সমকামি – দ্বাদশ পর্ব
বাকি দিনগুলো কাজে কর্মে কেটে গেলো। এর মাঝখানে তেমন কোনো ফোন ও আসেনি। অন্যন্যার একবার যেনো মনে হলো থানায় ডায়েরি করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করে ফেললো নাতো ও? তারপর আবার নিজের মনেই ভাবতে থাকলো নিরাপত্তা শুধু ওর একার নয় এটা পুরো পরিবারের তাই ও যা করেছে ঠিকই করেছে। দেখতে দেখতে রবিবার ও চলে এলো। আজ ওদের লইয়ারের কাছে যাবার কথা। সকাল সকাল কৃষ্ণেন্দু ফোন করলেন।
হ্যালো, অন্যন্যা বলছেন?
উল্টো দিক থেকে উত্তর এলো হ্যাঁ, স্যার বলছি, আমার মনে আছে আজকের কথাটা। ভেরি গুড অন্যন্যা সেনগুপ্ত বাবু মানে আপনার লইয়ার এই সাড়ে এগারোটা নাগাদ যেতে বলেছে আপনি পারবেন তো? কোনো সমস্যা নেই তো? জানতে চায় কৃষ্ণেন্দু। না,না স্যার কোনো সমস্যা নেই আপনি বলুন না কোথায় যেতে হবে আমায়? উত্তর দেয় অন্যন্যা। না, তোমাকে মানে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। আমি চলে আসবো আপনার বাড়ির সামনে। অন্যন্যা একটু ইতস্তত করে বলে: আসলে স্যার আমার বাবা ও যাবে আমার সাথে মানে এটা ঘরে বাবাকে অন্তত জানানো উচিত বলে আমার মনে হয়েছে।
আপনার একদম ঠিক মনে হয়েছে অন্যন্যা। আপনার বাবা আমাদের সাথে যাবে এটা তো খুবই ভালো কথা এতে সমস্যা কোথায়? না, স্যার সমস্যা সেখানে নয়। আসলে আমি মাকে কিছুই জানাইনি। মা জানলে বড়ো বেশি দুশ্চিন্তা করবে তাই। এখন বাড়ির সামনে থেকে দুজনকে একসাথে গাড়িতে উঠেতে দেখলে মা অনেক রকম প্রশ্ন করতে থাকবে সেটাই ভাবছি আরকি।
কৃষ্ণেন্দু হেঁসে উত্তর দেয়: আপনাকে ওতো ভাবতে হবে না। আপনাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে যেখানে নতুন কনস্ট্রাকশন হচ্ছে আমি ওখানে দাঁড়ানো থাকবো। আপনি আপনার বাবাকে নিয়ে সেখানে চলে আসুন। আশা করি এতে আপনার সমস্যা হবে না।
না, স্যার একদমই হবে না। আমি তাহলে ঠিক এগারোটা নাগাদ ওখানে চলে যাবো। আচ্ছা বেশ ঠিক আছে। ফোন কেটে দেয় কৃষ্ণেন্দু।।
এরপর অন্যন্যা ওর মাকে শুনিয়ে বাবাকে গিয়ে বলে: বাবা আজকে একটু আমি তোমাকে নিয়ে বেরোবো। অন্য কেউ না শুধু তুমি আর আমি। অন্যন্যার বাবা ওর মতলব বুঝতে পেরে বলেন: কেনো রে মা? আমাকে নিয়ে বেরোবি কেনো? আর তাছাড়া আজকে তো রবিবার কোথায় যাবো আমরা? অন্যন্যা হেঁসে বলে: ওটা সারপ্রাইজ বাবা গেলেই বুঝতে পারবে। আমরা কিন্তু ঠিক এগারোটায় বেরোবো তুমি কিন্তু দেরী করবে না ঠিক আছে? আচ্ছা আচ্ছা বেশ আমি রেডী হয়ে থাকবো। এর মধ্যে রান্না ঘর থেকে ওদের কথা শুনতে পেয়ে অন্যন্যার মা এসে বলে কোথায় যাওয়া হবে শুনি? আজকে করো কোথাও যাওয়া হবে না। একটা দিন সকলে একসাথে বসে খাওয়া দওয়া করি আজকে করো কোথাও যাওয়া চলবে না।
অন্যন্যা মাকে জড়িয়ে ধরে বলে: আজকাল এতো রেগে থাকো কেনো বলতো মা? আমি কি বললাম সারাদিনের জন্য বেরোবো? একটা ছোট্ট কাজ আছে ম্যাক্সিমাম আধা ঘন্টা লাগবে একা যাবো তাই ভাবলাম বাবাকে সাথে নিয়েই যাই। মুখ বেজার করে অন্যন্যা বলে ঠিক আছে বাবা তোমাকে যেতে হবে না, আমি চলে যাবো একা। কিছুক্ষণের তো কাজ আমি পারবো।
রীনা দেবী মেয়ে প্রশ্ন করে রবিবার দিন ও কি কাজ তোর?
অন্যন্যা কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো: মা অফিসের একটা মেইল করতে হবে। ক্যাফেতে যাবো।
অফিসের মেইল তো ঘরে বসেই করা যাবে। তোর ল্যাপটপ কি হলো?
আহা্, মা করা গেলে কি আমি করতাম না? যাবে না বলেই তো। ঠিক আছে আমি তো বললাম বাবাকে যেতে হবে না কোথাও আমি পারবো একা। একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে ও এতো প্রশ্ন। ধুর্ কেনো যে বলতেই গেলাম। রাগ দেখিয়ে অন্যন্যা নিজের ঘরে চলে গেলো।
দিলে তো মেয়েটাকে রাগিয়ে। আচ্ছা কি হয়েছে তোমার বলতো? সামান্য ব্যাপারে ও আজকাল এরকম কেনো করতে থাকো বলতে পারো? মেয়েটা আবদার করে একটা কথা বললো তুমি এমন করলে। যা ইচ্ছে করো তোমরা ভালো লাগে না আর কিছু। এই কথা বলে বিকাশ বাবু খবরের কাগজে মন দেয়। আর আড় চোখে স্ত্রীর দিকে তাঁকিয়ে দেখেন তিনি কি করেন এবার।
রীনা দেবী মেয়ের ঘরে গিয়ে বলে: থাক্, ওতো রাগ করতে হবে না। বাবা যাবে তোমার সাথে এখন রাগ না দেখিয়ে চলো খেয়ে নিয়ে আমায় উদ্ধার করো।
সকালের জলখাবার খেয়ে ঠিক এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে পরে অন্যন্যা বাবাকে নিয়ে। তারপর কৃষ্ণেন্দু বাবুকে সাথে নিয়ে সোজা চলে উকিলের কাছে।
সমস্ত কথা এবং প্রমাণগুলো দেখার পর তিনি বললেন: আপনার কেস জিততে কোনো সমস্যাই হবে না ম্যাডাম। ভয় পাবার কিছুই নেই। চিন্তা শুধু একটাই অন্য কোনো ভাবে প্রভাব না খাটানোর চেষ্টা করে কারণ বুঝতেই পারছেন প্রভাবশালী ব্যাক্তি তো বটেই ওরা। কিন্তু হ্যাঁ তাতে করে আপনার জিত কেউ আটকাতে পারবে না। যাই হোক আমি সমস্ত ডকুমেন্ট তৈরী করে নিয়ে আপনাদের খবর দেবো। এসে সৈসাবদ করে দিয়ে গেলেই আমি কেসটা নিয়ে প্রসিড করবো। প্রথমে একটা নোটিশ যাবে আপনার শ্বশুর বাড়িতে। তারপর দেখা যাক ওরা কি করে। নেক্সট স্টেপ তার উপর ডিপেন্ড করবে।
কৃষ্ণেন্দু তুই কিন্তু ওদের কোনো দরকার হলে পাশে থাকিস। আরে, হ্যাঁ সেই জন্যই তো তোর কাছে নিয়ে এলাম। যাতে ওনাদের অকারণে হয়রান হতে না হয়। না হলে আমাদের দেশে এই সমস্ত কেস বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে কোনো জাস্টিস পাওয়া না। বিশেষ করে অপনেন্ট যদি প্রভাবশালী হয়।
উকিল বাবু মাথা নেড়ে সমর্থন করে কৃষ্ণেন্দুকে।
অন্যন্যা হাত জোড় করে বলে: তাহলে আজ আমরা উঠি। আপনি সব রেডি করে জানালে আমি এসে সই করে দিয়ে যাবো।
সৌজন্যতা বিনিময় করে ওরা বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।
এরপর অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে: অনেক ধন্যবাদ স্যার। বিকাশ বাবু বলেন: সত্যি আপনি আমাদের অনেক সাহায্য করলেন। অন্যান্য আমাকে সব বলেছে। আপনি না থাকলে কি ভাবে কি হতো জানি না কারণ এসবের কোনো অভিজ্ঞতাই আমার নেই। বিয়েটা দিয়ে এমন ভাবে ঠকে যাবো ভাবতেই পারিনি।
কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাবুকে বলেন: এই ভাবে বললে আমর সত্য খুব খারাপ লাগবে। অন্যন্যা খুব ভালো মেয়ে আর আমাদের অফিসের একজন খুব সিনসিয়ার এম্প্লোয়ি। ওর জন্য কিছু করতে পারলে আমার ভালোই লাগবে। তাছাড়া কি জানেন একটা মানুষ হিসেবে আর একটা মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভালোই লাগে। চলুন আপনাদের পৌঁছে দি। অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে।
অন্যন্যা বলে: না, না স্যার বাবা তো আছে সাথে আমরা পারবো চলে যেতে একটা ক্যাব বুক করে নিলেই তো হলো।
কৃষ্ণেন্দু বলেন: বিকাশ বাবু আপনি উঠুন গাড়িতে উঠুন অন্যন্যা অতোটা ও ফরমাল হতে হবে না আমার সাথে। কৃষ্ণেন্দু ওদের পৌঁছে দিয়ে বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। গাড়ি থেকে নামার পর বিকাশ বাবু বলেন: আপনি কিন্তু একদিন আসবেন অন্যন্যার সাথে আমাদের বাড়িতে। ভালো লাগবে আমাদের। নিশ্চয়ই আসবো আজকে আসি তাহলে।
বাড়িতে ঢোকার পরে অন্যন্যার মা বলেন: এই তোমাদের আধা ঘণ্টার কাজ? আমি কেনো আপত্তি করেছিলাম এবার সেটা প্রমাণ হলো তো?
বিকাশ বাবু স্ত্রীর রাগ থামানোর জন্য বললেন: অনেক ভিড় ছিল ওর কাজ হতে তাই দেরী হয়ে গেলো। তুমি খাবার রেডী করো। আমরা স্নান সেরে একসাথে খাবো। খুব ক্ষিদে ও পেয়ে গেছে। অন্যন্যা আর বিকাশ বাবু চলে যায় ফ্রেশ হতে।