সত্য ঘটনা বাঘের ছদ্মবেশে
ভুতুড়ে কিনা জানি না তবে সময়ে হাসি আসেনা তা সে যতই মজাদার হোক। অফিস ছুটি এ্যানুয়াল লিভ কিছু করার নেই, অনেকদিন। থেকে মামাতো বোন টুটু বলছে ছোড়দি গরীব বোনের বাড়ি গ্রামে বেড়িয়ে যা। দেখ কেমন করে আমরা থাকি। যাই হোক পুরুলিয়া স্টেশনে নেমে দেখি এক পল্টন দাঁড়িয়ে আছে, পাতা ফুল দিয়ে ফুলের তোড়া নিজেরা তৈরী করে এনেছে। চোখে জল এসে গেল। টোটো করে নিয়ে গেল মিলিটারি স্কুলের উল্টোদিকে গ্রামে।
ভালোই লাগলো অতি যত্ন পেয়ে। আমার আর এক বোন ও থাকে বুবু, একটু অবস্থাপন্ন, গোরু মোষ জমি পুকুর সব আছে। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা হলো। রাত হলেই গা ছমছম কারন তখন পর্যন্ত আলো আসেনি।
এখনকার কথা আলাদা, এখন সব সুব্যবস্থা।উল্টোদিকে বাউড়ি বাগদিদের মাটির বাড়ি। কি সুন্দর দেয়ালচিত্র, নিকানো ঘর দোর, সুযোগ বুঝে ঢুকে গেছি, ছেলেরা বাড়ি নেই বাচ্চা ও বয়স্ক দাদু দিদা যারা তারা ছিলেন। বাড়ির বউরা কাজে। অনেক গল্প করলাম, চা বিস্কুট খেলাম, গুগলি শামুকের চচ্চড়ি দিল, অপূর্ব তার স্বাদ, এদিকে বোনের ছেলে মেয়ে সারা গ্রাম খুঁজে বেড়াচ্ছে, সবার বাড়ি খোঁজ নিচ্ছে মাসি কোথায় গেল। শুধু এই কটা বাড়ি খোঁজে নি কারন এদের এখানে আসা বারন।
হেলতে দুলতে উল্টোদিকে বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখি মামীমা ছাড়া কেউ বাড়ি নেই, সবাই খুঁজতে গেছে, শুধু বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেনা বোলে মামীমা শুয়ে। তুই কোথায় ছিলি, সকলে তোকে খুঁজে মরছে, আমি বললাম কেন, তোমাদের উল্টোদিকের বাগদীদের বাড়ি । ওরে চুপ চুপ কেউ যেন শুনতে না পায়, দূর ছাড়ো আমি অনেক কিছু খেলাম, কি পরিষ্কার ওরা,
আগে স্নান করে নে, চলে গেলাম স্নান করতে, আমার জন্য একটা জায়গা বড় বড় বিছানার চাদর দিয়ে ঘিরে ঘর বানিয়ে দিয়েছে বাথরুম বা স্নানের ঘরের সাথে, অস্থায়ী কমোড বানিয়ে, মাসির নাহলে কষ্ট হবে। যাক ওদের ব্যবস্থায় আমার কোনো অসুবিধে হয় নি- “পু” করে প্লাস্টিক নোংরা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। এই সংবাদ জানানোর উদ্দেশ্য ক্রমশঃ প্রকাশ্য।
সবাই বাড়ি ফিরে খুব বকাবকি করলো। কোথায় গেছিলি জিজ্ঞেস করছে, বুদ্ধি করে বললাম রেললাইন ধরে একটু ঘুরছিলাম। উত্তর কারো মনঃপুত হয়নি। সকলে চারিধারে দেখেছে।
রাতে ঘুমিয়েছি বাথরুম যাবো, কাউকে ডাকিনি একেলা টর্চ নিয়ে অস্থায়ী বাথরুমে গেছি হঠাৎ দেখি দূরে পাঁচিল দু – পেয়ে ডোরাকাটা বাঘ হ্যাংলা চেহারা ঘুরে বেড়ায়। চিৎকার করার সাথে সাথে বাড়ির লোকজন হ্যারিকেন নিয়ে টর্চ নিয়ে হাজির। শুনে বলে এটা তাহলে ডুংরির ভূত। বাঘ সেজে এসেছিল। ডাকাডাকির পরে ব্যাটা জানায় ভয় দেখাতে নয়, মায়ের ইচ্ছা আমি যেন ওনাকে বাঘের নাচ দেখিয়ে আসি। সবে তো রাত দশটা।
তাই পাঁচিলে সবে উঠেছি আর উনি চিৎকার করে উঠলেন। তা তোমরা ওনাকে বাড়িতে থাকতে দাওনি কেন, এই ঘরে কেন, দূর পাগল এই ঘর অন্য কাজের জন্য ও তুই বুঝবি না। সকলে বাঘ ভূতের রহস্য উন্মোচন করে হেসে বাঁচে না। আমার তখন দাঁত কপাটি লেগে আছে। ওরা বহুরূপী সেজে ভূত সেজে খেলা দেখায়। সকাল থেকে বেরিয়ে পড়ে, মায়ের খুব ভালো লেগেছে ওনাকে ডাট নেই আমাদের বাড়িতে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে তারিফ করেছেন। সকলের মুখ কালো, মাসির অন্তর্ধানের রহস্য উন্মোচন। শুধু বোনের স্কুল মাস্টার ছেলে হো হো হাসির শব্দে গুমোট কাটলো, গ্রেট হো।