Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 115

রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

শ্রীরাম বলেন শুন জানকী এখন।
শিবপূজা করি দেশে করিব গমন।।
শিবপূজা করিতে রামের লাগে মন।
বুঝিয়া পুষ্পকরথ নামিল তখন।।
গড়িয়া বালির শিব দিলেন লক্ষ্মণ।
হনুমান আনিলেন কুসুম চন্দন।।
স্নান করি বসিলেন সীতা ঠাকুরাণী।
জাঙ্গালের উপরে পূজেন শূলপাণি।।
জাঙ্গাল উপরে শিব স্থাপিলেন রাম।
তেকারণে সেতুবন্ধ রামেশ্বর নাম।।
পুনঃ চড়িলেন রথে রাম কুতূহলে।
রাম সীতা দুই জনে স্বর্ণ-চতুর্দ্দোলে।।
চতুর্দ্দোলে দ্বারী মাত্র রহেন লক্ষ্মণ।
রাম সীতা দোঁহে হয় কথোপকথন।।
দৃষ্টি কর জানকী, সমুদ্রতীর হেথা।
ঘর সাজাইলাম যে দিয়া লতা পাতা।।
লতার বন্ধন ঘর পাতার ছাউনি।
একেক যোজন পথ ঘর একখানি।।
এইখানে বিভীষণ সহিত মিলন।
এইখানে সাগর দিলেন দরশন।।
কিঙ্কিন্ধ্যার দেখ এই গাছের ময়ালি।
সুগ্রীব হইল মিত্র, হেথা মারি বালি।।
ঋষ্যমূক-পর্ব্বত যে অত্যুচ্চ শিখর।
সুগ্রীব মিতার ঘর উহার উপর।।
সীতা বলিলেন, রাম কমললোচন।
এ পর্ব্বতে দেখিনু বানর পঞ্চজন।।
বস্ত্র ছিঁড়ি ফেলিলাম গাত্র-আভরণ।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ বলি করিনু ক্রন্দন।।
লতা পাতা ধরি আমি রহিবার মনে।
ছাড় ছাড় বলি দুষ্ট চুলে ধরি টানে।।
শ্রীরাম বলেন নাহি কহ সে বচন।
তোমারে হরিয়া তার হইল মরণ।।
চৌদ্দযুগ ছিল রাবণের পরমায়ু।
তব কেশে ধরিয়া সে হইল অল্পায়ু।।
পম্পা-সরোবর সীতা কর নিরীক্ষণ।
ছিলেন ইহার কুলে মতঙ্গ ব্রাক্ষণ।।
স্নাবস্ত্র রাখিলেন মুনি বৃক্ষ-ডালে।
হইল সহস্র বর্ষ তবু নাহি গলে।।
মরিল কবন্ধ হেথা ঘোর দরশন।
যাহার একেক হাত একেক যোজন।।
জটায়ু-পক্ষীর স্থান দেখহ জানকী।
তোমা লাগি যুদ্ধ করি প্রাণ দিল পাখী।।
প্রমোদিয়া ঘর দেখ করিল লক্ষ্মণ।
এই ঘর হইতে তোমায় হরিল রাবণ।।
তোমা হারাইয়া মোর হইল হুতাশ।
এই ঘরে করিলাম দুই উপবাস।।
হের আর রণস্থলী দেখহ সুন্দরী।
সহস্র রাক্ষসে খর দূষণেরে মারি।।
অগস্ত্য-মুনির স্থান দেখ পঞ্চবটী।
যথা সূর্পণখার নাসিকা কান কাটি।।
ঐ দেখ মুনিপাড়া শরভঙ্গ-ঘর।
যথা ধনুর্ব্বাণ মোরে দিলা পুরন্দর।।
অত্রি-মুনির বাড়ী সীতা নহে বহু দূর।
যেখানে পরিলা তুমি সুন্দর সিন্দুর।।
কুন্তী-নদী-তীর এই কর প্রণিধান।
করিলাম যেখানে পিতার পিণ্ডদান।।
হাতে পিণ্ড নিতে পিতা এলেন গোচর।
শাস্ত্রমত থুইলাম কুশের উপর।।
চিত্রকূট গিরি সীতা ঐ দেখা যায়।
ভরত আইল যথা লইতে আমায়।।
ভরত বশিষ্ঠ এল কুল-পুরোহিত।
ভরত বিনয় করিলেন যথোচিত।।
শুনিলে ভরত-বাক্য পিতৃসত্য নড়ে।
কার্য্যসিন্ধি হইলে সকল মনে পড়ে।।
শৃঙ্গবের পুর ঐ গাছের ময়াল।
যাতে মিত্র আছে মোর গুহক চণ্ডাল।।
নন্দীগ্রাম দেখ সীতা গাছের ময়ালী।
যেখানে ভরত ভাই আছে মহাবলী।।
নন্দীগ্রাম নাম শুনি বানর কৌতুকী।
রথে থাকি দেখে তারা দিয়া উকিঝুকি।।
নন্দীগ্রাম নামে সবে হরিষ বিশেষ।
সবে বলে প্রভু আজি যাব বুঝি দেশ।।
শ্রীরাম বলেন হেথা মুনি ভরদ্বাজ।
তাঁর সহ সম্ভাষিতে হইবেক ব্যাজ।।
বন্দিতে মুনির পদ শ্রীরামের মন।
বুঝিয়া আপনি রথ নামিল তখন।।
মুনি-তপোবনে রাম করিয়া প্রবেশ।
দেখিলেন সর্ব্বত্র সকল সন্নিবেশ।।
মুনির চরণে রাম করি নমস্কার।
জিজ্ঞাসেন কহ মুনি শুভ সমাচার।।
বহুকাল বনবাসী না জানি কুশল।
কহ আগে ভরতের রাজা বলাবল।।
মাতা কি বিমাতা কি পিতার যত রাণী।
কে কেমন আছেন তা কিছুই না জানি।।
মুনি বলে রাম তুমি না হও উতরোল।
সকলে আছেন ভাল এসে দেহ কোল।।
মাতা কি বিমাতা তব কেহ নাহি মরে।
দেশে গিয়া সবারে দেখিবে ঘরে ঘরে।।
রাজকর্ম্মে ভরতের অপূর্ব্ব কাহিনী।
চারিযুগে ত্রিভুবনে কোথাও না শুনি।।
চতুর্দ্দোল সিংহাসন ছাড়ি খাট পাট।
হস্তী ঘোড়া আছে তবু ভূমে বহে বাট।।
গাছের বাকল পরে জটা ধরে শিরে।
অগুরু চন্দন চূয়া না মাখে শরীরে।।
ভরত হইয়া রাজা নহে রাজভোগী।
মুনি-ব্যবহার করে যেন মহাযোগী।।
রত্ন-সিংহাসনেতে নেতের বস্ত্র পাতি।
তোমার পাদুকা রাখি ধরে দণ্ড ছাতি।।
পাদুকার হেঁটে বৈসে কৃষ্ণসার-চর্ম্মে।
বশিষ্ঠ নারদে লয়ে থাকে রাজকর্ম্মে।।
দেয়ান সারিয়া যবে ভরত ঘরে যায়।
তব পাদুকার ঠাঁই মাগয়ে বিদায়।।
শুনিয়া মুনির কথা রামের উল্লাস।
আগ্রহ হইল তাঁর করিতে সম্ভাষ।।
মুনি বলে, শ্রীরাম আইলা নিকেতন।
তব দরশনে মম সফল জীবন।।
মুনিগণ যজ্ঞ করে বিষ্ণুপ্রীতি ফলে।
সেই বিষ্ণু আসিয়াছ কি তপের ফলে।।
রামরূপে শ্রীহরি আইলে মম পাশ।
কি করিব প্রার্থনা এথাই স্বর্গবাস।।
যত দুঃখ পেলে রাম দণ্ডক-কাননে।
ততোধিক দুঃখ রাম সীতার হরণে।।
পাইলা বিস্তর দুঃখ রাক্ষসের রণে।
সর্ব্ব দুঃখ পাসরিলে মারিয়া রাবণে।।
তুমি রাম উদ্ধারিলা পৃথিবীর ভার।
যে কর্ম্মের কারণে তোমার অবতার।।
সে সকল জানিয়াছি রাম আমি ধ্যানে।
এই ভিক্ষা দেহ রাম চাহি তব স্থানে।।
যদি আসিয়াছ রাম আমার আগারে।
ভুঞ্জাইব সবাকারে অতিথি-আচারে।।
তোমার প্রসাদে দরিদ্র নহে এই মুনি।
আজ্ঞা কর ভুঞ্জাইব সত্তর অক্ষৌহিণী।।
দিব্য আওয়াস দিব, দিব্য দিব বাসা।
ভালমতে করিব যে সৈন্যের সম্ভাষা।।
আলাপে তোমার সঙ্গে বঞ্চিব রজনী।
রজনী প্রভাতে দিব তোমারে মেলানি।।
শ্রীরাম বলেন তব অলঙ্ঘ্য বচন।
আজি হেথা থাকি, কালি দেশেতে গমন।।
বানরের ভক্ষ্য-বস্তু ফল সে কেবল।
তপোবৃক্ষে তোমার ফলয়ে নানা ফল।।
এই দেশে যত আছে কাঁটাল রসাল।
অকালে ধরুক ফল ফুল ডালে ডাল।।
শুষ্ক-বৃক্ষ মঞ্জরুক ফল ফুল পাতে।
লাগুক মধুর চাক ডালে চারিভিতে।।
নিন্দীগ্রাম ছাড়িয়া যাইতে অযোধ্যায়।
পথে যেন বানরেরা হাতে ফল পায়।।
যত বার চান রাম তত দেন ঋষি।
আলাপে উভয়ে মন উভয়েতে তুষি।।
যজ্ঞশালে ভরদ্বাজ করিলেন ধ্যান।
সর্ব্ব-অগ্রে বিশ্বকর্ম্মা হন আগুয়ান।।
বিশ্বকর্ম্মা নির্ম্মাইলা সোণার চউরি।
সোনার ঘাট বাঁন্ধিলেন দীঘল পুখরী।।
আশী যোজনের পথ করি আয়তন।
দ্বিতীয় অমরাবতী করিল গঠন।।
সংসার আনিতে মুনি পারেন ধেয়ানে।
দেবকণ্যাগণে মুনি আনিল সেখানে।।
ঠাঁই ঠাঁই রচিল সোনার নাট্যশালা।
দেবতা গন্ধর্ব্ব বিদ্যাধরাদির মেলা।।
মুনির তপের ফলে ত্রিভুবন মোহে।
জাহ্নবী যমুনা-নদী সেইখানে বহে।।
আরবার ভরদ্বাজ যুড়িলেক ধ্যান।
আপনি কমলাদেবী হন অধিষ্ঠান।।
লক্ষ্মীদেবী যজ্ঞে গিয়া করেন রন্ধন।
দেবকণ্যাগণ করে সে পরিবেশন।।
স্বর্ণথাল সোণার ডাবর ঝারি পীড়ি।
আশী যোজনের পথ বসে সারি সারি।।
স্বর্ণথালে পরিবেশে, সবে বসি খায়।
কেবা অন্ন দিয়া যায় দেখিতে না পায়।।
কি কত অন্নের কথা কোমল মধুর।
খাইলে মনেতে হয় কি রস মধুর।।
কি মনোরঞ্জন সে ব্যঞ্জন নানাবিধ।
চর্ব্ব চুষ্য লেহ্য পেয় ভক্ষ্য চতুর্ব্বিধ।।
যথেষ্ট মিষ্টান্ন সে প্রচুর মতিচূর।
যাহা নিরখিবামাত্র হয় মতি চূর।।
নিখুঁত নিখুঁত মণ্ডা আর রসকরা।
দৃষ্টিমাত্র মনোহরা দিব্য মনোহরা।।
সরুচাকুলির রাশি লবণ ঠিকরি।
গুড়পিঠে রুটি লুচি খুরমা কচুরি।।
ক্ষীর ক্ষীরসা ক্ষীরের লাড়ু মুগের সাউলি।
অমৃতা চিতুই-পুলি নারিকেল-পুলি।।
কলাবড়া তালবড়া আর ছানাবড়া।
ছানাভাজা খাজা গজা জিলেপি পাঁপড়া।।
সুগন্ধি কোমল অন্ন পায়স পিষ্টক।
ভোজন করিল সুখে রামের কটক।।
দেবযোগ্য ভক্ষ্যভোগ রসাল সুমৃদু।
যত পায় তত খায় খাইতে সুস্বাদু।।
আকণ্ঠ পূরিয়া খায় যত ধরে পেটে।
নড়িতে চড়িতে নারে পেট পাছে ফাটে।।
ঊর্দ্ধদৃষ্টে রহে সবে, নাহি চায় হেঁটে।
কোনরূপে চিৎ হয়ে শুইলেক খাটে।।
উলটিয়া ডাবরে করিল আচমন।
স্বর্ণখাটে শুয়ে করে তাম্বুল ভক্ষণ।।
দেবকন্যা কোলে করি নিদ্রা যায় সুখে।
সুখে রাত্রি বঞ্চে সবে আপন কৌতুকে।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ সীতা করেন আহার।
ভরদ্বাজ-মুনির যে ফল তপস্যার।।
নানাসুখে হইল নিশার অবসান।
শ্রীরাম শ্রীরাম বলি করে গাত্রোত্থান।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108 109 110 111 112 113 114 115 116 117 118 119 120 121 122
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress