রামায়ণ : লঙ্কাকাণ্ড – বিভীষণের অভিষেক
একবার ডাক মন রামনাম বলিয়ে রে।
দেখ এ তিন ভুবনে, সীতানাথ বিনে,
কে আর তারিবে তোমারে।। ধ্রু।।
রণে অবসর পেয়ে কমল-লোচন।
লক্ষ্মণ সহিত গিয়া বসিল তখন।।
ইন্দ্রের মাতলি আসি মাগিল মেলানি।
মাতলিরে কহিলেন সুমধুর বাণী।।
দেবরাজে কহিবে আমার পরিহার।
তাঁর শত্রু রাবণেরে করিনু সংহার।।
রামেরে প্রণাম করি মাতলি চলিল।
রামের বচন গিয়া ইন্দ্রেরে কহিল।।
সুগ্রীবে দেখিয়া রাম হরষিত মন।
বাহু পসারিয়া তারে দিলা আলিঙ্গন।।
তুমি হেন মিতা হও জন্ম-জন্মান্তরে।
ভুবন জিনিতে পারি পাইলে তোমারে।।
তোমার প্রসাদে হইলাম সিন্ধু পার।
তোমার প্রসাদে সীতা করিনু উদ্ধার।।
এক ধার আমার রহিছে শুধিবার।
বিভীষণে নাহি দিলাম লঙ্কা-অধিকার।।
এবে বিভীষণে করি লঙ্কা-অধিপতি।
চারি যুগে থাকিবে আমার এ সুখ্যাতি।।
আমার বচনে মিত্র কর আগুসার।
বিভীষণে দেহ শীঘ্র লঙ্কা-অধিকার।।
হনুমান অঙ্গদ প্রভৃতি কপিবর।
সবে কর বিভীষণে লঙ্কার ঈশ্বর।।
গন্ধর্ব্বে ঔষধি দিক নানা তীর্থ-জল।
লঙ্কা মধ্যে স্ত্রী পুরুষে গাউক মঙ্গল।।
শ্রীরামের আজ্ঞা লঙ্ঘিবেক কোন্ জনা।
বিভীষণ রাজা হবে পড়িল ঘোষণা।।
নানাবিধ রত্ন ধন যেখানে আছিল।
রাক্ষস বানরে সব বহিয়া আনিল।।
গায়কেতে গীত গায় নাটে করে নাট।
শুভক্ষণে বিভীষণে দেন রাজ্যপাট।।
আপনি মাথায় জল ঢালেন লক্ষ্মণ।
রামজয় শব্দ করে যত কপিগণ।।
নানা শব্দে বাদ্য বাজে শুনিতে সুন্দর।
আনন্দেতে নৃত্য করে সকল বানর।।
একলক্ষ দগড় দ্বিলক্ষ করতাল।
দুই লক্ষ ঘণ্টা বাজে শুনিতে বিশাল।।
ভেউরী ঝাঁঝরী বাজে তিন লক্ষ কাড়া।
চারি লক্ষ জয়ঢাক ছয় লক্ষ পড়া।।
বাজিল চৌরাশী লক্ষ শঙ্খ আর বীণা।
তিন লক্ষ তাসা বাজে দামামার সানা।।
ঢেমচা খেমচা বাজে তিন লক্ষ ঢোল।
তিন লক্ষ পাখোয়াজ বিস্তর মাদল।।
জয়ঢাক রামকাড়া বাজে জগঝম্প।
শুনিয়া বাদ্যের শব্দ ত্রিভুবন কম্প।।
বাজিল রাক্ষসী-ঢাক পঞ্চাশ হাজার।
দুন্দুভি ডমরু শিঙ্গা সংখ্যা করা ভার।।
তুরী ভেরী খঞ্জরী খমক আর বাঁশী।
দগড়ে রগড় দিতে লক্ষ লক্ষ কাঁসি।।
টিকারা টঙ্কার আর চৌতারা মোচঙ্গ।
বাদ্য শুনি বানরের বেড়ে গেল রঙ্গ।।
রামজয় শব্দ করে যত কপিগণ।
বিভীষণে অভিষেক কৈল নারায়ণ।।
ছত্রদণ্ড দিল আর স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
অভিষেক করি দিল রাণী মন্দোদরী।।
বিভীষণ রাজা হৈল রাজ্যখণ্ড সুখী।
রহিল রামের কীর্ত্তি বিভীষণ সাক্ষী।।
পুনর্ব্বার শ্রীরাম কহিলা বিভীষণে।
মন্দোদরী লাগি কিছু না ভাবিও মনে।।
মন্দোদরী দিব তোমায় মম অঙ্গীকার।
রাজ-স্ত্রী রাজাতে লয় আছে ব্যবহার।।
অতএব না ভাবিও মিত্র বিভীষণ।
রাণী মন্দোদরী তোমায় দিলাম এখন।।
লঙ্কাপুরে ভূপতি হইল বিভীষণ।
কৃত্তিবাস বিরচিল গীত রামায়ণ।।