Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রামায়ণ : আদিকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা » Page 27

রামায়ণ : আদিকাণ্ড || কৃত্তিবাস ওঝা

কৌশল্যা কৈকেয়ী এই সপত্নী উভয়।
উভয়ে লইয়া ক্রীড়া করে মহাশয়।।
সিংহল রাজ্যের যে সুমিত্র মহীপতি।
সুমিত্রা তনয়া তাঁর অতি রূপবতী।।
কন্যারে দেখিয়া রাজা ভাবে মনে মন।
কন্যাযোগ্য বর কোথা পাইব এখন।।
রাজচক্রবর্তী দশরথ লোকে জানে।
রাক্ষস গন্ধর্ব্ব কাঁপে যাঁর নাম শুনে।।
ব্রাহ্মণে ডাকিয়া রাজা কহিল সত্বর।
দশরথে আন গিয়া অযোধ্যা-নগর।।
রাজার আজ্ঞায় দ্বিজ চলিল হরিষে।
শীঘ্রগতি গেল সেই অযোধ্যার দেশে।।
ব্রাহ্মণে দেখিয়া রাজা করেন প্রণাম।
আশিস্ করিয়া দ্বিজ কহে নিজ নাম।।
সিংহল দেশের আমি রাজ-পুরোহিত।
তোমারে লইতে রাজা আমি উপস্থিত।।
রাজকন্যা সুমিত্রা যে পরমা সুন্দরী।
তাঁর রূপে আলো করে সিংহল নগরী।।
সম রূপ রাজকন্যা নাহি কোন দেশে।
তোমারে দিবেন রাজা পরম হরিষে।।
শুনিয়া কন্যার কথা হৃষ্ট দশরথ।
হইতে সুমিত্রাপতি ছিল মনোরথ।।
কৌশল্যা কৈকেয়ী পাছে জানে দুই জন।
মৃগয়ার ছলে রাজা করিল গমন।।
নানা বাদ্যে দশরথ চলে কুতূহলে।
উত্তরিল গিয়া রাজা নগর সিংহলে।।
বার্ত্তা শুনি হরষিত সিংহলের রাজা।
পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া তাঁরে করিলেন পূজা।।
দেখি দশরথের লাবণ্য মনোহর।
লোকে বলে বিধি দিল কন্যাযোগ্য বর।।
নান্দীমুখ করি দোঁহে বিশেষ হরিষে।
বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ দুইজনে করে অবশেষে।।
গোধূলিতে দুই জনে শুভদৃষ্টি করে।
দোঁহাকার রূপে আলো বসুমতী করে।।
কুসুম-শয্যায় রাজা শয়ন করিল।
নিদ্রার আলসে প্রায় অচেতন হৈল।।
শয্যা ছাড়ি উঠে দশরথ নৃপবর।
শয্যার উত্থান কৌড়ি দিলেন বিস্তর।।
বাসি বিয়া সেই স্থানে কৈল দশরথ।
যৌতুক পাইল বহু ধন মনোমত।।
বিদায় হইল নৃপ রাজার সাক্ষাতে।
সুমিত্রার রূপে নৃপ চড়ে নিজ রথে।।
সুমিত্রার রূপে নৃপ মদনে মোহিত।
অধৈর্য্য হইয়া প্রায় হইল মূর্চ্ছিত।।
বিলম্ব না সহে রাজা করে ইচ্ছাচার।
রথের উপরে রাজা করেন শৃঙ্গার।।
বাসি বিয়ার পরদিন হয় কালরাতি।
স্ত্রী-পুরুষ এক ঠাঁই না থাকে সংহতি।।
কালরাত্রে যে নারীকে করে পরশন।
সেই স্ত্রী দুর্ভাগা হয় না হয় খণ্ডন।।
সুমিত্রা লইয়া রাজা আসি নিজ দেশে।
অন্তঃপুরে প্রবেশিল পরম হরিষে।।
কৌশল্যা কৈকেয়ী তারা রাণী দুইজন।
সুমিত্রার রূপ দেখি ভাবে মনে মন।।
সুমত্রা মজাবে রূপে ভূপতির চিত।
আর না চাহিবে আমা সবাকার ভিত।।
নিরবধি সেবে তাঁরা পার্ব্বতী শঙ্কর।
সুমিত্রা দুর্ভাগা হক মাগে এই বর।।
তিন রাণী লৈয়া রাজা আছে কুতূহলে।
সুখে রাজ্য করে বহুকাল ভূমণ্ডলে।।
পুত্রহীন মহারাজ মনে দুঃখ দাহ।
করিলেন সাত শত পঞ্চাশ বিবাহ।।
সাত শত পঞ্চাশের মুখ্যা তিন গণি।
কৌশল্যা কৈকেয়ী আর সুমিত্রা সতিনী।।
তার মধ্যে সুমিত্রা যে পরমা সুন্দরী।
তাঁর রূপে আলো করে অযোধ্যা-নগরী।।
হেন স্ত্রী দুর্ভাগা হৈল রাজার বিষাদ।
কালরাত্রি দোষে হৈল এতেক প্রমাদ।।
প্রাণের অধিক রাজা কৈকেয়ীরে দেখে।
দিবা রাত্রি দশরথ তাঁরে লৈয়া থাকে।।
এ তিনের ভাগ্য কত বর্ণিব সম্প্রতি।
তা সবার গর্ভে জন্ম লবেন শ্রীপতি।।
সতত ভাসেন রাজা সুখের সাগরে।
দৈবে অনাবৃষ্টি হৈল অযোধ্যা-নগরে।।
রোহিণীতে বৃষে হৈল শনির গমন।
সে কারণে বৃষ্টি নাহি হয় বরিষণ।।
কৌতুকে থাকেন রাজা ভার্য্য-সম্ভাষণে।
রাজ্যেতে প্রমাদ হৈল ইহা নাহি জানে।।
সকল অযোধ্যা রাজ্যে হইল আপদ।
হেনকালে আইলেন তথায় নারদ।।
পাদ্য অর্ঘ্য দেন রাজা বসিতে আসন।
মুনিরে করিয়া পূজা বসিল রাজন।।
নারদ বলেন নৃপ করি নিবেদন।
আইলাম তোমারে করিতে বিজ্ঞাপন।।
ইন্দ্রের বৃষ্টিতে বাঁচে সকল সংসার।
তব রাজ্যে অনাবৃষ্টি দুঃখ সবাকার।।
কামিনী লইয়া রাজা করিতেছ সুখ।
নরকে ডুবিলা, প্রজাগণ পায় দুঃখ।।
রাজা বলে, কারে আমি নাহি করি দণ্ড।
কি কারণে মন্দ মোরে বলে রাজ্যখণ্ড।।
দুঃখ পায় প্রজাগণ নিজ কর্ম্মফলে।
কোন্ দোষে প্রজাগণ মোরে মন্দ বলে।।
নারদ বলেন, শুন নৃপ-চূড়ামণি।
রোহিণী নক্ষত্রে দৃষ্টি দিয়া গেল শনি।।
এই হেতু অনাবৃষ্টি হইল রাজ্যেতে।
প্রজাগণ দুঃখ পায় সেই কারণেতে।।
এত বলি করিলেন নারদ গমন।
রথে চড়ি রাজ্য দেখি বেড়ায় রাজন।।
গেলেন উত্তরদিকে গহন কানন।
জলজন্তু দেখে রাজা পশু পক্ষিগণ।।
নদ নদী দেখে রাজা নাহি তাহে জল।
দীঘি সরোবর দেখে, শুষ্ক সে সকল।।
বেলা অবসানে রাজা বসে বৃক্ষতলে।
শারী শুক পক্ষী আছে সেই বৃক্ষডালে।।
শেষরাত্রি হইল পক্ষীর নিদ্রা ভাঙ্গে।
পক্ষিণী কহিল কথা পক্ষিরাজ সঙ্গে।।
বহুকাল হৈল মোরা এই বনবাসী।
কত আর পাব কষ্ট নিত্য উপবাসী।।
সূর্য্যবংশ রাজ্যে কভু দুঃখ নাহি জানি।
চৌদ্দবর্ষ অনাহার নাহি পাই পানি।।
অনাবৃষ্টি হেতুতে বৃক্ষেতে নাহি ফল।
নদ নদী সরোবর তাহে নাহি জল।।
ভূপতি হইয়া রাজ্যে চেষ্টা নাহি করে।
রাত্রি দিন স্ত্রী লইয়া থাকে অন্তঃপুরে।।
কষ্ট পাই আর কত থাকি অনাহারে।
অতএব চল প্রভু যাই স্থানান্তরে।।
পক্ষিরাজ বলে প্রিয়ে শুন মোর বাণী।
তোমার বচনে কি ছাড়িব অরণ্যানী।।
সত্যযুগ হৈতে মোর এই বনে বাস।
গোঁয়াইনু এই বনে পুরুষ পঞ্চাশ।।
মোর দুঃখ নহে, দুঃখ হয়েছে সংসারে।
এই দুঃখে আছে রাজা দুঃখিত অন্তরে।।
এইখানে জন্ম মোর এখানে মরণ।
তোর বোলে ছাড়িতে নারিব এই বন।।
পক্ষিণী বলয়ে পক্ষী শুন বিবরণ।
পাতকীর রাজ্যে থাকি হারাবে জীবন।।
জল বিনা শ্বাসগত ব্যাকুলিত প্রাণ।
সমুদ্রের তীরে গিয়া করি জলপাণ।।
এই কথাবার্ত্তা তারা করে দুইজনে।
বৃক্ষতলে থাকি তাহা দশরথ শুনে।।
রাজা বলে নারদের বচন প্রত্যক্ষ।
পক্ষী মোরে নিন্দা করে পেয়ে উপলক্ষ।।
বুঝিলাম ইন্দ্ররাজ বড়ই চতুর।
মুখে এক কহে যে, অন্তরে করে দূর।।
মম পিতামহ যেই রঘু নাম ধরে।
ইন্দ্রে আনি খাটাইল অযোধ্যা-নগরে।।
তবে আজি হয় মম দশরথ নাম।
ইন্দ্রেরে বান্ধিয়া আনি যদি নিজ ধাম।।
রজনী প্রভাত করে রাজা মনোদুঃখে।
প্রভাত হইলে রাজা দুই পক্ষী দেখে।।
পক্ষী বলে পাপিনী পক্ষিণী শুন বাণী।
রাজারে নিন্দিলা কেন হইয়া পক্ষিণী।।
সকল যে দশরথ শুনিয়াছে কাণে।
শব্দভেদী বাণে রাজা মারিবে পরাণে।।
পক্ষীর পরাণ ফাটে এতেক বলিয়া।
ডিম্ব লয়ে ঠোটেতে আকাশে উঠে গিয়া।।
পক্ষী পলাইয়া যায় পাইয়া তরাস।
ঊর্দ্ধবাহু করি রাজা করে আশ্বাস।।
দররথ বলে, পক্ষী না পলাও ডরে।
ফিরিয়া আসিয়া বৈস বাসার উপরে।।
স্ত্রীর বাক্যে অপরাধ নাহিক তোমার।
তোমার বচনে জ্ঞান হইল আমার।।
এই বনে যত আম্র কাঁঠালের ভার।
আজি হৈতে তোমার দিলাম অধিকার।।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62
Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress