রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – ইন্দ্রজিতের নিকুম্ভিলা যজ্ঞানুষ্ঠান ও দ্বিতীয়বার যুদ্ধে গমন
বৈসে গিয়া ইন্দ্রজিৎ যজ্ঞ করিবারে।
যোগায় যজ্ঞের দ্রব্য লক্ষ নিশাচরে।।
রক্তবস্ত্র ভারে ভারে আনিছে তখন।
রক্তবর্ণ পুষ্পমালা সুরক্ত-চন্দন।।
শরপত্র বোঝা বোঝা ঘৃতের কলস।
কাল ছাগ পালে পালে বহিছে রাক্ষস।।
যজ্ঞশালে শরপত্র বিছায় সকল।
মন্ত্র পড়ি যজ্ঞকুণ্ডে জ্বালিল অনল।।
তীক্ষ্ম অস্ত্রে ছাগল ছেদিয়া কোটি কোটি।
যজ্ঞেতে আহুতি দেয় অতি পরিপাটি।।
আতপ তণ্ডুল যব পাটি পাটি আনে।
হবিতে মিলিত করি দিতেছে আগুণে।।
রক্তবস্ত্র মাল্য দেয় যোবড়ায়ে ঘৃতে।
দশ হাজার ব্রাহ্মণ বসেছে চারিভিতে।।
অগ্নির দুর্জ্জয় শব্দ মেঘের গর্জ্জন।
বিংশতি যোজন শিখা উঠিল গগন।।
তপ্ত কাঞ্চনের মত বিপরীত শিখা।
মূর্ত্তিমান হয়ে অগ্নি আসি দিল দেখা।।
সাক্ষাতে আসিয়া অগ্নি হৈল অধিষ্ঠান।
যব ধান্য দুগ্ধ দধি মধু কৈল পান।।
যে বর চাহিল ইন্দ্রজিৎ পাইল সুখে।
মনের আনন্দে কহে সৈন্যগণে ডেকে।।
রথের সাজন বীর কৈল দুই হাতে।
লাফ দিয়া উঠে গিয়া সংগ্রামের রথে।।
চণ্ডমুণ্ড ছত্রদণ্ড ধরিয়াছে শিরে।
পূর্ব্বদ্বারে উপনীত মার মার করে।।
পুর্ব্বদ্বার আগুলিয়া ছিল নীল-সেনা।
ভঙ্গ দিয়া পলায় বানর অগণনা।।
উঠে পড়ে পলায় পাইয়া সবে ডরে।
মেঘনাদ হাসে বসি রথের উপরে।।
বানরের ভঙ্গ দেখে নীল বীর রোখে।
লাফ দিয়া গেল মেঘনাদের সম্মুখে।।
নীর বীর বলে, ওরে বেটা মেঘনাদ।
জীয়ন্তে ফিরিয়া যাবে না করিহ সাধ।।
সুগ্রীব পাইল রাজ্য শ্রীরামের গুণে।
রাবণে বধিয়া রাজ্য দিব বিভীষণে।।
অজেয় সুগ্রীব রাজা অতুলনা বল।
গাছ পাথরেতে বান্ধে সাগরের জল।।
দুকূল সমুদ্র বেঁধে কৈল এক কূল।
রাক্ষস-কটক মেরে করিল নির্ম্মূল।।
জীবনের বাঞ্ছা যদি চাহ ইন্দ্রজিৎ।
সবান্ধবে লঙ্কা ছেড়ে পলাও ত্বরিত।।
যে বেটা থাকিবে এই লঙ্কার ভিতর।
পাঠাইবে যমালয়ে সুগ্রীব বানর।।
ইন্দ্রজিৎ বলে, বেটা ভ্রমিছিলি বনে।
কেন প্রাণ দিতে এলি রাক্ষসের বাণে।।
না জান ধরিতে অস্ত্র কথার আঁটনি।
এক বাণে যমালয়ে পাঠাব এখনি।।
সুগ্রীব বানরা, তার কিসের বাখান।
লক্ষ্মণ মানুষ-বেটা কত জানে বাণ।।
গোটাকত রাক্ষসে মারিয়া তোর রাম।
মনেতে করেছে বুঝি জিনেছি সংগ্রাম।।
সেই দিন মরে যেন বেটা নাগপাশে।
ভাগ্যবলে বেঁচে গেল গরুড়-নিশ্বাসে।।
পক্ষী-বেটা আসিয়া দিলেক প্রাণদান।
ধিকরে বানরা তার করিস্ বাখান।।
এত যদি কহিলেক রাবণের বেটা।
নীল বানরের বুকে লাগে যেন জাঠা।।
কহিতেছে নীল বীর কোপেতে বিবর্ণ।
তুই না মরে মরে তোর খুড়া কুম্ভকর্ণ।।
আগু পাছু না জানিস্ জাতি নিশাচর।
তুই থাকিতে মরে কেন তোর সহোদর।।
না জানি ধরিতে অস্ত্র হাতে নাহি আঁটে।
মারিব রাক্ষসগণে আইলে নিকটে।।
নাহিক আহার নিদ্রা জাগি সারারাতি।
যাবৎ না মারিব লঙ্কার অধিপতি।।
আজি তোরে মারিয়া মারিব তোর পিতা।
বিভীষণের উপরে ধরাব দণ্ড-ছাতা।।