সংকল্প
বাপ্পা প্রস্তাবটা তুই সত্যি দারুন দিয়েছিস বলে খুব খুশি পল্লব।আড্ডা-ঠেককে অনেকে বলে খারাপ, তবু বন্ধুদের মধ্যে কত সুন্দর ভাব বিনিময়ে আলোচনার বিষয় উত্থাপন হয় সেটা সত্যিই দারুন।
উৎসাহিত হয়ে বাপ্পা বলল, হম রে, আসলে দেখ প্রতিবছর পূজায় তো আমরা অনেক টাকার শপিং করি ।এবার যদি প্রত্যেকে অন্তত দুজন করে ভিখারিকে এই পূজার চারদিন ভিক্ষা করতে না দিয়ে ওদের চিন্তা মুক্ত করি বেশ হয়।মাটির ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো সে। “মানে আমি বলতে চাইছি অভাবী মানুষগুলোর জন্য উৎসবের ওই মূল চার দিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবো ।আমরা দায়িত্ব দেবো পাড়ার কোনো হোটেলকে ওনাদের ভালোমন্দ খাবার পরিবেশনে। খাওয়ানোর খরচা বিরাট কিছু হবে না যেটা আমরা নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে সামলাবো।তাহলে এ সামান্য উদ্যোগই কিন্তু আমাদের মনে বিরাট শান্তি দেবে তাই না বল..”
টুবলু বললো, বাহ দারুন আইডিয়া তো! এতে কিন্তু বিরাট খরচাও হবে না ।ওই ধর প্রতিদিন দুজনের দুবেলা করে খেতে দুশো টাকা।চারদিনে বিল হবে মাত্র আটশো যা আমাদের একটা জিন্স প্যান্ট কেনার দাম মাত্র। অর্ক খুশি হয়ে বলল আমি রাজি, আমি হাজার টাকা দেবো।
পল্টু আরো উৎসাহিত হয়ে বলল ধর আমরা ছয়জনই আরো দুশো করে দিলাম ওই পার হেড এক হাজার তাহলে আরো একটা কাজ করতে পারি।সবাই আগ্রহ নিয়ে শোনার অপেক্ষায় পল্টু আরো কি বলে!’ ওই বাড়তি যে টাকা উঠবে ওদের টোটো করে দিলে ওরা শহরের ঠাকুর মণ্ডপ গুলোও ঘুরে ফিরে দেখে নিতে পারবে।খুব খারাপ বললাম কি, আসলে সবাই তো অপেক্ষা করে এই পূজার কটা দিন একটু আনন্দ করবে বলে।
বাপ্পা বলল, খারাপ কিছুই না, তুই তো আরো সুন্দর প্লান দিলি, ভাবতেই পারছি না কি দারুন ব্যাপার তাই না! সত্যিই তো ওরাও মানুষ, ওদের শখ আহ্লাদ সব কিছু যখন বিসর্জন আমরা এটুকুতো করতেই পারি!
ঠিক তাই, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যেই ১০-১২ জন ভিখারিকে এতখানি আনন্দ দান করতে পারবো।ওদের নির্মল মুখের হাসিই আমাদের আরো ভালো কাজ করার সংকল্পের রসদ হবে।
প্রত্যেকে আলাপ আলোচনা শেষে সহমত পোষণ করে খুব খুশি হয়ে উঠলো।কিছুক্ষণ পরে ওই হরিদার চায়ের দোকানে সত্যজিৎ দা হাজির।অর্ক কে হেঁকে বলল কি রে অর্ক কেমন আছিস, পড়াশোনা চলছে তো! বরাবর নিত্য নতুন ভাবনায় সমাজের অসহায় ব্যক্তিদের জন্য নানা কিছু কাজে যুক্ত থাকা সত্যজিৎ দাকে দেখে পল্টু, টুবলুরাও খুশি। ও দাদা বলছি আমরা নতুন কিছু ভাবনা নিয়েছি একটু যদি গাইড করো দারুন হয়। সব শুনে সত্যজিৎ দা খুব খুশি হয়ে ওদের পিঠ চাপড়ে দিলো।বলল তোরা এই যে নতুন ভাবে কিছু করতে চলেছিস এই ভালো ভাবনাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাস কেমন, থামিস না যেন।
তুমি একটু উৎসাহ দিও দাদা যদি আমাদের সামর্থ্য মতো সত্যি ভালো কিছু হয়।সামর্থ্য কি বলছিস রে, তোরাই পারবি , এই ধর নিজেদের বাড়ি থেকে পুরানো কিন্তু ছেঁড়া নয় এমন ব্যবহার যোগ্য শাড়ি, জামা কাপড়, জুতো যা কিছু অতিরিক্ত আছে সেগুলো ভালো করে গুছিয়ে পরিষ্কার করে রাখ অন্যদেরও উৎসাহিত কর।তারপর পূজার দিন গুলো ওই যে ভিখারিদের জন্য কিছু করার কথা ভাবছিস ওদের বা কোনো বস্তি এলাকায় গরীব দুঃখী বাচ্চা বড়দের দান কর। সত্যজিৎ দা যখন উপদেশ দিচ্ছিলেন ওরা সব্বাই গোল হয়ে শুনছিল এ যেন কেবল এডভাইস নয় একপ্রকার এনার্জি টনিক ভালো কিছু করার সত্যিকারের পথ।