Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লাবিয়ার মাকড়ি || Malay Roychoudhury » Page 2

লাবিয়ার মাকড়ি || Malay Roychoudhury

২. মাথা ঝিমঝিম

যুবকের মাথা ঝিমঝিম করছিল, ঘুমও পাচ্ছিল, জিগ্যেস করল, ভালোবাসা ? মেয়ে না ছেলে ?

হ্যাঁ, ভা, লো, বা আর সা, আমার পোষা চারটে শকুন, আপনি যে বদগন্ধে হাঁচতে লাগলেন, আরেকটু হলেই বমি করে ফেলতেন, তা ওদের জন্যে, ওদের জন্যে লাশের বন্দোবস্ত করতে হয়, কিংবা শ্মশান থেকে আধপোড়া মাংস যোগাড় করে আনি, বাঁচে না কিছুই, কিন্তু সবটা এক লপ্তে খায় না, আরও পচিয়ে খায়, যার যেমন রুচি ।

শকুন ? পেলেন কোথায় ? ভা-লো-বা-সা ? সা-বা-লো-ভা । সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা ! বেশ সঙ্গীতময় নাম তো ! যুবক গঙ্গাজল ছেটাবার মতন করে হাত নাড়িয়ে বলল, ওম নাস্তি, ওম নাস্তি, ওম নাস্তি । নিজেকে শুনিয়ে নিঃশব্দে বলল, এই লোকগুলো যা বলছে তা সত্যিই ভেবে বলছে কিনা কে জানে, এরা আদপে ভাবেই না হয়তো, কথা বলাটা এদের জীবনযাপনের টাইমপাস ; কিংবা হতে পারে এদের মগজটা বিকৃত বা ফাঁকা ।

এই শ্মশান থেকেই টোপ দিয়ে ধরে এনেছি, ভালো গান গাইতে পারে ওরা, অনেকে মড়া আধপোড়া হয়ে গেলেই কেটে পড়ে, মুদ্দোফরাস আর ডোমগুলোও লোকজন নেই দেখে, নদীর জলে ফেলে, চিতা নিভিয়ে, আধপোড়া লাশ ভাসিয়ে দিয়ে বাড়ি কেটে পড়ে । ওদের প্রিয় গান গাইতে-গাইতে অমনই এক লাশ খাচ্ছিল কয়েকটা শকুন, তারা রোজ আসত খাবারের লোভে, বাজার থেকে মাংস কিনে এনে পচিয়ে ফাঁদ পেতে ধরে ফেললাম এক এক করে চারটেকে । আধপোড়া লাশ পেলে বেশ কিছুকাল চলে যায়, নয়তো বন্দোবস্ত করতে হয় । ওই ঘরটা শকুনদের নাচমহল, জমিদার ব্যাটা ঝাড়লন্ঠনের মিহি আলোয় বাইজিদের ঠুমরি শুনতো , কয়েকটা বাইজির ফোটো আছে দেয়ালে।

লোকে সুন্দর দেখতে পাখি পোষে, আর তুমি শকুন পুষেছ ? যুবক সত্যিই অবাক ।

শকুনদের আমার ভালো লাগে, আই লাভ দেম, কি বিউটিফুল ওদের দেখতে । তাই তো নাম দিয়েছি ভালোবাসা । ভেবে দেখুন, ভালাবাসা কি শকুনের মতন ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় না প্রেমিক প্রেমিকাদের ? জমিদার মশায়ের ভালোবাসাবাসির বিশাল ঘরেই ওদের ঠাঁই দিয়েছি । ওদের সেক্স করা দেখেছেন ? প্রাণ জুড়িয়ে যাবে দেখলে, পায়ের আর ডানার কী অসাধারণ ভারসাম্য ।

শকুনদের নাম ভালোবাসা রাখাটা কি হিংস্রতা নয় ? বলল যুবক ।

যুবতী বলল, ভায়োলেন্স হবে কেন ! মানুষের মতন ওরাও লেগ পিস চায়, বোনলেস চায়, থাই পিস চায় , ডাবল-ব্রেস্ট চায়, সসেজ-পেনিস চায়। বরং শকুনঘরে ঢুকলে সেই সময়টুকুর জন্যে পৃথিবীর টান চলে যায়, দেখবেন একবার ঢুকে। দুঃখ বিষাদ প্রেমের গ্লানি কষ্ট যন্ত্রণার মানসিক দুর্দশা থেকে মুক্তি দেয় । ক্ষণিকের জন্যে হলেও কম প্রাপ্তি তো নয়।

বিদেশি সিনেমায় দেখেছি বটে, যেগুলোর তলার দিকে ইংরেজিতে সংলাপ দৌড়োয়, সত্যি কিনা জানি না, ফর্সা মেয়ের লেগ পিস, থাই পিস, ডাবল ব্রেস্ট নিয়ে খেলছে ফর্সা ছেলে, ফর্সা মেয়েটা ছেলেটার সসেজ-পেনিস নিয়ে খেলছে । ওসব সিনেমা বেশি দেখার সুযোগ পাই না, এতো বড়ো লাইন পড়ে টিকিটের জন্যে, ল্যাংটো বডি দেখতে কার না ভাল্লাগে, বলুন ?

আর তো দেখতে পাইনে, কাঁদো কাঁদো গলায় হেঁচকির মতন বলে উঠল ড্যাডি আমের বাবা ।

যুবক নিজের কথা চালিয়ে গেল, পাড়ায় তো দেখেছি একজন মেয়ে অনেকের সঙ্গে ভালোবাসাবাসি করছে । পাড়ার পেছনদিকে একটা জঙ্গলমতন আছে, সেখানের ঝোপগুলো দুললে বুঝতে পারি ভালোবাসাবাসি চলছে । আজকাল তো বাহাত্তুরে বড়ি বেরিয়েছে, একটা বড়ি খেয়ে নাকি বাহাত্তরজন ছোঁড়ার সঙ্গে তিন দিন ধরে একের পর এক শোয়া যায় । চোদ্দ বছর বয়স হলেই, ওই যে তুমি যাকে বলছ হার্ড ডিক, শহিদ মিনার, তা হয়ে যায় । আমি ওই লাইন পছন্দ করি না । যাকে জানি না, চিনি না, অমন মেয়ের সঙ্গে শুতে আমার ভীষণ ভয় । কারোর সঙ্গে শুতেই চাই না তাই । শুলেই আমার ভেতরের ফাইটারটা সেদিনকেই মরে যাবে । আমি দিনের বেলায় দশকর্মভাণ্ডার চালাই আর রাতে নতুন মোটর সাইকেল লিফ্ট করি, বেচি না, জাস্ট চুরি করে চালাই আর কাছাকাছি রাস্তায় রেখে দিই ।

যুবতী এবার খুঁটিয়ে দেখল যুবককে, বাইসেপ আছে, চোখে প্রশ্নের খোঁচা, বলল, ওঃ, তুমি তো আমাদের লাইনেরই দেখছি, ভালোই হল, তোমায় আর মেয়াও মেয়াও দেবো না, নিজের কাজে লাগাব । তোমাকে শুতে হবে না, বসে-বসেও জীবনের আনন্দ নেয়া যায় ।

কাজ ? কী কাজ ?

প্রথম কাজ হল আমার মায়ের লিভটুগেদার ছোঁড়াটাকে ভালোবাসায় সোপর্দ করা ।

যত্তো সব ক্রিমিনাল চিন্তা ।

আমার আশঙ্কা ছিল যে কেমন করে তোমাকে আমাদের নোংরায় টেনে আনি ।

মোটর সাইকেল চুরি করে চালানো মোটেই নোংরা কাজ নয় ; এটা আমার হবি ।

যুবতী অন্য বুড়োটাকে জিগ্যেস করল, বাপি, তোমার ব্রেকফাস্ট হয়েছে ? সে কোনো উত্তর দিল না । যুবতী তার মুখের ওপর ইলেকট্রনিক টর্চের আলো ফেলে উঁচু গলায় জানতে চাইল ব্রেকফাস্ট হয়েছে কি না, কোনো উত্তর পেলো না । তার বদলে নাটুকে ঢঙে বুড়ো বলতে লাগল

নাম তো সুনা হোগা, রাহুল

আকাশের দেবতা সেইখানে তাহাকে দেখিয়া কটাক্ষ করিলেন

নাম তো সুনা হোগা, রাজ

কাঁটা ফুটিবার ভয়ও কি নাই কুসুমের মনে

নাম তো সুনা হোগা, দেবদাস

সইতে পারি না ছোটবাবু

নাম তো সুনা হোগা, বাজিগর

শরীর ! শরীর ! তোমার যোনি নাই কুসুম

নাম তো সুনা হোগা, চার্লি

আমি এক মাতাল, ভাঙা বুদ্ধিজীবী, ব্রোকেন ইন্টেলেকচুয়াল

নাম তো সুনা হোগা, ভিকি

প্রতিবাদ করা শিল্পীর প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব ; শিল্প ফাজলামি নয়

নাম তো সুনা হোগা, অর্জুন

বাংলা ভাগটাকে আমি কিছুতেই গ্রহণ করতে পারিনি — আজও পারি না

নাম তো সুনা হোগা, ম্যাক্স

ইউ আর অলওয়েজ এ পার্টিজান, ফর অর এগেইনস্ট ইট

নাম তো সুনা হোগা, ওম কাপুর

সব মাতাল ; আমাদের জেনারেশনের কোনো ভবিষ্যত নেই

নাম তো সুনা হোগা, কবির খান

আমি প্রতি মুহূর্তে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে বোঝাব, ইট ইজ নট অ্যান ইম্যাজিনারি স্টোরি

নাম তো সুনা হোগা, জি ওয়ান

এদেশে শ্রমিক আন্দোলন করতে গেলে খৈনিই ধরতে হবে

লাৎ খাও হুমড়ি খেয়ে পড়ো উঠে দাঁড়াও…লাৎ খাও হুমড়ি খেয়ে পড়ো উঠে দাঁড়াও…লাৎ খাও হুমড়ি খেয়ে পড়ো উঠে দাঁড়াও…লাৎ খাও হুমড়ি খেয়ে পড়ো উঠে দাঁড়াও…লাৎ খাও হুমড়ি খেয়ে পড়ো উঠে দাঁড়াও…লাৎ খাও…ধর্ম ফিরছে…ধর্ম ফিরছে…ঈশ্বর ফিরছে না…ধর্ম ফিরছে…কেউ বাঁচবে না…সব…কচুকাটা…খুন…ধর্ষণ…পালাও…পালাও…চাপাতি রাখো….ত্রিশূল রাখো…ধর্ম ফিরছে…ঈশ্বর ফিরছে না…বোমাবারুদ তাজা করো…ধর্ম ফিরছে…ট্যাঙ্ক…ফাইটার জেট…কার্পেট বোমা…সভ্যতার সঙ্কট কেটে গেছে…গরিব-ধনীর ফারাক মিটে যাচ্ছে…ধর্ম ফিরছে…হাহা…হাহা…হাহা…ঈশ্বর ভাগলবা…বিনা ঈশ্বরের জবরদস্ত ধর্ম ফিরছে…

ঢেঁকুর তোলার মতন করে মুখ উঁচিয়ে, ঠোঁটের কোন দিয়ে, যেন বিড়ি খেয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে, অন্ধ বলল, ধর্ম হল আফিম আর ঈশ্বর হল কালো গর্ত।

অন্য বুড়ো প্রত্যুত্তর দ্যায়, মুখের ভেতর জিভ খেলিয়ে, আর তোদের বৌড়াহাগুলো যে ভোদকা খেয়ে, হুইস্কি টেনে পোঁদ উল্টে রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে পড়ে থাকে, ওগুলো ধর্ম নয় বুঝি ? উপনিবেশের লোকেরা আফিম চাটে বলে ধর্ম হল আফিম, আর শাদা চামড়ারা হুইস্কি রাম ভোদকার নেশা ছাড়তে পারে না, তবু তা নেশা নয়, অ্যাঁ, শাদা চামড়ার ক্যারদানি শোনো, যতোই জ্ঞান থাকুক, মগজের ভেতরে কালো চামড়াদের ঘেন্না করবেই । শালারা ভোদকা পেঁদিয়ে দেশের কাঠামোটাই ভেঙে ফেললে, ঠিক মতন দাঁড়াতে পারে না, ভোদকার নেশায় হেলে পড়ে, বলে কিনা আফিম হলো খারাপ নেশা ।

অন্ধ বলল, ব্ল্যাক হোল, দি সুপ্রিম হোল, পবিত্র জ্বালাময়ী ছ্যাঁদা, পালসেটিং, থ্রবিং ।

মাংসের গর্তে ঢোকবার ধান্দায় চোখ খোয়ালো আর এখন গর্ত খুঁজে বেড়াচ্ছে আকাশে, বলল অন্য বুড়ো ।

অন্ধ বলল, যখন চোখ ছিল তখন অনেককিছু দেখেছি, বুঝলি গাড়ল, কাফকা কতো মনস্তাপ ঝেড়ে গেলেন, প্রাগে গিয়ে নিজের চোখে দেখে এসেছি ইহুদি গোরস্তানে ওনার কবর, কেন, সবই যদি মুছে ফেলার ছিল তবে নিজের শবকে চিতায় তুলতে বলা উচিত ছিল ; এ হল জীবনের সামঞ্জস্যহীনতা, আমার মতন, চোখ নেই, তবু যা আগে দেখেছি তা দেখতে পাই ।

অন্য বুড়ো, তুলোট জিভ নাচিয়ে বলল, আরে আমিও ডস্টয়ভস্কির কবর দেখে এসেছিলাম সেন্ট পিটার্সবার্গের টিখিন গোরস্তানে, আলেকজান্ড্রা নেভেসকি মঠে ।

যুবকের মনে হল, এরা দুজনে দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে নিজেদের বেঁচে থাকাকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে চলেছে।

অন্য বুড়ো বলল, কী বলছি আর তেলচাট্টা ব্যাটা কী বুঝছে ! আই কিউ ঠেকেছে গাড্ডুসে ।

যুবতী ঝাঁঝিয়ে ওঠে, ভুরু কোঁচকায়, বলে, তখন থেকে এক নাগাড়ে বকর বকর করে চলেছ, তোমার এই বাজে অভ্যাসটা গেল না বাপি, কোন শাঁখচুন্নি-পেত্নি তোমার কানে কী সংলাপ যে ঝাড়তে থাকে, তারা কারা যাদের কন্ঠস্বর শুনতে পাও আর ওগরাও, মগজের ময়লা জমেছে তোমার কানে ; একই সঙ্গে স্কিৎসোফ্রেনিয়া আর অ্যালঝিমার রোগের খিচুড়ি বাধিয়েছ । ড্যাডির ব্যাপারটায় যুক্তি আছে, পিটুনি খেয়ে মাথা আর চোখ দুটোই গেছে, তুমি এরকম ডায়ালগবাজি কেন ধরলে জানি না, ব্রেকফাস্ট খাওনি কেন জানি না, নাও হাঁ করো, মেয়াও মেয়াও খাও আর ঝিমোও ।

বাপি নামের বুড়োর মুখে সেই একই পুরিয়া থেকে এক চিমটি পুরে দিল যুবতী । বাপি নামের বাবা চুপ করার আগে যুবকের দিকে তাকিয়ে বলল, এক চুটকি সিন্দুর কি কিমত তুম কেয়া জানো রমেশবাবু, দি লাভার ইজ এ টারমিনাল ইডিয়ট, রমেশবাবু ।

যুবক বাপি নামের বুড়োর দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার, আরব ভাষায় প্রেম শব্দটা নেই, তাই ওনারা চারটে করে বউ আর দশ-বিশটা বাঁদি রাখেন, বোরখায় ঢাকা দিয়ে তাদের আড়ালে নিয়ে গিয়ে খোলেন ।

যুবতী চলে গেল রান্নাঘরে, ফিরে এলো, সুপ-স্পুন দেয়া দুটো সুপ বাউল নিয়ে, বাবা দুজনের কোলে রাখা অ্যাটলাসের ওপরে রাখতে, দুজনে একই সঙ্গে জিগ্যেস করল এটা কিসের সুপ রে ? স্বাদ আছে তো ?

যুবতী বলল, এটা তোমাদের প্রিয় নোজবুফোঁ ইন ম্যারো ব্রাইন উইথ নিপলচেরি ।

এ আবার কী সুপ, শুনিনি তো কখনও, বলল যুবক ।

ড্যাডি নামের বাবা জিগ্যেস করল, যে হেঁচেছিল সে তো তোর বাপি নয়, এই লোকটাই কি ? কাকে সঙ্গে নিয়ে এলি? তোর দলের কেউ? নাকি ভালোবাসার জন্যে ?

যুবতী বলল, হ্যাঁ, একজনকে এনেছি, দেখি কি হয়, ওর নাম হার্ড ডিক, শহিদ মিনার । সুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে যোগ করল ।

ড্যাডি বলল, আমরা শ্মশানের মুদ্দোফরাসকে বলে রেখেছি, নামকরা লোকের শব এলে তার আধপোড়া নাকটা কেটে আমাদের জন্যে রাখতে, যতো নামকরা মানুষ, তার নাক ততো উঁচু, তাই তার পোড়া নাক ততো সুস্বাদু হয়, খেয়ে দেখতে পারো । আধপোড়া নাক দিয়ে নোজবুফোঁর স্বাদ অসাধারণ । এর মধ্যে আধপোড়া নিপল দিয়ে ড্রেসিং করলে, আহা, এর তুলনায় আর ডিশ হয় না। মড়াদের আমরা পছন্দ করি, কেননা মড়ারা মনে করিয়ে দ্যায় যে, হ্যাঁ, দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রতিষ্ঠান কোথাও না কোথাও লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিটি নাক আর নিপলের দিকে নজর রেখেছে ।[১৩ ]

নিপলও কি শ্মশানের চিতা থেকে ? জানতে চায় যুবক । তারপর যোগ করে, আপনাদের কোলের অ্যাটলাস টেবিলের আইডিয়াটা প্রশংসাযোগ্য ।

যুবতী জবাব দ্যায়, অফ কোর্স, কুড়ি থেকে পঁয়তাল্লিশের রেঞ্জে ।

বাপিবাবাটা বলল, নিপল হল আফ্রিকার, আহা, মুখে নিলে পুরো মুখ ভরে ওঠে, ঠিক যেন চুরাশিভোগ দোকানের কালোজামের মিষ্টি ।

ড্যাডিবাবাটার পছন্দ হল না, কিংবা হলেও, বিরোধীতা করতে হবে বলে বলল, দুর্বাঁড়া, নিপল হল আইসল্যাণ্ডের, কী গোলাপি, যেন গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি, মুখে নিলেই ফিরে যাবে শৈশবে, ওঁয়াউ-ওঁয়াউ করে হাত-পা নাড়াতে ইচ্ছে করবে ।

আপনারা তো নিপলের চরিত্র বদল করে দিচ্ছেন, চোষবার বস্তুকে পুড়িয়ে খেয়ে ফেলছেন ! কতো আদরের মাংসল বোতাম, যা দুটি হৃদয়কে জোড়ে, মুখে গিয়ে কথাহীন বার্তারস গড়ে তোলে ! হতাশ্বাসে আড়ষ্ট গলা থেকে হাওয়া দিয়ে বাক্য বের করে বলে ওঠে যুবক ।

প্রতিষ্ঠান নির্দেশ দিয়েছে বদলানোর, তাই চোষবার বস্তুকে খাবার বস্তু করা হয়েছে, মানুষের মতন বাঁচতে হলে আত্মসন্মান খুইয়ে টিকে থাকতে হবে, বুঝলে, এটা বদলের প্রধান রহস্য । মাঝেসাঝে দুঃখের খেপ এসে ল্যাঙ মারে, সো হোয়াট ! তখন বোলো যে বিষাদে ভুগছি, ব্যাস ।

বাপি নিজের মনে বলল, একদিন জয় মা জবাই, তোমাকে আমি পাবই করব সবকটাকে, সবচেয়ে আগে এই চকরলস বুঢ়ুয়াটাকে ।

চামচ দিয়ে খাবার বদলে চুমুক দিয়ে সুপ খেল বুড়ো দুজন, সুড়ুপ সুড়ুপ আওয়াজ করে, আওয়াজে ছিল অবসরপ্রাপ্ত যৌনজিভের ইশারা,খাওয়া হয়ে গেলে পরস্পরের দিকে ছুড়ে মারল সুপের বাউল । দুজনেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হল ।

আলোয় বাড়ির ভেতরটা আর দুটো বুড়োকে আরও বীভৎস, নোংরা আর দুর্গন্ধময় মনে হল যুবকের, কিছুক্ষণ সময় লাগল আবহের সঙ্গে সমঝোতা করতে ।

আচ্ছা, এখনও হার্ড ডিকের মানুষ পাওয়া যায় ? আমি তো ভেবেছিলুম সেসব আমাদের কালের সঙ্গে ফুরিয়েছে । চোখ থেকে কালো চশমা খুলে বলল ড্যাডি নামের বাবা ।

যুবক দেখল লোকটার দুচোখ গলে সাদা হয়ে বাইরে প্রায় বেরিয়ে এসেছে ; বীভৎস ।

না ফুরোয়নি, তোমার ওই হার্ড ডিকের নিসপিসুনির জন্যেই মার খেয়েছিলে । বলল যুবতী ।

যুবক শ্লেষ্মা জড়ানো গলায় বলল, কি যে খাওয়ালেন, এখন বাড়ি যেতে পারব কি না জানি না ; বাইরে মোটর সাইকেলটা আছে কেউ না নিয়ে পালায় ।

কেউ নেবে না, কিছু চুরি যায় না শ্মশানকলোনিতে, মড়ার হাফ-বেকড নাক আর মড়ানীর সিজলিং নিপল ছাড়া । তোমাকে যে মেয়াও মেয়াও কিস দিয়েছি, তার নাম হল মেফিড্রোন, এটা এক ধরণের কেমিকাল, এর নাম মেথিলমেথাক্যাথিনোন, তোমাকে এই জন্য বলছি যে তুমি আকাট মুকখু, আর এখন নেশায় তোমার মাথা কাজ করছে না ; কিছুদিন আগে পর্যন্ত বাজারে কেমিকালের দোকানে সহজেই পাওয়া যেত, এখন সরকার ব্যান করে দিয়েছে, ছাত্রদের মধ্যে পপুলার নেশা, এতে গাঁজা চরসের মতন ফোঁকাফুঁকির বালাই নেই, বদগন্ধও নেই, অতটা নেশাও হয় না, অথচ ফুরফুরে নেশা হয়, লোয়ার ক্লাস নেশা মনে হয় না, আমি একটা ফ্যাকট্রি থেকে সরাসরি কিনি ।

আমাকে এসব বলছেন, তারপর যদি প্রতিষ্ঠানে ফাঁস করে দিই ।

তুমি করবে না জানি । তুমি তো নিজেই স্বীকার করলে দিনে সাধু রাতে চোর ।

কী করে জানলে ? কিন্তু চোর ঠিক নই, আমি মোটর সাইকেল ফেরত দিয়ে আসি চালাবার পর।

যে একবার আমার লাবিয়ার মাকড়ি খুলেছে সে আমার কেনা গোলাম হয়ে গেছে ।

দুজন বুড়োই এক সঙ্গে বলে উঠল, একে তোর লাবিয়ার মাকড়ি খোলানোর জন্যে এনেছিস ?

যুবতী বলল, হ্যাঁ, মত বদলাতে হল, খোলাবো সময় হলে ।

বুড়ো দুজন একই সঙ্গে বলে উঠল, তোর মা আমাদের দিয়ে নিজের লাবিয়ার মাকড়ি খোলাবে বলে লোভ দেখিয়ে বিয়ে করেছিল, তারপর ল্যাঙ মেরে দিলে, তাই আজকে আমাদের এই দশা । এর ভাগ্যে যে কী লেখা আছে তা জানি না ; শেষে তোর মা এসে একে তোর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে না যায় । বুঝলে মিস্টার হার্ড ডিক, মাকড়িটা হল সূর্য আর তাকে ঘিরে পাক খায় যে মুক্ত সেটা হল পৃথিবী । মাকড়িটা যেখানে ঝোলানো, তা হল আকাশগঙ্গা, ছায়াপথ, ওই পথে যদি একটু ভুল করেছ, পিছলে পড়েছ, আমার মতন অন্ধ বা বাপিবুড়োর মতন অ্যালঝিমার রুগি হয়ে মরবে ।

ছিনিয়ে নিলেই হল ! ভালোবাসা আছে কী জন্য ? মাকে থেঁতো করে ভালোবাসার ঘরে ছেড়ে দেবো, ওদের প্রিয় গানের মাঝে ।

যুবক বলল, আমি শুধু খুলে দিতে চাই, জাস্ট অনুসন্ধিৎসা, আপনাদের মতন আকাশগঙ্গায় সেঁদিয়ে সাঁতরাতে চাই না ।

প্রেম আর মৃত্যুর মধ্যে বিশেষ ফারাক নেই হে, মিস্টার হার্ড ডিক, বলল ড্যাডি নামের বাবা, পাইপের ধোঁয়া উড়িয়ে, দুটোই এক ধাক্কায় কাজ সাঙ্গ করে ফ্যালে ; আদিরস আর অন্তরস।

Double Space

যুবক বলল, এমন নেশা করে দিয়েছ যে এখন আমি কিছুই করতে পারব না । আমি ভালো করে দেখতে চাই ।

তুমি ভাবছিলে আমার মেনসের ব্লিডিং হচ্ছে, এখন সে কথা জানতে চাইছ না ?

হ্যাঁ, তাইতো, তুমি অমন অবস্হাতেই রয়েছ দেখছি, যাও চেঞ্জ করে এসো ।

ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশান, আমিই আপনাকে এত দিন ধরে স্টকিং করেছি, আপনি আমাকে স্টকিং করেননি । আমি জানি আপনি রেড বেল্ট কারাটে, ফ্রি স্টাইল বক্সিংও জিতেছেন বেশ কয়েকটা ।

মানে ?

মানে ওটা নকল রক্ত, আমার রক্ত নয় ।

ড্যাডি চিৎকার করে উঠল, রক্ত ? কোথায় রক্ত ? মার শালাকে মার মার মার মার বানচোদকে, দে প্যাঁদানি, মার মার মার মার…বাল উপড়ে নে…

আঃ, কী হচ্ছে ড্যাডি, কোথ্থাও রক্ত নেই, বলল যুবতী ।

ড্যাডি কাঁদতে আরম্ভ করল, আর জড়ানো গলায় বলতে লাগল, আমার কেউ নেই, ওগো আমার কেউ নেই, কেন আমাকে পেটানো হয়েছিল কেউ জানতে চায়নি, আমি নিজেও জানি না কেন আমার নাক থেঁতো করে চোখ গেলে দেয়া হয়েছিল, প্রতিষ্ঠান আসেনি, প্রতিবেশি আসেনি, সংস্হার লোক আসেনি, কোনো এনজিও আসেনি, আমি অন্যগ্রহের প্রাণী হয়ে গেলাম…হায়…

চুপ করো, চুপ করো, চুপ চুপ চুপ, হাঁ করো, ড্যাডি নামে বাবাকে বলল যুবতী ।

ড্যাডি নামের বাবা হাঁ করলে, মুখের মধ্যে এক টিপ মেয়াও মেয়াও গুঁড়ো ঢুকিয়ে দিতে চুপ করল বুড়ো ।

মেয়াও মেয়াও ওনাদেরও ? জিগ্যেস করল যুবক ।

যুবতী বলল, হেসে নয়, গম্ভীর হয়ে গিয়ে, হঠাৎই, দিনের বেলা ঝগড়া করছে তো দুজনে, সন্ধ্যে হলেই একজন আরেকজনের ওপর চাপা আরম্ভ করবে, হোমোসেক্সুয়াল ওল্ড লাভার্স, মায়ের লাথি খাবার পর এখন বিছানাই ওদের স্বর্গ আর নরক, তারপর মুখে হাসি ফিরিয়ে এনে বলল, ঘুরিয়ে বলতে হলে, সত্য বলে কিছু হয় না, যা হয় তা হল অসামঞ্জস্য, অ্যাবসার্ডিটি ।

প্রসঙ্গ পালটে, যুবতীকে যুবক বলল, আমাকে স্টকিং করছিলেন কেন, আমি রেড বেল্ট, ফ্রি হ্যাণ্ড কিক বক্সিং লড়ি, তাতে আপনার কী লাভ ।

ভুরু কুঁচকে যুবতী বলল, তোমার সাহায্য আমার চাই, তুমি রেড বেল্ট, কিক বক্সিং এক্সপার্ট ।

যুবক বলল, আমার নেশা গাঢ় হয়ে চলেছে…জীবনের মানে বা উদ্দেশ্য খুঁজতে যেও না কখনও…আমি এর আগে কী বলেছি মনে করতে পারছি না…আহা কি আনন্দের…নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যর্থতা ডেকে এনেছি জীবনে…আনবিক বোমা ফাটার পর যে ফুল আকাশে গিয়ে খোলে তার চেয়ে সুন্দর কোনো ফুল আর নেই…সৌন্দর্য চিরকাল ধ্বংস ছাড়া আর কিছু করতে পারে না…মানুষ জাতটাই তো ব্যর্থ…তাহলে নিজের ব্যর্থতা নিয়ে ভাববো কেন…আমি কখনও অপমানিত হই না সে তুমি আমাকে গালমন্দ করো বা জুতোপেটা করো…আমি রাস্তায় পড়ে থাকা ঝিকমিকে থুথু…কতো লোক তো পোঁদে মৌমাছির চাক নিয়ে সারাজীবন মধু বেচার চেষ্টা করে যায়…কোনো আগাম পরিকল্পনা করি না…জানি ব্যর্থ হবো…সবাই পৃথিবীটাকে বদলাবার তালে আছে…তার প্রমাণ তো দেখতেই পাচ্ছি…কোনো বাঞ্চোৎ উদ্দেশ্যসাধনে সক্ষম হয়নি…আমার নেশা হয়ে গেছে…কোথায় গেলে গো লাবিয়া রানি…মাকড়ি কই…আছে…নাকি বানানো গল্প…আমার মায়ের তো কোনো মাকড়িই ছিল না… কানেও নয়…লাবিয়াতেও নয়…আমিই তো মায়ের শবের শাড়ি খুলে নতুন শাড়ি পরিয়েছিলাম চিতায় তোলার আগে…গায়ে গাওয়া ঘি মাখিয়েছিলাম…মায়ের গর্ভে ফিরে যেতে চাই…মা বলেছিল আমি গিরগিটির মতন রং বদলাতে পারি বলে জীবনে কখনও বিপদে পড়ব না…তবে নেশা হচ্ছে কেন…মা মারা যাবার পর কোনো রান্নাই ভাল্লাগে না…

যুবতী : বুড়ো দুটোর মুখ বন্ধ করালাম তো ইনি শুরু হয়ে গেলেন , মেয়াও মেয়াও কিসের উল্টো প্রতিক্রিয়া এই প্রথম দেখছি ।

যুবক : শুরু হলেই শেষ হবে এমন কোনো কথা বিজ্ঞান বলে নি…বিগ ব্যাঙ…বিগ ব্যাঙ…বোবা অন্ধকার…বাবা তো আমার জন্যে গর্ব বোধ করত…আমিও বাবার জন্য গর্ব বোধ করি…দুজনে দুজনের সব গোপন কথা জানতাম…মাস্টারপিস বাবা…বাবা ছিলেন যাদুকর…নেগেটিভকে পজিটিভ করা ছিল ওনার নেশা আর পেশা…আমার ভেতরে অনেক রকমের জন্তুজানোয়ার সাপ-বিছে আছে…তাদের বেরোতে দিই না…কেউ কেউ কেন এতো সুন্দর হয়…ধাঁ করে এসে লাগে…কিন্তু খুঁত থাকবেই…আমি একাই ভালো আছি…কোনো সম্প্রদায়ে থাকতে চাই না…সম্প্রদায়ে গেলেই সবাই মিলে ঘেন্না করার আনন্দে ভুগতে হবে…সম্প্রদায়ও তো নেশা…তার চেয়ে মেয়াও মেয়াও কিসের নেশা বেশ ভালো…কারোর ক্ষতি তো করছি না…যে কথাগুলো পেছনের সিটে বসে বলছিল…হাটতে হাঁটতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছিল…তার মাধ্যমে কিছুই বলছিল না…সব মিথ্যে…বানানো…এখন আমার যাবতীয় দ্বিধা উবে গেছে…এই বুড়ো দুটো যেচে কেনা গোলাম হয়েছে…কার ক্রীতদাস জানি না…দাসত্ব উপভোগ করছে…যৌনরোগের মতন…আমি তো মেয়েটার দুঃখময় রাগি দৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করে বিশেষ কিছু পেলাম না…এদের এই জবরদখল শ্মশানকলোনির বাড়ির মতন বাড়ি দেখিনি জীবনে…অচেনা…আতঙ্কজনক…দুর্দশার আড্ডাখানা…যন্ত্রণা চিরকাল নবীন…প্রত্যেক মেয়ের জ্যামিতি আলাদা অথচ আমি গণিতজ্ঞ নই…অসৎ মেয়েরা কুচ্ছিত হলেও সুন্দরী হয়…তাদের ভেতরের অন্ধকার তাদের সুন্দরী করে তোলে…

এ মাল তো দেখছি যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে কয়েককাঠি সরেস ; যুবকের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে প্রায় চিৎকার করে ডাকে যুবতী, এই হার্ড ডিক, ঠোঁটে এক চুমুতেই নেশা হয়ে গেল ? তাহলে ক্রিটিকাল জায়গায় চুমু খেলে তোকে তো পাগলাগারদে ভর্তি করতে হবে ।

যুবক : বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলে চলেছি…মিথ্যে কথা বলার একটা আনন্দ আছে…দশকর্মের জিনিসপত্তর বেচতে গিয়ে এইটাই সবচেয়ে জরুরি অভিজ্ঞতা….প্রেমের কথা আউড়ে সময় নষ্ট করা উচিত নয়…মরার জন্যে আর সেক্স করার জন্যে ভালো নরম বিছানা খুবই দরকার…সেক্স বাইরে বেরোয়…প্রেম ভেতরে ঢোকে…দুটো উলঙ্গ দেহের মিশ খাওয়া জরুরি…দীর্ঘ জীবনের জন্যে…এর আগে সব বানিয়ে বলেছি…বাপি আঙ্কল…ড্যাডি আঙ্কল…দীর্ঘক্ষণ ধরে চুমুখাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর…প্রেমেও মাঝে মাঝে গ্যাপ দিতে হয়…সেক্স হল দুটো উলঙ্গ শরীরের সবচেয়ে উচ্চাঙ্গের নাচ…কোনো মিউজিকের দরকার নেই…শরীরই সঙ্গীত…বাবা বলে দিয়েছিলেন…দশকর্মের মাল বেচছো বলে ঠাকুর্দেবতায় বিশ্বাস কোরোনি যেন…মন্দির-টন্দিরেও যেওনি…ওনারা বশ্যতা দাবি করেন…একবার কারোর অনুগত হলেই জীবন তালগোল পাকিয়ে যাবে…হতবুদ্ধি…বিভ্রান্ত…কিংকর্তব্যবিমূঢ়…রাজনীতিকদেরও ঘেন্না করবে…ওরাও বশ্যতা দাবি করে…সুন্দরীদের সঙ্গে সেক্স করে কখনও মন ভরবে না…তুমি দোটানায় পড়ে যাবে যে বাদবাকি অঙ্গগুলো নিয়ে তখন কী করব…জুলিয়াস সিজার হিটলার স্ট্যালিনের মতন পাছার জোর নিয়ে আর কোনো রোল মডেল পৃথিবীতে জন্মাবে না…মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিল করে রাস্তায় হাঁটলে বিপ্লব পালিয়ে যাবে…বাবা বলেছিলেন ঠাকুর্দেবতা হল অর্শের মতন…শান্তিতে বসে থাকতে দেবে না…

যুবতী বলল, এ তো দেখছি প্রথমবারেই কুপোকাৎ । এরকম হলে তো এর শহিদ মিনার এক মিনিটেই ধ্বসে পড়বে ! বাবা আর কী-কী বলেছিলেন শুনি ?

যুবক : বাবা বলেছিলেন…গরম মাংসের শরীরের সঙ্গে সেক্স করার চেয়ে স্বপ্নদোষে আনন্দ বেশি…কতো হীরে মুক্তো পান্না পোখরাজ তরল আকারে বেরিয়ে ঘুমকে নদীতে পালটে দ্যায়…প্রেম আনন্দও নয় বিষাদও নয়…প্রেম হল মুহূর্তদের চিরকালীন বানাবার অসফল ম্যাজিক…আমরা সবাই নিজেকে শাস্তি দিতে বাধ্য…যুদ্ধ দাঙ্গা খুনোখুনি লুটপাট চলতে থাকবে নয়তো প্রতিষ্ঠানগুলো টিকবে না…মানবসভ্যতা রসাতলে চলে যাবে…

এ মরণের পাবলিক কোন জগতের চুতিয়া রে, বলে ওঠে যুবতী ।

যুবক আধখোলা চোখে চেয়ে বলে, আরেকটা মেয়াও মেয়াও চুমু হবে ?

না, হবে না, বলল যুবতী, শেষে ওভারডোজের বাওয়ালে মরবে । যুবকের মাথা দুহাতে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে ওঠে, ক্লিন সেক্সুয়াল ভিজে চুমু নাও ।

আরে ! তোমার সেক্সুয়াল চুমু নিয়ে কী করব ? তুমি তো স্তালিন, হিটলার, জুলিয়াস সিজার, প্রতাপাদিত্য, ট্যাগোরের সঙ্গে শুতে চাও । নেশার ঘোরেও যুবক দেখল যে যুবতী কখন শাড়ি পালটে, চান করে, চুলে শ্যাম্পু করে, কালো স্ল্যাক্স আর মিলিটারি টপ পরে এসেছে । আঁশটে বদগন্ধের বদলে যুঁই ফুলের সুগন্ধ ।

এতক্ষণ ধরে নেশার ঘোরে আছি ? তোমার স্ল্যাক্সের তলায় লনজারি নেই তো ? থাকলে অসুবিধা হবে কি ? জিগ্যেস করল যুবতীকে । তারপর যোগ করল, আচ্ছা, সারাদিন জানলায় বসে শাহ জাহান কী করতেন, শুধু একটা দেহই কি ভেসে উঠত ওনার চোখে ? আরও যাদের সঙ্গে শুতেন, তাদের মাংসের স্মৃতি কি কিছুই ছিল না ? তাদের বুকের মাপ, মাইয়ের বোঁটা, উরুর তাপ, চুলের মুঠি, বগলের গন্ধ, ফোরপ্লের অরগ্যাজম, মনে পড়ত না ? তাদের দুই পা কি জাহাঁপনার কাঁধে উঠে গহ্বহের নিশিডাক দিত না ?

জবাব দিল বাপি নামের বাবা, বলে উঠল, নেশার ঘোরে ছিলে বলে বেঁচে গেছ, নয়তো আমাদের সম্পর্কে যে বাজে বকছিলে তুমি, তোমার লিঙ্গ কেটে ফেলতুম আমরা । অনেকের লিঙ্গ কেটে ফরম্যালিনে চুবিয়ে রেখেছি, ওই দিকে, বইয়ের তাকের ওপরে, দ্যাখো । আর তোমার প্রশ্নের উত্তরে বলি, প্রেম-ফেম তো এনেছিল কেরেস্তানগুলো, তার আগে ছিল বিশুদ্ধ যৌনতা, আগুনের মতন টাটকা, খাজুরাহো আর কোণারক দেখেছ কি ; আহা, আমাদের ছিল বাৎসায়ন, আম্রপালী, বহুবিবাহ, বহুগমন, সমকাম, বহুস্বামীর সুখের শান্তির স্বস্তির দেশ, প্রেম করতে শিখিয়ে সব নষ্ট করে দিলে কেরেস্তানগুলো । [১৪] হ্যাঁ, তুমি জিগ্যেস করতে পারো যে তাহলে প্রেমিক কেন প্রেমিকার মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে !

ড্যাডি নামের বাবা বলল, আমি মারতে পারতুম, মারিনি, এতো সুন্দর মুখ, আহা চোখ জুড়িয়ে যায়, মগজের ভেতরের বিবেক সব পরিকল্পনা ফুরফুরিয়ে ভণ্ডুল করে দিলে ! মারলে কিন্তু ওর সুন্দর মুখ আমার কব্জায় চলে আসতো, আমিই শেষবারের মতন ওর সুন্দর মুখ দেখতাম, তারপর যারা দেখত তারা কুচ্ছিত দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিতো, যেমন আমায় দেখে ঘেন্না করে সবাই । তারপর নিজেকে শুনিয়ে বলল, মানুষ জন্ম থেকেই দয়াহীন নিষ্ঠুর, মৃত্যুকে সৃষ্টি করে ।

ও, তাই কেনা গোলাম হয়ে গেলেন ? জানতে চায় যুবক ।

ড্যাডি নামের বাবা বলল, আমরা কিনা ক্রীতদাস, কেনা গোলাম ।

বাপি নামের বাবা ড্যাডি নামের বাবাকে বলল, ওই গানটা ধর, আমরা সবাই খোজা গানটা, দুজনে মিলে গাই, আমাদের রানিকে উৎসর্গ-করা গান । বলে উরু পেটা আরম্ভ করল, তবলার ঢঙে ।

বুড়ো দুজন আরম্ভ করল গান : [১৫]

আমরা সবাই খোজা, আমাদের এই রানির রাজত্বে

নইলে মোদের রানির সনে মিলব কী শর্তে ?

আমরা হুকুম তামিল করি, তাঁর আঙুল নাড়ায় চরি,

আমরা মজায় আছি দাসের রানির ত্রাসের রাজত্বে–

নইলে মোদের রানির সনে মিলব কী শর্তে ?

রানি সবারে দেন মার, সে মার আদর করে দেন,

মোদের খাটো করে রাখলেই বা হাজার অসত্যে–

নইলে মোরা রানির সনে মিলব কী শর্তে ?

আমরা চলব তাঁরি মতে, শেষে মিলব তাঁরি পথে,

মোরা মরলেই বা বিফলতার বিষম আবর্তে–

নইলে মোরা রানির সনে মিলব কী শর্তে ?

গানটা আরও ছিল কি না যুবক জানে না, বুড়ো দুটো চুপ করে যেতে শুনতে পেল দরোজায় বাইরে থেকে তালা খোলার শব্দ, এদেরই কেউ হবে, নয়তো চাবি পাবে কোথ্থেকে ।

Double Space

যুবক দেখল সেই দুজন বডিবিলডার ধরণের স্মার্ট লোক, যাদের সঙ্গে যুবতী, ফিসফিস করেছিল, সুপারি, খুন, বডি এই সব নিয়ে, তারা একটা লোককে কাঁধে নিয়ে ঢুকল ।

যুবতী জিগ্যেস করল, কেউ দ্যাখেনি তো ? বেঁচে আছে না কাজ শেষ করে এনেছিস ।

একজন ষণ্ডা, যে খয়েরি স্ট্রাইপের ফুলশার্ট পরেছিল, গলায় টাই, সে বলল, মনে হয় কাম তামাম হয়ে গেছে । তারপর অন্যজনকে আদেশ দিল, ভালোবাসার ঘরে রেখে দে । দুর্মুশ দিয়ে মাথাটা নরম করে দিস নয়তো ভালোবাসার ভালোবাসতে সময় লেগে যেতে পারে ।

কোথায় পেলি ? জিগ্যেস করল যুবতী ।

খয়েরি ফুলশার্ট বলল, ওই যে, সাতটা গাছ মেরে ফেলেছে, মিলি বাগ, জিপসি মথ, লঙহর্ন বিটলস, বোরার, আর টেন্ট ক্যাটার পিলার ছড়িয়ে, সেগুলোকে মারার কনট্র্যাক্টের টাকা তুলতে গিয়েছিল বিজ্ঞাপন কোম্পানির দপতরে, ওই যে, গাছগুলোর জন্যে যাদের হোর্ডিং ঢাকা পড়ে গিয়েছিল । চালু চিজ বানচোদ, কতো তাড়াতাড়ি গাছগুলোকে মারলে । বিজ্ঞাপনের দপতর থেকে যেই বেরিয়েছে ক্লোরোফর্ম করে কাৎ করে ফেললাম । চ্যাংদোলা করে আনতে হলো ; কয়েকজন শবযাত্রী মড়া পুড়িয়ে হাঁড়ি ফাটিয়ে ন্যাড়া মাথায় চান সেরে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরছিল, সমবেত গান থামিয়ে জানতে চাইছিল যে, কী হল, বাঁশের মাচা পাওয়া গেল না, প্যাকিং বাক্সের মাচা তো সস্তায় পাওয়া যায় ফুটপাথে, ফুলের বাজারের কাছে ?

ওদের বললাম যে পকেট ফাঁকা, কী আর করা যাবে, অগত্যা চ্যাংদোলা করে পোড়াতে নিয়ে যাচ্ছি । ন্যাড়ামাথা শ্মশানফের্তারা শুনে বাহবা দিলে, একজন বলেছে প্রতিষ্ঠানের বারোয়ারি সভায় প্রস্তাবটা লিখিত আকারে তুলবে ।

এই চ্যাংদোলা করে শ্মশানে নিয়ে আসা অনুমোদন করা উচিত প্রতিষ্ঠানের, অনেক খরচ বাঁচবে, খাট-তোষক নষ্ট হবে না, কাঠ নষ্ট হবে না, ফুল নষ্ট হবে না, ফুলবাগানে মৌমাছিরা ডানা-মিউজিকে ফুলেদের ফোসলাতে পারবে, বরেরা মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে বউয়ের খোঁপায় ফুল গুঁজতে পারবে, শ্মশানে মন দিয়ে গান গাইতে গাইতে লোকে আসতে পারবে, ফিরতে পারবে । তারপর ঝিমধরা অথচ অবাক যুবকের দিকে তাকিয়ে যুবতী বলল,মায়ের কাছ থেকেই গাছ মারার সিক্রেটটা শিখেছিল কচি-কচকচে স্কাউন্ড্রেলটা।

অন্ধ বুড়ো বলল, হ্যাঁ, কখন থেকে ভালোবাসা অপেক্ষায় রয়েছে, প্রায় দুতিন দিন ওদের খাওয়া জোটেনি। কার লাশ আনলি ?

যুবতী বলল, আমার মায়ের কচকচে-কচি প্রেমিকের ।

অন্ধ বুড়ো বলল, মেমেন্টো হিসাবে ওর নুনু কেটে রেখে নে, তাকে ফরম্যালিন আছে, তাতে চুবিয়ে রাখ, অনেককাল থাকবে, কিন্তু বিচি দুটোর সুপ রাঁধিস, রান্না হলে ওগুলো খেতে বেশ ভাল্লাগে, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার টেসটিকলস । তারপর নিজেকে শুনিয়ে বলল, মৃত্যু হল ভাগ্যের ব্যবসাদার ।

অন্ধকে উদ্দেশ্য করে যুবতী বলল, তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না, আমাদের কাজ মৃত্যুর পরের, সারা দিন ধরে বসে বসে মানুষের মাংস পোড়ার উজ্জ্বল চিড়চিড়ে-ফটর ফটর স্বরলিপিতে লেখা গান শোনো, তার বেলায় !

অন্য বুড়ো বলল, দারুন খবর, দারুন, দারুন, এতদিনে একটা কাজের কাজ হল ; ভালোবাসার খাবার সময় ওদের প্রিয় গানটা জোর গলায় গাইবার শিস দিয়ে দিস । তারপর যোগ করল, হ্যাঁ, একটা বিচি আমায় খেতে দিস আর আরেকটা ওই বুড়োকে, কতোকাল যে মানুষের বিচির সুপ খাইনি । শ্মশানে যতো মাল আসে, আত্মীয়রা আনতে এতো দেরি করে, চন্দন মাখানো আর ধুপ জ্বালানো আর গোলাপজল ছেটানোয় যে, সব বিচি ততক্ষণে পচে যায় ।

যারা চ্যাংদোলা করে এনেছিল তারা দুজনে একসঙ্গে বলে উঠল, তাছাড়া আজকাল বিচি ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে তো, কোল-কমপিউটারের জন্যে শুক্রাণু কমতে লেগেছে, তাই বেশ কিছু লাশ বিচি খুইয়ে আসছে।

অন্ধ বুড়ো বলল, হ্যাঁ, মনে আছে, একবার এক সুপারম্যান মড়া-নেতার বিচি সুস্বাদু হবে বলে ডোমের কাছ থেকে চেয়ে আনিয়েছিলাম, এঃ, বানচোদের বিচিতে কি পচা গন্ধ, বমি করতে করতে কাহিল হয়ে গিয়েছিলাম, শালার যতো রাজনীতি, বিচি দুটোতেই জমিয়ে রেখেছিল, মানুষ কতো নীচে নামতে পারে, ভাবো, কতো খারাপ দিনকাল এসে গেল ।

তোমার ভয় পাবার দরকার নেই, নেশায় প্রায় আচ্ছন্ন যুবকের দিকে মুখ নিচু করে বলল যুবতী ।

যুবক শুনতে পেল গান শুরু হয়েছে, ওঃ, এটাই ভালোবাসার খাবার সময়ের গান, শুনেছে কোথাও, পুজোটুজোয় তো নয়, পাঁচালিও নেই কোনো এই গানের ; ফিরে এই গানের একটা পাঁচালি ছাপিয়ে নিতে হবে, বাজার আছে নিশ্চয়ই । শুনতে লাগল গানটা, নেশাঝিমোনো পায়ের তাল দিয়ে । ওকে দেখে অন্যেরাও গানের সঙ্গে পায়ের তাল দিতে লাগল ।

“আমরা করব ভয়,

আমরা করব ভয়,

আমরা করব ভয়, প্রতিদিন…

আহা, বুকের গভীরে আছে বেশ ভয়,

আমরা করব ভয়, প্রতিদিন…

প্রতিদিন সূর্যগ্রহণ,

প্রতিদিন স্বপ্নভাঙন,

কোনোদিন সত্যের ভোর, আসবে না…

এই মনে নেই বিশ্বাস,

আমরা করি অবিশ্বাস,

সত্যের ভোর আসবে না, কোনোদিন…

পৃথিবীর মাটি হবে খটখটে,

বাতাস হবে তিতকুটে, প্রতিদিন…

এই মনে নেই বিশ্বাস,

আমরা করি অবিশ্বাস,

আকাশ হবে গনগনে, প্রতিদিন…

আরো হোক ধ্বংসের গান,

পাবলিককে ধরে পেটান,

ধ্বংসের সুরে হবে গান, প্রতিদিন…

আমরা মানি সব বাধাবন্ধন,

হাতে বাঁধা শেকলের ঝনঝন,

সামনে মিথ্যার জয়, প্রতিদিন…

এই মনে নেই বিশ্বাস,

আমরা করি অবিশ্বাস,

সামনে মিথ্যার জয়, প্রতিদিন…

আমরা করব ভয়,

আমরা করব ভয়, প্রতিদিন…

আহা, বুকের গভীরে আছে বেশ ভয়,

আমরা করব ভয়, প্রতিদিন…

আমরা করব ভয়, প্রতিদিন…”

গানটা শেষ হলে আবার শুরু থেকে রিওয়াইণ্ড হয়ে বাজতে লাগল । যুবক জানতে চাইল, এটা কোন বাংলা ব্যাণ্ডের গান ?

অন্ধ ড্যাডি বলল, এটা ভালোবাসার গান, ওরা নিজেরাই গাইছে, এ গানের শেষ নেই, যতক্ষণ লাশ ততক্ষণ আশ ।

বাপি, যার কপালের ডানদিকের আব চকচক করছিল, যুবকের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিকেদারদের জয়ের যুগ চলছে হে, বুঝলে ? ফর ঠিকেদার, অফ ঠিকেদার, বাই ঠিকেদার, নো চেঞ্জ, নো বদল । তাই ভালোবাসার এই গান এখন বেশ জনপ্রিয় ; শ্মশানে যারা আসে তাদের অনেকেই আর হরিবোল দেয় না, এই গান গাইতে গাইতে আসে, গাইতে গাইতে ফিরে যায়, তাদের কাছে শুনে-শুনে শিখে নিয়েছিল শকুনগুলো ।

ড্যাডি, নখ-ওঠা বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে খোদরানো সিমেন্টের মেঝেতে অদৃশ্য কোনো শব্দ লিখতে লিখতে বলল, প্রায় কাঁদো-কাঁদো গলায়, আমার সব বইগুলো হেলায় পড়ে আছে, পড়বার কেউ নেই, বইগুলো অভাগা, পড়ুয়া না পেয়ে ওরাও মরে যাবে একদিন, অনেকগুলো বই তো অলরেডি মরে গেছে, মরা বইদের যে শ্রাদ্ধশান্তি করব, তারও উপায় নেই, দেখতেই পাই না । তারপর সত্যিকারের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, শুনেছি ফুটপাথের বইঅলারাও বিনে পয়সায় দিলে নিতে চায় না, বলে এইসব মরা বইয়ের চেয়ে ছুকরি-ছোকরাদের বেচা কাঁকড়াটে কবিতার বই বরং বেশি বিক্রি হয় ।

যুবক জানতে চাইল, কেন, আমার দোকান থেকে তো নানা দেবী-দেবতার পাঁচালিও বিক্রি হয় রেগুলারলি ; বিয়েতে আজকাল ভোজ খেতে গিয়ে লক্ষ্মীর পাঁচালিই গিফ্ট দ্যায় নিমন্ত্রিতরা, কেননা ছিঁড়ে গেলেও যেখানে সেখানে ফেলে দেয়া যায় না, নদীতে বিসর্জন দিতে হয় ।

ফুটপাথের বই-বেচিয়েরা কেনে তোমার পুরোনো পাঁচালি ? জানতে চাইল অন্ধ ।

না, পাঁচালি সেকেণ্ড হ্যাণ্ড কেনা অশুভ । বিয়েতে সেকেণ্ড হ্যাণ্ড পাঁচালি দেয়া যায় না ; বিয়েতে পাঁচালি দিলে সে বিয়েতে নাকি প্রেমের বদলে সেক্স গুরুত্ব পায় আর গণ্ডায় গণ্ডায় পিল-পিল করে বাচ্চা হয় বছর-বছর ।

অন্ধ বলল, আগে জানলে একখানা সেকেন্ড হ্যাণ্ড পাঁচালি কিনতাম এই সব জ্ঞানের বই না কিনে ।

বাপি নামের বুড়োর দিকে তাকিয়ে, কেন, আপনি তো দেখতে পান, পড়লেই পারেন, দেয়ালের তাকে, ধুলো পড়ে আবছা, ফ্যাকাশে রঙের মলাট, সারি দিয়ে রাখা বইয়ের তাকের দিকে ইশারা করে বলল যুবক ।

চক্ষুষ্মান বুড়ো নিজের কালো চশমা খুলে, বলল, আরে ওসব মরা বিপ্লবের বই পড়ে কিছু হয় নাকি! তাছাড়া বইগুলো ধার নিয়ে আর ফেরত দ্যায়নি, বলে বেড়াতো যে সারাজীবন ঋণী থাকতে চায়, জ্ঞানের প্রতি ঋণী, আসলে গেঁড়িয়েছে বলে ঋণী, সে কথা তো আর সকলে জানছে না । আর জ্ঞান ? ওই তো ও জ্ঞান ফলাতে গিয়ে আগতখোকা-বিগতখোকা-বহিরাগতখোকাদের ঠ্যাঙানি খেয়ে মাশুল দিল ; জ্ঞান ফলাবার জন্যে শেষে অন্ধ হতে হলো । দিকে দিকে অন্ধদের পাকাচুল পঙ্গপাল, ফি-দিন ‘আমরা করব ভয়’ গাইতে গাইতে শ্মশানে আসছে আর আগুনে ছাই হয়ে যাচ্ছে । একটু-আধটু যা বাঁচে ভালোবাসায় খায় ।

আবের ওপর হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলল, আত্মআবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে হলে, নিজেকে যে অপরিহার্য তথ্য ঠেশে-ঠেশে খাওয়ানো হয়েছে আর যা থেকে ওই আবিষ্কার বেরাস্তায় চলে গেছে, তার ওপর জবরদস্ত দখল থাকতে হবে । আর বেশি দিন নেই ; ইউরোপে লক্ষ লক্ষ মানুষ আফ্রিকা আরবদেশ আফগানিস্তান থেকে ঢুকে ফাটিয়ে চৌচির করে দেবে, যতো বেগড়বাঁই তত্ব ওরা পৃথিবীর ওপর এতোকাল ফলিয়েছে সেগুলোকে, জাস্ট ওয়েট অ্যাণ্ড ওয়াচ । একসঙ্গে দুটো স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা রাখি, বুঝলি ?

পাইপের ধোঁয়া উড়িয়ে, অন্ধ বলল, তুমি চুপ করো দিকিনি ; নিজে তো বিগত সংস্কৃতি আর উদারতার অতিশয়োক্তির বানাউটি আর সর্বনাশী সম্পর্কে ফেঁসে আছো জীবনভর । দেশভক্তি, সামাজিক সাজগোজ, গোমর, মুখখানা দেখেছো নিজের ? ঠিক যেন যোগেন চৌধুরীর আঁকা, ওপর থেকে নিচে ওব্দি নেতিয়ে গলে গলে চুইয়ে পড়ছে ।

চক্ষুষ্মান বুড়ো, খেপে গেছে বোঝা যাচ্ছিল, উত্তেজনায় কাপতে-কাঁপতে বলল, তোমার মুখ দেখেছ, কালো চশমা খুললেই প্রকাশ কর্মকারের আঁকা মুখের মতন দেখায় । চারিদিকে অন্ধকার দেখতে পাও, যা নিজেরাই বানিয়েছ, সুখে থাকার ভান করো, চারিদিকে জোচ্চুরির আর অন্যায়ের দানা পুঁতেছ, এখন প্যারানয়ায় ভোগা ছাড়া তোমার উপায় আছে নাকি, শালা অন্ধ কোথাকার, অন্যের মতাদর্শ ভাঙিয়ে খেয়েছে এতোকাল । ব্যাটা বোঝেই না যে মানুষের সমাজে মানুষের জীবন কাটাতে হলে লাথালাথি হবেই । ইতিহাস-খ্যাদানো ভূগোল-তাড়ানো গাণ্ডু, যার কথা ধেবড়ে গিয়ে মানে বেরোয় না , ভেতরে ঢু ঢু, অন্যের বুকনি কপচায়, সারাজীবন ফাকতা উড়িয়ে লেকচারবাজি করে তোমার জীবনের অ্যাচিভমেন্ট কী ? লাবিয়ার মাকড়ি খোলার শর্তে সারাজীবন হ্যাঁ আর না, হ্যাঁ আর না, হ্যাঁ আর না, তামিল করে গেল। কথাগুলো দ্রুত বলে পেট নাচিয়ে হাসতে লাগল চক্ষুষ্মান বুড়ো । আবের বদলে আদরের হাত নাভিতে ।

হাসির দমকে কোলের অ্যাটলাস মেঝেয় পড়ে গেলে, যুবক দেখল, বাপির কুঁচকির সব চুল পেকে গেছে । ওর মনে হল, এরা কথা বলে একে আরেকজনের সম্পর্কে যা ঠিকমতন বোঝাতে পারছে না, তা দুজনের আঁকা দিয়ে সঠিক বোঝাতে পেরেছে । কথাদের পেট থেকে মানে উধাও হয়ে গেছে এদের দুজনের, কথাদের বোধহয় পেটখারাপ বা আমাশা হয়েছে, ভ্যাজর-ভ্যাজর দিয়ে পরস্পরের যন্ত্রণাভোগের কারণ বুঝতে চেষ্টা করে চলেছে । নিজেকে নিঃশব্দে বলল, মানুষের কথারও জোলাপ হওয়া উচিত ছিল, সব বেরিয়ে যেতো হড়হড়িয়ে ।[১৬]

Double Space

অন্ধ বুড়ো চক্ষুষ্মানের কথা লক্ষ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল তার ওপর ।

যুবতী, যুবক, দুজন স্মার্ট ষণ্ডা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চক্ষুষ্মান বুড়ো পাছার তলা থেকে মাংসকাটার ভারি চপার বের করে অন্ধের গলা বুক পেট মুখ লক্ষ্য করে চালাতে থাকল একের পর এক, চিৎকার করতে থাকল, করব এদের জবাই, তোমাকে তো পাবই, করব এদের জবাই, তোমাকে তো পাবই ।

অন্ধ বুড়ো পড়ে গেল মেঝেয়, রক্তারক্তি, মুন্ড ধড় থেকে আলাদা । টিকটিকির ল্যাজের মতন নাচতে থাকে মুণ্ডহীন ধড় ।

চক্ষুষ্মানের হাত থেকে চাপাতি কেড়ে নেবার চেষ্টায় স্মার্ট ষণ্ডা দুজন এগোতে, তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি চপার চালানো আরম্ভ করল বুড়ো ; দুজনেরই গলা থেকে মুণ্ড আলাদা হয়ে ছিটকে পড়ল মেঝের ওপর ।

চক্ষুষ্মান উলঙ্গ বুড়ো মাটিতে পড়ে গিয়েছিল ; সেই অবস্হাতেই নিজের গলায় কোপ দিয়ে মুন্ডু ধড় থেকে আলাদা করে ছটফট করতে লাগল । মরে গিয়েও দুজনের ধড়ের পারস্পরিক লাথালাথি থামেনি, মুণ্ড দুটো একে আরেকের দিকে তাকিয়ে মরণোত্তর গালমন্দ করে চলেছে ।

যুবকের মনে হল, কাটা মুণ্ডগুলো ওর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে অট্টহাসি হাসছে, বোধহয় বলছে, কোথায় গেল হে তোমার রেড বেল্ট আর কিক বক্সিং !

মুণ্ডগুলোর দিকে তাকিয়ে যুবকের মনে হল, কোন পাগলদের পাল্লায় পড়েছিলাম, নিজেরা কাটাকাটি না করলে এই শ্মশানকলোনি থেকে বেরোনো কঠিন হয়ে পড়ত ; দুটো বুড়ো আর দুটো পালোয়ান মিলে আমায় সোপর্দ করে দিত ভালোবাসায় ।

চক্ষুষ্মানের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে নাড়ি দেখে, তারপর অন্ধের, বুকে কান রেখে, রগের পাশে আঙুল রেখে দেখল যুবক, বলল, এনারা গেছেন, মুণ্ডু আর জোড়া লাগানো যাবে না ; ভালোবাসার ওভার ফিডিং হয়ে যাবে । মেঝে থেকে চপার তুলে সকলের লিঙ্গ এক এক করে কেটে , সেগুলো তাকের ফরম্যালিনের কাচের জারে ফেলে দিল, দেখল জার ভরে গেছে নানা মাপের লিঙ্গে । বইগুলোর সঙ্গে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার প্রতিযোগীতা করছে অজানা লিঙ্গগুলো, সন্দেহ নেই !

যুবতী জিগ্যেস করল, সত্যিই মরে গেল বাপিবাবাটা আর ড্যাডিবাবাটা ? ওদের জন্যেই আমি নিজের জীবন নষ্ট করে এতকিছু করে চলেছি কতোকাল যাবত, সব পণ্ড করে দিল । এরা না থাকলে তো লাবিয়ার মাকড়ি পরতাম না, বিয়ে করে নিতাম তোমার মতন কোনো হাট্টাকাট্টা গাবরু জোয়ানকে।

এখন কী করবে, জানতে চাইল যুবক।

চলো হেল্প করো, এদের চ্যাংদোলা করে ভালোবাসার ঘরে রেখে আসি ।

দুজনে চ্যাংদোলা কর ধড়গুলো রাখলো নিয়ে গিয়ে ভালোবাসার ঘরে ।

দুজন বাবার কাটামুণ্ডগুলো চুল ধরে ঝুলিয়ে, বইয়ের তাকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল যুবতী, মুণ্ডুগুলো মেঝেয় রেখে, ছুটে গিয়ে তাকে রাখা কথ্থক নাচের ঘুঙুর নিয়ে দুই পায়ে স্ল্যাক্সের ওপরে বেঁধে নিল, ফিরে এসে দু হাতে দুই বাবাদের দুই মুণ্ডের চুল ধরে ঝুলিয়ে, দুর্বার উন্মাদনায়, অদৃশ্য আগুনশিখার বিশুদ্ধ হল্কা উড়িয়ে, নাচতে লাগল ।

যুবকের নেশা কেটে গিয়েছিল, দেখল যুবতীর হাতে ঝোলানো মুণ্ড দুটো নাচের তালে তালে চোখ মেলে রশ্মি বিকীর্ণ-করে ওকে ইশারা করছে ।

যুবতীর বেপরোয়া নাচে যুবক ভ্যাবাচাকা, কোনো আড়ষ্টতা নেই গনগনে মুখ যুবতীর, বের করে এনেছে ভেতরের তেজ, সঞ্জীবনী, তাদের পালটে ফেলেছে নাচে ।

নাচের তালে যুবতী গান গাইতে আরম্ভ করল, কন্ঠস্বর বেশ মশলাদার, পাশা-খেলায় জেতা দুর্যোধনের মামার কাজের বউয়ের মতন, ওদের কাটা গলা থেকে মেঝেয় রক্ত পড়ার সরোদ বাজনা বাজছে, গলা থেকে যে নলিগুলো ঝুলে আছে, লাল লাউডগা সাপের মতন মাথা উঁচিয়ে নিজেদের মধ্যে খেলছে :[১৭]

মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যা নাচে

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ

আমি সঙ্গে কী মৃদঙ্গে সদা বাজে

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ

হাসি কান্না হীরাপান্না দোলে ভালে

কাঁপে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে

নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ

কী আনন্দ কী আনন্দ কী আনন্দ

দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ

সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে

তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ

যুবতী নাচ থামাতেই বাবাদুটোর মুণ্ড চেঁচিয়ে ওঠে, আরে, নাচ থামালি কেন রে, বেশ তো নাচের তালে তাল দিচ্ছিলাম ।

নিকুচি করেছে, আমি নাচছিলাম নিজের আনন্দে, তোমাদের গান শোনাবার জন্যে নয়, তোমাদের ভালোবাসার ঘরে রেখে দিচ্ছি, ওখানে যতো ইচ্ছে গান শুনতে থেকো, বলে, যুবতী মুণ্ড দুটো ঝুলিয়ে ভালোবাসার ঘরে দৌড়ে ঢুকল, পেছনে পেছনে যুবক ।

বাকি মুণ্ডগুলো নিয়ে গিয়ে যুবক দেখল ভালোবাসা দুর্মুশ করা শবের ভেতরে মাথা পুরো ঢুকিয়ে তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে, ছিঁড়ে বের করছে, আর গপ গপ করে গিলছে ।

যুবক ভাবল, আচ্ছা, আমরা কেন খাবারের ভেতরে গলা পর্যন্ত মাথা ঢুকিয়ে খেতে পারি না !

যুবতী বলল, এই মুণ্ডগুলোকেও দুর্মুশ করে দিন, নয়তো খেতে সময় লাগবে ওদের ।

—নিজের বাবাদের পিটিয়ে দুর্মুশ করবে ?

—মরে যাবার পর বাবারা কি আর বাবা থাকে ? স্মৃতি হয়ে যায় । স্মৃতির স্টক তো আর অসীম নয়, তাই বাবারাও নতুন স্মৃতিকে জায়গা করে দিয়ে লোপাট হয়ে যাবে । বাবা শব্দটা ফোঁপরা হয়ে যাবে দুচার বছরে ।

—তা ঠিক, আজকাল তো মা-বাপদের ফুটপাতে ফেলে ছেলেমেয়েরা আধুনিক জীবনে উধাও হয়ে যায় ।

দুর্মুশ করার সময়ে রক্তের ছিটে লাগল যুবকের পায়ের উরুর চুলে, শর্টসে, জামায়, মুখে-চোখে । মাথার ঘিলু ছড়িয়ে পড়তেই শকুনগুলো মুণ্ডু উঁচিয়ে গান গাইতে গাইতে দৌড়ে এলো তরতাজা জ্ঞান খাবার জন্যে ।

—এখন কী করবে ?

—বাবাদের লায়াবিলিটি তো চুকলো, কিন্তু বাড়লো পালিয়ে বেড়াবার লায়াবিলিটি । ভালোবাসা তো ততো তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে ফেলতে পারবে না, পচা গন্ধে শববাহকদের টানবে । পচা গন্ধ কার না ভালোলাগে, বলো ? পচা গন্ধ হলে লোকে টেনে টেনে শোঁকে, তারপরে ইঁহি ইঁহি করে নাকে রুমাল চাপা দ্যায়, তা সে শিকনির রুমাল হলেও । পচা গন্ধের টানে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে পাবলিক এদিকে আসবেই । নিজেরা তালা ভাঙবে কিংবা প্রতিষ্ঠানকে ডেকে তালা খোলাবে ।

ভালোবাসার জানলাগুলো খুলে দিই, এতকাল বন্ধ করে রেখেছিলাম যাতে পালিয়ে না যায়, এখন তো আর দরকার নেই, পালাবার হলে পালাক উড়ে ।

—এখানে তোমার কোনো প্রমাণ রয়ে গেল ?

—প্রমাণ বলতে বাবাদের আধখাওয়া শব । আর মেয়াও মেয়াও ভরা বস্তাগুলো ।

—তাহলে কী করবে ?

—পালাতে হবে ।

—চলো আমার বাসায় । আমি তো একা থাকি ।

—দুজনেই ধরা পড়ব । তোমাকে যে কাজে লাগাব বলে এনেছিলুম, তার তো আর দরকার হল না । তুমি চুপচাপ বেরিয়ে পড়ো ।

—কিন্তু লাবিয়ার মাকড়ি খুলিনি যে এখনও ? তোমাকে ফেলে পালাতে পারব না ।

যুবতী তাড়াতাড়ি নিজের পোশাক খুলে মেঝেয় ফেলে দিল ।

যুবক বেশ কাছ থেকে তারিয়ে দেখে নিয়ে মাকড়িটা খুলল, খুলেই, মাকড়িতে চুমু খেল, মাকড়ির জায়গাতেও জিভ বুলিয়ে বলল, স্বর্গ যদি থাকে তা এইখানে, নরক যদি থাকে তা এইখানে ।

যুবতী বলল, যথেষ্ট কাব্যি হয়েছে, পরে ওসব নাটুকেপনার অনেক সময় পাবে, এখন যা করা জরুরি, তা-ই করো ।

যুবক দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, লাবিয়ার মাকড়িই ছিল তোমার তিন বাপের বীশ্ববীক্ষা, বাস্তবের ব্যাখ্যা । এখন এই নাও, রেখে নাও মাকড়ি, পরে দরকার হতে পারে ।

যুবতী বলল, মনে থাকবে, থ্যাংকস । ওই ঘরে পেটরলের জেরিক্যান আছে গোটা দশেক, চলো, ছড়িয়ে দিই পুরো বাড়িটায় ।

দুজনে মিলে সারা বাড়িতে পেটরল ছড়াতে লাগল । স্ল্যাক্স পরে নিল যুবতী । দেশলাই কাঠি জ্বেলে ফেলে দিতে, আগুন ছড়িয়ে পড়ল ।

দুজনে হাত ধরাধরি করে পালালো বাড়ির বাইরে ।

চলো, পালাও, বিস্ফোরণ হবে, যুবকের হাত ধরে টান মেরে বাইরে বেরোয় যুবতী, বলে তাড়াতাড়ি করো, কুইক কুইক, জিপ খুলে মোটর সাইকেলে বসো, আমি স্ল্যাকস নামিয়ে বসছি তোমার কোলে, চালাও মোটর সাইকেল, স্টার্ট দাও, উঁচু-নিচু রাস্তা আপনা থেকেই আমাদের পৌঁছে দেবে মহা-আহ্বাদের গন্তব্যে, রসের তীর্থ । ডেথ টু মোনোগ্যামি । বুঝলি, প্রেম হল সবচেয়ে অন্তর্ঘাতী ব্যাপার ।

মোটর সাইকেল স্টার্ট দ্যায়, যুবকের কোলে যুবতী, লাবিয়ার মাকড়ি খুলে এই প্রথম আরেকজনের সাহায্যে । তারপর হাইওয়ে, উড়ে চলে মোটর সাইকেল । দুপাশের গাছের ডালপালারা ওদের কোলপ্রেম দেখে হাততালি দিয়ে পেছন দিকে দৌড়োচ্ছে ।

যুবতী দুহাত ওপরে তুলে চিৎকার করে ওঠে, ইয়াআআআআহাহাহাহা, ধন্যবাদ গ্যালিলিও গ্যালিলি, নড়ে চলেছে, নাড়া দিয়ে চলেছে, নিজেও ওঠানামা করে হাইওয়ের হাওয়ায় ।

দুজনের কেউই পেছন ফিরে দ্যাখে না যে বাড়িটা বিস্ফোরণে উড়ে গেল ।

ফরম্যালিনে চোবানো লিঙ্গগুলো জার ফেটে ছিটকে বেরিয়ে দেবশিশুর ফিনফিনে গঙ্গাফড়িং-ডানা মেলে মেঘ-টুসটুসে হাওয়ায় ছুটে চলল, যাতে খরায় মার খাওয়া দেশটায় বৃষ্টি শিগগির আসে ।[১৮]

তাকে রাখা বইগুলোও মলাটকে ডানা বানিয়ে উড়ে চলল লিঙ্গগুলোর পেছন পেছন ।

ভালোবাসা ততক্ষণে অনেক উঁচু ধোঁয়াটে নীল আকাশে গান গাইতে গাইতে পাক খেয়ে উড়ছে ।

সুনসান হাইওয়েতে , একটা জঞ্জালস্তুপের উদ্দেশ্যে যুবতী আরেকবার চিৎকার করে, মা, এই নাও, টু হেল উইথ তোমার লাবিয়ার মাকড়ি, আমার মেয়ে হলে তাকে লাবিয়ায় মাকড়ি পরতে শেখাব না , এই জঞ্জালেই তুমি আমাকে এক দিনের মাথায় ফেলে দিয়েছিলে, আজ তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি ।

————————————————————————————————————-

সূত্র

[১] The Four Fundamental Concepts of Psychoanalysis. Jaques Lacan. W.W.Norton & Co. New York, 1977.

[২] Ethics : An Essay on the Understanding of Evil. Alain Badiou. Verso, New York 2000.

[৩] Living in the End Times. Slavoj Zizek, Verso, London 2010.

[৪ ] Eros and Civilization. Herbert Marcuse. Beacon Press. Boston. 1955.

[৫] Terra Nostra. Carlos Fuentes. Farrar, Straus and Giroux. New York. 1976

[৬] Delta of Venus. Anais Nin. Penguin Books. 2008.

[৭] Anti-Oedipus : Capitalism and Schizophrenia. Gilles Deleuze and Felix Guttari. Viking Penguin. New York. 1977.

[৮] Fear of Flying. Erica Jong. Holt, Rinehart and Winston. New York. 1973

[৯] Foucault’s Pendulum. Umberto Eco. Sacker & Warburg. 1988.

[১০]S. Charles and G. Lipovetsky. Hypermodern Times. Polity Press. 2006.

[১১]Thomas de Quincey. Confessions of an English Opium Eater. Taylor & Hessey. London. 1823.

[১২]Emile Durkheim. Suicide. The Free Press. Paris. 1897.

[১৩] Alexander Artievsky. Life Death Whatever : How to Achieve a Bliss Without Trying. Createspace. London.2010

[১৪] Zacharias P Thundy. Courtly Love and Ancient India. East West Literary Relations. Michigan. 1981

[১৫] Ingeborg Hoestery. Pastiche: Cultural Memory in Art, Film, Literature. Indiana University Press. Bloomington.2001

[১৬] C.Castoriadis. The Imaginary Institutions of Society. Polity Press. Cambridge. 1975.

[১৭] S.Banes. Terpsichore in Sneakers : Postmodern Dance. Weslyan University Press. Connecticut. 1987

[১৮]Gunther von Hagens. Body Worlds : The Anatomical Exhibitions of Real Human Bodies.Institute for Plastination, Heidelberg, 2006.

Pages: 1 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress