হোক। আমি বয়সে বড় হলে ও আমি একজন বন্ধুর মতো করেই তোমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছে এতে তোমার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না তো?
আসলে কি বন্ধু বলতে তেমন তো কেউ নেই যার সাথে নিজের মতো করে কথা বলতে পারি তুমি এগিয়ে এসে এমন সহজভাবে সব বললে তাই হয়তো একটু। আর তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। আমি চাই না এতো ঝামেলার মধ্যে আমি তোমার জীবনে নতুন করে কোনো অশান্তি ডেকে আনি। আমার সাহায্যের হাত চিরকাল তোমার সাথে থাকবে কিন্তু সেটা দূর থেকেই। এই কটাদিন আমিও হয়তো তোমাকে একটু বিরক্ত করে ফেলেছি সরি অন্যন্যা।
অন্যন্যা একটু মুখ ভার করে বললো: এবার কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না কৃষ্ণেন্দু। অন্য কারো অন্যায়ের শাস্তি আপনি আমাকে দিচ্ছেন। অন্য কেউ কে কি বললো তাতে আমাকে বন্ধুত্বের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এটা কি ঠিক বলে মনে হচ্ছে আপনার? আমি তো আপনাকে কখনো সেই ভাবে ভাবিনি। লোকে তো কতো কিছু বলবে তার জন্য আমরা একটা ভালো সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলবো সেটা কি ঠিক? লোকের কথায় পিছিয়ে আসার মানুষ আমি কোনোদিন ছিলাম না। এবার এটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত যে আপনি আমার সাথে কথা বলবেন কি বলবেন না। সেটার জন্য আমি আপনাকে ফোর্স করতে পারি না।
বুজলাম ম্যাডাম বুজলাম আপনার কোনো কলেজে বাংলার প্রফেসর হলে খুব ভালো হতো। কথাটা বলে জোরে হেঁসে উঠল কৃষ্ণেন্দু। চলো এরপর তোমার মা, বাবা ও আমাকে মারবে রোজ রোজ মেয়ের দেরী করে দেবার জন্য।
ধুর কি যে বলেন না আপনি কৃষ্ণেন্দু। থাক্ আর বেশি লজ্জা পেতে হবে না আপনি ওতো টা ও লাজুক নন মজা করে বলেন কৃষ্ণেন্দু। রাগ দেখিয়ে অন্যন্যা বললো: কি আমি নির্লজ্জ?
এই কান ধরছি ম্যাডাম ঝগড়াতে মেয়েদের সাথে আমি পারবো না। কি আমি ঝগড়ুটে? আবার রেগে ওঠে অন্যন্যা।
একটা কথা বলবো অন্যন্যা? জানতে চায় কৃষ্ণেন্দু। অন্যন্যা চোখ দুটোকে ছোটো করে নিয়ে বলে: এখনও বলা বাকি আছে আপনার? কৃষ্ণেন্দু এবার হাঁসতে হাঁসতে বলে রেগে গেলে আপনাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে দেখতে। অন্যন্যা এবার লজ্জা পায়। মাথা নীচু করে বলে সত্যি এবার দেরী হচ্ছে আমার।
সরি সরি আমার ভুল তোমার সাথে কি ভাবে যে সময়গুলো কেটে যায় বুঝতেই পারিনা। চলো তোমায় পৌঁছে দি। দুজনে গাড়িতে গিয়ে বসে। বেশকিছুটা রাস্তা দুজনেই চুপচাপ অন্যন্যা জানলা দিয়ে রাতের শহরটাকে দেখছে আজ যেনো শহরটাকে অন্যদিনের থেকে একটু বেশি ভালো লাগছে ওর। নিঃস্তব্ধতা কাটিয়ে কৃষ্ণেন্দু বললো: কি ম্যাডাম? এখনও রেগে আছেন আমার উপরে? অন্যন্যা মুখ ঘুরিয়ে বললো: এমা না না কি যে বলেন আপনি? কৃষ্ণেন্দু এবার বলে: একটা কথা বলবো অন্যন্যা? অন্যন্যা হেঁসে উত্তর দেয় হ্যাঁ বলুন না।
কৃষ্ণেন্দু বলতে শুরু করে!!! আপনার কন্টাক্ট নম্বর আমার কাছে আছে কিন্তু আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নেই। আমি যদি সেটা আপনার থেকে চাই আপনি কি কিছু মনে করবেন? অবশ্য আপত্তি থাকলে কিন্তু কোনো ব্যাপার নেই। আমি কিছু মনে করব না।
আপত্তি কেনো থাকবে আমি আপনাকে টেক্সট করে দিচ্ছি। এরপর নানান গল্পে অবশেষে ওরা অন্যন্যার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছাল। অন্যন্যা গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো সাবধানে যাবেন। কাল দেখা হচ্ছে অফিসে। কৃষ্ণেন্দু ও অন্যন্যাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
বাড়ির বেল বাজতেই অন্যন্যার মা এসে দরজা খুললো!!!! আজকাল রোজই দেখছি দেরী হচ্ছে তোর! অন্যন্যা জুতো খুলতে খুলতে বললো কাজের চাপ বাড়ছে মা। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। বলে অন্যন্যা নিজের ঘরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ বাদে ফ্রেশ হয়ে এলো অন্যন্যা। সবার সাথে বসে কথা বলছে কিন্তু ফোন হাতে বার বার কি যেনো দেখছে ও। রিনা দেবী ব্যাপারটা খেয়াল করছিল অনেকক্ষণ থেকে। তারপর বললো: কিরে বার বার ফোনে কি এতো দেখছিস বলতো? দরকারি কিছু আসার আছে কি? না না মা এমনি, এমনি দেখছিলাম বলে ফোনটা পাশে সরিয়ে রাখে অন্যন্যা। এরপর রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে চলে যায়। বিছানায় শরীরটাকে এলিয়ে দেয় অন্যন্যা। খুব ঘুম পাচ্ছে ওর। মনে মনে ভাবলো আজ আর ফোন ঘটবো না খুব ঘুম পাচ্ছে লাইটটা অফ করে শুয়ে পড়বে ভেবে উঠতেই হোয়াটসঅ্যাপে একটা অচেনা নম্বর থেকে ম্যাসেজ এলো তাড়াতাড়ি খুলে দেখলো কৃষ্ণেন্দু টেক্সট করেছে!!!! কি ম্যাডাম ডিনার কমপ্লিট? অধমের নাম কৃষ্ণেন্দু। অন্যন্যা রিপ্লাই করলো আমার তো কমপ্লিট আপনি কি শুধু ফোনেই আটকে আছেন নাকি আপনি ও ডিনার করে নিয়েছেন? ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো: আমার টাইম মতোই খেয়ে নিতে হয় কাজের দিদি আমাকে খেতে দিয়ে বাড়ি চলে যায় আমার তো আর আপনার মতো মা নেই যে কাছে বসে যত্ন করে খাওয়াবে? অন্যন্যার মনে মনে খারাপ লাগে কৃষ্ণেন্দুর জন্য। চুপ করে থাকে অন্যন্যা। ওপাশ থেকে আবার কৃষ্ণেন্দু লেখে কি হলো চুপ করে গেলে যে? অন্যন্যা রিপ্লাই করে আপনি চাইলে মাঝে মাঝে আসতে পারেন আমার বাড়ি আশা করি ভালই লাগবে আপনার। কৃষ্ণেন্দু উত্তর দেয়: একটা কথা বলবো অন্যন্যা।তুমি আমাকে তুমি বলতে পারো না অফিসে না অফিসের বাইরে। তবে তুমি আমাকে ভুল বুঝঝো নাতো? আসলে আমি সবার সাথে কমফোর্ট হতে পারি না তাই আমার বন্ধু বান্ধব কম কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে আমার বেশ ভালো লাগে তাই হয়তো একটু বেশি বিরক্ত করছি তোমায়।
অন্যন্যা ফোন হাতে মনে মনে ভাবতে থাকে আমিও কি একই ভাবে তোমার সঙ্গটা পছন্দ করছি? আমিও কি তোমার একটা টেক্সট এর অপেক্ষাই করছিলাম? বুঝতে পারে না অন্যন্যা। শুধু ওর এটাই মনে হতে থাকে কোথাও গিয়ে কৃষ্ণেন্দুর সাথে থাকা কথা বলা ওর ভালো লাগছে।
ওপার থেকে আবার লেখে কৃষ্ণেন্দু কি হলো অন্যন্যা আমি কি কিছু ভুল বলে ফেললাম? আমি সরি আমি হার্ট করতে চাইনি তোমাকে।
অন্যন্যা একটা স্মাইলি দিয়ে লেখে: তুমি এতো বেশি ভাবো কেনো কৃষ্ণেন্দু? ঘুমিয়ে পড়ো কাল দেখা হবে। গুড নাইট। ওপার থেকে কৃষ্ণেন্দু স্মাইলি দিয়ে লিখে পাঠায় গুড নাইট ম্যাডাম।