রাস্তা
বিয়ের চার চারটা বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তানের মুখ দেখা আর হয়ে উঠলো না ।ডাক্তার ,বদ্দি কবিরাজ কিছুই বাদ নেই।অরূপ সন্ধ্যা কারো কোনো অসুবিধাও নেই ।অন্য রাস্তা নেই দেখে সন্ধ্যা কবচ তাবিজ মাদুলি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আজ এসেছে বড়ো মার কাছে।বড়মা এক আশ্রমবাসীনি মা,বিপদে আপদে সকল কে পথ দেখান তিনি।
আশ্রমের সকলেই তার সন্তান। অতি সাধারণ চেহারার এক অসাধারণ মাতৃমূর্তি।
আসার কারন শুনলেন মন দিয়ে। বললেন-“সত্যিই সব মানুষই সন্তান চায়, আপন আত্মজ ।এটা তো খুব স্বভাবিক ব্যাপার। সবাই যখন বলছেন কোন অসুবিধা নেই তখন ধৈর্য্য ধরতে হবে বৈকি এছাড়া আর তো কোনো রাস্তা দেখি না।”সন্ধ্যার দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।সে বলে-“মা আপনি একটু আশীর্বাদ করুন মা, পথ দেখান।”
“আমার আশীর্বাদ রইলো মা, তবে আমার কটা কথা বলার আছে…”
অরূপ ও সাগ্রহে বলে -” অবশ্যই মা ,আমরা তো আপনার ভরসাতেই এসেছি।”
মা বলে চলেছেন-“মানুষ যখন সব পথ হারিয়ে ফেলে ,বিজ্ঞান প্রযুক্তি যখন ব্যর্থ হয়ে থমকে দাঁড়ায় ,সব রাস্তাই যখন অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ঠিক তখনই তাদের সামনে এসে পড়ে আধ্যাত্মিকতার পথ।হয়তো ঈশ্বরও তাই চান বলেই এটা ঘটে।
ইচ্ছা ,জ্ঞান ,ক্রিয়া এই তিন শক্তির মিলিত প্রয়াসেই সৃষ্টি সম্ভব। ভগবানের ইচ্ছা না হলে হয় না। প্রথমত তোমাদের সন্তান কামনার প্রবল ইচ্ছা,প্রাথর্নার মাধ্যমে ঈশ্বর কে জানাতে হবে।এহলো রাস্তার প্রথম ভাগ।
সহজ সরল সত্য এবং সুন্দরই ঈশ্বরের অভিপ্রেত। জগতে যা স্বাভাবিক তাই সুন্দর! সেই সহজ সরল কাঙ্ক্ষিত বস্তু যে সন্তান তা কোন শর্তাধীন নয়। অর্থাৎ ছেলে মেয়ে নয় শুধুই সন্তান।এ হলো জ্ঞান অন্তত এ ক্ষেত্রে এই যথেস্ট এ হলো রাস্তার দ্বিতীয় ভাগ। আর এই পৃথিবীর বিশাল কর্মযজ্ঞে কর্মে র অভাব নেই সাধ্য মতো কর্ম করে যাও বাবা।যে রাস্তা আজ ঈশ্বর তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করলেন সেই রাস্তাতেই তোমাদের অভীষ্ট লাভ সম্ভব। কোনো লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে তার জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ থাকে ,সেই কাজ টুকু সুস্থ পবিত্র মনে সম্পন্ন করতে হয় বাবা ।এই হলো ক্রিয়া।রাস্তার শেষ ভাগ।
হ্যাঁ বাবা সুষ্ঠভাবে সন্তান কামনায় সহজ সরলভাবে পবিত্র মনে দাম্পত্য যাপন করো ।আজ থেকে এই রাস্তাই হোক তোমাদের অভীষ্ট পূরণে সহায়ক। যেকোন কাজই এই ইচ্ছা জ্ঞান ক্রিয়ার সমন্বয়ে যে রাস্তা তার অধীন । সেই রাস্তা ধরেই লক্ষ্যে পৌঁছায়।এই রাস্তাই মানুষকে নিয়ে যেতে পারে অমৃতের সন্ধানে।সন্তান তো সাক্ষাৎ অমৃত স্বরূপ
মাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নিয়ে যখন বেরিয়ে আসছে শুনতে পায় কোথাও গান হচ্ছে-
” ইচ্ছা, জ্ঞান ,ক্রিয়া ,ত্রি-শক্তি মিলিয়া
রচিল বিশ্ব চরাচর।”