Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সত্য-কবি || Satya Kobi by Kazi Nazrul Islam

সত্য-কবি || Satya Kobi by Kazi Nazrul Islam

অসত্য যত রহিল পড়িয়া, সত্য যে গেল চ’লে
বীরের মতন মরণ-কারারে চরণের তলে দ’লে।
যে-ভোরের তারা অরুণ-রবির উদয়-তোরণ-দোরে
ঘোষিল বিজয়-কিরণ-শঙ্খ-আবার প্রথম ভোরে,
রবির ললাট চুম্বিল যার প্রথম রশ্মি-টীকা,
বাদলের বায়ে নিভে গেল হায় দীপ্ত তাহারি শিখা!
মধ্য গগনে স্তব্ধ নিশীথ, বিশ্ব চেতন-হারা,
নিবিড় তিমির, আকাশ ভাঙিয়া ঝরিছে আকুল-ধারা
গ্রহ শশী তারা কেউ জেগে নাই, নিভে গেছে সব বাতি,
হাঁক দিয়া ফেরে ঝড়- তুফানের উতরোল মাতামাতি!

হেন দুর্দিনে বেদনা-শিখার বিজলি-প্রদীপ জ্বেলে
কাহারে খুঁজিতে কে তুমি নিশীথ-গগন-আঙনে এলে?
বারে বারে তব দীপ নিভে যায়, জ্বালো তুমি বারে বারে,
কাঁদন তোমার সে যেন বিশ্বপিতারে চাবুক মারে!
কি ধন খুঁজিছ? কে তুমি সুনীল মেঘ-অবগন্ঠিতা?
তুমি কি গো সেই সবুজ শিখার কবির দীপাম্বীতা?
কি নেবে গো আর? ঐ নিয়ে যাও চিতার দু-মুঠো ছাই!
ডাক দিয়ো না ক’, মূর্ছিতা মাতা ধুলায় পড়িয়া আছে,
ডাক দিয়ো না ক’, শূন্য এ ঘর, নাই গো সে আর নাই,
গঙ্গা-সলিলে ভাসিয়া গিয়াছে তাহার চিতার ছাই!
আসিলে তড়িৎ-তাঞ্জামে কে গো নভোতলে তুমি সতী?
সত্য-কবির সত্য জননী ছন্দ-সরত্বতী?
ঝলসিয়া গেছে দু’চোখ মা তার তোরে নিশিদিন ডাকি’,
বিদায়ের দিনে কন্ঠের তার গানটি গিয়াছে রাখি’
সাত কোটি এই ভগ্ন কন্ঠে; অবশেষে অভিমানী
ভর-দুপুরেই খেলা ফেলে গেল কাঁদায়ে নিখিল প্রাণী!
ডাকিছ কাহারে আকাশ-পানে ও ব্যাকুল দু’হাত তুলে?
কোল মিলেছে মা, শ্মশান-চিতায় ঐ ভাগীরথী-কূলে!

ভোরের তারা এ ভাবিয়া পথিক শুধায় সাঁঝের তারায়,
কাল যে আছিল মধ্য গগনে আজি সে কোথায় হারায়?
সাঁঝের তারা সে দিগন্তের কোলে ম্লান চোখে চায়,
অস্ত-তোরণ-পার সে দেখায় কিরণের ইশারায়।
মেঘ-তাঞ্জাম চলে কার আর যায় কেঁদে যায় দেয়া,
পরপার-পারাপারে বাঁধা কার কেতকী-পাতার খেয়া?
হুতাশিয়া ফেরে পূরবীর বায়ু হরিৎ-হুরীর দেশে
জর্দা-পরীর কনক-কেশর কদম্ব-বন-শেষে!
প্রলাপ প্রলাপ প্রলাপ করি সে আসিবে না আর ফিরে,
ক্রন্দন শুধু কাঁদিয়া ফিরিবে গঙ্গার তীরে তীরে!
‘তুলির লিখন’ লেখা যে এখনো অরুণ-রক্ত-রাগে,
ফুল্ল হাসিছে ‘ফুলের ফসল’ শ্যামার সবজি-বাগে,
আজিও ‘তীর্থরেণু ও সলিলে’ ‘মণি-মঞ্জুষা’ ভরা,
‘বেণু-বীণা’ আর ‘কুহু-কেকা’-রবে আজো শিহরায় ধরা,
জ্বলিয়া উঠিল ‘ অভ্র-আবির’ ফাগুয়ায় ‘হোম শিখা’,-
বহ্নি-বাসরে টিট্‌কারি দিয়ে হাসিল ‘হোমন্তিকা’-
এত সব যার প্রাণ-উৎসব সেই আজ শুধু নাই,
সত্য-প্রাণ সে রহিল অমর,মায়া যাহা হ’ল ছাই!
ভুল যাহা ছিল ভেঙে গেল মহাশূন্যে মিলালো ফাঁকা,
সৃজন-দিনের সত্য যে, সে-ই রয়ে গেল চির-আঁকা!

উন্নতশির কালজয়ী মহাকাল হ’য়ে জোড়পাণি
স্কন্ধে বিজয়-পতাকা তাহারি ফিরিবে আদেশ মানি!
আপনারে সে যে ব্যাপিয়া রেখেছে আপন সৃষ্টি-মাঝে,
খেয়ালী বিধির ডাক এল তাই চ’লে গেল আন্‌-কাজে।
ওগো যুগে যুগে কবি, ও-মরণে মরেনি তোমার প্রাণ,
কবির কন্ঠে প্রকাশ সত্য-সুন্দর ভগবান।
ধরায় যে বাণী ধরা নাহি দিল, যে-গান রহিল বাকী
আবার আসিবে পূর্ণ করিতে, সত্য সে নহে ফাঁকি!
সব বুঝি ওগো, হারা-ভীতু মোরা তবু ভাবি শুধু ভাবি,
হয়ত যা গেল চিরকাল তরে হারানু তাহার দাবি।

তাই ভাবি,আজ যে শ্যামার শিস খঞ্জন-নর্তন
থেমে গেল, তাহা মাতাইবে পুনৎ কোন্‌ নন্দন-বন!
চোখে জল আসে, হে কবি-পাবক, হেন অসময়ে গেলে
যখন এ-দেশে তোমারি মতন দরকার শত ছেলে।
আষাঢ়-রবির তেজোপ্রদীপ্ত তুমি ধূমকেতু-জ্বালা,
শিরে মণি-হার, কন্ঠে ত্রিশিরা ফণি-মনসার মালা,
তড়িৎ-চাবুক করে ধরি’ তুমি আসিলে হে নির্ভীক,
মরণ-শয়নে চমকি’ চাহিল বাঙালী নির্নিমিখ।
বাঁশীতে তোমার বিষাণ-মন্দ্র রণরণি/ ওঠে জয়
মানুষের জয়, বিশ্বে দেবতা দৈত্য সে বড় নয়!

করোনি বরণ দাসত্ব তুমি আত্ম-অসম্মান,
নোয়ায়নি মাথা, চির জাগ্রত ধ্রুব তব ভগবান,
সত্য তোমার পর-পদানত হয়নি ক’ কভু, তাই
বলদর্পীর দন্ড তোমায় স্পর্শিতে পারে নাই!
যশ-লোভী এই অন্ধ ভন্ড সজ্ঞান ভীরু-দলে
তুমিই একাকী রণ-দুন্দুভি বাজালে গভীর রোলে।
মেকীর বাজারে আমরণ তুমি র’য়ে গেলে কবি খাঁটি,
মাটির এ-দেহ মাটি হ’ল, তব সত্য হ’ল না মাটি।
আঘাত না খেলে জাগে না যে-দেশ, ছিলে সে-দেশের চালক,
বাণীর আসরে তুমি একা ছিলে তূর্য-বাদক বালক।

কে দিবে আঘাত? কে জাগাবে দেশ? কই সে সত্যপ্রাণ?
আপনারে হেলা করি’ করি মোরা ভগবানে অপমান।
বাঁশী ও বিষান নিয়ে গেছ, আছে ছেঁড়া ঢোল ভাঙা কাঁসি,
লোক-দেখানো এ আঁখির সলিলে লুকানো রয়েছে হাসি।
যশের মানের ছিলে না কাঙাল, শেখোনি খাতির-দারী,
উচ্চকে তুমি তুচ্ছ করোনি, হওনি রাজার দ্বারী!
অত্যাচারকে বলনি ক’ দয়া, ব’লেছ অত্যাচার,
গড় করোনি ক’ নিগড়ের পায়, ভয়েতে মানোনি হার।
অচল অটল অগ্নিগর্ভ আগ্নেয়গিরি তুমি
উরিয়া ধন্য ক’রেছিলে এই ভীরুর জন্মভূমি।
হে মহা-মৌনী, মরণেও তুমি মৌন মাধুরী পি’য়া
নিয়েছ বিদায়, যাওনি মোদের ছল-করা গীতি নিয়া!
তোমার প্রয়াণে উঠিল না কবি দেশে কল-কল্লোল,
সুন্দর! শুধু জুড়িয়া বসিলে মাতা সারদার কাল।
স্বর্গে বাদল মাদল বাজিল, বিজলী উঠিল মাতি’,
দেব-কুমারীরা হানিল বৃষ্টি-প্রসূন সারাটি রাতি।
কেহ নাহি জাগি’, অর্গল-দেওয়া সকল কুটীর-দ্বারে
পুত্রহারার ক্রন্দন শুধু খুঁজিয়া ফিরিছে কারে!

নিশীথ-শ্মশানে অভাগিনী এক শ্বেত-বাস পরিহিতা,
ভাবিছে তাহারি সিঁদুর মুছিয়া কে জ্বালালো ঐ চিতা!
ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দু’টি নারীস পানে?
জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে যদি ওরা অভিশাপ হানে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress