Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লোহার বিস্কুট – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay » Page 4

লোহার বিস্কুট – ব্যোমকেশ বক্সী || Sharadindu Bandyopadhyay

পরদিন সকালবেলা সত্যবতী ব্যোমকেশকে বলল, ‘ভাল চাও তো বল, কোথায় রাত কাটালে?’
ব্যোমকেশ কাতর স্বরে বলল, ‘দোহার ধর্মাবতার, রাখাল সাক্ষী–আমি কোনো কুকার্য করিনি।’
‘শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল। গল্পটা বলবে?’
‘বলব, বলব। কিন্তু আগে আর এক পেয়ালা চা দিতে হবে। এক পেয়ালা চা খেয়ে রাত জাগার গ্লানি কাটেনি।’
সত্যবতী আর এক পেয়ালা কড়া চা এনে ব্যোমকেশের সামনের চেয়ারে বসল, ‘এবার বল, টর্চটা ভাঙলে কি করে? মারামারি করেছিলে?’
ব্যোমকেশ বলল, ‘মারামারি নয়, শুধু মারা।’ চায়ে একটি চুমুক দিয়ে সে বলতে আরম্ভ করল:
‘অক্ষয় মণ্ডল সোনার চোরাকারবার করে অনেক টাকা করেছিল। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ভদ্র পাড়ায় একটি বাড়ি করেছিল, বাড়ির ছাদ লোহার ডাণ্ডা-ছত্রী দিয়ে এমনভাবে মুড়ে রেখেছিল যে ওদিক দিয়ে বাড়িতে চোর ঢোকার উপায় ছিল না। ছাদটাকে নিরাপদ করা তার বিশেষ দরকার ছিল।
‘অক্ষয় মণ্ডলের পেশা ভারতবর্ষের বাইরে থেকে যেসব চোরাই সোনা আসে তাই সংগ্রহ করা এবং সুযোগ মত বাজারে ছাড়া। সে বাড়িতেই সোনা রাখত, কিন্তু লোহার সিন্দুকে নয়। সোনা লুকিয়ে রাখার এক বিচিত্র কৌশল সে বার করেছিল।
‘অক্ষয় মণ্ডল বাড়িতে একলা থাকত; তার স্ত্রী আছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। সে পাড়ার লোকের সঙ্গে বেশি মেলামেশা করত না, কিন্তু পাছে পড়শীরা কিছু সন্দেহ করে, তাই কমল দাস নামে একটা ভদ্রলোককে নীচের তলায় একটি ঘর ভাড়া দিয়েছিল। বাজারে সোনা ছাড়বার জন্য সে কয়েকজন লোক রেখেছিল, তাদের মধ্যে একজনের নাম হরিহর সিং।
‘হরিহর সিং বোধহয় অক্ষয় মণ্ডলকে ফাঁকি দিচ্ছিল। একদিন দু’জনের ঝগড়া হল, রাগের মাথায় অক্ষয় মণ্ডল হরিহর সিংকে খুন করল। তারপর মাথা ঠাণ্ডা হলে তার ভাবনা হল, মড়াটা নিয়ে সে কি করবে। একলা মানুষ, ভদ্র পাড়া থেকে মড়া পাচার করা সহজ নয়। সে স্থির করল, মড়া থাক, বাড়িতে যা সোনা আছে, তাই নিয়ে সে নিজে ডুব মারবে।
‘কিন্তু সব সোনা সে নিয়ে যেতে পারল না। সোনা ধাতুটাও বিলক্ষণ ভারি, লোহার চেয়েও ভারি। তোমরা স্ত্রী-জাতি সারা গায়ে সোনার গয়না বয়ে বেড়াও, কিন্তু সোনার ভার কত বুঝতে পারো না। দশ হাত কাপড়ে কাছে নেই।’
সত্যবতী বলল, ‘আচ্ছা, আচ্ছা, তারপর বল।’
‘অক্ষয় মণ্ডল ডুব মারবার কয়েকদিন পরে লাশ বেরুল; পুলিস এল, কিন্তু খুনের কিনারা হল না। অক্ষয় মণ্ডল খুন করেছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সে নিরুদ্দেশ। কমলবাবু সারা বাড়িটা দখল করে বসলেন।
‘অক্ষয় মণ্ডল নিশ্চয় কলকাতাতেই কোথাও লুকিয়ে ছিল, কয়েক মাস চুপচাপ রইল। কিন্তু বাড়িতে যে-সোনা লুকোনো আছে–যেগুলো সে সরাতে পারেনি, সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। কাজটি সহজ নয়। কমলবাবুর স্ত্রী এবং মেয়ে সর্বদা বাড়িতে থাকে, তাছাড়া একটি ভয়ঙ্কর হিংস্র কুকুর আছে। অক্ষয় মণ্ডল ভেবে-চিন্তে এক ফন্দি বার করল।
‘একটি স্ত্রীলোককে বউ সাজিয়ে এবং একটা পেটোয়া লোককে তার ভাই সাজিয়ে অক্ষয় মণ্ডল কমলবাবুর কাছে পাঠাল। বউকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। অক্ষয় মণ্ডল ফেরারী খুনী হতে পারে, কিন্তু তার বউ তো কোনো অপরাধ করেনি। কমলবাবু কিন্তু শুনলেন না, তাদের হাঁকিয়ে দিলেন। অক্ষয় মণ্ডল তখন বেনামে চিঠি লিখে ভয় দেখাল, কিন্তু তাতেও কোনো ফল হল না। কমলবাবু নড়লেন না।
‘অক্ষয় মণ্ডল তখন অন্য রাস্তা ধরল।
‘আমার বিশ্বাস ব্যাঙ্কের যে সহকর্মিটি কমলবাবুকে তীর্থে যাবার জন্য ভজাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে অক্ষয় মণ্ডলের যোগাযোগ আছে। দু’-চার দিনের জন্যও যদি কমলবাবুকে সপরিবারে বাড়ি থেকে তফাৎ করা যায়, তাহলেই অক্ষয় মণ্ডলের কার্যসিদ্ধি। কাজটা সে বেশ গুছিয়ে এনেছিল, কিন্তু একটা কারণে কমলবাবুর মনে খটকা লাগল; বাড়ি যদি বেদখল হয়ে যায়! তিনি আমার কাছে পরামর্শ নিতে এলেন।
‘তার গল্প শুনে আমার সন্দেহ হল বাড়িটা ওপর, আমি বাড়ি দেখতে গেলাম। দেখাই যাক না। অকুস্থলে গেলে অনেক ইশারা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
‘গেলাম বাড়িতে। কড়া রোদ ছিল, তাই ছাতা নিয়ে গিয়েছিলাম। দোতলায় উঠে দেখলাম, দোরের মাথায় ঘোড়ার নাল তিনটে পেরেকের মাঝখানে আলগাভাবে আটকানো রয়েছে। ঘোড়ার নালটা এক নজর দেখলে ঘোড়ার নাল বলেই মনে হয় বটে, কিন্তু ঠিক যেন ঘোড়ার নাল নয়। আমি ছাতাটা সেইদিকে বাড়িয়ে দিলাম, অমনি ছাতাটা আপনা থেকেই গিয়ে ঘোড়ার নালে জুড়ে গেল।
‘বুঝলাম, ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম, ঘোড়ার নাল নয়, একটি বেশ শক্তিমান চুম্বক–ছাতার লোহার বাঁট পেয়ে টেনে নিয়েছে। প্রশ্ন করে জানলাম চুম্বকটা অক্ষয় মণ্ডলের। মাথার মধ্যে চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল–কেন? অক্ষয় মণ্ডল চুম্বক নিয়ে কি করে? দোরের মাথায় টাঙিয়েই বা রেখেছে কেন, যাতে মনে হয় ওটা ঘোড়ার নাল? মনে পড়ে গেল, পুলিসের খানাতল্লাশে দেরাজের মধ্যে কয়েকটা লোহার মোড়ক পাওয়া গিয়েছিল। রহস্যটা ক্রমশ পরিষ্কার হতে লাগল।
‘তারপর যখন ঘেরাটোপ লাগানো ছাদে গিয়ে জলের ট্যাঙ্ক দেখলাম, তখন আর কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। চুম্বক যত জোরালোই হোক, সোনাকে টানবার ক্ষমতা তার নেই। তাই সে সোনার বিস্কুট লোহার প্যাকেটে মুড়ে ট্যাঙ্কের জলে ফেলে দেয়। তারপর যেমন যেমন দরকার হয়, ট্যাঙ্কে চুম্বকের ছিপ ফেলে জল থেকে তুলে আনে। হরিহর সিংকে খুন করে পালাবার সময় সে সমস্ত সোনা নিয়ে যেতে পারেনি। এখন বাকি সোনা উদ্ধার করতে চায়। পালাবার সময় যে ভাবেনি যে ব্যাপারটা এত জটিল হয়ে উঠবে।
‘যাহোক, সোনার সন্ধান পেলাম; সমুদ্রের তলায় শুক্তির মধ্যে যেমন মুক্তো থাকে, ট্যাঙ্কের তলায় তেমনি লোহার পাতে মোড়া সোনা আছে। কিন্তু কেবল উদ্ধার করলেই তো চলবে না, খুনী আসামীকে ধরতে হবে। আমি কমলবাবুকে বললাম, আপনি সপরিবারে তীর্থযাত্রা করুন। তারপর রাখালের সঙ্গে পরামর্শ করে ফাঁদ পাতার ব্যবস্থা করলাম।
‘কাল সকালে কমলবাবুরা তীর্থযাত্রা করলেন। বাড়ির ওপর অক্ষয় মণ্ডল নজর রেখেছিল, সে জানতে পারল, রাস্তা সাফ।
‘কাল সন্ধ্যের পর রাখাল আর আমি বাড়িতে গিয়ে আড্ডা গাড়লাম। কালই যে অক্ষয় মণ্ডল আসবে এতটা আশা করিনি, তবু পাহারা দিতে হবে। বলা তো যায় না। রাত্রি দুটোর সময় শিকার ফাঁদে পা দিল। তারপর আর কি! টর্চের একটি ঘায়ে ধরাশায়ী।’
সত্যবতী ক্ষীণকণ্ঠে প্রশ্ন করল, ‘কত সোনা পাওয়া গেল?’
সিগারেট ধরিয়ে ব্যোমকেশ বলল, ‘সাতান্নটি লোহার মোড়ক, প্রত্যেকটি মোড়কের মধ্যে দু’টি করে সোনার বিস্কুট, প্রত্যেকটি বিস্কুটের ওজন পঞ্চাশ গ্রাম। কত দাম হয় হিসেব করে দেখ।’
সত্যবতী কেবল একটি নিশ্বাস ফেলল।

Pages: 1 2 3 4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress