মাঠের শস্য গৃহে এল—
তার স্তোত্র রচনা করো কবি |
মানুষ ও পশু, আনন্দের বোঝার ভারে নত হ’য়ে এল
গৃহে ফিরে,
মরাই বোঝাই হ’ল |
ভূমি উত্কতাপের
মানুষ আরেকবার মৃত্তিকাকে দোহন করলে,
পূর্বে ও পশ্চিমে, উত্তরে ও দক্ষিণে,
ভারতে,—ফ্রান্সে,—-নীল নদীর তীরে,—-কানাডায়—
মৃত্তিকা মানুষকে অর্ঘ্য দিলে |
কেউ দিলে মমতায় মাতার মতো আপনা হ’তে,
কেউ অনিচ্ছায় কৃপণের মতো দিলে মানুষের পীড়নে,
সলজ্জ প্রিয়ার মতো কেউ নিজেকে গোপন রেখেছিলো
. এতটুকু ইঙ্গিতের অপেক্ষায় |
তবু সব মৃত্তিকাই দান করল ;–
মরুপ্রান্তরে নির্মম বালুকা-ভূমি আর উচ্ছলিত-সুধা নদী-কূল-ভূমি,
গিরিবেষ্টিত উপত্যকা আর সমতল প্রান্তর,
কালো ও রাঙা মাটি,
কঠিন ও কোমল,
যুবতী ও বৃদ্ধা |
শস্যের চির-নূতন জাতকের পুনরাবৃত্তি করো কবি |
—সবল পেশী ও শানিত লৌহফলকের মিলিত প্রয়াসে
মৃত্তিকা বিদীর্ণ হ’ল কবে,
ভূগর্ভের অন্ধকারে বীজের কারা বিদীর্ণ ক’রে
কবে শিশু-তরু বাহু বাড়ালো আকাশের সন্ধানে,
কবে মেঘ দিলে বৃষ্টির আশীর্বাদ, সূর্য আলোকের আর উত্তাপের ;
মাটি ও আকাশ জীবন-রসের,
কবে ধরণীর লজ্জা দূর হ’ল স্নিগ্ধ শ্যামলতার আবরণে,
আর আবার কবে মানুষ ধরিত্রীকে নিঃস্ব নগ্ন ক’রে রেখে গেল |
মাঠ থেকে শস্য এল গৃহে —ধান্য ও যব, গম ও ভুট্টা, জোয়ারি—
মৃত্তিকা ও মেঘ, সূর্য ও বায়ুর মিলন সার্থক হ’ল |
আকাশের আলো স্তিমিত হ’য়ে এল শ্রান্ত মানুষ ও পশুর সঙ্গে
আনন্দের অবসাদে |
সর্বস্ব রিক্ত প্রান্তরের নিঃস্ব হাহাকারের ওপর
রাত্রি বুলালে অন্ধকারের সান্ত্বনা |
কাল পৃথিবীতে ব্যস্ততা জাগবে, শস্য বহনের আর বিতরণের
আর হায়, লোভের সংগ্রাম |
আজ শান্তি !
মাঠের শস্য গৃহে এল,
এল মানুষের শক্তি ও যৌবন,
এল নারীর রূপ ও করুণা,
পুরুষের পৌরুষ,
ভবিষ্যৎ মানব-যাত্রীর পাথেয় |
সমস্ত ভাবীকালের ইতিহাসে, মানবের কীর্তি-কাহিনীর তলায়
অদৃশ্য অক্ষরে
এই শস্যের আগমনী লেখা থাকবে নাকি ?