Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu » Page 21

শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu

বাইরে গাড়ি দাঁড়াবার আওয়াজ হল। রূপুকে কি কেউ গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে গেল! বন্দনার বুকের ভেতরটা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। যাক তাহলে আর দুশ্চিন্তায় রাত ভোর করতে হবে না। বন্দনা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

অনুপম সোম বলল—‘ঘাবড়াবার কিচ্ছু নেই। আমি দেখছি কি করা যায়।’

বন্দনা বলল—‘ইস্‌স্ আপনি শুধু শুধু কষ্ট করলেন। এইমাত্র ও পাশের বাড়িতে ফোন করেছিল, খবর পেয়েছি।’

—‘তাই নাকি? দেখছেন তো আপনারা অযথা ভাবেন!’ অনুপমের গলায় স্বস্তি।

—‘আপনার মুখ কিন্তু এখনও খুব শুকনো দেখাচ্ছে। কোথায় গেছে ও?’ ওপরে এসে বসতে বসতে বলল অনুপম।

বন্দনা বলল।

—‘তার মানে ও মিডনাইটের আগে ফিরছে না, নিশ্চয় বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে। ততক্ষণ অব্দি আপনি কি হত্যে দিয়ে পড়ে থাকবেন নাকি?’

বন্দনা হেসে বলল—‘অত কাতর দেখাচ্ছে আমাকে?’

—‘আরও বেশি দেখাচ্ছে। যদিও মুখে হাসি টানার চেষ্টা করছেন। আপনার প্রয়াস প্রশংসনীয়। কিন্তু সফল হচ্ছেন না।’

অনুপম নিচু হয়ে জুতোর ফিতে খুলতে লাগল। জুতো মোজা খুলে চেয়ারের তলায় ঢুকিয়ে সে টান-টান হয়ে উঠে দাঁড়াল।

বলল—‘এমন অসময়ে ডাকলেন যে সবে রান্নাটা আরম্ভ করেছিলাম, চলে আসতে হল।’

বন্দনা খুব লজ্জিত হয়ে বলল—‘ছি, ছি, রূপের ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি আপনাকে খবরটা দিয়ে দিতুম, আপনার এরকম হয়রানি হত না।’

অনুপম বলল—‘আপনার আক্কেল বলে কিচ্ছু নেই। কাজেই আমার তো হয়রানি হবেই। অফিস থেকে আজ ফাইল বয়ে আনতে হয়েছে একগাদা। প্রচুর কাজ। লিট্‌র‍্যালি নাওয়া-খাওয়ার সময় ছিল না। এরই মধ্যে বিচারবিবেচনাহীন আপনার ফোন।’ বলে অনুপম মিটিমিটি হাসতে লাগল।

বন্দনা বলল—‘যতই ঠাট্টা করুন, কথাগুলো সত্যিই বলছেন। আপনার ভীষণ খিদে পেয়েছে আমি বুঝতে পারছি। দাঁড়ান দেখি কি আছে, যা আছে তাই খেতে হবে কিন্তু।’

সোম বলল—‘যেমন কপাল!’

রান্নাঘরে মিটসেফে জলে বসানো আছে রাত্রের খাবার তার আর রূপের মতো। কৌটোতে রুটি। বার করে খুব অপ্রস্তুতে পড়ে গেল বন্দনা। সকালে অন্ন তেলাপিয়া মাছ এনেছিল তাই দিয়ে কি একটা তরকারি রেঁধে রেখেছে। তাদের মা আর ছেলের মতো। তাদের এই দিয়েই খাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু এ কি বাইরের লোককে দেওয়া যায়! বিশেষত অনুপম সোমের মতো সাহেব লোককে, যে স্কাইরুমে ডিনার সারে!

পেছনে ফিরতে সোমের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লেগে গেল বন্দনার।

—‘কি দেখছেন?’ মজার গলায় বলল সোম—‘অতিথিকে এসব দেওয়া যায় কি না?’ বন্দনা খুব চমকে গিয়েছিল। অনুপম সোমের গতি খুব দ্রুত। তার সঙ্গে তাল রাখা শক্ত। ভাবলেশহীন প্রোফেশন্যাল মুখে ঘোষাল সাহেবের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাওয়া থেকে লাফিয়ে স্কাইরুমের আলাপ, সেখান থেকে আরেক লাফে নন্দন রোডের বাড়ি, রূপের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা যে প্রায়ই স্কুল ফেরত ওকে নিয়ে এখানে সেখানে খাওয়াচ্ছে। বাড়িতেও আসে প্রায়ই। রূপকে বলে—‘মাস্টার তুমি পড়াশোনা করো, ততক্ষণ তোমার মায়ের সঙ্গে একটু গল্প করি।’ আর আজ একটা বড় লাফে রান্নাঘর।

বন্দনা আস্তে আস্তে বলল—‘সত্যি তাই ভাবছিলুম। দেখুন তো, এসব কি আপনি খেতে পারবেন? আমি বরং একটু লুচি-টুচি করি।’

সোম বলল—‘কি মাছ? তেলাপিয়া? ওরে বাবা ওই আমেরিকান কই খেলে নির্ঘাত আমার অ্যালার্জি। দেখি তো আপনার ভাঁড়ারে আর কি আছে?’

বন্দনা বলল—‘ঠাট্টা করছেন? আপনি বাইরে গিয়ে বসুন, আমি দেখি কি করতে পারি।’

সোম বলল—‘উঃ কি ফাস্‌ করতে পারেন আপনারা মেয়েরা। শুনুন এসব আমি খেতে পারব না তা নয়, আমি জেলিফিশ পর্যন্ত খেতে পারি, অক্টোপাস-ভাজা কত খেয়েছি, ওটা কোনও কথা নয়, কিন্তু একটা প্রস্তাব করছি, সেটা যদি রাখেন, তো খাব, নইলে আজ আমার নো মীল ডে।’

—‘কি প্রস্তাব? আপনি আচ্ছা ছেলেমানুষ তো?’

অনুপমের চোখ খুশিতে চকচক করছে। বলল—‘আমার গাড়িতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার আছে। আপনি যখন ফোন করলেন, তখন আসলে আমি রাঁধছিলাম। কি মনে হল যা রেঁধেছি সব পুরে নিয়ে এসেছি। আপনি যদি খান তো আপনার তেলাপিয়া আর আমার সুইটসাওয়ার প্রন আমরা দুজনেই খাব। নানরুটি নিয়ে এসেছি কোয়ালিটি থেকে।’

বন্দনা বলল—‘প্লীজ অনুপমবাবু আমার ছেলে না খেয়ে আছে। আমি কি করে …’

—‘দেখুন মশাই আপনার ছেলে না খেয়ে নেই, শ্মশানযাত্রা আমরাও করেছি, ওরা খুব ভালো করে খেয়ে নিয়ে তবে বেরোবে। আপনার কোনও ভয় নেই। তাছাড়া অভিরূপের ভাগ আমরা রেখে দেব। আমি কিরকম রাঁধুনি একটু চেখেই দেখুন!’

খেতে খেতে বন্দনা বলল—‘এ কক্ষনো আপনি করেননি অনুপমবাবু।’

—‘কেন?’

—‘একেবারে রেস্তোরাঁর মতো হয়েছে যে!’

—‘আরে বাবা আমার কাছে চাইনীজ কুকবুক আছে। এই সব রান্নাগুলো দেশী ঘন্ট চচ্চড়ির চেয়ে অনেক অনেক সোজা। আমি এগুলোই করি। হগ মার্কেট থেকে ছাড়ানো চিংড়ি প্যাকেটে করে নিয়ে এলাম। চটপট সস্ দিয়ে তৈরি হয়ে গেল রান্না। দেখুন বন্দনা ভট্টাচার্য, একবছর হতে চলল আমার সঙ্গে মিশছেন, কিন্তু এখনও বোঝেননি আমি একজন কি দারুণ এলিজিব্‌ল ব্যাচেলর। এমনকি রেঁধে পর্যন্ত অর্ধাঙ্গিনীকে সাহায্য করতে পারি।’

বন্দনা হেসে বলল—‘কে বললে বুঝিনি! আমার হাতে পাত্রী থাকলে আগেই আপনার দুঃখ ঘোচাবার চেষ্টা করতুম। দুঃখের বিষয় হাতে তেমন এলিজিব্‌ল কেউ নেই।’

সোম বলল—‘সত্যি নেই? ঠাট্টা করছেন?’

বন্দনার খাওয়া হয়ে গিয়েছিল, সোমেরও প্রায় শেষ। বন্দনা আস্তে আস্তে প্লেট তুলতে তুলতে বলল—‘সত্যি নেই। ঘটকালি কখনও করিওনি। তবে আপনার যদি খুব সঙ্গিন অবস্থা হয় তো খোঁজ করতে পারি।’

সোম বলল—‘আমার অবস্থা খুব সঙ্গিন, ঠিকই ধরেছেন। আচ্ছা ক্যামাক স্ট্রিটে নিজস্ব ফ্ল্যাট, কোম্পানি দিয়েছে। আপনি একদিনও গেলেন না। কিন্তু বাসস্থানটা আমার নেহাত খারাপ নয়। গাড়িটা আমার নিজস্ব, কোম্পানি তেলের খরচ দেয়। চেতলার বাড়ি দশ কাঠার ওপর। তাছাড়াও তারকেশ্বরের দিকে জমি-জমা আছে। এ সব কিছুরই হাফ আমার। ইকনমিক্স নিয়ে এম এ পাস করেছি। ফার্স্টক্লাসটা মিস করেছিলাম জনৈক প্রোফেসরের কৃপায়। যাই হোক, লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স ঘুরে এসেছি। ম্যানেজমেন্টের কিছু বিদেশী ট্রেনিংও আছে। বয়স পঁয়ত্রিশ বছর, সাত মাস, তিন দিন, সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বলুন খারাপ?’

—‘কে বলেছে খারাপ?’

—‘তবু তো আপনার পছন্দ হচ্ছে না।’

—‘বলছি তো এবার দেখব।’

—‘মিসেস ভট্টাচার্য, আপনি আমার সঙ্গে আর কতক্ষণ ঠাট্টা করবেন?’ হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে সোম বলল।

—‘ঠাট্টার কি হল?’

—‘আমি তখন থেকে আপনার কাছে একটা ভদ্র বিধিসম্মত স্টাইলে বিবাহের প্রস্তাব রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর আপনি ক্রমাগত সেটা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।’

বন্দনা আপাদমস্তক চমকে উঠল। মুখ পাংশুবর্ণ। গলা শুকিয়ে গেছে। সে কোনও কথাই বলতে পারল না।

সোম উঠে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এল। বন্দনা তখনও এঁটো হাতে টেবিলের গোছানো বাসনের সামনে বসে আছে।

—‘ও কি আপনি ওরকম পাথরের মতো হয়ে গেলেন কেন?’ সোম আশ্চর্য হয়ে বলল।

বন্দনা নিঃশ্বাস ফেলে বলল—‘আপনি বানিয়ে দিলেন বলে।’

—‘আমি বানিয়ে দিলাম! কেন, আপনি কি আপনার জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে আমাকে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু বলে বিশ্বাস করেননি? নইলে কি বিপদের সময়ে সর্বাগ্রে আমার কথাই আপনার মনে পড়ত?’

—‘নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেছি, অনুপমবাবু। আপনি আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনি এ প্রস্তাব আমাকে দিতে পারেন, আমি স্বপ্নেও আশঙ্কা করিনি। এ কি আপনার তামাশা না নাটক করার প্রবৃত্তি আমি এখনও বুঝে উঠতেই পারছি না।’

—‘সত্যি আশ্চর্য! অথচ বন্দনা, আমি এই একবছর ধরে আপনার যতটা কাছে এগিয়েছি, আমার মনে হয়েছে, আপনিও ততটাই এগিয়েছেন।’

—‘কেন আপনার এ কথা মনে হল জানি না। আমরা মেয়েরা কি কোনও অনাত্মীয় পুরুষমানুষের সঙ্গে সহজভাবে কথা বলতেও পারব না! যাই হোক আমি এসব কথা একেবারেই ভাবিনি। আমি বিবাহিত। বিবাহিতের কাছে বিয়ের প্রস্তাব…’

—‘ছিলেন। বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু এখন নেই।’

—‘এখনও আছি। এখনও আমি অভিমন্যু ভট্টাচার্যের স্ত্রী।’

—‘বন্দনা, প্লীজ ডোন্ট ডিসীভ ইয়োরসেল্‌ফ, ইউ ডোন্ট লিভ লাইক এনিবডিজ উইডো। ইউ আর ফ্রি, অ্যান্ড ফ্রি টু রিম্যারি ফর লাভ।’

—‘আপনি এই সিদ্ধান্তে কি করে এলেন?’

—‘কি আশ্চর্য, এটা তো তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। তোমাকে দেখে অবিবাহিত কুমারী মেয়ে মনে হবে, তোমার অতবড় ছেলে আছে এ কথা পর্যন্ত কেউ বিশ্বাস করবে না। অসম্ভব তোমাকে কারো উইডো ভাবা।’

—‘আপনি আমাকে ক্রমাগত অপমান করে চলেছেন অনুপমবাবু।’

—‘অপমান? কোথায়? কখন?’

‘আপনি তো এটাই বলতে চাইছেন যেহেতু আমি রঙিন শাড়ি পরি, যেহেতু খাওয়া-দাওয়ায় কট্টর বৈধব্য পালন করি না। সেহেতু আমার মৃত স্বামীর প্রতি আমার আর কোনও অনুভূতি থাকতে পারে না। আপনি সোজাসুজিই বলেছেন আমি আপনার দিকে এগিয়েছি। এটা অপমান ছাড়া কি? আপনাকে সহসা তুমি বলবার অধিকারও আমি দিইনি। আপনি কি মনে করেছেন বৈধব্যের কুসংস্কারগুলো পালন করি না বলে, আমি সস্তা হয়ে গেছি, আমার সঙ্গে যা খুশি ব্যবহার করা চলে? সম্পত্তি, ডিগ্রি, চাকরির লোভ দেখিয়ে আমাকে কিনে নেওয়া চলে?’

অনুপম সোমের মুখ দফায় দফায় ফ্যাকাশে হচ্ছে। বন্দনা যত উত্তেজিত, সে তত পাংশু। নিস্তেজ। সে খুব মিনতির সুরে বলল— ‘মিসেস ভট্টাচার্য, আমি আপনাকে অপমান করতে পারি না। পারি না। আপনি এ কথায় এতো আঘাত পাবেন আমি বুঝতে পারিনি। আমি আপনাকে, আমি আপনার… নাঃ…’

‘ঠিক আছে। আপনি দয়া করে এবার চলে যান। আমি আপনার কাছ থেকে আর কোনও কথাই শুনতে চাই না।’

অনুপম বলল, ‘আমি চলে যাচ্ছি নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনি দয়া করে আপনার ধারণাটা ফিরিয়ে নিন। আপনাকে আমি সংসারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহিণী বলে জানি। শ্রদ্ধা করি। আপনার সমস্ত আচার আচরণ, ব্যক্তিত্ব আমাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে, আপনি আমায় ভুল বুঝলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।’

নিচ থেকে প্রবল শব্দে কড়া-নাড়ার আওয়াজে দুজনেরই সম্বিত ফিরে এল। অনুপম ব্যস্ত হয়ে নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিল, রূপ।

অনুপম বলল—‘এসো মাস্টার! দেখ গিয়ে তোমার মা ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন, এখনও বোধহয় কান্নাকাটি করছেন। আমি চলি।’

বন্দনা দালানের ওপর একটা পাথরের পুতুলের মতো দাঁড়িয়েছিল। রূপকে আসতে দেখেই তার চোখ গলতে আরম্ভ করল। রূপ বলল—‘আচ্ছা মা, তুমি কি বলো তো? ফোন করে দিয়েছিলাম তো! আবার কান্নাকাটি করছ কেন?’

বন্দনা বোজা গলায় বলল, ‘রূপু, তুই আমার একমাত্র। অন্যদের অনেক আছে। আমার আর কেউ নেই। অন্য যে শ্মশানে যায় যাক। তুই শ্মশানের সংস্রবে যাবি না। আমার বুক ধড়ফড় করে। তুই আমাকে না জিজ্ঞেস করে কক্ষনো এমন করে যাসনি।’

রূপ অসন্তুষ্ট গলায় বলল— ‘সুবীর, আদিনাথ, জীবেশ, তপন সব্বাই এসে ডাকল। মিঃ মল্লিক হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছেন, আমি যাব না? মাস্টারমশাইয়ের আত্মীয়স্বজন কেউ এখানে নেই। আচ্ছা মা, তুমি এরকম আনরিজিনেবল হলে কি করে চলবে? সব্বাই এখনও কেওড়াতলায় রয়েছে, আমি শেষ পর্যন্ত তোমার কথা ভেবেই এগারোটা বাজছে দেখে ফিরে এলাম। খারাপ লাগল খুব। কিন্তু তোমায় তো জানি। এরকম করো না। ও কি ওরকম কাঁদছ কেন?’

রূপ কাছে এসে দাঁড়াল অপরাধীর মতো। তার মুখে এখনও অসন্তোষ।

বন্দনা চোখের জল মুছে বলল— ‘তুই খাবি তো? শোন আগে জামা-কাপড়গুলো ছেড়ে আয়, বালতিতে ভিজিয়ে রাখ। স্নান কর, আমি একটু গরমজল করে দিচ্ছি।’

রূপ গোঁজ হয়ে বলল— ‘চান করার কি আছে? ইনফেকশাস ডিজিজ নয় কিছু নয়, স্ট্রোক। আমি জামাকাপড় ছেড়ে নিচ্ছি। খাব না, বন্ধুরা প্রচুর খাইয়ে দিয়েছে। বডি নামিয়ে কতক্ষণ ওয়েট করতে হয় জানো না তো! আমরা তো সব পালা করে গিয়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে এলাম। ওকি! অনুপমকাকুর জুতো মোজা পড়ে রয়েছে যে! কি কাণ্ড। তুমি একেক সময়ে এমন করো না!’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress