সমকামি – দশম পর্ব
পরেরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে অন্যন্যা ফোন হাতে নিতেই একটা এসএমএস পায় ” এই কেস যদি কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায় তাহলে ভালো হবে না”। কিন্তু নম্বর টা অচেনা এটা অয়ন বা ওর পরিবারের কারো নয়। অন্যন্যার এবার ভয়ের থেকে ও বেশী রাগ আর বিরক্ত লাগতে থাকে। অন্যন্যা ঠিক করে আজকেই থানায় একটা ডায়েরি করবে কিন্তু সেটা ঘরের কাউকে কিছু না জানিয়ে করা ঠিক হবে না বলে ওর মনে হয়। কিন্তু মাকে ও এতো কিছু জানানো যাবে না। অন্যন্যা আর কিছু না ভেবে সোজা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। তারপর অন্যদিনের মতোই তৈরী হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়লো।
অফিসে পৌঁছেই অন্যন্যা খোঁজ করে কৃষ্ণেন্দু বসুর। কৃষ্ণেন্দু হলেন অন্যন্যার অফিসের অ্যাসিস্টেন্ট ডিক্টেটর। খুবই শান্ত নম্র এবং কম কথার মানুষ। পিয়ন জানায় কৃষেন্দু স্যার সকাল নটার আগেই অফিসে চলে এসেছেন। অন্যন্যা আর দেরী না করে সোজা কৃষ্ণেন্দু বসুর কেবিনের দিকে চলে যায় তারপর ওনার অনুমতি নিয়ে কেবিনে যায়। কৃষ্ণেন্দু অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে আসুন অন্যন্যা আপনার কাজ কেমন চলছে? ওহ্, আপনি বসুন বসুন!!! যদিও আপনার কালকের কাজটাই দেখছিলাম পারফেক্ট আছে। আজকে আপনকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ দেবো আমি চাই কাজটা আপনিই করুন। আমি আপনাকে ডাকতাম তার জন্য ভালোই হলো আপনি নিজেই এসে গেলেন। এই ফাইলটা আপনি নিন সব ডিটেলস এতে আছে ভালো করে দেখে নিন কোথাও কিছু জানার থাকলে বা না বুঝতে পারলে আমাকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন আর হ্যাঁ কাজটা কিন্তু আমার আজকেই চাই যদি না পারেন তাহলে কালকে ফার্স্ট হাফে বেশি সময় দেওয়া যাবে না। খুব ইম্পর্ট্যান্ট এটা আপনি বুঝতে পারছেন তো? অন্যন্যা মাথা নাড়িয়ে বলে হ্যাঁ স্যার আমি বুঝতে পারছি। আপনি সময় মতো পেয়ে যাবেন কোনো অসুবিধা হবে না। থ্যাংক ইউ আমি জানতাম আপনি পারবেন আর তাই ফাইলটা হাতে আসতেই আমার প্রথমেই আপনার কথাই মাথায় এসেছে। তাহলে যান কাজ শুরু করে দিন!!! বেস্ট অফ লাক।
অন্যন্যাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে উনি আবার বলেন: আপনি কি কিছু বলবেন? কোনো সমস্যা আছে? অন্যন্যা একটু হেঁসে বলে: হ্যাঁ স্যার আছে, কিন্তু সেটা অফিসের কাজ নিয়ে না আসলে সমস্যাটা একটু ব্যাক্তিগত আপনার যদি একটু সময় হয় আমি একটু কথা বলতে চাই আপনার সাথে। কৃষ্ণেন্দু একটু কপাল কুঁচকে বলেন: পার্সোনাল প্রবলেম? আচ্ছা বলুন। অন্যন্যা সমস্ত ঘটনা খুলে বলে ওনার কাছে। কৃষ্ণেন্দু সব শুনে বলেন: হুমম, বুজলাম বাজে আর প্রভাবশালী জাগায় ফেঁসে গেছেন। সবকিছু সহজ হবে না। কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন আপনি এমন একটা প্রফেশনে আছেন যেখানে কাজটা আপনার জন্য কঠিন হলে ও অসম্ভব কিছু হবে না । আমার সাথে পুলিশ কমিশনারের বেশ ভালো সম্পর্ক আছে আমি নিজে নিয়ে যাবো আপনাকে আপনি টেনশন করবেন না। আমি একবার কথা বলেনি তারপর আপনাকে ফাইনাল জানাচ্ছি!!
অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার, আমি নিজের এই ব্যাক্তিগত কারণে কাউকে বিরক্ত করতে চাইনি বিশ্বাস করুন কিন্তু ওরা অনেক প্রভাবশালী তাই সহজ পথে ওদের সাথে আমি কোনো কিছুই করতে পারবো না। আর তাছাড়া আমি আমার পরিবার নিয়ে ও চিন্তিত ওদের নিরাপত্তা ও আমাকে ভাবাচ্ছে আমার বোন কলেজে পড়ে ওকে বাড়ির বাইরে বেড়োতে হয় বলে মাথা নীচু করে অন্যন্যা।
কৃষ্ণেন্দু বলে ওঠে আপনি এই ভাবে কেনো ভাবছেন সহকর্মী হিসেবে এই টুকু দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের একে অপরের প্রতি থাকা উচিত এসব নিয়ে মন খারাপ করবেন না। আমি দেখছি কতো তাড়াতাড়ি কি করা যায়। আপনি যান কাজ করুন আমি আপনাকে ডেকে নেবো। এরপর বেশ কিছুটা সময় কেটে যায় অন্যন্যা কাজের চাপে সময় ও খেয়াল করেনি। হঠাৎ বাড়ি থেকে মার ফোন দেখে ও ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে দুপুর দুটো বাজে মা নিশ্চয়ই খাবার খেয়ে নেবার জন্য ফোন করেছে আজ ও বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসেছে মা করে দিয়েছে। অন্যন্যা ফোন ধরেই বলে হ্যাঁ মা আমার মনে আছে এই তো যাচ্ছিলাম আমি তুমি এতো চিন্তা কেনো করো? তাহলে আমি রাখি খেয়ে নিয়ে তোমাকে জানাচ্ছি। এরমধ্যেই অফিসের পিওন এসে খবর দেয় ” ম্যাডাম আপনাকে কৃষ্ণেন্দু স্যার ডাকছেন”। ও আচ্ছা বলেই অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর কেবিনের দিকে চলে যায়!!! ” আসবো স্যার”। আরে হ্যাঁ অন্যন্যা আসুন, বসুন আপনি। আজকে রাত আটটার পর আমরা যাচ্ছি আজকেই দেখা করতে হবে এরপর ও কোনো একটা কাজে ব্যাস্ত থাকবে সময় দিতে পারবে না তাই দেরী না করে আজকেই যাবো আমরা। অন্যন্যা বলে রাত আটটার পড়ে? আপনি চিন্তা করবেন না আমি বুঝতে পারছি আপনার সমস্যা আমি নিজে গিয়ে আপনাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসবো ভয় পাবেন না। আর আজকের পর তো একদম দরকার পড়বে না ভয় করার। ঠিক আছে আপনি যান আমরা এই পনে আটটা নাগাদ অফিস থেকে বেরোবো। আপনি যান লাঞ্চ করে নিয়ে কাজটা শেষ করে ফেলুন ওটাও খুব দরকারি। বলে একটু মুচকি হাঁসলেন কৃষ্ণেন্দু বাবু।
আচ্ছা স্যার তাহলে আমি আসি অনুমতি নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় অন্যন্যা। এরপর আবার দীর্ঘ সময় নিজেদের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে যে যার মতো করে। ঘড়িতে তখন প্রায় সাতটা বেজে তিরিশ মিনিট অন্যন্যা নিজের কাজ শেষ করে সব রেডি করে কৃষ্ণেন্দুর কেবিনের দিকে যায়: ” আসবো স্যার” অনুমতি নেয় অন্যন্যা। আরে অন্যন্যা হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে সময় তো হয়ে এলো ঠিক আছে আপনি রেডি হয়ে বেসমেন্টের কাছে যান আমি গাড়িটা পার্কিং থেকে বের করে আসছি। অন্যন্যা একটু হেঁসে উত্তর দেয়: ” স্যার তার আগে আপনার কাজটা একটু দেখে নিন ওটা কমপ্লিট করে দিয়েছি। কৃষ্ণেন্দু ভীষণ উচ্ছসিত হয়ে বলে: গ্রেট আমি তো জানি কাকে কোনটা কাজটা দিলে ঠিকঠাক হতে পারে। আর আপনাকে যে কোনো কাজ দেওয়া যায় অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। স্যার এই ভাবে ধন্যবাদ দিয়ে লজ্জা দেবেন না এটা আমার কাজ আমি আমার কাজটা করেছি শুধু উত্তর দেয় অন্যন্যা। আপনি প্লিজ একটু দেখে নিন কোথাও কোনো ভুল আছে কিনা? কৃষ্ণেন্দু খুব ভালো করে সব দেখে নিয়ে বলেন কোথাও কোনো সমস্যা নেই ওয়েলডান অন্যন্যা, ওকে এবার তুমি যাও নাহলে আমাদের দেরী হয়ে যাবে আমি এখুনি আসছি।
এরপর অন্যন্যা আর কৃষ্ণেন্দু দুজনে রওনা হয়ে যায়। রাস্তায় যেতে যেতে অন্যন্যা বাড়িতে ফোন করে জানায় যে তার অফিসে অনেক কাজ এসে গেছে ফিরতে দেরী হবে কেউ যেনো চিন্তা না করে অফিসের গাড়ি ওকে পৌঁছে দেবে। এরপর ওরা দুজনে পৌঁছে যায় নিজেদের গন্তব্য স্থলে।