Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : আদিকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 30

রামায়ণ : আদিকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

অনুজ্ঞা করিল ইন্দ্র চারি জলধরে।
সাত দিন বৃষ্টি কর অযোধ্যা নগরে।।
আবর্ত্ত সম্বর্ত্ত দ্রোণ আর যে পুষ্কর।
চারি মেঘে বৃষ্টি করে পৃথিবী উপর।।
নদ নদী সরোবর পূর্ণ হৈল জল।
অনাবৃষ্টি ঘুচিল বৃক্ষেতে হৈল ফল।।
জীবন পাইয়া সব জীবের সমৃদ্ধি।
তপস্যার অন্তে যেন মনোরথ সিদ্ধি।।
দান ধ্যান সদা করে রাজ্যে প্রজাগণ।
সুখে রাজা রাজ্য করে সম্পদভাজন।।
রাজ্য করে দশরথ যেন পুরন্দর।
রাজার বয়স নয় হাজার বৎসর।।
সাত শত পঞ্চাশ যে নৃপতি-রমণী।
কারো পুত্র নাহি রাজা বড় অভিমানী।।
ভার্গব রাজার কন্যা ছিল একজন।
তার গর্ভে এক কন্যা জন্মিল তখন।।
পরমা সুন্দরী কন্যা অতি সুচরিতা।
স্বর্ণমূর্ত্তি দেখি নাম রাখে হেমলতা।।
লোমপাদ রাজা দশরথের যে সখা।
অঙ্গদেশে বসতি ধনের নাহি লেখা।।
জন্মিয়াছে সুতা দশরথের শুনিয়া।
লোমপাদ আনে তাঁরে লোক পাঠাইয়া।।
সত্য ছিল পূর্ব্বেতে করিতে নারে আন।
মহা পুণ্যবান রাজা ধর্ম্ম অধিষ্ঠান।।
কন্যা চলে লোমপাদ ভূপতির ঘরে।
দশরথ রাজত্ব করেন নিজ পুরে।।
দৈবের নির্ব্বন্ধ আছে না হয় খণ্ডন।
মৃগয়া করিতে রাজা করেন গমন।।
হস্তী ঘোড়া রাজার চলিল শতে শতে।
মৃগ অন্বেষিয়া রাজা বেড়ান বনেতে।।
ভ্রমিয়া বেড়ান রাজা নিবিড় কানন।
অন্ধকের তপোবনে গেলেন তখন।।
শ্রমযুক্ত হইয়া বসেন বৃক্ষতলে।
দিব্য সরোবর দেখলেন সেই স্থলে।।
অন্ধক মুনির পুত্র সিন্ধু নাম ধরে।
কলসীতে ভরে জল সেই সরোবরে।।
কলসীর মুখ করে বুক্ বুক্ ধ্বনি।
রাজা ভাবে জলপান করিছে হরিণী।।
পাতা লতা খাইয়া এসেছে সরোবর।
ইহা ভাবি বধিতে যুড়েন ধনুঃশর।।
শব্দভেদী বাণ রাজা শব্দমাত্র হানে।
মুনি-পুত্রোপরে বাণ এড়ে সেইক্ষণে।।
মৃগজ্ঞানে বাণ হানে রাজা দশরথ।
বাণাঘাতে মুনি পড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত।।
মৃগের উদ্দেশে রাজা যান দৌড়াদৌড়ি।
মৃগ নহে মুনিপুত্র যায় গড়াগড়ি।।
দেখেন সিন্ধুর বুকে বিদ্ধ আছে বাণ।
অতি ভীত দশরথ উড়িল পরাণ।।
বুকে বাণ বাজিয়াছে কথা নাহি সরে।
জল দেহ বলে মুনি হস্ত-অনুসারে।।
অঞ্জলি পূরিয়া রাজা আনিয়া জীবন।
মুখে দিবামাত্র মুনি পাইল চেতন।।
শিরে হাত দিয়া রাজা করে অনুতাপ।
ব্যাকুল দেখিয়া মুনি নাহি দিল শাপ।।
মুনি বলে দশরথ ভয় কি কারণ।
তোমারে শাপিয়া আমি পাব কত ধন।।
কপালে যা থাকে তাহা না হয় খণ্ডণ।
পূর্ব্ব-জনমের কথা হইল স্মরণ।।
পূর্ব্বেতে ছিলাম আমি রাজার কুমার।
মারিতাম বাঁটুলেতে পক্ষী অনিবার।।
কপোতী-কপোত পক্ষী ছিল এক ডালে।
কপোতেরে মারিলাম একই বাঁটুলে।।
মৃত্যুকালে কপোত আমারে দিল শাপ।
পরজন্মে পাবে এইরূপ মনস্তাপ।।
ব্যর্থ না হইল সেই পক্ষীর বচন।
হইল তোমার বাণে আমার মরণ।।
লইলা আমার প্রাণ কোন্ অপরাধে।
আমারে মারিয়া বড় পড়িলে প্রমাদে।।
অন্ধ পিতা মাতা মম শ্রীফলের বনে।
আজি তাঁরা মরিবেন আমার বিহনে।।
এই বড় দুঃখ মম রহিল যে মনে।
মৃত্যুকালে দেখা না হইল দোঁহা সনে।।
আমি অন্ধকের প্রাণ হইয়াছিলাম।
তৃষ্ণায় সলিল ফল ক্ষুধায় দিতাম।।
আর কেবা ফল জল দিবেক দোঁহাকে।
অনাহারে মরিবেন আমা পুত্রশোকে।।
এই সত্য দশরথ করহ আপনে।
আমা লৈয়া যাও পিতা মাতার সদনে।।
ইহা বিনা তোমার নাহিক প্রতিকার।
নহে সৃষ্টি নাশ হবে মজিবে সংসার।।
মৃত্যুকালে সিন্ধুমুনি নারায়ণে ডাকে।
নারায়ণ বলিতে উঠিল রক্ত মুখে।।
দেখি দশরথ হইলেন কম্পমান।
খসাইলেন তাহার বুক হতে বাণ।।
ভূপতি ভাবেন আসি মৃগ মারিবারে।
ঘটিল তপস্বীহত্যা আমার উপরে।।
মৃত মুনি তুলি রাজা লইল কাঁধেতে।
অন্ধকের বনে গেল কান্দিতে কান্দিতে।।
হেথা তপোবনে বসি অন্ধক-অন্ধকী।
হেথা তপোবনে অমঙ্গল দেখি।।
গৃহিণী বলেন নাথ একি কুলক্ষণ।
আজি কেন পুত্রের বিলম্ব এতক্ষণ।।
অন্ধক বলেন শুন পাগলী গৃহিণী।
আর দিন নিকটে পাইত ফল পানি।।
আজি বুঝি গিয়াছে সে দূরস্থ কানন।
সেই হেতু বিলম্ব হইল এতক্ষণ।।
এই কথাবার্ত্তা তাঁরা কহেন দুজন।
মড় কোলে করি রাজা গেলেন তখন।।
শুষ্ক শ্রীফলের পাতা মচ্ মচ্ করে।
অন্ধক বলে এই পুত্র আইল ঘরে।।
চক্ষু নাই দুইজন দেখিতে না পায়।
এস পুত্র বলিয়া ডাকিছে উভরায়।।
কালি হৈতে উপবাসী করিব পারণ।
ফল জল দেহ বাপু রাখহ জীবন।।
দুই জন ডাক ছাড়ে রাজার তরাস।
আদিকাণ্ড রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress