Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লকডাউন জীবন || Sanjit Mandal

লকডাউন জীবন || Sanjit Mandal

পৃথিবীতে দিকে দিকে মহামারী হানা দিয়ে যায়-
এ বিশ্বের কোটি কোটি কতো লোক ঘরেতেই সময় কাটায়।
কেউ তারা হারানো অভ্যাস খুঁজে পায়,
কেউ বই পড়ে কেউ গান শুনে যায়,
কেউ কেউ আছে যারা কেবলই ঘুমায়!
কতো কেউ ঘরেই ব্যায়াম করে –
ইজেলেতে তুলি আর কাগজেতে কলম বুলায়-
গান করে কেউ কেউ আসর জমায়,
আবৃত্তিও করে কেউ অনামী কবির কবিতায়। কেউ যোগাভ্যাস করে, ধ্যানে বসে যায়-
অন্য সময় হলে হয়তোবা পেত না সময়।
কেউ খুনসুটি করে, অসময়ে বুকেতে জড়ায়,
কেউ করে ঝগড়া ঝাটি,
কেউ বা আদর করে মেরে দেয় চাঁটি।
কেউ কতো চিন্তাতে মশগুল হয়,
এতোদিনে তারও বুঝি হয়েছে সময়।
প্রিয়ার কাছেতে কেউ চিঠি দিতে চায়
মেল পাঠাবার তার নেইকো সময়।
ক্লান্তিকর ইঁদুর দৌড়-
কে কাকে মেরেছে ল্যাং, কে হয় অধীর –
বাসে ট্রেনে প্রতিদিন গাদাগাদি ভীড়,
অফিসের ক্লান্তিকর একঘেয়ে কাজ,
বসের বিরক্তি আর ক্ষণেক্ষণে ঝাঁজ-
কী এক আশ্চর্য জাদু অবাক হবার
নিমেষেই হাসিমুখ ফিরেছে সবার।
সব যেন হয়ে গেছে অতি শান্ত ধীর –
প্রশান্তির বিশ্রামে হয়েছে সুধীর!

পৃথিবীকে কতো ক্লান্ত করেছিলো কারা?
এ কাদের কাজ! এতো দিন পরে বুঝি ধরা পড়ে তারা।
দূষণের নীলবিষে সারাদেহে শুধু বিষফোঁড়া।
ভেঙ্গে গেছে কতো শিরদাঁড়া, ধুঁকছে সমাজ!
হিমানীর মেরুদেশ শতাব্দী প্রাচীন,
উষ্ণায়ন তীব্র বিষে হলো প্রাণহীন।
হিমালয় শীর্ষ দেশ যেন মেঘহীন
সবুজ বনানী যত হয়েছে মলিন।
সাগরের তলদেশ জলজ বিহীন
পৃথিবীকে রসাতলে ওরা ফেলেছিলো ঠেলে দিনদিন আয়ু হীন এ বিশ্ব সমাজ।

সব যেন নিমেষেই স্থির–
বোবা বিস্ময়ে দেখি হারানো সে ছেলেবেলা সমুখে হাজির।
সেই স্নিগ্ধ গাছপালা, ধূলিহীন, মালিন্য বিহীন –
দূষণ মুক্ত সেই ফুল- ফল- নদী- জল সকলে স্বাধীন!
কার যেন শুভাশিসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সে
জীবনের জলছবি সহসা রঙিন।
আকাশ ঘোলাটে নয়, মুক্ত বায়ু বয়ে যায়
সব যেন নিরাময় বিপুল স্বাধীন।

গান ফিরে পেয়েছি যে আমি!
পাশের বাড়িতে তাই ঝগড়াঝাটি শুনি নাই
দিনেরাতে ঝটাপটি শব্দ বন্ধ তাই।
বুড়ো জামগাছ ডালে কতো পাখি খেলা করে,
গান গায়,উড়ে যায়, ফিরে এসে বসে সেই ডালে।
নিজে করি গৃহকাজ, ঘর মুছি, দিই ঝাট ,
কবেকার জমানো জিনিস, নাড়াচাড়া করি,
ধুলো ঝাড়ি, আচারের বয়াম, পুরানো তেঁতুল,
গুড় আম, আমচুর, রোদে দিই, আরামে শুকাই।
দূষণের ভয় নাই, কাজেরও অন্ত নাই-
জানি কেউ টিটকারি দেবে না আমায়।
গৃহিনী রান্না করে, হারানো অভ্যাস খুঁজে পায় – খুন্তি নাড়ে, ভাত বাড়ে, ঝাল,ঝোল, অম্বল, নিজেই তৈরী করে,
মুখে হাসি, মনে খুশী তাই উপচে পড়ে,
একসাথে সব বসে ভাগ করে খায়।
বড়ো ভালো লাগে তাই-
আমিও তো তার তালে তাল দিয়ে যাই।
গ্যাস বাঁচে, আলো বাঁচে, খরচও একটু বাঁচে,
সংযমী হয়ে উঠি যত দিন যায়।
অপচয়, হোটেলের বিলাসী আহার –
বদ হজমের গুলি, কিছুই লাগেনা আর,
দিব্যি আছি আপনার মনে গৃহকোনে।
কবে থেকে ঘুচে গেছে লাজ-
রজোগুণ তমোগুণ সবের কি হয়েছে বিনাশ?
সত্যযুগে সত্ত্বগুণে ফিরবে সমাজ!
এ কী দেখি আজ–
একদিকে অভিশাপ, অন্যদিকে আশীর্বাদ,
কী দুরন্ত প্রকৃতির রাজ।
এই বুঝি জীবনের খেয়া পারাপার-
এক কূল ভাঙে আর অন্য কূল গড়ে অন্য পার।
পৃথিবী আপন বলে, সঠিক নিয়মে চলে
কেউ নেই তাকে রোধ করে পায় পার।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *