Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সংসার || Kajal Mukherjee

সংসার || Kajal Mukherjee

বিয়ের পর দুচোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে আকাশের সাথে শ্বশুর বাড়িতে এল আশা।

নতুন বউ হয়ে এসেছে, আকাশের বাড়িতে। আশা আর আকাশ পরস্পরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।

বিয়ের পরে প্রতিটি মেয়ের যেমন স্বপ্ন থাকে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে ,স্বামীকে নিয়ে ,নতুন সংসার করা নিয়ে,সেরকমই অনেক স্বপ্ন নিয়ে এসেছে আশা।

কিন্তু বৌভাতের কয়েকটা দিন পর থেকেই শুরু হয়ে গেল আসার স্বপ্নভঙ্গ । নানা রকম ছোটখাট বিষয় নিয়ে শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে শুরু হয়ে গেল মনোমালিন্য আর ঝগড়াঝাঁটি । প্রথম প্রথম আকাশ তাকে সমর্থন করলেও কয়েক দিন পরেই আকাশও মায়ের পক্ষ নিয়ে আশার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে দিল। স্বামী-স্ত্রীর নিত্য ঝগড়াঝাঁটি হতে শুরু করল নানা বিষয় নিয়ে ,সেটা খাবার তৈরি করা নিয়েই হোক ,বাজার করা নিয়েই হোক, ঘরের কাজ করা নিয়েই হোক আর আশার অফিস যাওয়া নিয়েই হোক বা যেকোনো ছোট বড় বিষয় নিয়েই হোক। আশা সরকারি চাকরি করে আর আকাশ একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে ।বিয়ের আগে যদিও আশার সরকারি চাকরি করাটা আকাশের কাছে একটা বলার মত বিষয় ছিল, কিন্তু বিয়ের পরে আশা বুঝতে পারছিল তার চাকরি করাটা শ্বশুরবাড়িতে এবং আকাশের কাছে খুব একটা আকাঙ্ক্ষিত নয় এখন বিভিন্নভাবে পরোক্ষে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আশা যদি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সংসারের কাজে মন দেয় তাহলে ভালো হয় । কিন্তু আশা সে কথায় বিশেষ কান দেয়নি আর সে চাকরি ছাড়বেই বা কেন ,চাকরি করাটা তো তার কাছে একটা সেল্ফ আইডেন্টিটি।

মাস ছয় পরে আশা আর আকাশের মধ্যে ঝগড়া যখন চরমে উঠেছিল ,তখন আশা তার নিজের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে এসেছিল নিজের মায়ের কাছে। মা যখন আশাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ,’কিরে আকাশের সাথে ঝগড়া করেছিস? ‘ মা আশা কে বলল ,’জানিস বিয়ের পরে মেয়েদের মানিয়ে চলতে হয় শ্বশুর বাড়িতে ,বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি তো আসল পরিচয় মেয়েদের , আর তুই আর আকাশ তো ভালবেসে পরস্পরকে চিনে জেনে বিয়ে করেছিস ,তাহলে এখন এত অশান্তি কেন? তোর শাশুড়ি আর আকাশের সাথে মানিয়ে নে। আর আকাশ তো ভালো ছেলে মাঝে মধ্যে একটু আধটু রেগে যায়, কিন্তু সেটা তো তোদেরই সামলাতে হবে, তবেই তো সংসার টিকবে।’ এর পরের দিন আশা খবরের কাগজে একটা খবর দেখে চমকে উঠল, খবরটা ছিল এই রকম, শ্বশুর বাড়িতে ঝগড়া করে বাপের বাড়িতে চলে আসার পরদিন স্বামির আত্মহত্যা,সেই শুনে বাপের বাড়িতে স্ত্রীর আত্মহত্যা। এই খবরটা দেখে আশা সেদিন অফিস না গিয়ে ফোন করলো আকাশকে। আকাশ ফোন ধরে বলল ,’হঠাৎ ফোন করলে কেন ?

আশা বললো ,’কেন আমি কি ফোন করতে পারি না ?
আজ কি অফিসে যাচ্ছ তুমি? ‘
আকাশ বলল কেন, তুমি আজ অফিস যাচ্ছ না ?
আশা বলল,’ না ,আজ আমি অফিস যাচ্ছি না তোমার যদি খুব অসুবিধা না থাকে তাহলে আজকে অফিস না গিয়ে চলো না আগের মতন একটা সিনেমা দেখে আসি।’ আকাশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল , অফিসে তো দুম করে কামাই করা যাবে না ঠিক আছে আমি অফিস যাচ্ছি কিন্তু বসকে বলে একটু আগে বেরিয়ে আসতে পারবো বিকেলের দিকে চলে এসো দুজনে মিলে একসঙ্গে যাব সিনেমায় আর সিনেমা দেখে বাইরে কোন রেস্টুরেন্টে খেয়ে নেব।’ সেদিন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখার পর রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় আশার চোখে জল দেখে আকাশ জিগ্গেস করল ‘আশা , তোমার চোখে জল কেন ?’ আশা বলল,’আকাশ , বাড়িতে আমার ব্যাবহারের জন্য আমি সত্যিই খুব লজ্জিত’।

আকাশ বলল,’আশা, ভুল সকলেরই হয়, আমাদেরও ভুল হয়েছে,বাদ দাও ওসব, এসো আমরা আবার নতুন করে শুরু করি।’ আকাশ আর আশা বাড়ি ফিরে এল একসাথে। এরপর থেকে আশার ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন দেখা গেল, সে এখন আর কথায় কথায় তর্ক করে না,আকাশের সাথে বা তার শাশুড়ি মায়ের সাথে। আশা আর আকাশ এখন সংসারের কাজকর্ম দুজনে একসাথে করে , বিকেলে যে আগে অফিস থেকে ফেরে ,সে আগে চা , জলখাবার করে,আর অন্য কাজ শুরু করে ,অন্যজন পরে এসে কাজে যোগ দেয়। শাশুড়িমা সকালের রান্নার দিকটা দেখেন , কারণ তখন দুজনেরই অফিস যাওয়ার তাড়া থাকে।

এখন আর আশার চাকরি ছাড়ার কথা কেউ ভুলেও বলে না , বরং তাকে বল অফিসের ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিতে,যাতে আরও উঁচু পদে প্রোমোশনের সুযোগ পায়। শাশুড়ি মাকে আবার তার গানের রেওয়াজ করার জন্য আশা অনেক উৎসাহ দেয় , মূলত তারই উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে তিনি আবার তাঁর পুরনো গানের খাতাগুলো বার করে রোজ সন্ধ্যায় হারমোনিয়াম নিয়ে বসেন। আশার শাশুড়িমা যখন সন্ধ্যা বেলায় রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে ওঠেন,

‘আমার মতন সুখী কে আছে, আয় সখী, আয় আমার কাছে,
সুখী হৃদয়ের সুখের গান শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ’

তখন আশার কি যে ভালো লাগে ,সেও শাশুড়ি মায়ের সাথে গলা মেলানোর চেষ্টা করে।

আশা আর আকাশকে দেখে তাই ওদের পরিচিত অনেকেই এখন বলে,

সংসার সুখের হয় স্বামী -স্ত্রীর গুণে, ইগো বাদ দিয়ে,যদি একের কথা অন্যে শোনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress