Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu » Page 18

শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu

হেমন্ত এদেশে খুবই ক্ষণস্থায়ী। সামান্য কয়েকটা হিমঝরা মেঘালো গা-শিরশিরে দিন। শহরের বুকের ওপর তখন ধোঁয়াশার দৈত্য অথচ বাতাসে গুমোট। মাত্র ক’টা দিন। তারপরেই ঝকঝকে শীত। ঘষা মাজা আকাশ। তকতকে সোনালি হাওয়া। পাতা ঝরে সমস্ত গাছ আস্তে আস্তে কঙ্কালসার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই নিষ্পত্র আঁকাবাঁকা ডালের কি শোভা! রূপ ময়দানে ছবি আঁকতে যায় ছুটির দুপুরে। এই সব গাছের কঙ্কাল এঁকে ফিরে আসে, ঝুলি নামিয়ে বলে—‘মা দেখো, কত রকমের ফর্ম!’ মুগ্ধ হয়ে স্কেচগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে বন্দনা। রিক্ততা, নিঃস্বতার রূপও এমন অপরূপ হতে পারে! প্রত্যেকটি গাছ যেন তার সমস্ত অলঙ্কার আবরণ, তার যা কিছু অতিরিক্ত সব নিঃশেষে খসিয়ে দিয়ে এক আত্মবিশ্বাসী উদাসীনতার বাতাবরণ তৈরি করে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষমাণ। চিরায়ত অপেক্ষা। যাকে সব বলে মনে করা যায় সেই সব, চলে গেলেও কিছু থাকে। কতটা থাকে তার ওপরই কি মানুষের চরিত্র-শক্তির শেষ বিচার!

খুব ভালো ছবি আঁকছে রূপ। যদিও নকল করার ক্ষমতাটা ওর যত বেশি, নিজস্ব সৃষ্টির দিকে ততটা মন নেই। তবু ওর মাস্টারমশাই বলেন ছবি আঁকাই ওর নিজস্ব লাইন। বন্দনার ভীষণ ইচ্ছে ছিল ছেলে ডাক্তার হবে। পৃথিবীতে যদি ভগবানের কাছাকাছি কিছু কল্পনা করা যায় তো সে হল ডাক্তার। প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেয়। শারীরিক ও মানসিক। রূপের পিসি কলিরও খুব ইচ্ছে তাই। রূপ যখন আরেকটু ছোট ছিল, কলি আর বন্দনা ছুটির দুপুরে বসে অনেক জল্পনা-কল্পনা করেছে। দুজনের ছেলেই ডাক্তার হবে। রূপ হবে কার্ডিওলজিস্ট, আর কলির ছেলে হবে জেনারল প্র্যাকটিশনার। সবাই যদি স্পেশ্যালাইজ করে তো আর সব রোগের কি হবে? কিন্তু দেখা গেল রূপের এদিকে ঝোঁক নেই। বলল—‘ইসস, তোমরা তাই ভেবে রেখেছ বুঝি? আমি ডাক্তার হব না মা। ডাক্তারের লাইফ বলে কিছু আছে নাকি? সর্বক্ষণ শুধু অসুখ। অসুখ আর অসুখ।’ তাছাড়া ডাক্তার হতে হলে আগে তো বায়োলজি পড়তে হবে। ব্যাঙ বা আরশুলা কাটার কথা ভাবলেই রূপের গা শিউরোয়

কলি বলল—‘তুই কি তাহলে শিল্পী হবি রূপু? সে যে শুনতে পাই ভীষণ স্ট্রাগলের জীবন! এসপ্লানেডে রেলিং-এ ছবির এগজিবিশন করতে হবে, হল পাবি না। দর্শক পাবি না, ক্রেতা পাবি না।’

রূপ বলে—‘লত্রেক, রেমব্রান্ট এঁদের হিসট্রি জানো? ইমপ্রেশনিজম-এর হিসট্রি জানো! ১৮৭৮ সালে রেনোয়ারের যে ছবি চল্লিশ পঞ্চাশ ফ্রাঁতে বিক্রি হয়েছে ১৯২৮ শে সেই ছবিরই দাম হয়েছে ১২৫,০০০ ডলার। ভাবতে পারো?’

কলি হেসে বলে—‘১৮৭৮ থেকে ১৯২৮ মানে পঞ্চাশ বছর। ওরে বাবা, এরকম যদি হয় তো তোর প্রতিষ্ঠা দেখতে আমার আর বউমণির বেঁচে থাকবার কোনও চান্স নেই রে।’

বন্দনা ওকে দমিয়ে দিতে চায় না। এত ভালো আঁকে ও! কাছাকাছি আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কোথাও কোনরকমের শিল্পী কেউ নেই। ছবি-আঁকা তো দূরের কথা, গান, নাচ, কবিতা লেখা, তাদের দুই পরিবারের মধ্যে কারুর এসব গুণ নেই। তবে কলির কাছে শুনেছে তার সেজ দেওর, সেজদা নাকি বাজনা-পাগল ছিল। দারুণ পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ন বাজাত। রূপু শিল্পী হবে এই কল্পনার মধ্যে বন্দনা রোমাঞ্চ খুঁজে পায়। কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে, শিল্পীকে নিজের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল হতে হলে উপোস করতে হবে। শিল্পীর বেশ কিছু পৈতৃক সম্পত্তি থাকা চাই। রূপের মাস্টারমশাই সুদীপ্ত সরকারের শিল্পী হিসেবে মোটামুটি খ্যাতি আছে। কিন্তু তিনি সরকারি চাকরি করেন। আঁকাটা তাঁর নেশা। এই নেশা তিনিই ধরিয়েছেন রূপকে। ছবি-আঁকার জগতের নানান চমকপ্রদ কাহিনী তিনি যখন রূপকে শোনান, বন্দনাও এসে বসে। এই জগতের সঙ্গে তার কোনও পরিচয় ছিল না। রূপের পড়বার জন্যে তিনি ‘লাস্ট ফর লাইফ’ আর ‘মুল্যাঁ রুজ’ বলে দুটো বই এনে দিয়েছিলেন। রূপের সময় হবার আগেই বই দুটো বন্দনা পড়ে ফেলল। সুদীপ্তবাবুকে ফেরত দিয়ে দিল। বলল—এগুলো পড়লে কিন্তু শিল্পী হবার সম্ভাবনাতেও ভয় হয়, যাই বলুন।’

সুদীপ্ত বললেন—‘কেন, ভালো লাগল না?’

—‘লেখা হিসেবে অপূর্ব লেগেছে। কিন্তু জীবন হিসেবে নয়, আপনি বইগুলো রূপুকে পড়াবেন না। ওর পক্ষে ভারি হয়ে যাবে।’

সুদীপ্ত হেসে বললেন—‘আপনার পক্ষেও খুব ভারি হয়ে গেছে মনে হচ্ছে!’

বন্দনা সংশয়-ভরা চোখে বলে—‘রূপুর জন্যে খুব ভয় পাচ্ছি। এরকম ছন্নছাড়া অসহ্য কষ্টের জীবন নিজের ছেলের জন্যে কোন মা চায় বলুন!’

—‘দিন কাল আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে মিসেস ভট্টাচার্য।’

—‘কি করে পাল্টাবে? এ দেশের লোক কোনদিন ছবি কিনে ঘরে টাঙাবার মতো বড়লোক হবে? একটু ফুল সাজাতেই সব জিভ বেরিয়ে যায়।’

—‘বড়লোকের খুব প্রয়োজন তো নেই, তা যদি বলেন, দেখবার চোখ এবং রুচির প্রয়োজন। সেদিক থেকে আমরা খুব দীন। এটা স্বীকার করতেই হবে। ধনী লোক এ দেশেও কিছু কম নেই। তবে আপনি ভাবছেন কেন, কমার্শিয়াল আর্ট আছে। বড় বড় পাবলিশিং হাউজ আছে।’

—‘তো আপনি সেসব করলেন না কেন?’

—‘আরে আমাকে বাবা অল্প বয়সেই সরকারি চাকরিতে জুতে দিয়েছিলেন। পরে দেখলাম এটা একটা বেশ নিরাপদ ব্যবস্থা। চাকরিটা যেন চাকরিই নয়। ভালোলাগার জিনিস নিয়ে মেতে থাকবার অবসর ও এনার্জি দুটোই থাকে। আসলে আমি চাকরি করতে করতে আঁকাজোঁকার দিকে এগিয়েছি। কিন্তু অভিরূপের মানসিকতা এখনই একটা নির্দিষ্ট বাঁক নিয়েছে ছবি-আঁকার দিকে। ওর মাস্টারমশাই হিসেবে এটাতে ওকে উৎসাহ দেওয়া সাহায্য করা এ আমার কর্তব্য নয়? বলুন! আর কর্তব্যটা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে, ওকে অসুবিধেয় পড়তে আমি দেব না। আপনি একদম ভাববেন না।’ সুদীপ্ত সরকার এমন ভরসা দিয়ে কথাটা বলেন যে বন্দনার ভয়-ভাবনা কমে যায়।

সুদীপ্তবাবু মাঝে মাঝে ছবির প্রদর্শনী করেন। ক্যাথিড্রাল রোডে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর আলাদা ভবন হয়ে সুবিধে হয়েছে খুব। সুদীপ্ত সরকার এবং তাঁর সহযোগী শিল্পী সমীর গুহর মিলিত প্রদর্শনী। সুদীপ্ত বন্দনার পাঁচ ছটা সিটিং নিলেন প্রতিকৃতি আঁকবার জন্য। বন্দনা প্রথমটা রাজি হয়নি। কিন্তু রূপের ভীষণ আগ্রহ, খাবার টেবিলের ওপর হাত রেখে বন্দনা বসে থাকবে। সুদীপ্ত তাঁর স্কেচবুক নিয়ে উল্টো দিকের চেয়ারে বসে বেহালার ছড় টানার মতো তাঁর পেনসিল চালাবেন। রূপ পাশে বসে বসে দেখবে। কিভাবে মায়ের মুখের আদল দু চার আঁচড়ে ফুটে উঠছে—কাগজের ওপর। সে নিজে ফিগারে ততটা পটু নয়। ল্যান্ডসকেপে যতটা। বিভিন্ন ভঙ্গির কয়েকটা স্কেচ এঁকে নিয়ে বন্দনাকে ছুটি দিয়ে দিলেন সুদীপ্ত। হেসে বললেন—‘ছবি যা আঁকব তাতে যেন নিজের লাইকনেস আশা করবেন না।’

—‘সে কি? কেন?’

লাজুক হেসে তিনি বললেন—‘কেন কি বৃত্তান্ত জানতে হলে তো ছবিটা দেখতে হয়।’

এগজিবিশনটা আজ দেখতে এসেছে বন্দনা কলি আর রূপকে সঙ্গে নিয়ে। সুদীপ্তবাবু সমীর গুহ-র সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। তিনিই ক্যাটালগ হাতে নিয়ে তাদের ছবি দেখাতে নিয়ে গেলেন। সমীরবাবু তাঁর নিজস্ব প্রদর্শনীর নাম দিয়েছেন ‘সাত সমুদ্র তের নদী।’ ভদ্রলোক জল-পাগল। উট্রাম ঘাটের গঙ্গা, দশাশ্বমেধ ঘাটের গঙ্গা, শীতের অজয়, রূপনারায়ণ আর গঙ্গার সঙ্গম, গোধূলিতে গোদাবরী ট্রেন থেকে দেখা—অন্তত পঁচিশখানা তাঁর নদীর ছবি, সাগরের ছবি সে তুলনায় কম, মাত্র তিনটি। কিন্তু নদীর তুলনায় ছবিগুলো বিরাট। ঝড়ের সমুদ্র, উত্তাল, ভীষণ ভয়ঙ্কর, শান্ত সমুদ্র বালুবেলায় নীল চাদর ছড়িয়ে শুয়ে আছে। রাতের সমুদ্র, ফসফরাস আর দূরে মাছের ট্রলারের আলো জ্বলছে, লাইট হাউজের আলো পড়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে সমুদ্রের বুকে ভৌতিক জ্যোতি।

ছবিগুলো ভীষণ ভালো লাগল বন্দনার। শান্ত সমুদ্রের ছবিটা সে কিনবে কি না কলির সঙ্গে চুপিচুপি আলোচনা করে নিল। কলি বলল—‘একবার সুদীপ্তবাবুকে জিজ্ঞেস করে দেখলে হয়। আমরা তো সত্যি ছবির কিচ্ছু বুঝি না।’ বন্দনা বলল—‘এই ছবিটা ঘরে থাকলে আমার ভালো লাগবে রে কলি, কি সুন্দর মিঠে নীল রঙটা দেখ, হাওয়াতে বালি সরে সরে গেছে সিল্কের শাড়িতে কুঁচির মতো। নাই বুঝলুম ছবি। এটাই আমার সবচেয়ে পছন্দ।’

সুদীপ্ত সরকারের ঘরে ভিড় বেশি। তাঁরও প্রদর্শনীর নাম আছে—‘এক মুখ, নানা মুখ।’ অয়েলে আঁকা। বৃদ্ধার মুখ দিয়ে আরম্ভ, মুখে অজস্র বলিরেখা, নিদন্ত মুখে শুধু মাড়ির হাসি হলুদ, সোনালি খয়েরি দিয়ে আঁকা এই ছবিতে মনে হয় যেন শেষ বিকেলের আলো পড়েছে। বেশ দূর থেকে দেখতে হয় ছবিগুলো। বেশি সামনে গেলে শুধু চাপ চাপ রঙ। কলি বলল—‘বউমণি এদিকে এসো।’ চুপিচুপি বলল—‘তোমার ছবি মনে হচ্ছে! তোমার আদল!’ রূপ বলল—‘হ্যাঁ মা তোমার।’ অন্তত বারোখানা ছবির একটি সিরিজ। পেছন থেকে দেখা মুখের এক দশমাংশ, ডান পাশ, বাঁ পাশ, নিচু হয়ে কোনও জিনিস তোলার ভঙ্গিতে, হাত উঁচু করে কিছু নামানোর ভঙ্গিতে, রঙের আঁচড়ে, কালো, খয়েরি তামাটে গোলাপি রঙের হেরফেরে পুরো দেখা না গেলেও বন্দনার মুখ যে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এ সব ছবির জন্য কোনও সিটিং বন্দনা দেয়নি। সব শেষ ছবিটি সবচেয়ে বিস্ময়কর। এখানে পুরোপুরি আলোয় মুখ ফেরান। কিন্তু এ যেন অনেক বয়স্ক বন্দনা। অনেক দূরের দিকে চেয়ে আছে। মাথায় পাকা চুল। মুখে বয়সের রেখা। রূপ বলল—‘মা, মাস্টারমশাই তোমাকে এ রকম বুড়ো করে এঁকেছেন কেন?’

বন্দনা বলল—‘তুই-ই তো বেশি বুঝবি, কেন। তুই-ও তো হবু শিল্পী রে? আমি কি বুঝি!’

বেরোবার সময়ে সুদীপ্ত তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলেন, কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাঁরা মনে হল বারোটি ছবির সিরিজ নিয়ে কিছু দুর্বোধ্য আলোচনা করছিলেন, বন্দনার অপ্রস্তুত লাগল, সে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াল। সুদীপ্ত এগিয়ে এসে বললেন,—‘কি রূপ, কেমন লাগল।’

—‘ভীষণ ভালো লেগেছে মাস্টারমশাই, মা বলছে সমীরকাকুর একটা ছবি কিনবে।’

—‘খুব ভালো, কোনটা। আমি দাগ দিয়ে রাখি, সমীর, সমীর!’

কলি বলল—‘আপনি আগে দেখুন এ ছবিটাই কেনবার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত কিনা, আরও অনেক ছবি তো আছে।’

সুদীপ্ত এ ছবিটার নম্বর দেখে বললেন—‘মিসেস মুখার্জি, আমার কাছে কিন্তু ছবির ভালো-মন্দ নেই। অন্তত এ-সব ছবির। বিভিন্ন রাগ যেমন হয়। এগুলোও তেমনি শিল্পীর বিভিন্ন মেজাজ। যে ছবি মিসেস ভট্টাচার্যর ভালো লেগেছে, সেটাই উনি কিনবেন, এতে আমার গাইড্যান্স দেবার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনি কিছু কিনলেন না?’

কলি রহস্যময় হেসে বলল— ‘আমিও কিনব। আপনার ওই বারো-ছবির সিরিজ যার আপনি নাম দিয়েছেন ‘উওম্যান ইন মাস্ক অ্যান্ড উইদাউট মাস্ক’ ওই থেকে শেষেরটা বাদ দিয়ে যে কোনও দুটো আপনি বেছে দিন।’

সুদীপ্ত বললেন—‘ওঃ, ওগুলো যে আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। পুরো সিরিজটাই। খুব দুঃখিত। আমি আপনাকে অন্য একটা বেছে দেব। কিংবা এঁকে দেব। ফ্রেশ, আপনার পছন্দটা আমি বুঝতে পেরে গেছি। এখন চলুন একটু চা খাওয়া যাক। তারপর আপনাদের পৌঁছে দিয়ে আসি।’

বন্দনা বলল—‘না, না, কোনও দরকার নেই, আমাদের তো আর বেশিদূর যেতে হচ্ছে না, আপনাকে এখানে দরকার, থাকুন না।’

‘আরে এখানকার সব সমীর সামলে নেবে, বন্ধ হবার সময়ও হয়ে এল। এই তো উল্টোদিকেই একটা ছোট্ট রেস্তোরাঁ আছে, চলুন একটু বসা যাক।’

রূপ বলল—‘চলো না মা, আমার কত কথা জিজ্ঞেস করার আছে।’

রেস্তোরাঁয় ঢুকে রূপ বলল—‘পিসি তুমি আজ আমাদের বাড়ি থাকো।’

বন্দনা বলল—‘সেই ভালো, রাত হয়ে যাচ্ছে, তুই বরং একটা ফোন করে আয় পিসেকে।’

রেস্তোরাঁর লাল গদি মোড়া চেয়ারে বসে সুদীপ্ত তাঁর স্বভাবসিদ্ধ লাজুক হেসে বললেন—‘খুব রাগ করেছেন আমার ওপর, না?’ তাঁর দৃষ্টি বন্দনার দিকে।

বন্দনা বলল—‘রাগ করার কি আছে! তবে অবাক হয়েছি খুব। আপনি আমাকে লাইকনেস আশা করতে তো বারণই করে দিয়েছিলেন।’

—‘তা দিয়েছিলাম। কিন্তু এত যে অমিল, তা বোধহয় ভাবেননি। আপনাকে দেখেই আমি বুঝতে পারছি।’

বন্দনা শুধু বলল—‘এসব ছবির সিটিংও তো আমি দিইনি!’

‘তা দেননি—, আসলে, আমি আপনার চেহারার এবং মুখের কয়েকটা বেসিক স্কেচ নিয়েছিলাম। তলার থেকে যাতে গলা আর চিবুক আগে দেখা যায়। পেছন ফিরে সামান্য মুখ ফেরালে যতটুকু দেখা যায়, এইভাবে, বাকি সব রঙ, সব রেখা, আলো-ছায়া আমার কল্পনা।’

কলি বলল—‘আপনার কল্পনা এরকম বাঁকা পথ ধরে চলে কেন?’

—‘আমার কল্পনা কি আপনার বিকৃত মনে হল?’

কলি অপ্রস্তুত হয়ে বলল—‘বাঁকা পথ বলেছি, বিকৃত বলিনি তো! দুটোয় তফাত নেই?’

—‘তা যদি বলেন মিসেস মুখার্জি, কল্পনা জিনিসটাই বাঁকা।’

রূপ এসে গিয়েছিল। বলল—‘সুদীপ্তকাকু মা’কে অমন বুড়ি করে আঁকলেন কেন?’

সুদীপ্তকে খুব ভাবিত দেখাল, বললেন, ‘রূপ তুমি আরেকটু বড় হও, বুঝবে মায়েরা বৃদ্ধাই হন, সব সময়ে বৃদ্ধা।’

বন্দনা বলল—‘রূপ যদি না-ও বোঝে, আমাকে তো বুঝতে হবে!’

‘সুদীপ্তবাবু, আপনার আঁকার পেছনে উদ্দেশ্যটা কি? কিছু বলতে চাইছেন, সেটা কি!’

কলি বলল—‘সিরিজটার নামটাও আমার দুর্বোধ্য লাগল ‘উওম্যান ইন মাস্ক অ্যান্ড উইদাউট মাস্ক’ খুব আপত্তিকর কিন্তু যাই বলুন। মেয়েরা কি সবসময়ে মুখোশ পরে থাকে?’

—‘থাকে না? মানুষ মাত্রেই থাকে। কিন্তু পুরুষের কাছে পুরুষের মুখোশটা যতটা সহজভেদ্য, নারীরটা ততটা নয়। আমাদের প্রত্যেকটা পরিচয় এক একটা মুখোশ, মা, স্ত্রী, কন্যা এই সমস্ত আরোপিত পরিচয়ের মধ্যে একটা অন্য মানুষ, এসেনশিয়াল বীয়িং আছে যে লুকিয়ে থাকে। একাকিত্বে, নির্জনতায় সে ধরা পড়ে। মিসেস মুখার্জি, ওই সিরিজের যে শেষ ছবি, সেটাই মুখোশপরা নারীর ছবি, যে নিজেকে সমাজের আদর্শ অনুযায়ী কাটছাঁট করে নিয়েছে, অন্য এগারোটি ছবি তার মুখোশবিহীন সত্তার। ভালো করে লক্ষ করলে দেখতে পেতেন ছবিগুলোর বেশির ভাগই প্রায় কিশোরীর। যার কাছে জীবন সবে উন্মোচিত হতে আরম্ভ করেছে।’

কলি বলল—‘ওরে বাব্বা, আপনি বউমণিকে এভাবে স্টাডি করেছেন?’

রূপ বলল—‘কখন করলেন কাকু?’

সুদীপ্ত একটুও না ঘাবড়ে গিয়ে বললেন—শিল্পীরা যে সব সময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে কাগজে ক্ষেত্রফল-টল কষে নিয়ে আঁকতে আরম্ভ করে তা নয়, আমি তো একেবারেই এভাবে কাজ করতে পারি না। প্রথমে মিসেস ভট্টাচার্যের একটা প্রতিকৃতি আঁকবারই আমার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু উনি তিনদিন আমাকে তিনটে সিটিং দেবার পরই বুঝলাম উনি অসম্ভব ভালো সাবজেক্ট, অত মোবাইল ফেস আমি কমই দেখেছি। তিনদিন আমি ওঁর মুখের তিনরকম মেজাজ দেখলাম। রেখা, কন্টুর সব বদলে দিয়ে সেই মেজাজকে ধরতে হয়। বাড়িতে গিয়ে অনেকগুলো ছবি আঁকলাম, স্কেচের ওপর বেস করে, প্রত্যেকটাই এতো এক্সপ্রেসিভ হল যে, এই সিরিজটার কথা আমার মনে এল।’

বন্দনা খুব অবাক হয়ে গিয়েছিল। রূপ আইসক্রিম-কফি খাচ্ছে। চোখ গোলগোল করে মুগ্ধ চোখে মাস্টারমশাইকে দেখছে, মুখে স্ট্র, এই বয়সটা ওর বীরপূজার বয়স। রূপ বলল— ‘আমার কথাটার উত্তর দিলেন না তো কাকু?’

‘কোন্ কথা?’

—‘ওই যে মা-কে কেন ওই রকম পাকা চুল, বুড়ো করে আঁকলেন?’

কলি তখন কৌতূহলী চোখে চেয়ে আছে, বলল—‘ওই ছবিটাকে আপনি মুখোশ বলেছেন…’

সুদীপ্তকে খুব দ্বিধাগ্রস্ত মনে হল, বললেন— ‘এতো কৈফিয়ত দিতে হবে জানলে আরেকটু ভেবে আসতাম, মিসেস মুখার্জি। কাজগুলো বেশির ভাগই ইন্সটিংটিভ। রূপ তোমাকে বললাম মায়েরা তাঁদের রক্ষণশীলতায়, আত্মত্যাগে, মাতৃত্ব-ই তাঁদের একমাত্র পরিচয় এই মনোভাবে খুব বয়স্ক। তরুণী মা-ও।’

কলি বলল— ‘সেটাকে মুখোশ বা ভান বলছেন?’

সুদীপ্ত বললেন—‘সব পরিচয়কেই আমি আমার শিল্পী-ভূমিকায় মুখোশ বলে ভেবেছি বোধহয়, একমাত্র অন্তরতম আত্মপরিচয় ছাড়া।’ তারপর বন্দনার দিকে ফিরে বললেন—‘খুব সঙ্কোচের সঙ্গে বলছি—আপনি যদি আপনার সময়মতো আমাকে আরও কয়েকটা সিটিং দেন…’ বন্দনা হেসে ফেলে বলল—‘তা হলে কি আমার সঠিক প্রতিকৃতিটা আঁকবেন?’

—‘না, না।’ সুদীপ্ত অন্যমনস্কভাবে বললেন— ‘তা হলে হয়ত আরও অনেক মুখ আঁকতে পারতাম। পুরো একটা অ্যালবাম। একই জনের মুখ অথচ লক্ষ মুখ।’

বন্দনা বলল—‘দেখুন সুদীপ্তবাবু, মানুষমাত্রেরই নানান মেজাজ, নানান মানসিক অবস্থা থাকবেই। আপনাকে আরও সিটিং দিলে আপনি ‘স্টাডি অফ এ উইচ’, ‘স্টাডি অফ এ ডেড উওম্যান’স ফেস’ এ-সবও আঁকতে পারতে পারেন। আমি মোটেই আপনাকে সে সুযোগ দিতে রাজি নই।’

সুদীপ্ত হেসে ফেললেন—‘আপনার এতো ভয় হয়েছে ছবিগুলো দেখে? ওগুলো কিন্তু খুব প্রশংসিত হচ্ছে। যাই হোক মডেল হিসেবে আপনার কিন্তু কিছু সম্মান-দক্ষিণ প্রাপ্য হয় মিসেস ভট্টাচার্য, সেটা আপনি না নিলে আমি ভীষণ কষ্ট পাব।’

সাইড ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বার করে রূপের হাতে দিয়ে সুদীপ্ত বললেন—‘দ্যাখো তো রূপ পছন্দ হয় কিনা!’

রূপ তাড়াতাড়ি খুলে ফেলল প্যাকেটটা— নীলাম্বরী, বালুচরী।

বন্দনা বলল—‘সিটিং দেবার সময়ে তো এ-সব কথা হয়নি সুদীপ্তবাবু!’

—‘আপনার কত সময় নষ্ট করেছি, কত কষ্ট করে একভাবে বসে থেকেছেন।’

—‘হ্যাঁ, কিন্তু সেটা মূল্য দিয়ে কিনে নেবেন, এ-কথা আমি জানতাম না।’

—‘মূল্য দিয়ে তো কিনিনি, এটা উপহার, না নিলে আমি সাঙ্ঘাতিক চোট পাব।’

—‘আপনি শিল্পী মানুষ একটা ছবিই তো দিতে পারতেন আমাকে।’

—‘ছবি না দিলেও আমি আপনাকে শিল্পবস্তুই দিয়েছি। এটাতে যে বালুচরীর কাজ আছে আঁচলে তা ক্র্যাফ্‌ট-এর পর্যায়ে আছে না আর্ট হয়ে উঠেছে এটা ভাববার বিষয়। এটা ব্যবহার্য জিনিস এই পর্যন্ত। যাই হোক ছবি তো নিশ্চয়ই দেব।’

কলি বলল—‘আমার পছন্দসই ছবিগুলো তো বেচে দিয়েছেন, তাহলে আমি কোন্‌টে নেব, আমাকে গাইড করুন।’

রূপ বলল—‘মাস্টারমশাই আমাকে একটা দেবেন না?’ রূপ কখনও বলে সুদীপ্তকাকু, কখনও মাস্টারমশাই।

সুদীপ্ত বললেন—‘নিশ্চয়, যেটা তোমার পছন্দ।’

—‘তাহলে আমাকে ওই বৃদ্ধার ছবিটা দেবেন। গোল্ডেন কালার, কত বলিরেখা এঁকেছেন, হাসিটা কি সুন্দর!’

সুদীপ্ত বললেন—‘ঠিক আছে।’

বন্দনা বলল—‘রূপ, যে কোনটা ওরকম চেয়ে নিও না। আগে এগজিবিশন হয়ে যাক…’

‘তার দরকার নেই’, সুদীপ্ত হাত তুলে বললেন, কলির দিকে ফিরে বললেন— ‘সমীরের গঙ্গাস্কেপ একটা নিন না, আর একটা ছবি আমি আপনাকে ফ্রেশ এঁকে দেব। আপনি কোনটা নেবেন মিসেস ভট্টাচার্য।’

—‘রূপ আর আমি কি আলাদা? ওই ছবিটাই থাকবে। শাড়ি আপনি দিতে পারবেন না।’ বন্দনার গলার স্বরে স্থির সিদ্ধান্তের জোর। খুব ক্ষুণ্ণ কালো মুখ করে সুদীপ্ত শাড়ির প্যাকেটটা সাইড-ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলেন।

কলি কথা ঘোরাতে বলল—‘আচ্ছা সুদীপ্তদা, এই দেখুন আমি কিন্তু আপনাকে দাদা বলে ডাকলাম, চার দাদার কোলের বোন, আপনি আজ্ঞে, মিসেস মুখার্জি-টুখার্জি বেশিক্ষণ সহ্য হয় না, তুমি আর কলি বলবেন। ছবির জন্য আপনি বউদিকেই বাছলেন কেন? আমার সঙ্গেও তো আপনার পরিচয় ছিল? আমাকে বাছলেও তো পারতেন!’

সুদীপ্ত আশ্চর্য হয়ে বললেন—‘হ্যাঁ তা তো পারতামই, তবে তোমার ছবি কখন আঁকব? সব সময়েই তো ঝড়ের মতো আসো, যাও, সঙ্গে স্বামী, পুত্র, লটবহর।’

—‘ও স্বামী-পুত্তুররা লটবহর বুঝি! থাকলে ছবি আঁকার সাবজেক্ট হওয়া যায় না?’ বলেই কলি সাবধান হয়ে গেল, বউমণি আবার কিছু মনে না করে।

সুদীপ্ত বললেন—‘কথাটা তা নয়। তোমাকে তো বসতে হবে, সময় দিতে হবে। রূপকে শেখাতে যাই বলে মিসেস ভট্টাচার্যকে কিছুক্ষণ বসতে বলতে পারি। তা ছাড়াও তোমার স্বামীর অনুমতি নেওয়া উচিত। আলাপ করিয়ে দিও? অনুমতি চেয়ে নেব।’

কলি বলল—‘ওসব অনুমতি-টতির আমি ধার ধারি না। অতসব করতে হলে আমার ছবি আঁকতে হবে না।’

—‘কি আশ্চর্য! এটা একটা ফর্মালিটি, করতেই হয়।’

—‘বউমণির ছবি আঁকবার সময়ে কার অনুমতি নিয়েছিলেন?’

—‘বউমণিরই অনুমতি নিয়েছিলাম।’

—সেটাই যথেষ্ট ছিল তো!’

—‘নিশ্চয়ই!’

—‘আমার বেলাতেও আমার অনুমতিটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত।’

সুদীপ্ত কফির কাপ মুখে তুলে কলির দিকে তাকিয়ে রইলেন, বেশ চিন্তিত।

কলি হাসিমুখে বলল—‘ভয় নেই। আমার ছবি আপনাকে আঁকতে হবে না। আমার অনেক ফটো আছে। তাতেই এ যাত্রা কোনরকমে চালিয়ে নেব।’

রূপ হেসে উঠল। বন্দনাও মৃদু মৃদু হাসছে। সুদীপ্ত কাচুমাচু মুখে বললেন—‘এরকম তিরস্কার, এরকম নিন্দে জীবনে কেউ কখনও আমাকে করেনি।’

কিন্তু সুদীপ্ত বন্দনা এবং কলিকেও ছবি দেখার নেশা ধরিয়ে দিয়েছেন। কলির স্বামী সঞ্জয়ও থাকছে। তবে পাঁচজনে মিলে ছবি দেখার পরে রেস্তোরাঁয় বসে যে আড্ডাটা হয় সেটার প্রতিই বেশি আগ্রহ সঞ্জয়ের। সে সুদীপ্তকে বলে—‘দাদা আঁকিবুঁকি কাটছেন কাটুন, রঙচঙ নিয়ে খেলাধুলো করবার শখ হয়েছে করুন না, লোকের তো মাছ ধরার হবিও থাকে। চোপর দিন পুকুরে চার ছড়িয়ে বঁড়শির আগায় টোপ গেঁথে বসে রইল, সন্ধের মুখে একটি পাঙাস কি সরল পুঁটি নিয়ে বাড়ি ফেরা। তা সে যাক, কিন্তু ব্যাপারটা সিরিয়াস, বিশ্বাস করতে বলবেন না। প্লীজ! আরে বাবা আপনাদের পিকাসো, পাবলো পিকাসো, ওরকম আঁকে কেন বলুন তো? নাক বাঁকা, ঠোঁটের জায়গায় চোখ, চোখের জায়গায় কান, কেন?’

—‘কেন? আপনিই বলুন’—সুদীপ্ত ঝুঁকে বসেন।

—‘সিম্পলেস্ট অফ দা সিম্পল, নিজেকে ইয়ে মানে’, রূপের দিকে আড়চোখে চেয়ে সঞ্জয় সামলে নেয়… ‘নানারকম অত্যাচার করেছে তো শরীরের ওপর! হাতে আর ড্রয়িং আসে না। হাত কাঁপে, দাদা, কাঁপে।’

সুদীপ্ত হো হো করে হাসেন, বলেন—‘আপনিই আর্ট-ক্রিটিক হবার উপযুক্ত লোক। আর্ট-ক্রিটিসিজমে হিউমার নেই, আপনি সেই হিউমার আমদানি করবেন।’

সঞ্জয় বলে—‘হাসছেন? তা হলে আমার ছোটবেলার একটা অভিজ্ঞতা বলি শুনুন, আমিও আর্টিস্ট হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলাম। সেই আমার জীবনের একমাত্র পুরস্কার বলতে গেলে। স্কুলে অ্যানুয়াল এগজিবিশন হচ্ছে, সবাই কিছু না কিছু দিচ্ছে; ছবি, হাতের কাজ, মডেল, চার্ট, নানারকম। আমিই বা দেব না কেন? বাড়িতে জেঠুকে ধরলাম, জেঠু বললেন— “ঠিক হ্যায় গাছ আঁকতে পারিস তো ব্যাটা? আঁক একটার পর একটা গাছ। পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দে।” আমি প্রাণপণে গাছ আঁকছি, কিন্তু ঠিক মনোমত হচ্ছে না। তখন জেঠু বললেন—“দাঁড়া, দেখছি।” আমাদের বাড়ির পেছনে ছিল একটা বুড়ো নিমগাছ। সেই নিমের বাকল নিয়ে এলেন এক টুকরো। বললেন—নে এবার এটাকে তোর কাগজে আচ্ছা করে সাঁট দিকি গঁদ দিয়ে। সাঁটা হলে তার তলায় নামকরণ হল “তুমি বৃক্ষ আদি প্রাণ” বললেন, “যা তোর এগজিবিশনে দিয়ে আয়।” বললে বিশ্বাস করবেন না, মডার্ন আর্ট বলে আমার সেই নিমের ছাল পুরস্কার পেয়ে গেল।’

রূপ খুব হাসছিল, কলি বলল—‘সত্যি তোমাদের এই জেঠুটি যা ছিলেন না, একাধারে চার্লি চ্যাপলিন আর শিশির ভাদুড়ি। বউমণি তোমাকে দেখাতে পারলাম না বলে আফশোস হয়।’

সঞ্জয় বলল—‘জেঠু নিজেকে ‘স্পেসিমেন’ বলে উল্লেখ করতেন। ‘স্পেসিমেন’, ‘সাম্পল’, ‘অজীব চিড়িয়া’ কতরকম।’

সুদীপ্ত বললেন—‘আপনাকে আমি ঠিক দশটা এগজিবিশন দেখাব, আর গোটাকয়েক ইলাস্ট্রেটেড বই পড়তে দেব। তারপর আপনি-ই অন্য কথা বলবেন।’

—‘আমি? অন্য কথা বলব? অসম্ভব। এখনই বোঝান না!’

—‘ছবি দেখবার জিনিস, কথা দিয়ে বোঝাবার হলে নিশ্চয় বোঝাতাম।’

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress