Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রোদনে ভরা বসন্ত || Prabir Kumar Chowdhury

রোদনে ভরা বসন্ত || Prabir Kumar Chowdhury

মাগো, বিনি সুতোয় মালা গেঁথে পরাতে চেয়েছিলাম জীবনের গলায় ,
এখন ছায়াহীন তপ্ত দুপুর । কয়লা কালো অন্ধকার ঘরে শুধু তোমায় মনে পড়ে
তোমার লালপেড়ে শাড়ী ,আলতা পায়ে ,তোমার বুকের স্পর্শে –
স্নেহের চাদরে মুখ ঢেকে কেটে যেত আমার সারা বেলা।
আর এখন –
বন্ধ্যা সময়ের অভিশপ্ত দুপুরে ,সন্ধ্যায় আর রাত্রে ঘৃন্য প্রেমের খেলা ,
প্রতিবিম্বহীন নিষ্ঠুর সময়ের ঘূর্ণিপাকে কেটে যায় অনুভূতিহীন অশ্রুময় অবহেলায়।
এখন অহল্যার মত মৌন্য তপস্যা ,কালিমালিপ্ত শুধুই অমাবস্যা –
রাতের ক্ষুধার্ত নিশাচরেরা এ আঙিনায় দেয় হামাগুড়ি –
নৃশংস দৃষ্টি,ঘন নিঃশ্বাস ,বুকের পাঁজরে কান্না লুকিয়ে ,
আমার দেহের হার-মজ্জা চুষে চুষে, শুষে শুষে-
চলে যায় , আমায় পয়সায় কেনা নিশীথের অতিথি ।

মাগো , এখনও বেঁচে আছি , মৃত্যুরা স্পর্শ করেনি আমাকে,
চরকের মেলায় কেউ করেনি ধর্ষণ , কেউ নিয়ে যায়নি তুলে গোপনে,
তুমি জানতেও পারোনি মীনাবাজারে বিকিয়ে গেছি ,
এই রুপ,এই শরীর, এই প্রানের দাম মাত্র পঞ্চাশ হাজার ।
মাল চেনাচিনি, দর জানাজানি , আমায় হাজার হাতের ছোঁয়ায় –
দেহহাটের পন্য আমি, ফেরার পথ রুদ্ধ আমার ,কঠিন কালো ধোঁয়ায় ।
আজও রয়ে গেছি- বসন্ত সেনা, বাসবদত্তার স্মৃতি আঁকড়ে,
এখন প্রতিটি রাতে আমার নিত্য নতুন ফুলশয্যা ।
প্রেমের পসরা সাজিয়ে আসে নকল প্রেমিকের দল –
আমার অস্তি-মজ্জার নরম বারোয়ারি বিছানায়-
তখনও হয়তো ছড়িয়ে আছে সেখানে ,আগের প্রেমিকের তপ্ত নিঃশ্বাস ।
তারপর ,আমায় উল্টেপাল্টে ঘাটে ,রক্ত নদীতে স্নান করায় ,
ব্যাথা, যন্ত্রণা আর চোখের জলের বিনিময়ে ঝটাফট তবিল উজার করে দেয় ।
আমার শিবরাত্রির জল ঢালা, উপোষ করা কেমন সার্থক হলো বল তো ?

মাগো এখন আমি পুরুষদের ঘৃনা করি ,
কোন পুরুষ যেন না পায় মায়ের গর্ভ । ,
ভাবতে ব্যাথায় ব্যাথায় মন ভরে যায় –
এই পুরুষ-ই কারুর সন্তান, কারুর স্মামী, আবার কারুর পিতা ।
এই পুরুষ-ই আবার বাড়ী ফিরে পবিত্রতার কথা বলে, প্রেম বিলায়, কোলে নেয় নিষ্পাপ সন্তান।
একি অভিশপ্ত প্রেম দিল বিধাতা আমায় ? একি নিষ্ঠুর ছলনার মায়াজাল ?
আমার পুরুষ চেনা রইল বাকি, চিনলাম তার অঙ্গ –
মা হওয়া আর হোল নাগো, হলাম ভোগের সঙ্গ ।

মা তোমরা এখন সুখে আছো তো ?
বাবুর পড়াশুনা, বাবার চিকিৎসা , তোমার সাতনরীর বন্ধকী হারটা বাবা এনে দিয়েছে ?
আমি হাড়িয়ে যাওয়ার পরদিন বাবা পঞ্চাশ হাজার টাকার আনন্দ কিনে তোমাদের দিয়েছিল ?
ওইটাই আমার সান্তনা,,আমার জীবনের বিনিময়ে তোমাদের হাসি ফুটেছে।
সত্যি আমার চিন্তায় বাবা আর গ্রামের গোবিন্দ কাকু ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিল।
এ গ্রাম সে গ্রাম উজার করেছিল পাত্রের সন্ধানে, । তখন আমার মাত্র পনেরো বছর ।
গোবিন্দ কাকু বার বার বাড়ী এসে আমার পিঠে হাত বোলাত,আর-
বলত রানী তুই আমার মেয়ের মত, তোকে ভীষন ভালবাসি ।
পনেরো বছরের মেয়ে সে ভালবাসার মানে ঘৃণায় অনুভব করতাম-
সন্ধ্যা বেলায় বিবিতলার রাস্তা দিয়ে আসার সময়,
কাকু দাঁড়িয়ে থাকত, আমাকে কাছে ডেকে আদরের ছলে বুকে হাত দিত,লজ্জ্যায় কুঁকড়ে যেতাম,
কি অদ্ভুত না পৃথিবীটা মা, সব পুরুষরাই এক ছাঁচে তৈরি।
মেয়ে,বউ, নাতি, এমন কি মা সবাই ভোগের সামগ্রি ।
গোবিন্দ কাকু আজও আমার কাছে আসে,
ভালমন্দ খায়, রাত জাগে , তন্ন তন্ন করে আমায় ঘাটে।
আজও আমায় ভালবাসে ,না না এখন মেয়ের মতো নয় ।
মা, সংসারের টাকা আমি নিয়মিত কাকুর হাতে পাঠাই।

মাগো, দোহাই বেশ্যার টাকা বলে ফিরিয়ে দিও না ,
ওটা আমার ভালবাসা, ওতে আছে চোখের জল,
আর আছে ঘামের মধ্যে জমাট বাঁধা রক্ত।
ছেলের মতো ভাই যে আমার বড় হবে, মানুষ হবে এইটুকু আজ স্বপ্ন ।
আর একটাই অনুরোধ যে দিন আমি চলে যাবো –
সেদিন তুমি দুফোটা চোখের জল ফেল ,
একবার আগের মত সারা গায়ে হাতবুলিয়ে বল ,আবার আসিস ফিরে আমার কোলে, মেয়ে হয়ে। বর দেবো, সিঁদুর দেবো , দেবো সুখের সংসার,
স্বামী ঘর করিস সুখে, করিস অহংকার ।
আর বাবুকে বল আমার মুখে আগুন দিয়ে আমাকে পবিত্র করতে।

মাগো ভীষন যন্ত্রণা ,
বুকের ভেতরে কে যেন চিরেচিরে দেয় লংকাবাটা ,
ক্লেদ্ মাখা জীবনে ঘুম হীন রাত, ঘৃনায় ভরেছে আমার পথ ঘাট ।
প্রেমহীন প্রান যেন কোনমতে ক্ষয় করে ফেলা।
কত বন্ধু এগিয়ে আসে বাড়িয়ে দেয় সান্তনার হাত-
বলে আমরা মেহনতি, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ ,
গনিকা নই,বেশ্যা নই, নই বারাঙ্গনা , আমরাও মানুষ – যৌন্য কর্মী ।
যদি প্রশ্ন কর -যৌন্য কর্মীর পরিচয় কি ?
তবে বলতেই হয়-
শরীর বিক্রি করি, সেই টাকায় বেঁচে থাকি ,বাঁচিয়ে রাখি তোমাদের।
না শুধু শরীর বেচি না , সাথে –
লজ্জ্যা,অপমান, শোষন, ঘৃনা, মাতালের অত্যাচার –
এগুলোর দাম পাই না , বিনামুল্যে দিতে হয়।
মনের জ্বালা জুড়াতে নেশা করি , মেটে না আগুন-
প্রেমশুন্য , কোল শুন্য , বুক শুন্য , যেন বাড়ে শতগুন।
আমি যেন প্রেমের ফেরিওয়ালা , প্রতিটি রাতে প্রেম ফেরি করি –
হা হা হা অথচ আমার ঘরেই নেই আমার জন্যে একফোটা প্রেম।

মাগো, চারিদিকে শুধুই কামসাগর ,
তার মধ্যে মানুষ সাঁতার কাটছে ।
এর মধ্যেই জন্ম, মৃত্যু, লালসা, কত পাপ,
অতৃপ্তরা ভাবে -এর মধ্যে যদি মনি মুক্ত পেয়ে যাই ।
যদি অশান্ত মনে সান্তনার ঠিকানা মেলে ,মৃত্যুসুখের আগে যদি ক্ষণিক মেলে বাঁচার অমৃত।
মাগো আমরা এমন মেয়েমানুষ-
ভগবান যাদের স্তন দিয়েছেন , যোনি দিয়েছেন , শুধু গর্ভ দেয়নি ।
তাইতো গর্ভের সন্ধানে ছুটে বেড়াই ।
পূর্ণাঙ্গ মেয়ে হতে গিয়ে যাকে সামনে পাই আঁকড়ে ধরতে গেলেই ফস্কে যায় ।
আবার ধরি, ফসকায়। এইভাবেই চলে বাকি জীবনের সারা বেলা ।
এক সময় নেমে আসে কাল রাত্রি । খেলা ফুরিয়ে যায় মাগো।

ওই যে একটা গান আছে না –
” মনের গহনে তোমার মুরতিখানি- ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায় ,মুছে যায় বারে বারে -“।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *