সংগ্রামের হাতিয়ার
চারপাশটা অক্টোপাসের মতন জড়িয়ে আছে দারিদ্রতা।এই গরীবিআনায় নাভিশ্বাস উঠছে অমিতেশ,সাহানা আর তাদের একমাত্র কন্যা চিত্রালির।অনেক ছোটবেলা থেকেই সংসারটাকে মনে হয়েছে অভাব-দুর্গ চিত্রালির।কিন্তু বাবা-মার সেই দৈত্যের সাথে দাঁতে দাঁত চেপে লডাকু মনোভাবের সাক্ষী ছিল সে।
অমিতেশ বাজারে কাঁচা আনাজপাতি বিক্রি করেছে।আর সংসার সামলে সাহানা সেলাইয়ের কাজ করে অর্থের যোগানের ব্যাবস্থা করেছে।অমলিন মুখে তাদের সংগ্রাম দেখে চিত্রালি মনে তিল তিল করে অনুপ্রেরণা লাভ করেছে।পয়সার অভাবে এক বছর নষ্ট হলেও মেয়েটার পড়াশোনা থামে না।তার মা-বাবাও আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে যাতে মেয়েটা ভবিষ্যতে ভালো করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
একের পর এক শ্রেণী স্কুলে পার করে অবশেষে মাধ্যমিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়।জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বেশ সাফল্যের সাথে পেরিয়ে যায়।অমিতেশ আর সাহানা উল্লাসের সাগরে ভাসে।এরপর উচ্চ-মাধ্যমিকের হাতছানি চিত্রালি অনুভব করে।কিন্তু মা-বাবার আর্শীবাদ থেকে সে কোনদিন বঞ্চিত হয় নি।মা-বাবা তার কাছে ভগবান।তাদের আঁকড়ে সে দ্বিতীয় বড় পরীক্ষাতে সাফল্যলাভ করে।
কিন্তু মেয়েকে কলেজে পড়াবার ক্ষমতা অমিতেশ-সাহানার একদম ছিল না। চিত্রালিও খানিকটা মুষড়ে পড়ে।কিন্তু সব দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে সে নিজেই রোজগারের রিষয়ে ভাবনা-চিন্তা করে। কি করবে?কি করবে?এমন ভাবনার ভেতর প্রতিবেশী সুদিনদা তাকে প্রস্তাব দিল, আমি তোকে একটা টোটো কিনে দিতে চাই।
প্রস্তাবটা শুনে চিত্রালি ভাবে, মেয়েরা কি টোটো চালবে? তার মা-বাবারও একমত।
কিন্তু মনকে দৃঢ় করে মনোবলের ওপর ভিত্তি করে চিত্রালি জানায়, সুদিনদার প্রস্তাবে সে রাজী।
সুদিনদা বলে, টোটোর মূল্য কিস্তিতে কিস্তিতে শোধ করে দিস।
এরপর জীবনের নতুন সংগ্রামে টোটো-চালনা শিখে নেয় চিত্রালি।
টোটো পেয়ে সে এখন টোটো-চালিকা। রোজগারের একটা অংশ পড়ার জন্য রেখে বাকীটা সুদিনদাকে দেয়।রাস্তায় লোক আঙুল তুলে দেখায়, ঐ যে টোটোওয়ালী। চিত্রালি ওসব গায়ে না মেখেতার লক্ষ্যে অবিচল থাকে।